শিরোনাম:
●   ভোলার কর্ণফুলী-৩ লঞ্চে চাঁদপুরের মোহনায় অগ্নিকাণ্ড ●   উদ্ভাস-উন্মেষ-উত্তরণ এখন দ্বীপ জেলা ভোলায় ●   ভোলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আ’লীগের সমর্থিত প্রার্থী বশীর উল্লাহ সভাপতি, সম্পাদক মাহাবুবুল হক লিটু নির্বাচিত ●   ভোলা জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময় ●   চরফ্যাশনে দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়লো চট্টগ্রামগামী বাস ●   ডয়েসে ভ্যালী ও জাতীয় গণমাধ্যম ইনিস্টিটিউটের যৌথ আয়োজনে প্রিন্ট পত্রিকার সম্পাদকদের কর্মশালা সম্পন্ন ●   ভোলায় চারটি সহ সারাদেশে ১৫০ সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ●   ভোলায় ৩৩৫ কোটি টাকার শহর রক্ষা বাঁধ এখন মরণ ফাঁদ! ●   ভোলায় জমি দখলের খবর পেয়ে স্ট্রোক করে মারা গেলেন প্রবাসী ●   ভোলার নবাগত জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
ভোলা, শনিবার, ৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

ভোলার সংবাদ
শুক্রবার ● ২৪ জুন ২০১৬
প্রথম পাতা » ধর্ম » এ‘তেকাফ : ফাযায়েল ও মাসায়ে
প্রথম পাতা » ধর্ম » এ‘তেকাফ : ফাযায়েল ও মাসায়ে
৬০১ বার পঠিত
শুক্রবার ● ২৪ জুন ২০১৬
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

এ‘তেকাফ : ফাযায়েল ও মাসায়ে

---

শেখ ফয়সাল মারুফ : রমযান মাস ইবাদতের মাস, ইবাদতের মৌসুম। এ মাসে একটি ফরয আমল পালন করলে সত্তরটি ফরয পালন করার সমান সওয়াব পাওয়া যায়। আর একটি নফল পালন করলে ফরযের সমান সওয়াব পাওয়া যায়। [সহীহ খুযায়মা, হাদীস নং ১৮৮৭; শুআবুল ঈমান বায়হাকী, হাদীস নং ৩৩৩৬]
রমযান মাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি আমলের নাম এ‘তেকাফ। ২০ শে রমযান সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পূর্ব হতে ২৯ বা ৩০ শে রমযান অর্থাৎ, যেদিন ঈদের চাঁদ দেখা যাবে সেই দিনের সূর্যাস্ত পর্যন্ত পুরুষদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামায
জামাআতের সাথে পড়া হয় এরূপ মসজিদে এবং মহিলাদের জন্য তাদের ঘরে নামাজ পড়ার নির্ধারিত
স্থানে, দুনিয়াবী কাজ- কারবার পরিত্যাগ করে একগ্রতা সহকারে আল্লাহর ধ্যানে নিয়তসহ পাবন্দীর সাথে অবস্থান করাকে এ‘তেকাফ বলে। এর সওয়াব অনেক বেশি। রমযান মাসের শেষ দশদিন এবং রমযান মাস উনত্রিশ দিনের হলে নয়দিন এ‘তেকাফ করা সুন্নত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইনিতকালে পূর্ব পর্যন্ত প্রতি রমযানেই নিয়মিত এ‘তেকাফ করেছেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০২৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৭২] জীবনের শেষ রমযানে তিনি বিশদিন এ‘তেকাফ করেছেন। [সহীহ বুখারী, ৪৯৯৮] অপর এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, একবছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (জিহাদের শরীক থাকার কারণে) এ‘তেকাফ করতে পারেননি। এজন্য পরবর্তী বছর রমযান মাসে বিশদিন এ‘তেকাফ করেছেন। [সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ৮০৩; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ২৪৬৩; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১৭৭০] রমযান মোবারকের অধিক কল্যাণ ও বরকত লাভের জন্য এ‘তেকাফ একটি উত্তম ব্যবস্থা। আত্মিক প্রশান্তি, হৃদয়ের পবিত্রতা, চিন্তার বিশুদ্ধতা, ফেরেশতাদের গুনাবলী অর্জন এবং শবে কদরের সৌভাগ্য ও কল্যাণ লাভসহ সর্বপ্রকার ইবাদতের সুবর্ন সুযোগ লাভের এক উৎকৃষ্ট উপায় এই এ‘তেকাফ। তাই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানুল মোবারকের শেষ দশদিন মসজিদে এ‘তেকাফ করেছেন এবং উম্মতের জন্য তা সুন্নতরূপে ঘোষণা করেছেন। [হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগা]
