মঙ্গলবার ● ২ আগস্ট ২০১৬
প্রথম পাতা » আইন ও অপরাধ » চরফ্যাশনে আ’লীগ নেতার ছত্রছায়ায় স্বামীকে আটক করে গৃহবধূকে গণধর্ষণের অভিযোগ: আসামীদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বাদী
চরফ্যাশনে আ’লীগ নেতার ছত্রছায়ায় স্বামীকে আটক করে গৃহবধূকে গণধর্ষণের অভিযোগ: আসামীদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বাদী
এস.ইউ সোহেব : ভোলার চরফ্যাশনে স্বামীকে আটক করে গৃহবধূকে পলাক্রমে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এঘটনায় ভোলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করায় আসামীদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে মামলার বাদী ও স্বাক্ষীরা। উপজেলার ওসমানগঞ্জ ইউনিয়য়নের ৯ নং ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে প্রভাবশালীরা।
সরেজমিনে জানা গেছে, ওসমানগঞ্জ ইউনিয়য়নের ৯ নং ওয়ার্ডে নজীর বাতান বাড়ির আব্দুল মনুফের মেয়ে ময়ফুল বেগম ঢাকায় থাকার সুবাদে লালমনিরহাট জেলার সালউদ্দিনের ছেলে ছমিউল আলম লিটনের সাথে গত ১৫ এপ্রিল ১৬ ইং তারিখে ইসলামী শরীয়ত আইনে দ্বিতীয় বিবাহ সম্পন্ন হয়। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ময়ফুল তার স্বামী লিটনকে নিয়ে একই এলাকার তার ভগ্নিপতি ইসমাইলের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ওয়ার্ড মেম্বার মনির হোসেন দুলালের সাথে ইসমাইলের নির্বাচনী পূর্ব বিরোধ জের টেনে গত ৮ জুলাই রাত সাড়ে ৯ টার দিকে মেম্বারের নেতৃত্বে যুবলীগ নেতা বিল্লাল, সেস্বাসেবক লীগ নেত আবুল হোসেন ও ওয়ার্ড চৌকিদার লোকমান সহ তার সহযোগীরা ইসমাইলের বাড়িতে এসে ময়ফুল ও লিটনের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে অভিযোগ তুলে তাদেরকে এলোপাথাড়ি ভাবে মরধর শুরু করেন। পরে তারা স্বামী পরিচয় দেওয়ার পর তৎক্ষণিক কাবিন নামা দেখাতে না পারায় তাদেরকে মেম্বারের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
ময়ফুল বেগম অভিযোগ করে বলেন, সেখানে তাকে ও তার স্বামীকে কয়েক দফা মরধর করে পুলিশে চালান করা হবে বলে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে মেম্বার ও তার বাহীনি। রাত ১ টার দিকে স্বামী লিটনকে আটক করে ভগ্মিপতি ইসমাইলের কাছ থেকে আমাকে টাকা আনার জন্য মেম্বার দুলাল যুবলীগ নেতা বিল্লাল, জাহাঙ্গীর সহ অজ্ঞাত এক ব্যক্তি হাত তুলে দেয়। পরে তারা আমেকে নিয়ে একই এলাকার তেলখালী সড়কের দক্ষিণ পার্শ্বে ফরাজী বাড়ির বাগানে নিয়ে মুখ চেপে জোর পূর্বক বিল্লাল, জাহাঙ্গীর, আবুল হোসেন ও ওয়ার্ড চৌকিদার লোকমান, নুরে আলম সহ অজ্ঞাত আরো এক জন পলাক্রমে ধর্ষণ করে। সেখান থেকে আবার অলী মিয়া রোর্ডের পূর্বপাশ্বে নুরনবীর ছাড়া বাড়ির পুকর পাড় নিয়ে আবারো ধর্ষণ করে মেম্বারের বাড়িতে নিয়ে আসেন।
তিনি আরো অভিযোগ করেন, বিষয়টি দুলাল মেম্বাকে বলা হলে মেম্বার বিষয়টি থানা পুলিশ সহ কাউকে জানালে আমাদের হত্যার ভয় দেখিয়ে আমাদের কাছ থেকে সাধা কাগজে জোরপূবর্ক স্বাক্ষর রাখেন। পরে লোকমাধ্যমে ভোর ৫ টার দিকে ঢাকার উদ্দ্যেশ ভোলার বাসে উঠিয়ে দেয়।
