মঙ্গলবার ● ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » আইন ও অপরাধ » ভোলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দুর্নীতির অভয়ারণ্য, ঘুষ ছাড়া মিলছে না পাসপোর্ট
ভোলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দুর্নীতির অভয়ারণ্য, ঘুষ ছাড়া মিলছে না পাসপোর্ট
স্টাফ রিপোর্টার: ভোলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের ব্যবপক ঘুষ বাণিজ্যে, অনিয়ম, দুর্নীতির সহ দালালদের দৌড়ত্ম বেড়েই চলেছে। প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন দুরদূরান্ত থেকে পাসপোর্ট নিতে আসা গ্রাহকরা। ঘুষ ছাড়া কারো ভাগ্যে মিলছেনা পাসপোর্ট । অফিসের ২য় তলা উপ সহকারী পরিচালকের কক্ষে ঘুষ বাণিজ্যের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।
দালাল ও অফিস কর্মকর্তার ঘুষ বাণিজ্যঃ অনুসন্ধানে জানা গেছে, সক্রিয় দালালচক্রের খপ্পরে পড়ে আবেদনকারীদের সময় ও অর্থের অপচয় সহ নানা ভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা। নির্ধারিত অঙ্কের বাড়তি টাকা দালালদের হাতে ধরিয়ে দিলেই আবেদনপত্র জমা হয়ে যায়। আবার অনেক সময় বাড়তি টাকা তাদের মন মতো না দিলে ইচ্ছে করে ভুল করে দিচ্ছে পাসপোর্ট করতে আসা গ্রাহকদের। আর অবৈধ লেনদেনের পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করেন অফিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তার কক্ষে বসে ক্লো সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে অফিসের বাহিরে ও ভিতরে সব মনিটরিং করেন। এছাড়া কোন সম্যাসা হলেই তিনি অফিসের নিচে এসে গ্রাহকদের ভয়ভীতি দেন। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন গ্রামঅঞ্চল থেকে আসা সাধারণ মানুষ। তার সহযোগীতায় দালাল’রা গ্রাহকের কাছ থেকে ২/৩শ টাকা পায় বাকি ১২শ বা ১ হাজার টাকা পায় অফিস কর্মকর্তা। তিনি স্বাক্ষর না করলে কেউ পাসপোর্ট করতে পারে না। তিনি কাগজপত্র যাচাইপূর্বক তার সিল বসিয়ে ফাইনাল স্বাক্ষর করে ফিংগারিং ও ছবি তোলার করার নির্দেশ দেন।
প্রতি পাসপোর্ট বাবদ সরকারী জমা এবং ঘুষ ঃ সরকারী নিয়মানুযায়ী অতি জরুরী একটি পাসপোর্ট করতে ব্যাংক জমা ৬,৯০০ টাকা, সাধারণ ভাবে একটি পাসপোর্টের জন্য ব্যাংকে জমা ৩,৪৫০ টাকা। নিয়মানুযায়ী সোনালী ব্যাংক ওই টাকা জমা দিয়ে ব্যাংক ড্রাফ্ট ফরমে সংযুক্ত করতে হবে। আর উপ সহকারী পরিচালক ফি ১ হাজার টাকা ফাইলের সাথে দিতে হয়।
বিশেষ ব্যবস্থায় দালালদের সহযোগিতায় পাসপোর্টঃ কাঙ্খিত পাসপোর্ট গ্রাহক শুধু ২ কপি ছবি নিয়ে আসলে ফরম পূরন করা, চেয়ারম্যান, কমিশনারদের সনদপত্রের কার্যক্রম সহ সরকারী বেসরকারী গেজেটেট কর্মকর্তার সত্যায়িত সিল ও সই সহ ফিঙ্গারিং মাত্র ৩০ মিনিটে কমপ্লিট হয়ে যায়। শুধু শর্তানুযায়ী ওই দালালদের টাকা দিতে হবে। এর মধ্যে বৃহত্তম একটি অংশ পান উপ-সহকারী পরিচালক। কেননা তারই স্বাক্ষর সহ দ্রুত কার্যক্রম সম্পন্ন করার নির্দেশনা থাকে। এমনকি এ বিশেষ ব্যবস্থার মধ্যে সাত কর্মদিবসে ভেরিফিকেশন ছাড়াই টাকার বিনিময় ওই পদ্ধতিতে পুলিশ রিপোর্ট করানো যায়।
অফিসে পাসপোর্টের আবেদন জমার নিয়মঃ সরকারী নিয়মানুযায়ী সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত পাসপোর্ট ফাইল জমা নেয়া হলেও নানা ভুল ধরে জনপ্রতি গ্রাহককে ঠিক করে আনতে বলা হয়। কিন্তু ১ হাজার বা ১৫শ টাকা দিলে ভুল শুদ্ধ হয়ে যায়। তবে ওই গ্রাহক সকাল থেকে লাইনে দাড়িয়ে দুপুরে বা তার পূর্ব মুহূর্তে জমা দেয়ার সময় ওই ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে তার ওই দিন লাইনে দাড়িয়ে জমা দেয়ার ইচ্ছা থাকলেও অফিস সময় শেষ হয়ে যায়। হয়তো পরের দিন আসতে হবে, নয়ত টাকা দিলে অল্পের মধ্যে সকল কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।
অনিয়ম দুর্নীতি হাতেনাতে ধরার প্রমাণঃ আবেদন জমা নেয়ার সময় সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত লোক দেখানো। মূল দুর্নীতি শুরু দুর দুরান্ত থেকে আসা লোকদের বিশেষ কায়দায় পাসপোর্টের আবেদন জমা নেয়ার হয় দুপুর ২টার পরে। সেখানে দেখা যায় নিচ তলায় গেইট আটকিয়ে ২য় তলায় রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উপ সহকারী পরিচালকের রুমে লোকেদের ভীড়। সেখানেই চলে টাকার লেন দেন বা দুর্নীতি।
এ সকল বিষয়ে উপ-সহকারী পরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক তার অফিসের টেলিফোনে যোগাযোগ করলে তিনি তার মোবাইল ফোনের নম্বর না দিয়ে বলেন, অফিস স্টাফদের কাছে আত্মীয় স্বজন পরিচয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি আসলে এভাবে এসে পাসপোর্ট ফরমের কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হয়। উপ-সহকারী পরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক প্রতি পাসপোর্ট ফরমে স্বাক্ষর ফি ১ হাজার টাকা নেয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিদের মতামতঃ পাসপোর্ট ফরম জমা দেয়ার পূর্বে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে গ্রাহককে ভুলগুলো আগে ধরিয়ে দিলে তাদের হয়রানী হতে হয় না। আবেদন জমা দিলে জানতে পারে তার ফরমে ভুল রয়েছে। অনেক সময় দেখা যায় ২/১ স্থানে লেখা না হয়ে থাকলেও গ্রাহককে সংশোধনের জন্য বলা হয়। পরদিন আবার নতুন ভাবে দৌড় শুরু হয়। তাই বাধ্য হয়ে ঝামেলা মনে করে পাসপোর্ট গ্রাহকরা হয়রানী থেকে বাঁচতে টাকা বেশি গেলেও দালালদের কাছে ধরা দিতে হয়।
পাসপোর্ট অফিসে গ্রাহকদের হয়রানি বন্ধের ব্যবস্থা করার জন্য জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন গ্রাহকরা।
এমএইচএম/এফএইচ