এ‘তেকাফের উদ্দেশ্য আল্লামা ইবনুল কায়্যিম বলেন, গায়রুল্লাহর মোহনীয় বেড়াজাল থেকে মুক্তি লাভ করে আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করা এ‘তেকাফের উদ্দেশ্য। রমযানের পবিত্র মাসে আল্লার ঘরে এ‘তেকাফ করার মাধ্যমে হৃদয় ও আত্মার এমন অভাবনীয় উৎকর্ষ সাধিত হয় যে, মানুষের হৃদয় তখন আল্লার যিকির ও তার প্রতি গভীর ভালবাসা ছাড়া অন্য কিছু স্থান পায় না। মহান রাব্বুল আলামীনের ধ্যান ছাড়া অন্য কোনো ভাবনাতে সে উৎসাহ বোধ করে না। মাখলুকের সাথে ঘনিষ্ঠতার পরিবর্তে আল্লাহর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টি হয়। কবরের নিঃসঙ্গ অন্ধকারে যেখানে কোন বন্ধু ও সাহায্যকারী থাকবে না, এ সম্পর্কটি এক মহামূল্যবান পাথেয়রূপে কাজে আসবে। [মাহে রমযান : ফাযায়েল ও মাসায়েল, পৃ. ৭১.৭২]
এ‘তেকাফের ফযীলত একটি যয়ীফ হাদীসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি রমযানের (শেষ) দশদিন এ‘তেকাফ করবে, তার জন্য সেই এ‘তেকাফ দু’টি হজ ও দুটি ওমরাহ সমতুল্য হবে। (অর্থাৎ, দুই হজ ও দুই ওমরার সমান সওয়াব তাকে দান করা হবে) হাদীসটির সনদ যয়ীফ। [বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীস নং ৩৬৮০] অপর একটি হাদীসে এ‘তেকাফকারী সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সে যাবতীয় গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পারে এবং এ‘তেকাফের বাইরে থেকে কোন ব্যক্তি যে সকল  নেকআমল করতে পারে তাকে সে সকল নেক আমলের সওয়াব দান করা হবে। (যদিও সে মসজিদে অবস্থানের কারণে সে সকল নেক আমল করতে পারে না।) [সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস নং ১৭৮১, বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীস নং ৩৯৬৪, হাদীসটির সনদ যয়ীফ]
এ‘তেকাফের প্রকারভেদ ও মাসায়েল এ‘তেকাফ তিন প্রকার। ওয়াজিব, সুন্নত, নফল। মান্নতের এ‘তেকাফ ওয়াজিব। অথাৎ, কেউ যদি এ‘তেকাফ করার মান্নত করে তবে তা ওয়াজিব হয়ে যায়। অথবা কেউ যদি
সুন্নত এ‘তেকাফ শুরু করার পর তা কোন কারণবশত ছেড়ে দেয় তবে তার কাযা করা ওয়াজিব। [দুররে মুখতার, ২য় খ. পৃ. ৪৪২; বাহরুর রায়েক, ২য় খ. পৃ, ২১২]
মান্নতের এ‘তেকাফ আবার দু প্রকার। শর্তযুক্ত মান্নতের এ‘তেকাফ এবং শর্তহীন মান্নতের এ‘তেকাফ। শর্তযুক্ত
মান্নতের এ‘তেকাফ যেমন- কেউ বলল, যদি আমার অমুক উদ্দেশ্য পূর্ণ হয় তবে আমি আল্লাহ তা‘আলার  উদ্দেশ্যে এ‘তেকাফ করব। অথবা বলল, যদি অমুক সফর থেকে ফিরে আসে তবে আমি তিনদিন এ‘তেকাফ করব। এরূপ মান্নত করার দ্বারা এ‘তেকাফ ওয়াজিব হয়ে যায়। এরপর তার উদ্দেশ্য পূর্ণ হলে বা তার শর্তকৃত বিষয় বাস্তবায়িত হলে মান্নত পালন করা আবশ্যক হয়ে যায়। মান্নত পালন না করলে মান্নতকারী ব্যক্তি গুনাহগার হবে। তবে উদ্দেশ্য বা শর্ত পূর্ণ না হলে মান্নত পালন করা ওয়াজিব হয় না। আর শর্তহীন মান্নতের এ‘তেকাফ যেমন কেউ কোনো শর্ত উল্লেখ না করে বলল, আল্লাহর উদ্দেশ্যে দশদিন বা তার চেয়ে কম বেশি (যথা তিন দিন, পাঁচ দিন, সাত দিন, অথবা বারো দিন, পনের দিন) এ‘তেকাফ করা আমার উপর
ওয়াজিব বা আবশ্যক। তখন এটা মান্নত সাব্যস্ত হবে এবং এটা পূর্ণ করা ওয়াজিব হয়ে যাবে। আর যদি মান্নত বা
আবশ্যকতা জ্ঞাপক কোন শব্দ উচ্চারণ না করে কেবল অন্তরে এ‘তেকাফের নিয়ত করে অথবা মুখে কেবল
এ‘তেকাফের নিয়ত করার কথা বলে তবে এর দ্বারা তা মান্নত সাব্যস্ত হবে না। এবং তা পালন করা ওয়াজিবহবে না। তবে কোন নেক আমলের নিয়ত করলে তা যথাসম্ভব পালন করা উত্তম। [দুররে মুখতার, ২য় খ. পৃ. ৪৪১;
