রবিবার ● ৮ জানুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » জেলার খবর » ভোলায় চিকিৎসার নামে হয়রানী, ডাক্তার ও ডায়াগনস্টিক মালীকদের চলছে কমিশন বাণিজ্য -পর্ব ২
ভোলায় চিকিৎসার নামে হয়রানী, ডাক্তার ও ডায়াগনস্টিক মালীকদের চলছে কমিশন বাণিজ্য -পর্ব ২
এইচ এম নাহিদ : বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থায় দেশজুড়ে চরম নৈরাজ্য বিরাজ করছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এ ব্যবস্থা সরকারের নিয়ন্ত্রণের প্রায় বাইরে চলে গেছে। সারাদেশের ন্যায় ভোলা ও বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোর অনিয়ম চরমে উঠেছে। পুরো ব্যবস্থায় এখন চলছে মালিক, চিকিৎসকের স্বেচ্ছাচার ও চিকিৎসা সেবার নামে প্রতারণা। স্বাস্থ্যসেবা এখন একটি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে ভোলা জেলার স্বাস্থ্যসেবা। অনুসন্ধানে বিস্তারিত ৬ পর্বের রিপোর্টে অজানা তথ্য পেতে চোখ রাখুন ভোলার সংবাদ ডট কম এ।
মেডিকেল প্র্যাকটিস অ্যাক্ট (১৯৮৩) অনুসারে ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে তুলতে হলে প্রথম শর্ত হলো নিজস্ব পাঁকা ভবন থাকতে হবে। এ ছাড়া প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টেকনিশিয়ান, প্রয়োজনীয় আধুনিক সরঞ্জাম আবশ্যক। লাইসেন্স প্রাপ্তরা প্রতিবছর লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়। কিন্তু ভোলায় অধিকাংশ ডায়াগনস্টিক সেন্টার এ নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না।
ত´া লাইসেন্স ও লাইসেন্স ছাড়াই স্বাস্থ্য সেবার মত একটি ঝ্ুঁকিপূর্ণ পেশা শুধুমাত্র টাকার জন্য সরকারী আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে, ভোলার সরকারী স্বাস্থ্য শাখাকে ম্যানেজ করে কিছু ডায়াগনিস্টিক/ ক্লিনিক সেন্টার টিনশেট ঘরের ওপর নির্মিত। রং, সুরকী দিয়ে যত্রতত্র গড়ে ওঠা অবৈধ ও মানহীন এসব ডায়াগনস্টিক/ক্লিনিক সেন্টারে নেই কোন অভিজ্ঞ ডাক্তার, নার্স, টেকনিশিয়ান। ভুয়া অভিজ্ঞতার সনদ দিয়ে অনেক ডায়াগনিস্টিক/ক্লিনিক মালিকরা ভুয়া রিপোর্ট সাজিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা, প্রতারণা করা হচ্ছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের।
অনেক প্রতিষ্ঠানে নাম সর্বস্ব নিয়োগ থাকলেও নিয়োগ প্রাপ্তদের ওই ক্লিনিকে তাদের দৈনিন্দ কাজ করার কোন অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যায়নি। দ্বীপজেলা ভোলায় ২২ লক্ষ মানুষের বসবাস, অর্থনৈতিক সম্ভবনাময় এই জেলায় মানুষের মৌলিক জীবন যাত্রার মান অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় বিরাজ করছে। দুর্নীতিতে পুরো সেক্টর বিরাজমান হলেও বিশেষ করে স্বাস্থ্য শাখার কথা দুধের শিশুও জানে। প্রতিটি মানুষের কাছে তার শরীরের রোগটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভোলার চিকিৎসকরা রোগীদের ব্লাকমেইল করে টাকা আদায় করছে। জীবনে আরো কিছুদিন বেঁচে থাকার জন্য এবং স্বাস্থ্যকে ভাল রাখার জন্য এই অঞ্চলের মানুষ চিকিৎসকের স্বরণাপন্ন হলেই কতিথ চিকিৎসক ডায়গনস্টিক বা ক্লিনিকে ভর্তি করায়। এক পর্যায়ে রোগীর শরীরে কোন ভাইরাল না থাকলেও লম্বা টেস্ট’র কাগজ হাতে ধরিয়ে দিয়ে কারি কারি টাকা হাতিয়ে নেয়। এই টাকার ২০% কমিশন মাঠ পর্যায়ে, ৩০ থেকে ৪০% কমিশন ডাক্তার আর বাকী ৪০ পার্সেন্ট ক্লিনিক বা ডায়াগনিস্টিক মালিকের পকেটে।
