শুক্রবার ● ১৩ জানুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » কৃষি » চরফ্যাশনে ধান চাষের জমি কেটে সবজি উৎপাদনে ব্যস্ত কৃষক
চরফ্যাশনে ধান চাষের জমি কেটে সবজি উৎপাদনে ব্যস্ত কৃষক
এম আমির হোসেন চরফ্যাশন প্রতিনিধি: একযুগে রীতিমতো সবজি চাষাবাদে বিপ্লব ঘটেছে। বিশ্বের সবজির আবাদি জমির পরিমাণ সব চেয়ে বেশি বাড়ছে বাংলাদেশে। তার মধ্যে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা অন্যতম। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে বাড়ি-ঘরে কিছু জমি কমলেও কৃষি ধানের তুলনা শাক-সবজি চাষের এলাকা বেড়ে চলছে। ধান চাষের জমি কেটে এখন কৃষক সবজি উৎপাদনে সারাটা বছরই ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। স্বাধীনতার পর উপজেলা সবজি চাষাবাদ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেলেও গত এক যুগে চরফ্যাশনের চিত্র পাল্টিয়ে যাচ্ছে। সবজির উৎপাদন চরফ্যাশন বেড়েছে দশ গুণ।
সূত্রে জানা গেছে, চরফ্যাশনের ৩ কৃষক প্রশিক্ষক হিসাবে ফিলিফাইন, নেপাল, থাইন্যান্ড গিয়েছে । মানুষ এক সময় ভালো স্বাদের সবজি জন্য শীতকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। লাউ, টমেটো, কপি, সিম, ফুলকপি, মুলাসহ নানা পদের শাক-সবজি শীতকাল ছাড়া বাজারে পাওয়া যেত না। গ্রীষ্মকাল ছিল সবজির অকাল সময়। এখন প্রায় সারা বছর সবজ্বি পাওয়া যায়। কৃষকেরা ফসলের ন্যার্য্যমূল্য, শ্রমিকের বেতনসহ নানা কারনে অকারনে ধানচাষ করা প্রায়ই ছেড়ে দেয়ার উপক্রম হলেও। ২০০৫সালে আসলামপুর, জিন্নাগড়, মাদ্রাজ,ওসমানগঞ্জ, নুরাবাদসহ কয়েকটি ইউনিয়েনে মুষ্টিময় নতুন নতুন কৃষক সামান্য জমি নিয়ে প্রথমে রবি শস্যর উঁচু জমি কেটে টিলার ওপর মাছাং দিয়ে সিম,শসা করা শুরু করছে। কৃষকরা খরচের চেয়ে ৩গুণ লাভ হওয়ায় সবজি চাষাবাদে ঝুঁকে পড়েছে।
পরবর্তী বছর জমির পরিমাণ বাড়িয়ে একেই ভাবে শসা, সিম সাথে লাউ চাষাবাদ করে এগিয়ে চলছে। তৃতীয় বার তারা শসা, সিম, লাউ, বরবটি, বেগুন, টমেটো, করলা করে লাভবান হয়েছে। এখন তাদের দেখা দিখে নতুন নতুন আরো কৃষক চাষাবাদ করা শুরু করছে।
চরফ্যাশন উপজেলা এমন কতেক জমি ছিল যা চাষ করা অনুপোযোগি। ডোবা এক বুক পানি কোন রকম এক মৌসুমে চাষাবাদ করতো। সবজি উৎপাদনের তুলনা চাহিদা ও দামের পরিমাণ বেশি থাকা কৃষক অকেযো ঐ জমি কেইল বেদে সবজ্বি চাষ করা শুরু করে দিয়েছে। কোন মৌসুমে এখন আর চাষাবাদ বাদ দিতে হয়না। সকল জমির কদর কৃষকের কাছে বেড়ে চলছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক তত্ত্বাবধানে কৃষকেরা এই চাষ করে সাফল্য অর্জন করছে। দেশে ৬০ ধরনের ২০০টি জাতের সবজি উৎপাদিত হচ্ছে। উপজেলা উপ-সহকারী কৃষিকর্মকর্তারা আরো তৎপর হলো আরো ভাল ফসল উৎপাদন করতে পারবে বলে কৃষকেরা মনে করেন। এ উপজেলা এতো পরিমাণ সবজি উৎপাদন যা অন্যান্য উপজেলা যেন হার মানিয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানায়, রবি মৌসমে ২০৫০ হেক্টর আউস, বোরো মৌসমে ১০৯৬০ হেক্টর। সবজ্বি উৎপাদনে জমির পরিমান ২০১৫সালে এসে দাড়িয়েছে প্রায় ৫/৭হাজার হেক্টর । ২০১৬ এসে তা ছাড়িয়ে গেছে।
আদর্শ চাষী সমিতি অফিস সুত্র মতে, ২০০৫ সাল উপজেলা পর্যায় তখন ৩০/৪০ হেক্টর জমিতে সবজ্বি চাষ করছে। সবজ্বি উৎপাদনে বিপ¬ব ঘটানোর জন্য কয়েকজন কৃষকের উদ্দ্যেগে ১০১ সদস্য কৃষক ঐক্যহয়ে আর্দশ চাষী উন্নয়ন সমিতি করেন। এই সমিতি কৃষকদের ফসল উৎপাদনে সকল সুযোগ-সুবিধার জন্য বিভিন্ন এনজিও, কৃষি অফিসের দ্বারে দ্বারে ঘুরে সাফল্যের পথে এগিয়ে গেছেন। সবজি উৎপাদনে জমির পরিমান ২০১৫ সালে এসে দাড়িয়েছে প্রায় ১৪৪০/১৫৫০একর। সবজি উৎপাদনে আর্ন্তজাতিক ভাবে গর্ব করার মতো বাংলাদেশে সবজি উৎপাদন চলছে। সবজি রপ্তানী করে ব্যাপক আয় বেড়েছে। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি অবাদি জমির পরিমাণ বেড়েছে বাংলাদেশে। বর্তমানে তার তুলনাই হয় না।
চরফ্যাশন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন আখন বলেন, কৃষক বর্তমান সরকারের সৃজনশীল উপায় সুযোগ বুঝে কাজে লাগিয়ে সবজি ক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়িয়েছেন।
চরফ্যাশন আদর্শ চাষি উন্নয়ন সমিতি সভাপতি কৃষক আঃ ছাত্তার ফারুক ও সম্পাদক সোলায়মান পান্নু, সাংগঠনিক আকতার মহাজনকে, আন্তর্জাতিক খাদ্য এবং কৃষি সংস্থা, আইএফডিসির মাধ্যমে কৃষক প্রশিক্ষক হিসাবে ফিলিফাইন, নেপাল, থাইল্যান্ড গিয়েছে। চরফ্যাশনের এই ছেলেরা একাধিক বার কৃষি কাজে ব্যাপক অবদান রাখার কারনে একাধিক বার সংস্থার মাধ্যমে বিদেশ সফর করে আসছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মনোতোষ সিকদার বলেন, এখন ও প্রচুর ধান চাষ হচ্ছে। সবজ্বি উৎপাদনে তাদের সাফল্য অন্যান্য কৃষকদেরকে কৃষি কাজে আগ্রহ বাড়িয়ে দিচ্ছে। উপজেলা বিষ মুক্ত সবজি উৎপাদনের জন্যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাজারে স্টলের মাধ্যমে এই সবজি বাজারজাত করা হবে বলে উপজেলা কৃষি অফিস ও চাষী উন্নয়ন সমিতি সূত্রে জানা গেছে।
-এফএইচ