তাহতাবী, পৃ. ৩৮২; আলমগীরী, ১ম খ. পৃ. ২১১]
মান্নতের এ‘তেকাফ আবার সময় নির্ধারণ করে হতে পারে, আবার সময় নির্ধারণ না করেও হতে পারে। যেমন
কেউ এভাবে মান্নত করল যে, আমার অমুক উদ্দেশ্য পূর্ণ হলে আমি আগামী সপ্তাহে তিনদিন এ‘তেকাফ করব
অথবা এভাবে বলল যে, আমার অমুক কাজ হলে আমি আগামী মাসে দশদিন এ‘তেকাফ করব, এ‘ক্ষেত্রে
উদ্দেশ্য পূর্ণ হলে মান্নতে উল্লেখিত নির্ধারিত দিনগুলোতে এ‘তেকাফ করতে হবে। এটা ওয়াজিব।
শরীয়ত সম্মত ওজর ব্যতিরেকে মান্নতের নির্ধারিত দিনগুলোতে এ‘তেকাফ না করে বিলম্বিত করলে গুনাহ হবে। আর যদি অসুস্থতাজনিত কারণে বা শরীয়তসম্মত ওজরের কারণে নির্ধারিত সময়ে এ‘তেকাফ করতে না
পারে, বরং পরবর্তী সময়ে এ‘তেকাফ করে তবে এতে গুনাহ হবে না। এভাবে সময় নির্ধারিত করে এ‘তেকাফ করার মান্নত করলে মান্নত পালন ব্যতিরেকে যদি নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হয়ে যায় তবে এতে মান্নত বাদ যাবে না বা রহিত হবে না। সুতরাং ওজরের কারণে বা ওজর ব্যতিরেকে নির্ধারিত সময়ে মান্নত পালন করতে না
পারলে ও পরবর্তী সময়ে তা পালন করা ওয়াজিব। পক্ষান্তরে সময় নির্ধারিত না করে কোন মান্নত করা হলে তা যে কোনো সময় পালন করা যাবে। তবে যথাসম্ভব দ্রুত পালন করা উত্তম। কোন ওজর ব্যতিরেকে বিলম্বে করা মাকরূহ। [তাতারখানিয়া পৃ.৪১৪; তাহতাবী, পৃ.৩৭৮; বাদায়ে, ২য় খ. পৃ. ১১৮]
ওয়াজিব এ‘তেকাফের জন্য রোযা রাখা শর্ত মান্নতের এ‘তেকাফ বা অন্যকারণে ওয়াজিব হওয়া এ‘তেকাফ পালন করার জন্য রোযা রাখা শর্ত। মান্নত করার সময় রোযার উল্লেখ করুক বা না করুক এবং রোযার নিয়ত করুক বা না করুক। সুতরাং মান্নতের এ‘তেকাফ বা ওয়াজিব এ‘তেকাফ পালন করতে হলে রোযা সহকারে পালন করতে হবে। রোযা ব্যতিরেকে মান্নতের এ‘তেকাফ বা ওয়াজিব এ‘তেকাফ শুদ্ধ হবে না। কেউ যদি রমযান মাসে এ‘তেকাফ করার মান্নত করে তবে রমযানের রোযার সাথে এ‘তেকাফ পালন করা শুদ্ধ হবে। [তাতারখানিয়া, ২য়, খ. পৃ. ৪১১]

কোন সপ্তাহ বা মাস নির্ধারণ না করে দশদিন বা তিনদিন বা এধরণের কোনো এ‘তেকাফ করার মান্নত করলে, সেই মান্নত রমযানের বাইরে অন্য কোনো মাসে পালন করতে চাইলে নফল রোযা সহকারে তা পালন করতে হবে। আর রমযান মাসে পালন করা হলে রমযানের রোযার সাথে মান্নতের এ‘তেকাফ পালন করতে পারবে। যদি কেবল একদিন এ‘তেকাফ করার মান্নত করা হয় তবে সুবহে সাদেকের কয়েক মিনিট পূর্বে এ‘তেকাফ শুরু করতে হবে এবং সূর্যাস্ত পর্যন্ত এ‘তেকাফ অব্যাহত রাখতে হবে। রাতে এ‘তেকাফ করা আবশ্যক নয়। আর যদি একদিন একরাত এ‘তেকাফ করার মান্নত করা হয় তবে সূর্যাস্তের কয়েক মিনিট পূর্বে এ‘তেকাফ শুরু করতে হবে এবং পরবর্তী দিনের সূর্যাস্ত পর্যন্ত এ‘তেকাফ অব্যাহত রাখতে হবে। [তাতারখানিয়া, ২য় খ. পৃ. ৪১৬; বাহরুর
রায়েক, ২য় খ. পৃ. ৩০৫]
এমনিভাবে একদিনের বেশি যে কয়েকদিনের এ‘তেকাফ করার মান্নত করুক দিনের সাথে রাতে ও এ‘তেকাফ
করতে হবে। কেননা একদিনের অধিক সময়ের এ‘তেকাফ করার মান্নত করা হলে রাতও তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে
যায়। [দুররে মুখতার, ২য় খ. পৃ. ৪৫১; ফতহুল কাদীর, ২য় খ. পৃ. ৩১৪]
শুধু রাতে এ‘তেকাফ করার মান্নত করা হলে সেই মান্নত শুদ্ধ হবে না। কেননা শরীয়তে সুন্নত বা ওয়াজিব
এ‘তেকাফকে শুধু রাতে এ‘তেকাফ করা কোন নিয়ম নেই। সুতরাং যদি কেউ শুধু রাতে এ‘তেকাফ করার মান্নত করে কেবল রাতের বেলায় এ‘তেকাফ করে তবে সে নফল এ‘তেকাফের সওয়াব পাবে। আর যদি শুধু রাতে এ‘তেকাফ করার মান্নত করে তা পালন না করে তবে সে গুনাহগার হবে না। কেননা তার মান্নত শুদ্ধই হয়নি। [বাদায়ে, ২খ, পৃ. ১১০, দুররে মুখতার; ২খ, পৃ. ৪৪২]