মার্তৃকালিন মা নিয়ে ক্লিনিক গুলোর রয়েছে রমরমা বাণিজ্য। সমাজের নিম্মভিত্তিক থেকে শুরু করে উচ্চভিত্ত পরিবারগুলো তাদের আগমনী সন্তানকে সম্পুর্ণ সুস্থ্যভাবে পৃথিবীতে আনার জন্য একজন অভিজ্ঞ বা বিশেষজ্ঞ’র স্বরণাপন্ন হলেই আর রক্ষা নেই। দীর্ঘ নয়মাস পর্যন্ত রোগীকে কারণে অকারণে তাদের চাপিয়ে দেয়া শর্ত মানতে বাধ্য করেন। প্রসবের সময় এলেই প্রসুতিকে নিয়ে এক নোংরা খেলায় মেতে উঠেন কতিথ ডাক্তার ও ক্লিনিক ব্যাবসায়ীরা। নরমাল ডেলিভারি প্রসুতি মা কেও ২০/৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত কন্টাক্ট করে সিজার করাণ। এই সিজারের টাকাটা ক্লিনিকের সোর্সথেকে শুরু করে ৪/৫টি সেক্টরে ভাগ হয়। যদি কোন কারণে রোগীর অবস্থা অবনতি হয়, তাহলে কন্টাক্টের টাকা আদায় করে রোগীকে বরিশাল বা ঢাকাতে স্থান্তর করেন। আর সেটা যদি প্রসুতি মায়ের পেট কাটাও থাকে তাহলে নিস্তার নেই। একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর রেখে সকল দায়দায়িত্ব এড়িয়ে যায়। এই ধরণে শত শত অভিযোগ থাকলেও ভোলার সিভিল সার্জনও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অবৈধ গর্ভপাত প্রতিটি ক্লিনিকের দৈনিন্দ কাজ। সিভিল সার্জন বিষয়টি জানলেও অজানা কারনে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।
এব্যাপারে বিভিন্ন ডায়াগনিস্টিকের একাধিক নামধারি নার্সদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, এভোশন, এম আর তাদের নিত্বদিনের কাজের একটি। ক্লিনিকে শুধুমাত্র কাগজে কলমে নিয়োগ প্রাপ্ত ডাক্তার ও টেকনেশিয়ান, নার্স, স্টাফ রয়েছে। মূলত কাজ করায় কম পয়সায় পাওয়া অনভিজ্ঞ স্টাফ দিয়ে। যার কারনেই দুর্ঘটনা ঘটে বলে তারা জানিয়েছেন।
তারা আরো দাবী করছেন যে, তাদের অনভিজ্ঞতার সুযোগে কিছু পরিচালক ও তার কর্মকর্তাদের হাতে যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের শিকার হতে হচ্ছে। এই ধরনের অভিযোগ নিয়ে কথা হয় ভোলা জেলা ডায়াগনস্টিক/ ক্লিনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ হাফিজুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, আনিত অভিযোগগুলোর সিংহভাগই সত্য তবে ডালাও ভাবে দোশারপ করলে হবেনা। তিনি প্রশাসনকে দায়িকরে বলছেন, প্রশাসনিক কোন নজরদারি না থাকায় ভোলার কতিথ ডায়গনস্টিক মালিকরা বেপরোয়া। তাছাড়া প্রশসনের নাকের ডগায় থেকে কি ভাবে লাইসেন্স বিহীন ডায়াগনস্টিক বা ক্লিনিক চালায় তার কারণ প্রশাসনই বলতে পারে। হাবিব মেডিকেল সেন্টার, মেঘনা হেলথ্ কেয়ার, বন্ধন হেলথ্ কেয়ার , মাতৃনিলয় নার্সিং হোম, ……..চলবে
-এফএইচ