বুধবার ● ২৪ আগস্ট ২০১৬
প্রথম পাতা » ধর্ম » শান্তি ও মুক্তির ধর্ম ইসলামে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের স্থান নেই
শান্তি ও মুক্তির ধর্ম ইসলামে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের স্থান নেই
মুহাম্মদ শওকাত হোসেন : ইসলাম হচ্ছে মানবতার মুক্তি ও শান্তির ধর্ম। বিশ্ব শান্তির মহান দূত হচ্ছেন আমাদের প্রিয় বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)। তিনি তাঁর ২৩ বছরের নবূয়তী জীবনে শান্তি, সৌহার্দ, সহানুভূতি ও সাম্যের আদর্শে জনগণকে সত্যের পথে চেতনাদীপ্ত করে গণবিপ্লবের মাধ্যমে ইসলামকে সমাজ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁর নেতৃত্বাধীন ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্রে মুসলিম অমুসলিশ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত ছিল। মক্কার ১৩ বছরের জেন্দেগীতে কাফের মুশরিকদের সকল নির্যাতন নিপিড়ন তিনি মুখ বুঝে সহ্য করেছেন। প্রিয় সাহাবীদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করার পরেও তিনি নিজে কিংবা কাউকে তলোয়ার নিয়ে প্রতিশোধের অনুমতি দেনি। এমনকি পবিত্র বায়তুল্লাহ সিজদার সময় মহানবী সংকে ঘাড়ের উপরে পশুর নাড়িভূড়ি চাপিয়ে নির্যাতন কিংবা তাদেরকে সারা শরির প্রস্তুর মেরে রক্তাক্ত করার পরেও তিনি কাউকে একটি কটু কথা পর্যন্ত বলেননি। উপরন্ত তাদের জন্য দোয়া করেছেন। শেষে আবু তালিবে দীর্ঘদিন সবাইকে নিয়ে সামাজিক বয়কট (কারাজীবন) যাপন করেও অস্ত্র হাতে নেননি। এমনকি শেরে খোদা হযরত আলী (রাঃ), হযরত ওমর (রাঃ), হযরত হামজা (রাঃ) এর মতো বীর পুরুষগণ ইসলাম গ্রহণের পরেও তিনি কাউকে কাফের মোশরেকদের উপর চড়াও হতে অনুমতি দেননি। বিশ্বে আজ পর্যন্ত এ ধরনের অহিংসা, ত্যাগ ও সত্য সুন্দরের শান্তিপূর্ণ বাস্তবায়নের আদর্শ আর কেউ কোথাও উপস্থাপন করতে পারেনি।
মহানবী (সাঃ) এর নেতৃত্বাধীন ইসলামী রাষ্ট্র ও মুসলামনদেরকে নিশ্চিহœ করার উদ্দেশ্যে মক্কা থেকে শত সহ¯্র মাইল অতিক্রম করে কাফির মুশরিকরা মদীনা আক্রমন করেছিল। তখনই কাফের মুশরিকদের অন্যায় আক্রমন প্রতিরোধ করা এবং মদীনার ইসলামী রাষ্ট্র ও নাগরিকদের জীবনের হেফাজতের লক্ষ্যে বদরের যুদ্ধে মুসলমানরা মহানবী (সাঃ) এর নেতৃত্বে প্রথম অস্ত্র ধারণ করে মাত্র ৩১৩ জন রোজাদার সৈন্য নিয়ে সহ¯্রাধিক তৎকালীন আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত কুরাইশ বাহিনীর সঙ্গেঁ আল্লাহর সাহায্য নিয়ে বিজয় লাভ করেন। এর মাধ্যমে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে যায় যে, মুসলমানগণ শুধুমাত্র ইসলামী রাষ্ট্র তথা হুকুমতের নির্দেশে জনগণের জানমাল হেফাজতের লক্ষ্যে কিংবা শত্রুদের আক্রমন প্রতিহত করার জন্য অস্ত্রহাতে নিয়ে পারবে। পবিত্র কুরআন পাকে এ ধরনের অবস্থায়ই অস্ত্র হাতে নেয়া, যুদ্ধ করা মরা এবং মারার হুকুম দেয়া হয়েছে। অন্যত্থায় কেউ যদি একজন মানুষকে হত্যা করে তবে সে গোটা মানব জাতিকে হত্যা করেছে বলে বলা হয়েছে। এবং হত্যাকারীর শাস্তি মৃত্যুদন্ড পবিত্র কোরআনেই নির্ধারন করে দিয়েছে।