যদি কেউ এক সপ্তাহ বা এক মাসের এ‘তেকাফের মান্নত করে তবে সেই এ‘তেকাফ এক নাগাড়ে পালন করা উচিত। এটাই উত্তম। তবে কষ্টের কারণে বা অন্য কোন ওজরের কারণে যদি সেই এ‘তেকাফ এক নাগাড়ে পালন করতে না পারে, বরং কয়েকদিন কয়েকদিন করে পালন করে তবে তাও করতে পারে। [শামী, ২খ, পৃ. ৪৫১; বাদায়ে, ২খ, পৃ. ১১০]
মান্নতের এ‘তেকাফ বা সুন্নতের এ‘তেকাফ ভঙ্গ করার ফলে ওয়াজিব হওয়া এ‘তেকাফ পালন করার মতো সময়
পাওয়া সত্বেও যদি পালন না করা হয়, অবশেষে মৃত্যুশয্যায় পতিত হয় বা এমন কোন দুরারোগ্য রোগেআক্রান্ত হয়, যার কারণে মান্নত পালন করতে না পারে তবে মান্নত বা ওয়াজিব এ‘তেকাফের কাফফারা ও ফিদয়া আদায় করার জন্য অসিয়ত করে যাওয়া ওয়াজিব। [বাদায়ে, ২খ পৃ. ১১৮]
যদি এ‘তেকাফের মান্নত করার পর তা পালন করার অবকাশ না পায়, বরং তার আগেই মান্নতকারীর মৃত্যু হয়ে
যায় বা মান্নত পালন করার অযোগ্য হয়ে যায় তবে ফিদয়া দেওয়ার জন্য অসিয়ত করা আবশ্যক নয়। [ফাতহুল
কাদীর, ২খ পৃ. ৩১৬]
মান্নতের এ‘তেকাফ বা ওয়াজিব এ‘তেকাফের ফিদয়াস্বরূপ পৌনে দুই কিলো গম/ আটা বা তার মূল্য গরিব মানুষকে প্রদান করতে হবে। তবে পূর্ণ দুই কিলো বা তার মূল্য প্রদান করা উত্তম। [বাদায়ে, ২খ. পৃ. ১১৮]
সুন্নত এ‘তেকাফ রমযান মাসের শেষ দশকে পরবর্তী শাওয়াল মাসের চাঁদ উদিত হওয়া পর্যন্ত যে এ‘তেকাফ করা হয় তা সুন্নত এ‘তেকাফ। এই এ‘তেকাফ পালন করা মসজিদের মহল্লাবাসী মুসল্লীদের উপর সুন্নতে মুয়াক্কাদা
কেফায়া। প্রত্যেক মসজিদের মহল্লার অধিবাসী মুসল্লীদের মধ্য থেকে এক বা একাধিক লোক এই এ‘তেকাফ পালন করলে সেই মহল্লার সবার পক্ষ থেকে এ সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। আর যদি একজনও তা পালন না করে তবে সেই মহল্লার সকল অধিবাসী সুন্নতে মুয়াক্কাদা তরক করার জন্য গুনাহগার হবে। [শামী, ২খ. পৃ. ৪৪২]
সুন্নত এ‘তেকাফ রমযানের বিশ তারিখে সূর্যাস্তের কিছু পূর্ব থেকে শুরু করতে হবে এবং রমযানের ২৯ বা ৩০
তারিখে শাওয়ালের চাঁদ উদিত হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত রাখতে হবে। এ‘তেকাফের আসবাবপত্র প্রস্তুত করতে
বিলম্ব হলে এ‘তেকাফকারী সূর্যাস্তের পূর্বেই মসজিদে চলে যাবে এবং আসবাবপত্র অন্য লোক দ্বারা মসজিদে
নেওয়ার ব্যবস্থা করবে। সুন্নত এ‘তেকাফ যেহেতু রমযানের শেষ দশকে পালন করতে হয় তাই পরবর্তী নতুন চাঁদ উদিত হওয়া পর্যন্ত সময় (৯ দিন বা ১০ দিন) এর চেয়ে কমদিনের এ‘তেকাফ করার নিয়ত করলে অথবা তার চেয়ে কমদিনের এ‘তেকাফ করলে সুন্নত এ‘তেকাফ পালিত হবে না। সুতরাং পূর্ণ শেষ
দশকে এ‘তেকাফ করার নিয়ত করতে হবে এবং তা পরিপূর্ণভাবে পালন করবে। কেউ যদি এভাবে নিয়ত করে যে, এখন পাঁচ দিনের নিয়ত করে এ‘তেকাফ শুরু করছি, পরে সাহস হলে পুরো দশক পূর্ণ করব তবে এরূপ নিয়তের দ্বারা সুন্নত এ‘তেকাফের সওয়াব পাওয়া যাবে না। বরং এতে নফল এ‘তেকাফের সওয়াব হবে। রমযানের পুরো শেষ দশক এ‘তেকাফ করার নিয়ত করে এ‘তেকাফ শুরু করার পর উনত্রিশ তারিখে ঈদের চাঁদ
উদিত হয়ে গেলে সুন্নত এ‘তেকাফ আদায় হয়ে যাবে। দশ দিনের নিয়ত করার কারণে দশম দিনের এ‘তেকাফের
কাযা আদায় করতে হবে না। তবে কেউ যদি অনির্দিষ্টভাবে দশ দিন এ‘তেকাফ করার মান্নত করে
এবং রমযান মাসের শেষ দশকে তা পালন করতে থাকে, এরই মধ্যে রমযানের উনত্রিশ তারিখে চাঁদ উদিত হয়ে
যাওয়ার কারণে তার এ‘তেকাফের নয়দিন পূর্ণ হয়, তবে অবশিষ্ট একদিনের এ‘তেকাফ তাকে শাওয়াল মাসে পূর্ণ
করতে হবে। [তাতারখানিয়া, ২খ. পৃ. ৪১৬]
সুন্নত এ‘তেকাফ শুরু করার পর তা পুরোপুরি পালন করা উচিত। মাঝখানে সুন্নত এ‘তেকাফ ছেড়ে দেওয়া জায়েয নয়। কেননা সুন্নত এ‘তেকাফ শুরু করার পর তা সম্পূর্ণ করা জরুরী। সুন্নত এ‘তেকাফ শুরু করার পর যদি ওজরবশত বা ওজর ব্যতিরেকে এ‘তেকাফ ভঙ্গ করা হয় তবে যে কয়দিনের এ‘তেকাফ করা হয়নি সেই কয়দিনের এ‘তেকাফ রোযাসহ পালন করতে হবে। [দুররে মুখতার ২খ. পৃ. ৪৪১]
