মঙ্গলবার ● ২৪ জানুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » কৃষি » লালমোহনে পানচাষীদের মাঝে হতাশা !
লালমোহনে পানচাষীদের মাঝে হতাশা !
সাব্বির আলম, লালমোহন প্রতিনিধি: ভোলার লালমোহনের পানচাষীদের মাঝে চলছে ক্রান্তিকাল। উপজেলার শতশত কৃষি পরিবার শুধুমাত্র পান চাষের উপর নির্ভরশীল। শীতকালিন আবহাওয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে পানের লতার গোড়া পচে যাওয়ায় এবং ফলন কম হওয়ায় তাদের ভাগ্যে ঘনিয়ে আসছে নির্মম হতাশা। যার প্রভাব পড়েছে উপজেলার বিভিন্ন পান বাজারে পানের উচ্চ মূল্যের কারনে। পান চাষীরা বেশীর ভাগই গরিব ও অশিক্ষিত। তাছাড়া এ পেশার অন্যতম অন্তরায় কৃষি কাজের প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং প্রতি বছর বছর নদী ভাঙ্গনে বহু পানের বরজ নদী গর্ভে বিলীন হয়। সেই সাথে স্বপ্ন ভেঙ্গে বেকার ও নিঃস্ব হয়ে পড়েছে বহু কৃষি পরিবার। অনেকে এ পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। সরেজমিনে জানা যায়, শীতকাল আসলে পানের উৎপাদন কমে যাওয়ার ফলে লালমোহনের পানের বাজার ভীষণ মন্দা চলছে। ফলন কমার পাশাপাশি পান উৎপাদনের কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
কালমা ইউনিয়নের পানচাষী রাধু চরণ মাঝি জানান, তার প্রায় ৪০০ পানের বরজ। এই বরজই তার জীবিকা নির্বাহের প্রধান উপায়। সাম্প্রতিক অতিবর্ষণ ও জলাবদ্ধতায় পানের লতার গোড়া পচে গেছে। এই প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলা করে তার মতো দরিদ্র কৃষকের নতুন করে পানের লতা বরজ তৈরী করা সম্ভব নয়।
বদরপুর ইউনিয়নের পানচাষী জাকির হোসেন বলেন, আমার প্রায় ২০০ পানের বরজ। পান চাষের নিত্য প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম দিনকে দিন বেড়ে যাওয়ায় আমাকে খুবই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তাছাড়া আমি এখন পর্যন্ত কোন এনজিও বা সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কোন রকম সাহায্য বা সহযোগীতা পাইনি।
পানচাষীদের সাথে আলাপকালে আরো জানা যায়, পান চাষের প্রধান উপকরণ বাঁশ, নলখাগড়া, সরিষার খৈল, গোবর ও তিলের খৈল। এগুলোর উচ্চ মূল্যের কারণে এসব উপকরণ সংগ্রহ করে পানের ঠিক মতো পরিচর্যা করতে কৃষকদের রিতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে।
চরভূতা ইউনিয়নের পানচাষী সুবল কর্মকার জানান, পানের সাধারণত তিনটি প্রধান রোগ সর্ম্পকে আমাদের সর্তক থাকতে হয়। এগুলো হলো ছর্ম, কালিয়ারা ও ওমোদিয়া। এসব রোগের প্রতিকার খুবই ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য।
বর্তমান সরকার বিভিন্ন খাতে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে নানা মূখী পদক্ষেপ নিয়েছেন। কৃষকদের জন্য সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তাছাড়া কৃষিজাত বিভিন্ন আধুনিক উপকরণাদি ও কৃষকের কল্যাণে সুলভ মূল্যে তা সরবরাহের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু অতিব দুঃখের বিষয় পানচাষের ক্ষেত্রে সরকার খুবই উদাসীন। অথচ দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বড় একটি অংশ আসে পানের মাধ্যমে। যার প্রমাণ মেলে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে চাষীদের সাথে কথা বলে।
চরলক্ষ¥ী গ্রামের পানচাষী রতন মাঝি বলেন, পান চাষ করতে একজন পান চাষীর কমপক্ষে ৪০ শতাংশ জমি এবং গড়ে দৈনিক ২/৩ জন শ্রমিক খাটাতে হয়। এসব শ্রমিকের মুজুরি দৈনিক ১৫০/২০০ টাকা। এসব কাজ সমাধা করতে একজন মালিকের মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হচ্ছে। এ ধরনের নানাবিধ সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য সকল পান চাষীদের একটাই দাবী সরকারি বা বেসরকারি সংগঠনগুলো যেন ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে তাদের ভাগ্য উন্নয়নে এগিয়ে আসে এবং পাশাপশি আধনিক কৃষি তথ্য দিয়ে পান চাষিদের তাদের কাজে আরো উদ্বুদ্ধ করে পানের উৎপাদনের মাধ্যম দেশের অর্থনীতিকে আরো সমৃদ্ধ করে।
-এফএইচ