ইসলামী পরিভাষা জিহাদ শব্দের অপব্যাখ্যা দেয়ার কোন সুযোগ নেই। কারণ জিহাদ শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘নিরন্তর প্রচেষ্টা চালানো’। আল্লাহর পথে জিহাদ করার মানে হচ্ছে একজন মুসলমানের অর্থ, সময় ও মেধা দিয়ে ইসলামের জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালানো। বিভিন্নভাবে এ জিহাদ সম্পাদন করা হয়। নিজের কু-প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদ করা, বলা হয়ে থাকে ‘নফছ’ এর বিরুদ্ধে জিহাদ হচ্ছে উত্তম জিহাদ। সামাজিক অন্যায়, অবিচার, জুলুম, অপরাধ দুর করার লক্ষে চেষ্টা করা, মুখে বলা, মনে মনে ঘৃণা করাও জিহাদের অন্তর্ভূক্ত। এমনকি অত্যাচারী শাসকের সামনে সত্য কথা বলাও জিহাদ। সর্বোপরি সমাজ সভ্যতায় মহানবী (সাঃ) এর আদর্শ তথা ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সর্বাত্মক ত্যাগ স্বীকার করাই হচ্ছে ‘জিহাদ ফীসাবিলিল্লাহ’। এবং ইসলাম কায়েমের পথ কখনো সশস্ত্র বা জঙ্গিবাদ হতে পারে না। এটা হতে হবে জনগণকে শান্তি ও সৌহাদ্যপূর্ণভাবে বুঝিয়ে মত তৈরী করে সচেতন জনগণের ঐক্যবদ্ধ গণ জাগরণের মাধ্যমে। অস্ত্র দিয়ে মানুষ হত্যা করে না। শুধু মাত্র ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর সেই রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ও জনগণের জানমালের রক্ষার জন্যই রাষ্ট্রের নির্দেশে একজন মুসলিম অস্ত্র হাতে নেবে। এর আগে অস্ত্র হাতে নেয়া শুধু বে আইনীই নয়, ইসলামের দৃষ্টিতে মৃত্যুদ- যোগ্য অপরাধ।
বর্তমান ইসলামের নাম দিয়ে যে জঙ্গিবাদ চলছে এটা বাংলাদেশের কোন আঞ্চলিক সমস্যা নয়। আন্তর্জাতিক সমস্যা। এ জঙ্গিবাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে শান্তির ধর্ম ইসলামের সঙ্গে জঙ্গিবাদের কলঙ্ক লেপনের মাধ্যমে ইসলামের প্রতি বিশ্ববাসীকে বিরুপ করা, মুসলামনদের মধ্যে অনৈক্য যুদ্ধ সৃষ্টি করা সবোপরি ইহুদীবাদ তথা ইসরাইল রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যেই মার্কিন ও ইউরোপীয় সা¤্রাজ্যবাদে তাদের দোষর অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের সহায়তায় তালেবান, আল কায়েদা, আইএস সহ নানা গ্রুপ সৃষ্টি করে গোটা মধ্য প্রাচ্যকে যুদ্ধ ক্ষেত্র বানিয়েছে। এরাই এখন বাংলাদেশকেও তাদের টার্গেটে পরিনত করেছে।
বাংলাদেশে অতীতে কমুনিষ্ঠ সন্ত্রাসবাদ চালু ছিল। তাও ঐ সা¤্রাজ্যবাদীরা পুজিবাদের শত্রু কমুনিজমের নামে সে সব সন্ত্রাসী সংগঠনের জন্ম দিয়েছিল। সোভিয়েট রাশিয়ার পতনের পরে তাদের প্রধান শত্রু হচ্ছে ইসলাম। তাই এবারের টার্গেট মুসলামন। তাই ওরা খদ্দর পরা সন্ত্রাসীদেরকে রাতারাতি টুপি দাড়ি দিয়ে ইসলামী জঙ্গিবাদী বানিয়ে দিয়েছে। ২৫ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজেন হোটেলে হামলা বিদেশীদের হত্যা, শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতের ঘটনা কল্যাণপুরে ৯ জঙ্গি নিহত হওয়াসহ একটার পর একটা যে সব ঘটনা ঘটছে যে কোন দেশ প্রেমিক নাগরিক তা দেখে উদ্বিগ্ন। এটা স্পষ্ট যে এসবের সঙ্গেঁ এ দেশের কোন ইসলামী মূল ধারার সংগঠন, মাদ্রাসা মসজিদ বা কোন সত্যিকারে মুসলামন জড়িত নয়। এসবই হচ্ছে বাইরে থেকে চাপিয়ে দেয়া হতাশ তরুণদের বিভ্রান্ত করে কৃত্তিম জঙ্গি বানানোর মাধ্যমে তাই এদেশের সরকার ও জনগণ যদি সচেতন থাকে তাহলে এ সমস্যা অবশ্যই সমাধান হবে। তবে এর স্থায়ী সমাধানের জন্য দেশের সকল শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধর্মীয় পরিপূর্ণ শিক্ষা বাধ্যতামূলক করে শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন। তাছাড়া জঙ্গিবাদের নামে যাতে নিরাপরাধ কোন মানুষকে হয়রানী কিংবা হত্যা করা না হয় সেটাই সরকার ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে নিশ্চিত করতে হবে।
আমরা সবাই চাই চাপিয়ে দেয়া জঙ্গিবাদের ছোবল থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হোক। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে সচেতন হতে হবে এবং ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিতে হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক
দৈনিক আজকের ভোলা