মহল্লার মসজিদে সেই মহল্লার লোক ব্যতীত অন্য কোন লোক এ‘তেকাফ করলেও সুন্নতে মুয়াক্কাদা কেফায়া
এ‘তেকাফ আদায় হয়ে যাবে। এজন্য মসজিদে এ‘তেকাফকারী মসজিদের মহল্লার অধিবাসী হওয়া শর্ত নয়; তবে উত্তম। [আহকামে রমযান ও যাকাত, পৃ. ৫০]
অর্থের বিনিময়ে এ‘তেকাফে বসা বা কাউকে এ‘তেকাফে বসানো জায়েয নেই। এটা গুনাহের কাজ। কেননা, এ‘তেকাফ একটি ইবাদত। ইবাদতের বিনিময় অর্থ গ্রহণ করা বা অর্থ প্রদান করা উভয়টি হারাম। তবে এ‘তেকাফকারী যদি অসহায় হয় এবং মহল্লার লোকেরা কোনরূপ পূবশর্ত ব্যতিরেকে তাকে সাহায্য করে তবে এতে কোনো অসুবিধা নেই। [শামী, ৬খ. পৃ. ৫৫]
পুরুষের জন্য ওয়াজিব ও সুন্নত এ‘তেকাফ মসজিদে পালন করা আবশ্যক। ঘরে পুরুষের এ‘তেকাফ করা শুদ্ধ নয়। মহিলাদের জন্য ফেতনার আশঙ্কার কারণে মসজিদে এ‘তেকাফ করা মাকরুহে তাহরীমী। মহিলাদের জন্য ঘরে এ‘তেকাফ করার মধ্যেই সওয়াব বেশি। [শামী, ২খ. পৃ. ৪৪০]
মহিলাদের এ‘তেকাফের জন্য পর্দা বা দরজাযুক্ত কামরা ঠিক করে নেবে, যেখানে কোনো গায়রে মাহরাম পুরুষের আসা যাওয়া না হয় বা দৃষ্টি না পড়ে। এরূপ পৃথক কামরার ব্যবস্থা না থাকলে কাপড় দিয়ে পর্দার ব্যবস্থা করে নেবে। [তাহতাবী, পৃ. ৩৮২]
অপ্রাপ্তবয়স্ক নারী পুরুষ যেমন সুন্নত এ‘তেকাফ পালন করতে পারে, তেমনি অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে মেয়ে, যারা
নামায রোযার মাসায়েল জানে, তারাও সুন্নত এ‘তেকাফ পালন করতে পারে। [বাদায়ে, ২খ.পৃ. ১০৮]
অবুঝ শিশু এবং নামাজ রোজার মাসায়েল সম্পর্কে অবগত নয় এমন শিশুদেরকে এ‘তেকাফ করতে দেওয়া উচিত নয়। কেননা এতে তাদের এ‘তেকাফ নষ্ট হওয়া এবং অন্যের এ‘তেকাফ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে, এছাড়া এর দ্বারা অন্য এ‘তেকাফকারীদের কষ্টও হতে পারে। [আহকামে রমযান, পৃ. ৫৩]
যে মসজিদে এ‘তেকাফ করা হবে সে মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাআতের সাথে পড়ার ব্যবস্থা
থাকতে হবে। সেটি জামে মসজিদ হতে পারে অথবা মহল্লার পাঞ্জেগানা মসজিদও হতে পারে। [বাদায়ে, ১খ, পৃ. ১১৩; দুররে মুখতার, ২খ. পৃ. ৪৪০]
মহল্লার পাঞ্জেগানা মসজিদে এ‘তেকাফ পালনকারী থাকলে জামে মসজিদে গিয়ে এ‘তেকাফ করার সওয়াব
বেশি। আর যদি মহল্লার পাঞ্জেগানা মসজিদে এ‘তেকাফ করার লোক না থাকে তবে মহল্লার পাঞ্জেগানা মসজিদে এ‘তেকাফ করা উত্তম এবং এতে সওয়াব বেশি। [আহকামে রমযান, পৃ. ৫৩]
দুনিয়ার সকল মসজিদের তুলনায় মসজিদে হারামে এ‘তেকাফ করার সওয়াব অনেক বেশি। হাদীস শরীফে আছে, হরম শরীফের একটি নেক আমলের সওয়াব এক লক্ষগুণ বেশি। সুতরাং সুন্নত এ‘তেকাফ মসজিদে হারামে করা হলে তার সওয়াব এক লক্ষগুণ বেশি হবে। এরপর মসজিদে নববীর মর্যাদা। মসজিদে নববীতে এ‘তেকাফ করলে তার সওয়াব হবে পঞ্চাশ হাজার গুণ বেশি। এরপর মসজিদে আকসার মর্যাদা। সেখানে এ‘তেকাফ করা হলে তার সওয়াব হবে এক হাজার গুণ বেশি। সুতরাং সামর্থ্য থাকলে এবং শরীয়তের দৃষ্টিতে কোনো বাধা না থাকলে কিংবা স্বাস্থ্যগত বা অন্যকোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকলে উক্ত তিনটি মসজিদের কোন একটিতে এ‘তেকাফ করে বেশি সওয়াব অর্জনের চেষ্টা করা উচিত। [শামী, ২খ. পৃ.৪৪১]
সারা বছর এবং বিশেষ করে রমযান মাসে এ‘তেকাফের সময় হালাল খাদ্য ও হালাল পোশাক গ্রহণের প্রতি গুরুত্বের সাথে লক্ষ রাখবে। কেননা, সকল ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য হালাল খাদ্য ও হালাল উপার্জন আবশ্যক।
