বোরহানউদ্দিনে ভূমিষ্ট সন্তানের পিতৃপরিচয়ের দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে প্রতিবন্ধি ধর্ষিতার পরিবার

ফরহাদ হোসেন: ভোলার বোরহানউদ্দিনে ধর্ষণের ফলে অন্তঃস্বত্বা প্রতিবন্ধি মমতাজের (৩০) ভূমিষ্ট সন্তানের পিতৃপরিচয়ের দাবিতে স্থানীয় প্রভাবশালীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ধর্ষিতার পরিবার। আজ ২৬ নভেম্বর শনিবার ভোররাতে প্রতিবন্ধি মততাজ একটি কণ্যা সন্তান প্রসব করে। এদিকে আদালতে মামলা করার পরেও প্রভাবশালীদের ছত্রছাঁয়ায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে অভিযুক্ত গোলাম রহমান মানিক (৫০)। বোরহানউদ্দিন উপজেলার কুড়ালিয়া ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের নুর মিয়ার হাট এলাকায় এঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ ও তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, প্রায় ১৫ বছর আগে কুড়ালিয়া ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের নুর মিয়ার হাট এলাকার নুর মোহাম্মদ’র মেয়ে মমতাজের সাথে ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ব্যাংকের হাট এলাকার বাসিন্দা ফারুকের বিয়ে হয়। মমতাজ বধীর ও কথা অস্পষ্ট হওয়ায় তার স্বামী তাকে তার পিত্রালয়ে রেখে অন্যত্র চলে যান।
মমতাজের পিতা নুর মোহাম্মদ অভিযোগ করে বলেন, আমি জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন গ্রামে গিয়ে ফেরী করে প্লাস্টিকের মালামাল বিক্রি করি। ওর মা মানুষের বাড়িতে ঝি এর কাজ করে। এই সুযোগে মমতাজকে ঘরে একা পেয়ে পাশ^বর্তী মৃত হাবিবউল্যাহ পন্ডিতের ছেলে গোলাম রহমানের মানিক (৫০) একাধিকবার জোর পূর্বক ধর্ষণ করে। বিষয়টি মমতাজ আমাদেরকে জানালে আমি একদিন দুপুরে কাজে না গিকে মানিককে এসে আমার ঘরে আটক করি। পরে বাজার থেকে লোক এসে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। বিষয়টি স্থানীয়গণ্যমান্যদের জানালে তারা ফসালার নামে আমাদের সাথে তালবাহানা করতে থাকেন।
মামলার বাদী মা মোসাঃ কহেনুর বেগম বলেন, ধর্ষণের কিছু দিন পর জানতে পারি মমতাজ অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পরেছে। তারপর থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত এলাকার মেম্বার, চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় গণ্যমান্যদের পিছনে সুবিচারের জন্য ঘুড়ে বিচার না পাওয়ায় গত ১০/৫/১৬ ইং তারিখে ভোলার বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ৩১৪/১৬ মামলা দায়ের করেন।
আদালতে মামলার করার পরও প্রভাবশালীদের ছত্রছাঁয়ায় এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে মানিকা। ধর্ষিতার মা অভিযোগ করে বলেন, আমারা গরিব বিধায় সমাজে আমাদের কোন সু-বিচার নেই!
সদ্যভূমিষ্ট নবজাতকের পিতা মানিক বলেই দাবি করেছেন প্রতিবন্ধি মমতাজ। অন্তঃস্বত্ত্বা হওয়ার পর থেকে ভূমিষ্ট সন্তানের পিতৃপরিচয়ের দাবিতে স্থানীয় মেম্বার, চেয়ারম্যান,  গ্রামের প্রভাবশালীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ধর্ষিতা ও তার পরিবার। কিন্তু কোন সু-বিচার পাননি তারা। এদিকে এলাকাবাসী লম্পট মানিকের শাস্তি দাবি করেছেন।
এব্যাপারে অভিযুক্ত মানিকের বাড়িতে গেলে তিনি সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে বাড়ি থেকে দৌড়ে পালিয়ে যান। পরবর্তীতে তাকে পেয়ে ঘটনার বিষয় জানতে চাইলে সে কোন উত্তর দেয় নি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মিলন মাতব্বর বলেন, আমারা সদ্যভূমিষ্ট নবজাতকে পিতৃপরিচয়ের জন্য আগ থেকেই অনেক চেষ্টা করেছিলাম। উপর মহলের প্রভাবের কারণে সত্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়ে উঠেনি।
এব্যাপারে ভোলা সদর সার্কেল এএসপি মামুনুর রশিদ জানান, আমরা তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছি। আদালতের নির্দেশনা পেলে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হবে বলে জানান তিনি।
সদ্যভূমিষ্ট সন্তানের পিতা কে? কে তার জীবনের দায়িত্ব নেবে? কি তার পিতৃপরিচয়! পিতৃপরিচয়ের বিহীন সে সমাজের অবেহেলীত বুঝার পাত্র নয় তো ?

এইআর