সোমবার ● ২৫ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » জাতীয় » ভোলার সাগর উপকূলে দূর্যোগ ও জলদস্যুদের আক্রমনে প্রশাসনের সহযোগীতায় অসন্তোষ্ট জেলেরা !
ভোলার সাগর উপকূলে দূর্যোগ ও জলদস্যুদের আক্রমনে প্রশাসনের সহযোগীতায় অসন্তোষ্ট জেলেরা !
এস,ইউ সোহেব: ভোলার বঙ্গোপসাগর ও মেঘনা উপকূলে জলদস্যুদের হামলায় অতিষ্ঠ জেলেরা। গত দুই সপ্তাহে অন্তত ১০টি ডাকাতি ও হামলার ঘটনা ঘটেছে এ এলাকায়। এসময় জলদস্যুদের ছোড়া গুলিতে মহসিন (৪৫) নামের এক জেলে নিহত হন। আহত হন অন্তত ৪০ জেলে। এর আগে জলদস্যুদের হাতে অপহৃত হন চরফ্যাশন ও দৌলতখানের আরো ১৫ জেলে। জলদস্যুদের অত্যাচারে ভোলার জেলেরা সাগরে যাওয়ার আগ্রহ হারাচ্ছেন দিন দিন।
প্রাকৃতিক দূর্যোগ, জলদস্যুদের আক্রমণ-হামলায় সাগরে ভাসতে থাকা জেলেদের উদ্ধারে কোস্টগার্ড ও পুলিশ প্রশাসন সঠিক সময়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করেনা বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসকল অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করা হয়েছে।
মনপুরার নুরুল ইসলাম মাঝি বলেন, বঙ্গোপসাগর, মেঘনা নদীর উপকূলের জলসীমায় জল্যদস্যুরা গণডাকাতি, হামলা, অপহরণ, মাছ-জালসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে। মাছ ধরার মৌসুমে কোস্টগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন কোনো তৎপরতা না থাকায় হঠাৎ করে জেলেদের ওপর হামলা, লটুপাট, অপহরণ ও চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে দস্যুরা। জলদস্যুদের হামলার ভয়ে জেলেরা এখন আর সাগরে যেতে চান না। গত ১৭ জুলাই ভোর রাতে মনপুরা ও চট্টগ্রাম সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে গ্যাস ফিল্ড এলাকায় মাছ ধরার ট্রলার এফবি শারমিনে জলদস্যুদের হামলার পর গুলিতে ট্রলারে থাকা ১ জেলে নিহত ও অপর ২০ জেলে আহত হন। নিহত মহসিনের বাড়ি মনপুরা উপজেলার ৩ নং উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডে আনন্দবাজার এলাকায়।
ওই ট্রলারে থাকা বশির সারেং বলেন, রোববার ভোররাতে সাগর মোহনায় মাছ ধরা অবস্থায় জলদস্যুরা ট্রলার লক্ষ করে এলোপাথাড়ি গুলি করে ও হামলা চালায়। এতে তাদের ট্রলারে থাকা জেলে মহসিন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। পরে জলদস্যুরা ট্রলারে উঠে এলোপাতাড়ি জেলেদের মারতে থাকে। তখন ট্রলারে থাকা জেলেরা সাগরে পড়ে যায়। একপর্যায়ে জলদস্যুদের পায়ে ধরে বশির সারেং সাগরে পড়ে যাওয়া মাঝিদের ট্রলারে উঠিয়ে নেয়। জলদস্যুরা সকল জেলেকে ট্রলারের ভেতরে আটকে রাখে। পরে তাদের ট্রলারসহ জলদস্যুদের ট্রলার নিয়ে সমুদ্রে মাছ ধরা অবস্থায় অন্য ট্রলারে ডাকাতি করে। ডাকাতি শেষে ট্রলারে থাকা মাছ, জাল ও ইঞ্জিন খুলে নিয়ে যায়।
তারপর ট্রলারটি ভাসতে ভাসতে হাতিয়ার কাছাকাছি চলে আসে। ট্রলারটি নোঙ্গর করা অবস্থায় ১৭ ঘন্টা থাকলেও কোস্টগার্ড ও পুলিশ তাদের উদ্ধার করতে আসেনি। ওই রাত ১০ টার দিকে একই কোম্পানির আরেকটি ট্রলার সাগর থেকে ১৭ ঘন্টা পর তাদের উদ্ধার করে মনপুরার রিজিরখাল এলাকায় নিয়ে আসে।