এ‘তেকাফকারী ব্যক্তি মসজিদে যে সব কাজ করতে পারবে এ‘তেকাফকারী ব্যক্তি ইফতার থেকে সুবহে সাদেকের
পূর্ব পর্যন্ত সময়ে মসজিদের মধ্যে পানাহার করতে পারবে। দিনে বা রাতে জরুরী ইবাদত সেরে শোয়া, ঘুমানো, বিশ্রাম করা জায়েয। [বাদায়ে, ২খ. পৃ. ১১৬]
এ‘তেকাফ অবস্থায় জরুরী জিনিস ক্রয় বিক্রয় করা যাবে। তবে মসজিদকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকান বা গুদামের মতো ব্যবহার করা যাবে না। [শামী, ২খ. পৃ.৪৪৯] দীনী বা দুুনিয়াবী প্রয়োজনীয় কথা বলা যাবে।
[আহকামে রমযান]
দীনের সাথে সম্পর্কহীন বই পুস্তক, পত্র পত্রিকা এ‘তেকাফ অবস্থায় পড়া উচিত নয়। অশ্লীল বইপত্র ও ম্যাগাজিন যে কোনো সময় পড়া নাজায়েয। এ‘তেকাফ অবস্থায় তো আরো বেশি নিন্দনীয় ও পাপের কাজ। অযথা কথাবার্তা ও গীবত-অভিযোগ কখনও জায়েয নয়। এ‘তেকাফ অবস্থায় করা হলে তার গুনাহ আরো বেশি
হবে। এ‘তেকাফ অবস্থায় জরুরী চিঠিপত্র লেখা যাবে। [তাতারখানিয়া, ২খ. পৃ. ৪৪১]
চিকিৎসক এ‘তেকাফ অবস্থায় ফী ছাড়া রোগের ব্যবস্থাপত্র লিখতে ও রোগী দেখতে পারবে। তবে ফী
নিয়ে করা জায়েয নয়। [বাহরুর রায়েক, ২খ. পৃ. ৩০৩]
পেশাব পায়খানা, ফরজ গোসল, সুন্নত গোসল, যেমন, জুমআর দিনের গোসল, এগুলোর জন্য মসজিদের বাইরে
যাওয়া পরে জরুরী কাপড় ধোয়া জায়েয। [তাহতাবী, পৃৃ. ৩৮৩]
এ‘তেকাফ অবস্থায় মসজিদে কাপড় বিছিয়ে তার উপর নখ কাটা, মোচ কাটা, জায়েয। তবে এসব যেন মসজিদে
না পড়ে। শরীরে বা মাথায় তেল লাগানো, আতর লাগানো, এবং দাড়ি-চুল চিরুনি করা জায়েয। [বাহরুর
রায়েক, ২খ. পৃ. ৩০৩]
মুয়াজ্জিন এ‘তেকাফ করলে এবং আযান দেওয়ার জায়গা মসজিদের বাইরে হলে আযান দেওয়ার জন্য
মসজিদের বাইরে যেতে পারবে। কেননা নামাজের জন্য আযান দেওয়া সুন্নত, আর সুন্নত পালনের জন্য মসজিদের বাইরে জাওয়া জায়েয আছে। [বাহরুর রায়েক, ২খ. পৃ. ৩০৩]
খাবার আনার মতো লোক না থাকলে বা মসজিদে খাবারের ব্যবস্থা না থাকলে তবে খাবার আনার জন্য
ঘরে বা দোকানে হোটেলে যেতে পারবে। বিশেষ কোনো ওজর না থাকলে খাবার মসজিদে এনে খাওয়া উচিত। [আহকামে রমযান, পৃ. ৫৭-৫৮]
মসজিদে হারামে এ‘তেকাফ করা হলে সেখানে মসজিদে খাবার নেওয়া সরকারিভাবে নিষিদ্ধ। এমতাবস্থায় দোকানে বা হোটেলে গিয়ে খাবার খেয়ে আসা যাবে। তবে খাবার খাওয়ার পরে সেখানে বিলম্ব করা যাবে না। মসজিদে খাবার খাওয়ার ব্যবস্থা করা না গেলে খাবারের জন্য মসজিদের বাইরে যাওয়া তো জায়েয আছে, সাহরীর সময় খাবারের চাহিদা যদি কমও থাকে তবু কেবল সহারী খাওয়ার সুন্নত পালনের
উদ্দেশ্যে মসজিদের বাইরে যেতে পারবে। এ‘তেকাফের মসজিদে জুমআর নামাজের ব্যবস্থা না থাকলে অন্য জুমআর মসজিদে জুমআর নামাজ পড়তে যাবে। সম্ভব হলে এ‘তেকাফের মসজিদে জুমআর নামাজের ব্যবস্থা করে নেবে। পেশাব পায়খানার জন্য মসজিদের বাইরে যাওয়ার পর আসার পথে বেশি সময় ব্যয় না করে দ্রুত নৈমিত্তিক গোসল সেরে নিতে পারবে। এ‘তেকাফের মসজিদের চৌহদ্দির মধ্যে জানাযার নামাযে শরীক হতে পারবে। [বাদায়ে, ২খ. পৃ. ৪১১]
এ‘তেকাফ ভঙ্গ হওয়ার কারণ সমূহ কেবল শরীর ঠা-া করার উদ্দেশ্যে গোসল করার জন্য অথবা অন্য কোনো অপ্রয়োজনীয় কাজে মসজিদের বাইরে গেলে ইমাম আবূ হানীফা রহ. এর মতে এ‘তেকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। [বাহরুর রায়েক, ২ খ. পৃ. ৩০২]
কুলি করা ও হাত মুখ ধোয়ার জন্য মসজিদের বাইরে যাওয়া যাবে না। গেলে এ‘তেকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। এসব
কাজ মসজিদের এক পাশে বা দরজা জানালায় দাঁড়িয়ে অথবা কোনো পাত্রের মধ্যে সম্পাদন করা সম্ভব। ফরয
বা নফল নামায এবং কুরআন তেলাওয়াতের জন্য অজু করতে মসজিদের বাইরে গেলে এ‘তেকাফ ভঙ্গ হবে না।
[শামী,২খ. পৃ. ৪৪৫]
