বৃহস্পতিবার ● ১২ জানুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ভোলায় যে সকল ডায়াগনস্টিক ক্লিনিকগুলোতে স্বাস্থ্য সেবার নামে চলছে বে-আইনি নীতি পর্ব-৩
ভোলায় যে সকল ডায়াগনস্টিক ক্লিনিকগুলোতে স্বাস্থ্য সেবার নামে চলছে বে-আইনি নীতি পর্ব-৩
এইচ এম নাহিদ: ভোলা জেলার কতিপয় ডায়গনস্টির ও ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবার মান ও পরিবেশ নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠেছে। ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসার নামে প্রতারণা বাণিজ্য বর্তমানে বেশ জমজমাট হয়ে ওঠেছে। এমন অভিযোগ ওঠলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কোনো আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না কেন তা নিয়ে জনমনে জন্ম নিয়েছে নানা প্রশ্ন। ভোলার অধিকাংশ বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রই নামসর্বস্ব। সেগুলোতে সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী বহির্বিভাগ, জরুরী বিভাগ, অস্ত্রোপচার কক্ষ (শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত), আছে কিনা বা থাকলেও সেগুলো সচল আছে কিনা তা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন আছে। অনুসন্ধানে বিস্তারিত ৬ পর্বের রিপোর্টে অজানা তথ্য পেতে চোখ রাখুন ভোলার সংবাদ ডট কম এ।
ভোলা সির্ভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভোলা সদরে ১০ শয্যা ক্লিনিক হাবিব মেডিকেল সেন্টার, মেঘনা হেলথ কেয়ার সেন্টার, মাতৃ নিলয় নাসিং হোম, গ্রীণ স্পট মেডিকেল সার্ভিসেস সেন্টার, ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, এশিয়া মেডিকেল সেন্টার, গোলদার প্লাজা, বন্ধন হেলথ কেয়ার সেন্টার, মের্সাস স্বদেশী নার্সিং হোম, ইসলামিয়া মেডিকেল সেন্টার, ২০ শয্যা ক্লিনিক নিজাম হাসিনা ফাউন্ডেশন হাসপাতাল। এছাড়া সিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ভোলা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ন্যাশনাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আলিফ মেডিকেল সেন্টার, ইসলামিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টার, এশিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হাবিব মেডিকেল সেন্টার যুগিরঘোল, মোহনা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নিউ লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, এ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক সেন্টার, দৌলতখানে এপি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, দৌলতখান ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বাংলা বাজার ফেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বোরহান উদ্দিন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কুতুবা ডিলেন নেছা মেডিকেল সেন্টার, কুয়েত মেডিকেল সেন্টার, লালমোহন ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, চরফ্যাশনে মজুমদার ল্যাবরেটরি, সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, চরফ্যাশন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সেন্টাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড ডাক্তার’স চেম্বার, মেডিফোর্ড মেডিকেল সার্ভিস, সিটি হার্ট হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার চরফ্যাশন, দ্বীপচক্ষু হাসপাতাল, সেবা মেডিকেল সেন্টার, জনসেবা মেডিকেল সেন্টার, মেঘনা ল্যাব এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, তজুমুদ্দিন এ রব ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নিউ ফেমাস ডায়াগনস্টিক সেন্টার সহ ৪১ টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার কাগজে কলমে নামধারী লাইসেন্স আছে বলে ভোলা সির্ভিল সার্জন বিভাগ বলা হলেও এর মধ্যে অধিকাংশ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের উল্লেখযোগ্য কাগজ পত্র তাদের কাছে নেই। অবার এর মধ্যে কিছু ক্লিনিকের রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে রয়েছে নানাপ্রশ্ন ও বিতর্ক।
