মঙ্গলবার ● ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » চরফ্যাশন » চরফ্যাশনে ১৯৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা হরিলুট
চরফ্যাশনে ১৯৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা হরিলুট
চরফ্যাশন প্রতিনিধি : ভোলার চরফ্যাশনে ১৯৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন খাতে ক্ষুদ্র মেরামত, সস্নিপ, শ্রেণি সজ্জিতকরণ এবং মেইনটেনেন্স প্রকল্পের কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতিদের বিরুদ্ধে। এঘটনায় অভিভাবক আবদুল মালেক পাটোয়ারী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে ক্ষুদ্র মেরামতের অর্থ লুুটপাটের বর্ণনা দিয়ে অভিযোগ দাখিল করেছেন।
জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩৬টি বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য এক লাখ ও ১৯৮টি বিদ্যালয়ে সস্নিপের ৪০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়। পাশাপাশি ২০৯টি বিদ্যালয়ে পাঁচ হাজার টাকা করে রুটিন মেইনটেনেন্স এবং শ্রেণিকক্ষ সজ্জিতকরণে পাঁচ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়। চলতি বছরের জুন ও জুলাই মাসে চরফ্যাশন উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে এসব অর্থ ছাড় করা হয়। অভিযোগ উঠেছে বেশির ভাগ বিদ্যালয়ের ছাড়কৃত অর্থ ভুয়া বিল-ভাউচার দাখিল করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাদের দুর্বল তদারকির সুযোগ নিয়ে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সঙ্গে আঁতাত করে অধিকাংশ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা কোনো কাজ না করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
সম্প্রতি উপজেলার আয়েশাবাগ, পশ্চিম ফরিদাবাদ,শশীভূষণ ফকিরার হাট সরকারী প্রাথমিক এবং দক্ষিণ কলমী সরকারি প্রাথমিকসহ কয়েকটি বিদ্যালয় পরিদর্শন করে দেখা গেছে প্রতিটি বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামতের এক লাখ টাকা, সস্নিপের ৪০ হাজার টাকা, রুটিন মেইনটেনেন্সের পাঁচ হাজার টাকা এবং শ্রেণি সজ্জিতকরণের পাঁচ হাজার টাকায় কোনো কাজ হয়নি।
চর যমুনা নাদের আলী বিদ্যালয়ে একই অর্থ বছরে বিধিবহির্ভূতভাবে ক্ষুদ্র মেরামতে দুই লাখ টাকা পেয়েও কাজ না করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। আয়েশাবাগ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সলিমুল্যাহ, পশ্চিম ফরিদাবাদ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রফিক উল্যাহ এবং চর যমুনা নাদের আলী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল আজিজ অর্থ হরিলুটের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন নিয়মানুযায়ী কাজ করে বিল ভাউচার দাখিল করা হয়েছে। যদিও বিদ্যালয়ে কোনো কাজের চিহ্ন তারা দেখাতে পারেননি।
পশ্চিম ফরিদাবাদ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলেছেন ক্ষুদ্র মেরামত এবং সস্নিপের দেড় লাখ টাকার বরাদ্দের বিপরীতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দুই ব্যাগ সিমেন্ট ক্রয় করে নিজের বাড়িতে নিয়ে গেছেন।
দক্ষিণ কলমী এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দু‘জন সহকারী শিক্ষক পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান, চারটি খাতে দেড় লাখ টাকা বরাদ্দের কোনো কাজই হয়নি। সব টাকা প্রধান শিক্ষক হাতিয়ে নিয়েছেন।
অপরদিকে, ৩৬টি বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামতে সস্নিপের ৪০ হাজার, রুটিন মেইনটেনেন্সের পাঁচ হাজার এবং শ্রেণি সজ্জিতকরণের পাঁচ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। দক্ষিণ নীল কমল, চর আল কলমী এবং চর নুরুদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে কোনো কাজের চিহ্ন মেলেনি।
চর কলমী এবং নুরুদ্দিনের সহকারী শিক্ষকরা জানান, সদ্য জাতীয়করণকৃত বিদ্যালয়গুলোতে সস্নিপের টাকা বরাদ্দ হয়নি বলে প্রধান শিক্ষকরা জানিয়েছেন। সহকারী শিক্ষকরাও প্রধান শিক্ষকদের দেয়া তথ্য সঠিক বলে জানতেন।
দক্ষিণ নীল কমল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এবং এসএমসির সভাপতি জিন্নাহ জানান, বিদ্যালয়ে সস্নিপের ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দের কথা তারা জানতেন। সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে প্রধান শিক্ষক সব টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালাম জানান, অনুষ্ঠিত প্রধান শিক্ষকদের মাসিক সভায় গত অর্থবছরে কেলেঙ্কারি নিয়ে কথা বলেছেন এবং আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে গত অর্থবছরের বরাদ্দের কাজের পাশাপাশি চলতি বরাদ্দের কাজ সঠিকভাবে শেষ করার জন্য প্রধান শিক্ষকদের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রতিটি বিদ্যালয়ের কাজ সরজমিনে তদন্ত করা হবে। কোনো ব্যতিক্রম ধরা পরলে অর্থ ফেরত দিতে হবে বলে সব প্রধান শিক্ষককে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।
-কেএস/এফএইচ