শিক্ষক শিক্ষকতার জন্য, ওয়ায়েজ ও বক্তা ওয়াজ বক্তৃতার জন্য চাকরিজীবী চাকরির কাজে মসজিদের
বাইরে গেলে এ‘তেকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। [তাহতাবী, পৃ. ৩৮৩]
কুরআন কারীমের খতম শোনা বা শোনানোর জন্য এক মসজিদ থেকে অন্য মসজিদে গেলে এ‘তেকাফ ভঙ্গ হয়ে
যাবে। [তাতারখানিয়া, ২খ. পৃ. ৪১৩]
অপ্রয়োজনীয় কাজের জন্য মসজিদের বাইরে গেলে, অল্প সময়ের জন্য হোক বা বেশি সময়ের জন্য, ইচ্ছাকৃত
হোক বা ভুলবশত, ইমাম আবূ হানীফা রহ. এর মতে এ‘তেকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। [বাদায়ে ২খ. পৃ. ১১৫]
এ‘তেকাফকারীর রোজা যদি কোনো কারণে ভঙ্গ হয়ে যায় অথবা রোযা রাখতে না পারে তবে এ‘তেকাফ ভঙ্গ
হয়ে যাবে। কোনো ওজরের কারণে রোজা ভঙ্গ করুক বা ওজর ব্যতিরেকে। কেননা ওয়াজিব ও সুন্নত এ‘তেকাফের জন্য রোজাদার থাকা শর্ত। [বাদায়ে ২খ. পৃ. ১১৬]
এ‘তেকাফকারী বেহুঁশ বা উন্মাদ হয়ে গেলে এ‘তেকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। [ফাতহুল কাদীর, ২খ. পৃ. ৩১৬]
মসজিদের সীমানায় অবস্থিত মাদরাসা, ইমাম- মুয়াজ্জিনের কামরা, ওজুখানা ইত্যাদি মসজিদের অন্তর্ভুক্ত নয়। সুতরাং এ‘তেকাফ অবস্থায় এসব জায়গায় কোনোটিতে গমন করলে ইমাম আবূ হানীফা রহ. মতে
এ‘তেকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। মসজিদের যে আঙ্গিনা মসজিদের অন্তর্ভুক্ত সেখানে এ‘তেকাফ অবস্থায় যাওয়া যাবে। মসজিদের ছাদে ওঠার সিঁড়ি মসজিদের ভিতরে অবস্থিত হলে সেই সিঁড়ি বেয়ে মসজিদের ছাদে যাওয়া যাবে। (আহকামে রমযান, পৃ. ৬৩)
মহিলাদের এ‘তেকাফ সম্পর্কে কয়েকটি মাসআলা মহিলা ঘরের যে নির্দিষ্ট স্থানে এ‘তেকাফ করবে সেখান থেকে উঠে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে এদিক ওদিক ঘোরাফেরা করবে না। যথাসম্ভব নামায, কুরআন- তেলাওয়াত, তাসবীহ-তাহলীল ইত্যাদিতে সময় ব্যয় করবে  এবং এ‘তেকাফের নির্দিষ্ট স্থানেই অবস্থান
করবে। বিশ্রাম করার প্রয়োজন হলে সেখানেই বিশ্রাম করবে। কেবল পায়খানা-পেশাবের প্রয়োজন হলে টয়লেটে
যেতে পারবে। যে মহিলার স্বামী আছে, তার সুন্নত এ‘তেকাফ করার জন্য স্বামীর অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। স্বামীর অনুমতি নেওয়া ব্যতীত তার এ‘তেকাফ শুদ্ধ হবে না। যে মহিলার স্বামী নেই, তার অভিবাবক থাকলে তার অনুমতি ও পরামর্শ নিয়ে এ‘তেকাফ করা উত্তম। [শামী, ২খ. পৃ. ৪৪১; বাহরুর রায়েক, ২খ, পৃ. ২৯৯]
যে মহিলার স্বামী নেই এবং কোনো অভিবাবকের অধীনও নয়, বরং সে দায়-দায়িত্বমুক্ত এবং ঘরের মুরুব্বী,
সে কারও সাথে পরামর্শ ও অনুমতি ব্যতিরেকে এ‘তেকাফ করলে কোন অসুবিধা নেই। (বাহরুর রায়েক, ২খ.
পৃ. ৩০১)
যে মহিলার স্বামী মাজুর বা অসুস্থ এবং সেবা-শুশ্রƒষার মুখাপেক্ষী সে মহিলার উচিত এ‘তেকাফে না বসে
স্বামীর সেবা- শুশ্রƒষা করা। এতে তার এ‘তেকাফের চেয়ে সওয়াব বেশি হবে। সে শুধু এ‘তেকাফের নিয়ত করার কারণেই এ‘তেকাফের সওয়াব পাবে। যে মহিলার ছোট ছোট ছেলে- মেয়ে আছে, তাদের দেখা-শুনা করার মতো অন্য কেউ নেই, অথবা উঠতি বয়সের মেয়ে আছে, যার প্রতি সযতœ দৃষ্টি রাখার অন্য কেউ নেই, তবে সে মহিলার উচিত ছেলে-মেয়েদের লালন-পালন ও দেখাশোনার মাধ্যমে রমযান অতিবাহিত করা। কেননা,
তার এ‘তেকাফে বসার দ্বারা তার সন্তানদের লালন- পালন ও তদারকি বিঘিœত হতে পারে। সুতরাং তাদের
দেখা- শুনার মতো উপযুক্ত অন্য কেউ থাকলে সে এ‘তেকাফ করতে পারে, নতুবা এ‘তেকাফ করবে না।
[আহকামে রমযান, পৃ. ৬৪]
স্বামী বা অভিবাবকের অনুমতি নিয়ে এ‘তেকাফ শুরু করার পর পর বিশেষ কোনো ওজর ব্যতিরেকে তাদের
নির্দেশে এ‘তেকাফ ভঙ্গ করা জায়েয নয়। কোনো ওজর ছাড়া এ‘তেকাফ ভঙ্গ করলে গুনাহগার হবে। (শামী, ২খ.
