শুক্রবার ● ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » আইন ও অপরাধ » ঢাকার দক্ষিণখানে আত্মঘাতি বোমা বিষ্ফোরণে নিহত নারী জঙ্গি শাকিরার গ্রামের বাড়ি চরফ্যাশনে অজানা আতঙ্ক
ঢাকার দক্ষিণখানে আত্মঘাতি বোমা বিষ্ফোরণে নিহত নারী জঙ্গি শাকিরার গ্রামের বাড়ি চরফ্যাশনে অজানা আতঙ্ক
বিশেষ প্রতিনিধি: ঢাকার দক্ষিণখানের আশকোনায় পূর্বপারায় আত্মঘাতিবোমা বিষ্ফোরণে নিহত শাকিরার গ্রামের বাড়ি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার এওয়াজপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম এওয়াজপুরে। তার পিতার নাম শাহে আলম চৌকিদার। মেয়ের জঙ্গি ও আত্মঘাতী হওয়ার খবর পেয়ে হেনস্তা হওয়ার ভয়ে তিনি আত্মগোপন করেছেন। স্থানীয় থানা পুলিশ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। বৃহস্পতিবার তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ও লাশ শনাক্ত করতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে নেওয়া হয় বলে থানা সূত্র থেকে জানা যায়।
চরফ্যাসন উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দুরে এক অজয় পাড়া গায়ে শাকিরার বাবার বাড়ি। বাড়ি গিয়ে জানা যায়, শাকিরার বাবার নাম শাহ আলম চৌকিদার (৫৬)। মায়ের নাম ফাতেমা বেগম (৫০)। শাকিরা বাবা-মায়ের তিন নম্বর মেয়ে। তারা চার বোন এক ভাই। ভাইটি মানষিক প্রতিবন্ধী। বড় বোনের নাম ফরিদা বেগম, দ্বিতীয় বোনের নাম নাসিমা বেগম, তারপরে সাকিরা বেগম, একদম ছোট বোন কামরুন নাহার সে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে। বোনদের মধ্যে শাকিরা তৃতীয়। উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময় তাকে ৪ বছর আগে পার্শ্ববর্তি লালমোহন উপজেলায় জনৈক ইকবালের নিকট বিয়ে দেওয়া হয়। ইকবাল ঢাকার মোহাম্মদপুরের বছিলায় ছোটখাটো ব্যবসা করতেন। ইকবালের ও শাকিরার সংসারে এক কন্যা আছে। নাম সাবিনা (৫)।
ইকবাল ক্যানসারে ভুগে সাড়ে ৩ বছর আগে মারা যায়। স্বামীর মৃত্যু পর শাকিরা আর বাবার বাড়ী ফিরেনি। শিশু সাবিনা (৫) কে নিয়ে মোহাম্মদপুরে থাকা অবস্থায় একটি ক্লিনিকে কাজ করতেন। সেখানেই পরিচয় হয় রাশেদুর রহমান ওরফে সুমনের সঙ্গে।
কিভাবে জঙ্গীর সঙ্গে সম্পৃক্ত হলো, এ প্রশ্নের জবাবে খুজতে উপজেলার এওয়াজপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড শাহ আলম চৌকিদার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় নিহত জঙ্গি শাকিরার বাবা শাহ আলম চৌকিদা বাড়িতে নাই। শাকিরার বাবা-মায়ের ঘর ভাঙা। অসচ্ছলতার প্রভাব সবখানে। জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলছে প্রতিবেশীদের সঙ্গে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর এওয়াজপুর এলাকায় শাহ আলম চৌকিদারের বাড়ির আশপাশ এলাকায় অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে, স্থানীয় লোকজন সংবাদকর্মীদের দেখে যার যার স্থান থেকে সরে যাচ্ছে। এলাকার লোকজন সাকিরা সম্পর্কে কোন জবাব দিতে চায় না।
সাকিরা জঙ্গীর সঙ্গে সম্পৃক্ততার ঘটনায় প্রতিবেশীরা জানান, গত ৩-৪ বছর শাকিরা বাবার গ্রামের বাড়িতে বা শশুর বাড়িতে আসেনি। মুঠোফোনে বাবার পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক রাখলেও স্বামীর পরিবারের সঙ্গে রেখেছে কিনা জানা যায়নি তাদের। তবে বাবা শাহ আলম চৌকিদার মেয়ে ও নাতনিকে ভোলায় আসার জন্য অনেক অনুনয়-বিনয় করেছে। কারণ বাবা চাননি, মেয়ে ঢাকায় থাকুক। কোরবানির ঈদের পর শাকিরা মেয়ে নিয়ে ভোলায় বাড়িতে এসেছিলেন।
শাকিরার মা ফাতেমা বেগম (৬৫) দাবি করেন, মেয়ে যে আবার বিয়ে করেছেন সেই খবর তিনি বা তাঁর পরিবার জানত না। আগে মোটামুটি নিয়মিত বাড়িতে ফোন করে তাঁদের খোঁজ নিলেও কোরবানির ঈদের পর শাকিরা আর যোগাযোগ করেননি। রাশেদুর রহমান ওরফে সুমন নামে যে ব্যক্তিকে শাকিরার স্বামী বলা হচ্ছে, তাঁকে তিনি চেনেন না।
জানা যায়, শাকিরার বাবা শাহ আলম চৌকিদার বর্তমানে এওয়াজপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। এওয়াজপুর ইউনিয়নের আ’লীগের সভাপতি আ. ছালাম পাটওয়ারী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সাইফউদ্দিন শাহিন বলেন, শাকিরার বাবাকে আটক করা যায়নি। শাহ আলম চৌকিদার জানতো শাকিরা ঢাকায় চাকুরী করত। জঙ্গি পরিচয় জানাজানির পর সে মেয়েকে আর পরিচয় দিতে চায়নি।
-কেএস/এফএইচ