শুক্রবার ● ১৩ জানুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » জেলার খবর » ভোলায় ডায়াগনস্টিক ক্লিনিকে অপ্রয়োজনে টেস্ট ও পার্সেনটিজ বাণিজ্য পর্ব-৪
ভোলায় ডায়াগনস্টিক ক্লিনিকে অপ্রয়োজনে টেস্ট ও পার্সেনটিজ বাণিজ্য পর্ব-৪
এইচ এম নাহিদ : ভোলায় বর্তমানে চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে সিন্ডিকেট, ডাক্তারের কাছে রোগী গেলেই প্রয়োজনে, অপ্রয়োজনে নানা মেডিকেল টেস্ট করতে হবে, এটিই প্রথম শর্ত। এরপর প্রেসক্রিপশন, যার সাথে কতিপয় প্যাথলজি বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মালিক এবং ক্লিনিক ডাক্তাররা যৌথভাবে অসাধু প্রক্রিয়া জড়িত। যত টেস্ট তত পার্সেনটিজ। এই অলিখিত চুক্তি থাকায় ডাক্তারদের পছন্দসই প্যাথলোজি ছাড়া মেডিকেল টেস্ট রিপোর্ট গ্রহণ করা হয় না। অনুসন্ধানে বিস্তারিত ৬ পর্বের রিপোর্টে অজানা তথ্য পেতে চোখ রাখুন ভোলার সংবাদ ডট কম এ।
চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও কোনো ক্লিনিকে গেলে প্রয়োজন থাকুক আর নাই থাকুক বিভিন্ন ধরনের টেস্ট করতে প্যাথলজির নাম উল্লেখ করে দেওয়া হয়। অন্য কোথা থেকে পরীক্ষা করালে সে রিপোর্ট গ্রণযোগ্য নয় এবং নতুন করে আবারো টেস্ট করতে হবে বলে জানিয়ে দেয়। যা রোগীর পরিবার আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হলেও নিজেদের টু-পাইস সুবিধা পায় অনেকেই। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধ ক্লিনিক শহর ছেড়ে গড়ে ওঠেছে বিভিন্ন উপজেলায়ও ব্যাঙের ছাতার মতো ক্লিনিক। এই ক্লিনিকগুলোতে সেবা নিতে যাওয়া রোগীদেরও কোনো দুর্ঘটনা ঘটে গেলে রোগীর অভিভাবক ও ক্লিনিকের মালিকপক্ষ ওয়ারিশদের নিয়ে সমঝোতার বৈঠক করেন ও ক্লিনিক মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ারও অনেক নজির রয়েছে।
স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী সরকারি স্বাস্থ্যসেবার ব্যর্থতার কারণে ভোলার শতকরা ৭৮ ভাগ রোগী বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নেন। এ সুযোগসহ প্রশাসন ও সিভিল সার্জনের অদক্ষতা, অবহেলা, উদাসীনতার সুযোগে মালিকরা চালাচ্ছেন স্বেচ্ছাচারিতা। অথচ প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের স্বাস্থ্যসেবা করার নামেই সরকারের অনুমোদন নেয়। সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা চিকিৎসা সামগ্রী, ওষুধ আমদানিতে সরকারি ভর্তুকিও পেয়ে থাকে। অথচ প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হচ্ছে সম্পুর্ন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে। সরকার আরোপিত মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) সংশিলিষ্ট প্রতিষ্ঠান পরিশোধ করার কথা থাকলেও তা আদায় করা হচ্ছে বিপদগ্রস্থ রোগীদের কাছ থেকে। যা অসাংবিধানিক ও বেআইনি।
মেডিকেল প্যাকটিস, প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ (রেগুলেশন) অর্ডিন্যান্স, ১৯৮২’ না মেনে রোগীদের থেকে ইচ্ছামতো ফি আদায় করছেন। অথচ রাষ্ট্রের কাছ থেকে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া প্রতিটি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। সংবিধানের ১৮ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সরকার মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার কথা। কিন্তু সরকারি পর্যায়ে সে ব্যবস্থা অপ্রতুল। এসুযোগে ভোলায় গজে উঠেছে সরকার অনুমোদিত ও অননুমোদিত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার। অধিক ব্যয়সাপেক্ষ এসব বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান থেকে নিম্ম আয়ের মানুষ তেমন সেবা পাচ্ছে না। বরং সেবার নামে অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অধিক অর্থ আদায়, প্রতারণা, সরকারি নীতিমালার তুলনায় ফি কোথাও শতগুণ, কোথাও হাজারগুণ, আবার কোনো কোনো কেন্দ্রে কয়েক হাজারগুণ বেশি আদায় করা হচ্ছে। এই ভাবে সিন্ডিকেট, টেস্ট বাণিজ্যর মাধ্যে চলছে ভোলার চিকিৎসা সেবা। সরকারী হাসপাতালের স্টাফ, সিভিল সার্জন, ডাক্তার ও ডায়াগনস্টিক/ক্লিনিক সিন্ডিকেটের কাছে ভোলার ২২ লক্ষ মানুষ জিম্মি। বিদ্যমান আইনের কোনো নীতিকে তোয়াক্কা না করে। ভোলার মালিক, চিকিৎসকদের ইচ্ছাই স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালনার আইন।
এব্যাপারে ভোলার সিভিল সার্জন ডা. রথীন্দ্রনাথ বলেন, ভোলাতে কোন অবৈধ ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে থাকলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেব। ক্লিনিকে রোগী মারা ও ডায়াগনস্টিকে হয়রানির ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি ক্লিনিক ও ডাক্তারদের পক্ষে সাপাই গেয়ে বলেন, কোন হয়রানি নয়, রোগী মারা যাওয়ার কারণ হচ্ছে কোম্পানীর ঔষধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার কারণে। চলবে………..
ভোলায় যে সকল ডায়াগনস্টিক ক্লিনিকগুলোতে স্বাস্থ্য সেবার নামে চলছে বে-আইনি নীতি পর্ব-৩