রবিবার ● ২৪ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » চরফ্যাশন » চরফ্যাশন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপবৃত্তির টাকা বিতরণে হরিলুট
চরফ্যাশন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপবৃত্তির টাকা বিতরণে হরিলুট
এম আমির হোসেন, চরফ্যাশন প্রতিনিধি: চরফ্যাশন উপজেলার একধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপবৃত্তি বিতরণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিভাবকদেরকে কাছ থেকে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা ৩/৪শ টাকা করে উত্তোলন করা হয়েছে। ওসমানগঞ্জ-৩ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অভিভাবকদের কাছে খরচের জন্যে উত্তোলনকৃত ২৫ হাজার ৮০০ টাকা রবিবারে আনুষ্ঠানিক ভাবে ফিরত দেয়া হয়েছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, চরযমুনা নাদেরীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভ্যানুতে মোট ৮টি প্রতিষ্ঠানের উপবৃত্তি বিতরণ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে মুন্সিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উত্তর চরনুরুল আমীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শ’শ অভিভাবকরা প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন। সংবাদকর্মীরা তাদের বক্তব্য শুনে রেকর্ড-ভিডিও করেন। ৫০নং উত্তর চরনুরুল আমীন প্রথামিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক ফতেমা বেগম প্রধান শিক্ষক শাহাজানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, তার মেয়ে মিতুর নাম বসাতে নেয়া হয়েছে ২০০ টাকা, ছবিতে ৮০টাকা, কার্ড ছাড় করতে ১০০ টাকা মোট ৩৮০টাকা নেয়া হয়েছে। শিশু শ্রেণিতে পড়ে মাইনুরের মা অভিযোগ করেন, তার কাছ থেকে ৩০০ টাকা নেয়া হয়েছে। মুন্সির হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র আমজাদ হোসেন বলেন, তার কাছ থেকে কার্ড বসাতে ১০০ টাকা, ছবি তোলতে দু’বার ১২০ টাকা করে মোট ২২০ টাকা নিয়েছে প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন। ওই বিদ্যালয়ের অধিকাংশ টাকা সহকারি শিক্ষক হুমায়ুন কবির উত্তোলন করেছেন বলে জানা গেছে। সহকারী শিক্ষক হুমায়ুনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীর সাথে অসুভ আচারণ করারও অভিযোগ রয়েছে। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ১৭বছর পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করে ক্ষমতার দাপটে প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট করেছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
এছাড়াও উপবৃত্তির কার্ড বিতরণে ব্যাংকের সাথে প্রতিষ্ঠান প্রধানের কার্ডের কোন মিল পাওয়া যায়না। অগ্রণী ব্যাংক ব্যবস্থাপক গণেশ চন্দ্র দেবনাথ মুন্সির হাট সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ে কার্ড ৬০৩ বিতরণ কথা বললেও ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ৪৭০টি কার্ডের কথা স্বীকার করেছেন। বাকী কার্ড কোথায় আছে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ব্যাংকের হিসাব ভূয়া। আমি ১৭ বছর পর্যন্ত এই বিদ্যালয়ের সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছি। চেয়ারম্যান আমার পক্ষ্যে আছে। সাংবাদিকরা লেখলে আমার কিছু হবেনা। স্থানীয়রা জানান, বাকী কার্ড গুলো ব্যাংকের অফিসার ও ট্যাগ কর্মকর্তার সাথে যোগসাজশে ২৫ ভাগ টাকা ব্যাংক অফিসারকে দিয়ে টাকা উত্তোলনকৃত বাকী টাকা স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি ভাগবাটোয়ারা করা হয়। উত্তর চরনুরুল আমীন প্রাথামিক বিদ্যালয়ের ব্যাংক থেকে ৩৯৩ টি কার্ড দিলেও প্রধান শিক্ষক মো.শাহাজান ২২০ কার্ডের কথা স্বীকার করেছেন। বাকী কার্ডের ব্যাপারে বললে প্রধান শিক্ষক ওই গুলো স্কুলে আছে বলে জানান। মুন্সির হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট বরাদ্দ ৬ লাখ ৫৮ হাজার ৫০০ টাকা, উত্তর চরনুরুল আমীন ২লাখ ৮২ হাজার ২০০ টাকা বরাদ্দ রয়েছ। এব্যপারে প্রধান শিক্ষক শাহাজান বলেন, কিছু টাকা খরচের ভাবত উত্তোলন করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শাহাবুদ্দিন মেম্বার বলেন, ১৮হাজার টাকা উত্তোলন করেছে প্রধান শিক্ষক ওই টাকা দিয়ে স্কুলের কাজ করানো হবে। সিলিপের ৪০ হাজার টাকার কথা বললে তিনি এখনও কাজ করেনি বলে জানান।
এদিকে রবিবার সকাল সাড়ে ১০ টার সময় আবুবক্করপুর ইউপির চেয়ারম্যান সিরাজ জমাদার ওচমানগঞ্জ ৩ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবি আবদুল্লাহ নাগর উপবৃত্তির খরচ ভাবত অভিভাবকদের কাছ থেকে মোট ২৫,৮০০টাকা উত্তোলন করেছে। ওই টাকা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষক, সাংবাদিক ও অভিভাবকদের উপস্থিতিতে অভিভাবকদের মধ্যে উত্তোলকৃত টাকা ফিরত দেয়া হয়।
স্থানীয়রা জানান, যে কাজটি করবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তা করেছে ইউপির চেয়ারম্যান সিরাজ জমাদার। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় বেশ তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। অগ্রণী ব্যাংকের উপবৃত্তি বিতরণ কৃত অফিসার ফারুক হোসেন বিদ্যালয়ের কার্ড ও বিতরণকৃত টাকার পরিমানের তথ্য প্রদান করতে পারেনি। তবে মুন্সির হাট সরকারি স্কুলে ১০ হাজার টাকা সরকারি খাতে ফিরত যাচ্ছে বলে জানান।
অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক গনেশ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, উপবৃত্তি অনিয়মের প্রতিরোধের বিষয় আমাদের কোট হাত নেই। আমাদের আওতায়ধীন মোট ১৩৩ স্কুলের জন্যে ৪ কিস্তিতে জুলাই-১৫ থেকে ৩০জুন/১৬ পর্যন্ত মোট বরাদ্দ রয়েছে ৪কোটি ৯৩ লাখ ৩৫ হাজার ১০০ টাকা রয়েছে। রবিবার টাকা বিতরণ করা শেষ হয়েছে। সরকারি খাতে কত টাকা ফিরত যাচ্ছে তার তথ্য এখনও আমরা মিলাতে পারিনি।
এব্যপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আ. ছালামের ফোনে যোগাযোগ করতে চাইলে ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভাব হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল কমির বলেন, উপবৃত্তিতে অনিয়ম ও দুর্নীতি ঠেকাতে মনিটরিং করার জন্যে এবার প্রতিটি বিতরণী কেন্দ্রে সরকারি ভাবে ট্যাগ অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। কোন প্রধান শিক্ষক অনিয়ম করে থাকলে তাদের সম্পর্কে আমাদেরকে জানান, আমরা ব্যবস্থা নিব।
এফএইচ