মঙ্গলবার ● ২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » কৃষি » ভোলায় চরাঞ্চলে বাড়ছে ক্যাপসিকাম চাষ, দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানির সম্ভাবনা
ভোলায় চরাঞ্চলে বাড়ছে ক্যাপসিকাম চাষ, দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানির সম্ভাবনা
এইচ এম জাকির: ভোলার মাঝের চরের বিস্তৃর্ণ ফসলি জমিতে বাড়ছে ক্যাপসিকাম চাষ। গত দুই বছর যাবত পরিক্ষা মূলক ক্যাপসিকাম চাষে সফলতা পাওয়ায় এ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন চাষীরা। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া উৎকৃষ্ট মানের ক্যাপসিক্যাম ফলনের উপযোগী। তাছাড়া কম খরচে অধিক মুনাফা অর্জন হওয়ায় অধিকাংশ চাষীরাই এখন ঝুকছেন এ চাষে। তবে বীজ আমদানীতে অনেকটা সহজলভ্য না হওয়া কিছুটা বেগ পেতে হয় চাষীদেরকে। সরকারের পক্ষ একটু পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এখানকার উৎপাদিত ক্যাপসিকাম দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানী করা সম্ভব বলে মনে করছে স্থানিয়রা।
ভোলা সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝের চর। মেঘনার কোলে জেগে ওঠা এই বিশাল চরটিতে বসবাসরত প্রায় ১৫ হাজার লোকই মৎস্য আহরন ও কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। এ চরের মাটি ও আবহাওয়া যে কোন ফসল উৎপাদনে সহায়ক। তাই গত বছর এমনকি তার আগের বছর মাত্র ৫ হেক্টর জমিতে পরিক্ষা মূলক ভাবে ক্যাপসিকাম চাষ শুরু করেন। প্রথম বছর আশানরুপ তেমন ফলন না হলেও চাষীদেরকে লোকসানের মূখে পড়তে হয়নি। একই ভাবে গত বছরও ৫ হেক্টর জমিতেই ক্যাপসিকামের চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন চাষীরা। উচ্চ মানের ফলন ও অধিক মুনাফার পাশাপাশি হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয়েছে ৩০ মেট্রিকটন।
চাষীরা বলছেন, স্বল্প খরচে ক্যাপসিকাম চাষে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া এ চাষের জন্য উপযোগী। এমনকি উৎপাদন খরচের তুলনায় অধিক মুনাফা অর্জিত হওয়ায় বর্তমানে এ অঞ্চলের চাষীরা অন্যান্যা ফসলের পাশাপাশি ক্যাপসিকাম চাষে ঝুকে পড়ছেন। তাই গত ৫ হেক্টর জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করে উৎকৃষ্টমানের ফলনের সাথে দুই থেকে তিন গুন মুনাফা অর্জিত হওয়ায় বর্তমানে এ চরের চাষীরা ৮শ’ মেট্রিকটন উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নিয়ে প্রায় ২৫ হেক্টর জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করেছেন।
ওই চরের বাসিন্দা কাসেম পাঠানের ছেলে নয়ন বলেন, ডিগ্রী পাশ করে কোন প্রকার চাকুরী না পেয়ে গ্রামের কয়েকজন চাষী নিয়ে ২০১৪ সালে পরিক্ষমুলক ভাবে ক্যাপসিকাম চাষ শুরু করি। প্রথম বারের মতো আমরা চারজন চাষী নিয়ে প্রায় ৫ হেক্টর জমিতে এই ক্যাপসিকাম চাষ করি। প্রত্যেকেরই ফলন ভালো হলেও আশানরূপ তেমন লাভের মূখ দেখতে পাননি কেউ। ফলন আসার সাথেই অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে আমাদের বহু সবজী নষ্ট হয়ে গেছে। তবে দ্বিতীয়বার চাষ করে ভালো ফলনের মাধ্যমে প্রত্যেকেই অধিক মুনাফা অর্জন করেছে। তারা হেক্টর প্রতি উৎপাদন পেয়েছে প্রায় ৩০ মেট্রিকটন। নয়ন আরো বলেন, বর্তমানে তিনি ২ এক জমিতে ক্যাপসিক্যাম চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে ভালো ফলনও এসেছে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে ২ একরে তিনি ২০ মেট্রিকটন ক্যাপসিকাম উৎপাদন করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ওমর ফারুক বলেন, গত বছর যৌথ ভাবে ক্যাপসিক্যাম চাষ করে ভালো ফলন পাওয়ায় এ বছর নিজেই ১ একর জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করেছি। ফলনও ভালো দেখা যাচ্ছে। বাজার মূল্য ভালো থাকলে এ ফলন বিক্রিতে গত বছরের তুলনায় এ বছর অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হবে। মজিবুর রহমান, মনির পাঠান, কাসেম পাঠান তারা বলেন, ক্যাপসিকাম একটি লাভ জনক সবজী। এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া এ চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় এর ফলন ও উৎপাদন ভালো হয়েছে। স্থানীয় বাজারের এর চাহিদা না থাকলেও ঢাকার পাইকারী বাজারে এর চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। বড় আকৃতির ক্যাপসিকাম অর্থাৎ এ গ্রেট কেজি প্রতি বিক্রি করেছে ৬০-১০০টাকা এবং ছোট আকৃতির বি গ্রেট কেটি প্রতি বিক্রি করেছে ৩০-৪০ টাকা।
তবে জেলা কৃষি অফিস ও সরকারের পক্ষ থেকে কোন প্রকার নজরদারী না থাকায় এ চাষে কোন কোন সময় তাদেরকে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। তাছাড়া বীজ আমাদানীতে সহজলভ্য না হওয়ায় বিভিন্ন সময় চাষীদেরকে পড়তে হয় নানা বিরম্ভনায়। মোঃ ফারুক বলেন, বাংলাদেশে থেকে বীজ কিনে সেই বীজের ফলন ভালো হয় না। তাই এ অঞ্চলের প্রত্যেক চাষীই বাহিরের রাষ্ট্র ওমান থেকে বীজ সংগ্রহ করে ক্যাপসিকামের আবাদ করেন। এতে করে উন্নত বীজ সংগ্রহ করতে পারলেও খরচের পরিমান অনেকটা বেড়ে যায়। প্রতি কেজি বীজ ক্রয় করতে তাদেরকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা গুনতে হয়।
তবে যোগাযোগের অবস্থাপনার কারনে বিভিন্ন সময় মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে কৃষি বিভাগকে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। তাছাড়া ক্যাপসিকাম এখনো দেশের বাজারে তেমন গ্রহন যোগ্যতা না পাওয়ায় আমাদের পক্ষ থেকে এটি নিয়ে এখনো মাঠ পর্যায়ে তেমন কাজ করা হয়নি বলে জনান জেলা কৃষি সম্প্রসার অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রশান্ত কুমার সাহা। তিনি বলেন, ভোলা একটি নদী বেষ্টিত এলাকা। অধিকাংশ ফসলি জমিগুলোতে যেতে হলে কোন কোন নদী পারি দিয়ে যেতে হয়। তাই ত্রুটিপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে জমিতে গিয়ে সহযোগীতা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবুও চাষীদের যে কোন সমস্যার বিষয়ে অবগত হওয়ার সাথেই দ্রুত কার্যকরি ব্যবস্থা নেয়ারও আশ্বাস দিলেন তিনি।
-এফএইচ