এঘটনা ময়ফুল বেগম বাদী হয়ে গত ২০ জুলাই ভোলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯ (৩)/৩০ ধারায় মামলা দায়ের করলে বিজ্ঞ আদালত মামলাটি চরফ্যাশন থানার ওসিকে এফআই কারার নির্দেশ দেন। মামলার খবর পেয়ে ওই সকল দুলাল মেম্বার সহ আসমীরা স্বাক্ষীদের মরধর ও বাদীকে নানা ভাবে হুমকী দেওয়ায় আসামীদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বাদী ও স্বাক্ষীরা।
মামলার স্বাক্ষী ঈলিয়াস বলেন, মামলার খবর পেয়ে দুলাল মেম্বার আমাকে ধরে নিয়ে মরধর করে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকার করায় আমার মোটরসাইকেল ও কাগজ পত্র নিয়ে আটক করে মেম্বার দুলাল। আমাদের হত্যার ভয় দেখিয়ে ঘটনা মিথ্যা প্রমানের জন্য আমাদের কাছ থেকে সাধা কাগজে জোরপূবর্ক স্বাক্ষর রাখেন। পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের চাপে গাড়িটি আমার বাড়ির দরজায় রেখে যায়।
মামলার অরপর স্বাক্ষী ইসমাইল বলেন, আমাদেরকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এখন আমাদের উপর যে কোন সময় হামলা হওয়ার আশঙ্কা বিরাজ করছে।
অভিযুক্ত ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ওয়ার্ড মেম্বার মনির হোসেন দুলাল এসকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, স্থানীয় কিছু লোকজন ও ছাত্রলীগের ছেলেরা তাদের আটক করে আমার বাড়িতে নিয়ে আসে। পরে ময়পফুলে বোনের জিম্মা তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে শুনেছি আমাদের বিরুদ্ধে কোর্টে ধর্ষণ মামলা করেছে।
ওসমানগঞ্জ ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি আবুল কাসেম মোল্লাহ বলেন, স্থানীয় কিছু লোকজন ও ছাত্রলীগের ছেলেরা তাদের আটক করে কিছু টাকা পয়সা আদায় করতে মেম্বারের কাছে নিয়ে আসে। মেম্বার কিছু টাকা জড়িমানা করলে ওই টাকার জিম্মা নেয় ময়ফুল। ঘটনার সময় আমি ঢাকায় ছিলাম। পরে এলাকয় এসে সুনেছি মহিলা নাকি কয়েক জনকে বিবাদী করে মামলা করেছে। তবে ধর্ষণের বিষয়ে তিনি কিছু জানেনা বলেন জানান।
ওসমানগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আশ্রাফুল আলম গণধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমি বাদি পক্ষ ও স্থানীয় লোকজন কাছে শুনেছি ওই গৃহবধূ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। আমার মেম্বার ও চৌকার আটকের সাথে জড়িত ছিল। তবে ধর্ষণের সাথে জড়িত ছিল কিনা আমি একনো শিওর হতে পারিনি। তবে যে যে পরিমান অপরাধ করবে তার শাস্তি অব্যশয় তাকে পেতে হবে বলেও জানান ইউপি চেয়ারম্যান।
চরফ্যাশন থানার ভারপাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মু.এনামুল হক বলেন, এরকম একটা মামলা হয়েছে লোক মাধ্যমে খবর পেয়েছি। তবে এখনো তা থানায় এসে পৌছায়নি। থানায় আসলে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে ওয়ার্ড মেম্বার দুলাল সহ ধর্ষকদের বিচার দাবি করেছেন এলাকাবাসী।
এফএইচ