শুক্রবার ● ১৯ আগস্ট ২০১৬
প্রথম পাতা » আইন ও অপরাধ » মনপুরার মেঘনায় জলদস্যুদের ফের তাণ্ডব, ৫ মাঝিকে অপহরণ,ছড়াগুলিতে আহত ২, মুক্তিপন দাবী
মনপুরার মেঘনায় জলদস্যুদের ফের তাণ্ডব, ৫ মাঝিকে অপহরণ,ছড়াগুলিতে আহত ২, মুক্তিপন দাবী
মো. সালাউদ্দিন মনপুরা : ভোলার মনপুরার মেঘনায় ফের হাতিয়ার জলদস্যু আলাউদ্দিন বাহিনী সহ ৩ জলদস্যূ বাহিনী কর্তৃক ৫ মাঝিকে অপহরণ করা হয়েছে । শুক্রবার ভোর রাতে বদনার চর সংলগ্ন মেঘনা নদী থেকে ইলিশ মাছ ধরা অবস্থায় ৫ মাঝিকে অপহরণ করে নিয়ে যায় জলদস্যু বাহিনী । আটক মাঝিদের ছাড়িয়ে আনতে ৩ লক্ষ টাকা মুক্তিপন দাবী করেন জলদস্যু বাহিনীর প্রধান। মুক্তিপন দিয়ে ছাড়িয়ে আনতে চেষ্টা করছেন আড়তদার ও পরিবারের লোকজন।
প্রায় মেঘনায় মাছ ধরতে যেয়ে জলদস্যুদের হামলার শিকার হচ্ছেন জেলেরা। প্রতিনিয়ত জলদস্যুদের তান্ডবে সাধারণ জেলেরা মেঘনায় মাছ ধরতে সাহস পাচ্ছেনা। লক্ষ লক্ষ টাকার জাল ও ট্রলার নিয়ে আতংকে আছেন। জেলে ও মাঝিদের আটক করে মুক্তিপন আদায় করে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। মুক্তিপন টাকা আদায় না হওয়া পর্যন্ত আটক জেলেদের উপর ব্যাপক নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। মারধর করে পরিবারের কাছ থেকে টাকা আনতে বাধ্য করেন জলদস্যুরা। ভয়ে ও আতংকে পরিবারের লোকজন জলদস্যু বাহিনীর নিকট মুক্তিপনের টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছেন জলদস্যুদের দেওয়া বিকাশ নাম্বারে। আড়তদার ও মৎস্যব্যাবসায়ীরা ও আতংকে আছেন । প্রশানকে জানালে তারাও কার্যকর কোন ব্যাবস্থা গ্রহণ করছেন না । ফলে কেউ জলদস্যুদের ফের হামলার ভয়ে কিছুই বলতে চাচ্ছেন না।
খোঁজ নিয়ে ও স্থানীয় জেলে সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনকার মত আড়তদার আলমগীর মেম্বারের গদিঘরের নেছার মাঝি,খোরশেদ মেম্বার মাঝি,ফারুক মাঝি,জাহাঙ্গীর মাঝি ও বশির ব্যাপারীরর আড়তের জাফর মাঝি মনপুরা ইউনিয়নের পূর্ব পাশের বদনার চর সংলগ্ন মেঘনা নদীতে ইলিশ মাছ ধরার জন্য জাল ফেলে । আগ থেকে ওত পেতে থাকা হাতিয়ার জলদস্যু বাহিনীর প্রধান আলাউদ্দিন, কৃষ্ণ, রুবেল ও আরিফ বাহিনীর নের্তৃত্বে দেশীয় অ¯্র ও বন্দুক তাক করে জেলেদের চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলেন। তারা এলাপাথাড়ি ছড়া গুুলি ছোড়েন। ছড়াগুলিতে আড়তদার টিটু ভুঁইয়ার গধিগরের মনির মাঝি ও জেলে ছালাউদ্দিনসহ ২ জন আহত হয়। পরে জলদস্যুরা জিম্মি করে প্রতি ট্রলার থেকে ১ জন মাঝিকে হাতিয়ার আলাউদ্দিন চর নামে পরিচিত গভীর জঙ্গলে নিয়ে আটকে প্রতিজন মাঝি (প্রতিট্রলার) থেকে ৬০ হাজার টাকা করে মুক্তিপন দাবী করেন।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক আড়তদার জানান, পরিবারের লোকজন সাথে আলাপ করে দ্রুত মুক্তিপনের টাকা পাঠিয়ে দিব। জলদস্যুদের কথিত মতে টাকা পাঠিয়ে না দিলে জেলেদের মারধর করবে। আমরা শান্তি মতে নদীতে মাছ ধরতে পারবনা।
রামনেওয়াজ ঘাটের আড়তদার নাম না প্রকাশ করার শর্তে অভিযোগ করে বলেন, হাতিয়ার কোস্টগার্ড এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেনা। আমরা মনপুরা প্রশাসনকে জানালেও তারা এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করছে না। একদিকে নদীতে তেমন মাছ নেই আবার জলদস্যুদের তান্ডব। আমরা ঠিকমত ব্যাবসা বাণিজ্য করতে পারছিনা।
আড়তদার লিটন হাওলাদার জানান,আমার গধিগরের মাহমুদ মাঝির ট্রলারে থাকা জেলেদের জলদস্যুরা মারধর করে টাকা,মোবাইলসেট নিয়ে যায়। জেলেরা মেঘনায় ভয়ে মাছ ধরতে যাচ্ছেনা। প্রশাসনকে জানালেও তা কোন ব্যাবস্থা গ্রহন করছেনা। আমরা আতংকে আছি।
রামনেওয়াজ ঘাটের আড়তদার টিটু ভ’ইয়া জানান, আমার গধিগরের মনির মাঝি বদনার চর সংলগ্ন মেঘনায় মাছ ধরতে গেলে হাতিয়ার জলদস্যু বাহীনির এলাপাথারি ছোড়া গুলি ছোড়ে। এতে মনির মাঝি ও জেলে ছালাউদ্দিন জলদস্যুদের ছোড়া ছড়া গুলিতে আহত হন।
এব্যাপারে মনপুরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন হাওলাদার বলেন, প্রায় হাতিয়ার জলদস্যুরা মনপুরা মেঘনা নদীতে মাছ ধরা অবস্থায় হামলা চালিয়ে জেলেদের জিম্মি করে আটকে রেখে মুক্তিপন আদায় করে। গতরাতেও একই ঘটনা ঘটিয়েছে। আমার এলাকার ৫ মাঝিকে ধরে নিয়ে গেছে হাতিয়ার জলদস্যু বাহিনী। সাধারন জেলেরা আতংকে আছেন।
এ ব্যাপারে মনপুরা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শাহিন খান বলেন, ডাকাতি করে মাঝিদের জলদস্যুরা ধরে নেওয়ার খবর পেয়েছি। আমারা নদীতে ডিউটি করার মত জলযান (ট্রলার) নাথাকায় তেমন কোন ব্যাবস্থা নিতে পারছিনা। আমি বিষয়টি দেখছি।
এফএইচ