বশির সারেং অভিযোগ করেন, সাগরে জেলে ট্রলার দস্যু হামলাসহ কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগে পড়লে কোস্টগার্ড কখনও উদ্ধার করতে আসেনা।
চরফ্যাশনে ঢাল চরের ইব্রাহিম মাঝি বলেন, নদীতে মাছ ধরা শুরু করলে জলদস্যুরা বেপরোয়া হয়ে উঠে। জলদস্যুরা ট্রলার নিয়ে সমুদ্রে মাছ ধরা জেলেদের উপর হামলা চালিয়ে ট্রলারে থাকা মাছ, তৈল, জাল ও ইঞ্জিন খুলে নিয়ে যায়। আবার জেলেদের মারধর করে নদীতে ফেলে দেয় এবং ধরে নিয়ে মুক্তিপণ আদায় করে। জলদস্যুদের আক্রমণে পড়লে প্রশাসনকে অবগত করে তেমন কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না।
জলদস্যুদের হামলায় আহত মনপুরার হালিম মাঝি, মালেক মাঝি, বশির মাঝি বলেন, নদীতে গেলে দস্যুরা এলোপাথাড়ি হামলা করে সব কিছু লুট করে নিয়ে যায়। মারধর করে নদীতে ফেলে দেয়। আবার ধরে নিয়ে টাকা দাবি করে। জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। মহাজনের কাছ থেকে ধার দেনা করে নৌকা ও জাল তৈরি করেছি। কিন্তু ডাকাতদের ভয়ে মনে হচ্ছে সাগর মোহনায় আর যেতে পারব না। সাগরে না যেতে পারলে পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে আমাদের। প্রশাসন নৌ টহলের ব্যবস্থা প্রতিনিয়ত গ্রহণ করলে হয়ত নিরাপদে মাছ শিকার করা যেত।
মনপুরা উপজেলা মৎস্য সম্পদ কর্মকর্তা সামছুর রহমান বলেন, জেলেদের বিপদে আমাদের সাধ্য অনুযায়ী প্রশাসনকে নিয়ে সহযোগিতার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখানে জনবল সংকট থাকায় অনেক সবকিছু কিছুটা বিলম্বে হয়।
মনপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিন খান বলেন, জেলেদের বিপদের সংবাদ পেলে পুলিশ তাদের সাধ্য অনুযায়ী উদ্ধার ও সহযোগিতার চেষ্টা করে থাকে।
মনপুরা উপজেলা (দায়িত্বপাপ্ত) নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, জলদস্যু দমনে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমার জানা মতে, জেলেরা বিপদে পড়লে প্রশাসন তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারপরও উপজেলা প্রশাসনের কেউ দায়িত্বে অবহেলা করে থাকলে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভোলা কোস্টগাডের্র এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ঘটনাটি বঙ্গোপসাগরের গ্যাস ফিল্ড এলাকায়। আমরা খবর পেয়ে চট্ট্রগ্রাম এরিয়ার কোস্টগার্ডকে জানালে তারা সেখানে যায়। তাছাড়া নেভির জাহাজও যায়। আমাদের আশেপাশের কোস্টগার্ডকে বলা হয়েছে কর্ভার করার জন্য। জেলের বিপদের খবর পেলে তাদের উদ্ধারের জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতার চেষ্টার করি।
তিনি আরো বলেন, জেলেরা জলদস্যুর আক্রমণ ও বিপদের স্থান সঠিকভাবে বলতে না পারার কারণে তাদের খুঁজে বের করতে একটু সময় লেগে যায়। আবার অনেক সময় তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এলাকায় গিয়ে ফিরে আসতে হয় আমাদের।