এদিকে ভোলা সদরের রজনী গন্ধা মেডিকেল সার্ভিস, যমুনা মেডিকেল সার্ভিস, সাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বোরহানউদ্দিনের নিউ পুপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নিউ ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, লালমোহনের নিউ হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, রেড প্লাস ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মঙ্গলসীকদার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, লর্ডহার্ডিঞ্জ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মর্ডান ডায়াগনস্টিক সেন্টার, চরফ্যাশনের নিউ মেডিনোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শুভ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নিউরন ডায়াগনস্টিক ল্যাব, নিরাময় ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, আঞ্জুরহাট ডায়াগনস্টিক সেন্টার, দক্ষিণ আইচা কাজী ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মনপুরা ডায়াগনস্টিক সেন্টারর সহ ১৮ টির কোন লাইসেন্স নেই। তার পরে এসকল ডায়াগনস্টিক সেন্টার প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সরকারী নিয়িম নিতেকে বিদ্ধাঙ্গলী দিখিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ প্রাইভেট প্রাকটিস অ্যান্ড মেডিকেল অ্যাক্ট ১৯৯২ অনুযায়ী ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে চিকিৎসক, আবাসিক চিকিৎসক, সার্জন, স্টাফ নার্স (ডিপ্লোমা) থাকতে হবে। এতে আরও ভলা হয়েছে, প্রতি দশ বেডের জন্য তিন জন ডাক্তার একজন করে তিন শিফটে সার্বক্ষণিক উপস্থিত থাকবে আবার একইভাবে প্রতি দশ বেডের জন্য ছয় জন স্টাফ নার্স (ডিপ্লোমা) তিন শিফটের জন্য দুজন করে সার্বক্ষণিক ডিউটি পালন করবেন। কেবল এসব শর্তাবলি পূরণ সাপেক্ষে বেসরকারিভাবে কোনো ক্লিনিক রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার কথা। অথচ এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিতিমালা অনুযায়ী কোনো নজরদারি নেই, যার ফলে কতিথ ক্লিনিক গুলো সম্পুর্ন বে-আইনি ভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছেন। আবার রেজিস্ট্রেশন আছে এমন কতকগুলো ক্লিনিকেও এসব নিতিমালা শর্ত মোতাবেক নিয়ম না মেনেই চালিয়ে যাচ্ছে ক্লিনিক ব্যবসা।
সূত্র আরো জানায়, সরকারি চাকরির পাশাপাশি ডাক্তাররা এসব ক্লিনিকের সাথে সম্পৃক্ত। একজন ডাক্তার একাধিক জায়গায় একই সময় কিভাবে চাকরি করেন এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তোর পাওয়া যায়নি। কতিপয় ডাক্তার আবার চুক্তিতে কাজ করেন। অর্থপ্রাপ্তির বিনিময় বিভিন্ন ক্লিনিকে গিয়ে তারা রোগী দেখেন ও অপারেশন করে থাকেন।
ক্লিনিক মালিকরা রোগী পেলে এসব ডাক্তারের সাথে দর কষাকষি শুরু করেন। শেষে উভয় পক্ষের সমঝোতায় অপারেশন হয়। এ প্রক্রিয়ায় রোগীর অবস্থার সংকাটাপন্ন হলেও রোগীর অভিভাবকদের করার কিছুই নেই। বেশিরভাগ ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবার মান এতই নিম্মমানের যে, রোগীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অপারেশন করতে হয়। অপারেশনকৃত রোগীদের থাকার জন্য ওয়ার্ডতো দূরের কথা পৃথক কোনো কক্ষ নেই।
একাধিক সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে প্রয়োজন নেই এমন রোগীকেও অপারেশন করা হয়। এছাড়া ভুল অপারেশনের নজিরও রয়েছে অনেক বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। এমনকি ভুল অপারেশনে রোগীর মৃত্যু হলে পুলিশ অবৈধ ক্লিনিকের মালিককে গ্রেপ্তারের নজির নেই।
এই ধরনের ক্লিনিকের নিয়োগপ্রাপ্ত কয়েক জন ডাক্তারের সাথে আলাপ করলে তারা জানান, কাগজে কলমে আমার নিয়োগ থাকলেও এই বিষয়ে কিছুই জানিনা। তবে এরা ক্লিনিক চালু করার জন্য অনৈতিক ভাবে আমাদের সনদ সহ প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়ে অনুমোদন এনে থাকেন। এই বিষয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে আমাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই।… চলবে
এফএইচ