মঙ্গলবার ● ৭ জুন ২০১৬
প্রথম পাতা » আইন ও অপরাধ » চরফ্যাশনে তৃতীয় শ্রেণির তিন শিক্ষার্থীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আ’লীগ নেতার বিরুদ্ধে, ক্ষুব্দ এলাকাবাসী, মরিয়া প্রভাবশালীরা
চরফ্যাশনে তৃতীয় শ্রেণির তিন শিক্ষার্থীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আ’লীগ নেতার বিরুদ্ধে, ক্ষুব্দ এলাকাবাসী, মরিয়া প্রভাবশালীরা
এসইউ.সোহেব / সিরাজ মাসুদ : ভোলার চরফ্যাশনের শশীভূষণে ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে তৃতীয় শ্রেণির তিন শিক্ষার্থীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার এওয়াজপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ মাদ্রাজ ৭ নম্বর ওয়ার্ডের গণি মিয়ার সেল্টার বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে প্রভাবশালীদের চাপের পরে এলাকা ছেড়েছেন ভিকটিম ও তার পরিবার। এঘটনায় ওই এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, গত বুধবার (১মে) এওয়াজপুর ইউনিয়ন দক্ষিণ মাদ্রাজ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণীর ছাত্রী জিনিয়া ছদ্মনাম (৮) কে পাশ্ববর্তী ৮ নং ওয়ার্ড আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক একই এলাকার চিহ্নিত বার বার ধর্ষণের ঘটনায় পার পেয়ে যাওয়া মতিউর রহমান লাহড়ী ওরফে মতু মিকার তার কৃটনাষকের দোকানের পিছনের রুমে নিয়ে বিবস্ত্র করে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ করেন ওই ছাত্রী ও তার মা রুমা বেগম।
ওই ছাত্রী আরো জানান, তাকে জোর পূর্বক ধর্ষণের পরে ১০ টাকা হাতি দিয়ে ঘটনাটি কাউকে না বলার নিষেধ করেন মতু মেকার। ওই শিশু বাড়ীতে গিয়ে তার মাকে বললে তিনি বিষয়টি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির ও ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ফারুক মেম্বারকে বিষয়টি মোখিক ভাবে জানান। ওই শিশুর মাকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন বলেন, নাতিন হিসেবে একটি চুমু খেয়ে জড়িয়ে ধরে আদর করেছে তাতে কি হয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে বাড়া-বাড়ি না করাই ভাল বলে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন বলে অভিযোগ করেন ওই শিশুর মা রুমা বেগম।
এদিকে স্থানীয় ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার স্কুল কমিটির সভাপতি ধর্ষকের সাথে শান্তি চুক্তি করে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। সংবাদ পেয়ে স্থানীয় সংবাদ কর্মীরা ঘটনাস্থলে গেলে বেড়িয়ে আসে আরো থলের বিড়াল।
সাংবাদিকদের খবর পেয়ে একই স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর আরো দুই ছাত্রী সুরভী ও তুহিনা (ছদ্মনাম) কে একই পদ্ধতিতে ধর্ষণের চেষ্টা করেছে বলে জানায় সুরভীর ও তার বাবা জসিম খাঁন, ও ভিকটিম তুহিনা। ঘটনাটি ধামা চাপা দিতে স্থানীয় দক্ষিণ মাদ্রাজ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও যুবলীগ নেতা ফারুক মেম্বার, আ’লীগ নেতা ইলিয়া হাজী, ম্যানেজিং কমিটির অপর সদস্য তোফায়েল আহমেদ সহ শুক্রবার রাতের বেলায় বাগানে বসে পকেট শালিশের আয়োজন করে। সালিসে ওয়ার্ড সভাপতি মতু মেকারের ১ লক্ষ টাকা জরিমানা নির্ধারণ করে ওই তিন শিশুর পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে ৬০ হাজার টাকা প্রদান করে বলে এলাকা সূত্রে জানা গেছে। বাকি ৪০ হাজার টাকা শালিশির খরচ ভাবত ভাগ বাটোয়ারা করে নেন ওই শালিশরা।
এদিকে শালিশদের চাপে পরে ভিকিটিম জিনিয়াকে নিয়ে তার বাবা রফিক ( রিকসা চালক) বাড়ি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। জিনিয়ার মা রুমা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, আপনাদের সাথে আমি কোন কথা বলল্লে আমাদের অনেক সম্যাসা হবে। জিনিয়া ও তার বাবা কথায় আছেন তিনি জানেন না বলে জানান।
নাম প্রকাশ না করার সর্তে একাধিক এলাকাবাসী জানান, সাংবাদিকদের ভয়ে ফারুক মেম্বার ও ইলিয়াস কাজীর চাপে পরে জিনিয়া ও তার বাবা এলাকায় চারতে বাধ্য করা হয়েছে।
এদিকে সাংবাদিকদের টের পেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ায় অভিযুক্ত ওয়ার্ড আ’লীগের সম্পাদক মতিউর রহমান লাহড়ী ওরফে মতু মিকারের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
দক্ষিণ মাদ্রাজ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন বলেন, ওই শিশুর মা শিশুকে নিয়ে আমার কাছে আসার পর আমি ম্যানেজি কমিটিকে বিষয়টি জানিয়েছি। ঘটনার পরের দিন বৃহস্পতিবার থেকে চরফ্যাশন প্রধান শিক্ষকদের ১০ দিনের প্রশিক্ষণে এসেছি। তিনি আরো দু’ই শিশু নির্যাতনের বিষয়ে কিছু জানেনা বলে জানান।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফারুক মেম্বার শালিসির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ওই শিশুর বাবাকে আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করতে বলেছি। অভিযোগ না করলে আমরা কি ব্যবস্থা নিব। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে এখন আপনার কি করনিয় আছে এমন প্রশ্নর জবাবে তিনি সু কৌশলে এড়িয়ে যান।
শশীভূষণ থানার ভারপাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা এস আই গোলাম মাওলা বলেন, আমি এখানে ৪ দিন আগে জয়েন্ট করেছি। ঘটনাস্থলে এস আই শহীদ গিয়েছেন বলে এড়িয়ে জান। এস আই শহীদের থানার বাহিরে ও তার ব্যবহীত মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেজাউল করিম বলেন, আমি এলাকায় খোজ খবর নিচ্ছি। আভিযোগ পেলে অভিযুক্তর বিরুদ্ধে যথাযত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্কুল কতৃপক্ষ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন আইনী ব্যবস্থা না নেওয়ায় ওই এলাকায় জনমনে নান প্রশ্ন ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। একে একে তিনটি শিশু যৌন নির্যাতনের ঘটনায় প্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্রী শূন্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ধরনের নর পশুদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা না হলে মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে হুমকির মুখে থাকতে হবে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিবাবক মহল।
এদিকে পকেট শালিশের মাধ্যমে ঘটনাটি ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টারত যুবলীগ নেতা ফারুক মেম্বার সহ আ’লীগ নেতা মতু মেকারের কঠিন শাস্তি দাবি করছে এলাকাবাসী।