পৃ. ৪৪১)
সুন্নত এ‘তেকাফের একদিন বা একাধিক দিনের এ‘তেকাফ ভঙ্গ হয়ে গেলে সুন্নত এ‘তেকাফ শুদ্ধ হবে না।
তবু পরবর্তী দিনগুলোর এ‘তেকাফ পালন করা উত্তম। কেননা, রমযানের নফল এ‘তেকাফের সওয়াবও অন্য
সময়ের এ‘তেকাফের চেয়ে বেশি। যদিও সুন্নত এ‘তেকাফ না হয়। [তাকরীরাতে রাফেয়ী, ১খ. পৃ. ১১৫] এ‘তেকাফ অবস্থায় করণীয় আমল সমূহ এ‘তেকাফের দিনগুলো খুব গুরুত্বের সাথে নেক আমলের
মাধ্যমে অতিবাহিত করবে। ফরয নামায ছাড়াও সকল সুন্নতে মুয়াক্কাদা, গায়রে মুয়াক্কাদা, ও নফল নামায অতি যতœসহকারে আদায় করবে। শেষ রাতে সুবহে সাদেকের পূর্বে, সাহরী খাওয়ার আগে বা পরে চার
থেকে বারো রাকআত তাহাজ্জুদ নামায গুরুত্বের সাথে পড়ার চেষ্টা করবে। এ‘তেকাফ অবস্থায় অবসর সময়ে নফল নামায, তাসবীহ- তাহলীল, এস্তেগফার, দরুদ শরীফ, কুরআন তেলাওয়াত যথাসম্ভব করতে থাকবে। শরীর-স্বাস্থ্যের উপর চাপ প্রয়োগ করে উদাসীনতা ও অমনোযোগিতার সাথে কোনো নফল ইবাদত করবে না। এরূপ অবস্থা সৃষ্টি হলে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে নেবে। এরপর এতমিনান ও মনোযোগের সাথে ইবাদত করবে।
লায়লাতুল কদরের সৌভাগ্য প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে রমযানের একুশতম রাত্রি থেকে উনত্রিশতম রাত্রি পর্যন্ত প্রতিটি বেজোড় রাতে গুরুত্বসহ ইবাদত করবে। সারারাত জাগ্রত থাকতে না পারলে যথাসম্ভব রাতের বেশির ভাগ সময় জাগ্রত থেকে ইবাদতে অতিবাহিত করবে, যাতে লায়লাতুল কদরের ফযীলত ও বরকত হাসিল হয়। লায়লাতুল কদরের নামায নামে এমন বিশেষ কোনো নামায নেই যা বিশেষ সূরা দ্বারা আদায় করতে হবে।
এরূপ কোনো নামায সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। যারা এরূপ বিশেষ ধরনের নামায পড়তে উৎসাহিত করে
তারা ঠিক করে না। তবে লায়লাতুল কদরে যত বেশি সম্ভব নফল নামায পড়বে। তাসবীহ পড়বে। কুরআন
তেলাওয়াত করবে। শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়বে। এসবেরই অপরিসীম সওয়াব রয়েছে। রমযানের সাতাশ তারিখের রাত অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর মানুষ সাধারণত ইবাদত বন্দেগি ও নেক আমলে অলসতা করে থাকে। এটা মোটেই ঠিক নয়। কেননা, রমযানের ২৯ তম রাতও লায়লাতুল কদরের রাত হতে পারে। এছাড়াও রমযান মাসের প্রতিটি মুহূর্তই মূল্যবান। হাদীস শরীফে রমযানের আখেরী দশকের দিবা রাত্রের যে কোনো মুহূর্তে জাহান্নাম থেকে মুক্তিদানের সুসংবাদের কথা বর্র্ণিত হয়েছে। সুতরাং শাওয়ালের চাঁদ উদিত হওয়া পর্যন্ত অতি যতœ ও গুরুত্বের সাথে ইবাদত বন্দেগিতে লেগে থাকা উচিত। এ‘তেকাফের ফায়েদা সমূহ
*এ‘তেকাফ লায়লাতুল কদরের ফযীলত হাসিল করার একটি উৎকৃষ্ট মাধ্যম। এ‘তেকাফকারী দিবা রাত্র ২৪ ঘন্টারূপে গণ্য হয়। যদিও অবসর সময়ে সে কোনো ইবাদতে লিপ্ত না থাকে।
* এ‘কাফকারী অনেক গুনাহ থেকে রক্ষা পায়।
* সুন্নত এ‘তেকাফ দ্বারা আল্লাহ তাআলার এমন নৈকট্য অর্জিত হয়, যা অন্য কোনো ইবাদত দ্বারা লাভ করাযায় না।
* রোযা অবস্থায় দিনের ১২ ঘন্টায় ফেরেশতাদের সাথে সামঞ্জস্য সৃষ্টি হয়, আর এ‘তেকাফ অবস্থায় ২৪ ঘন্টায়
ফেরেশতাদের সাথে সামঞ্জস্য সৃষ্টি হয়।
* এ‘তেকাফ গুনাহ মাফ পাওয়ার একটি উৎকৃষ্ট মাধ্যম।
* আল্লাহ তাআলাকে সন্তুষ্ট করা এবং তার প্রতি ভালোবাসা পয়দা হওয়ার উৎকৃষ্ট অসিলা।
* এ‘তেকাফ অবস্থায় বান্দা আল্লাহ তাআলার দরবারে উপস্থিত থাকে। তাই এর দ্বারা আল্লাহ তাআলার নিকট
তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। গুনাহ খাতা মাফ পাওয়া, আল্লাহ তাআলার দয়া ও অনুগ্রহের দৃষ্টি লাভের সুযোগ সৃষ্টি হয়। আল্লাহ তাআলা সকল এ‘তেকাফকারীকে এসবের তাওফীক দান করুন। নফল এ‘তেকাফ নফর এ‘তেকাফের জন্য রোযা শর্ত নয় এবং এজন্য সময়ও নির্দিষ্ট নেই। বরং যখনই কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে,
নামাযের উদ্দেশ্যে প্রবেশ করুক অথবা অন্য কোনো ইবাদতের উদ্দেশ্যে প্রবেশ করুক, যদি এ‘তেকাফের
নিয়তে প্রবেশ করে তবে সে এজন্য সওয়াব পাবে। মসজিদে অবস্থানের সময় কম হোক বা বেশি হোক। পুরা
রমযান মাসের এ‘তেকাফ বা চল্লিশ দিনের এ‘তেকাফ নফল এ‘তেকাফ বলে ধর্তব্য। এরূপ নফল এতেকাফও আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের উৎকৃষ্ট মাধ্যম। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য মুসল্লী যখন মসজিদে প্রবেশ করে তখন এ‘তেকাফের নিয়ত করা মুস্তাহাব। এর দ্বারা মসজিদে অবস্থানের সওয়াব বৃদ্ধি পায়। এমনিভাবে নামাযের আগে ও পরে যতক্ষণ মসজিদে থাকা হয় তখন এ‘তেকাফের নিয়তে অবস্থান করলে সওয়াব বেশি হয়। এমনিভাবে দীনি তালীম, ওয়াজ- নসিহত, দীনী ইলমের আলোচনা বা কিতাব পাঠের জন্য যখন মসজিদে প্রবেশ করবে তখন এ‘তেকাফের নিয়ত করা মুস্তাহাব। রমযানের শেষ দশক ব্যতীত রমযানের বা অন্য যে কোনো সময়ের এ‘তেকাফ কম সময়ের জন্য হোক বা বেশি সময়ের জন্য হোক, তা নফল এ‘তেকাফ ধর্তব্য হবে। এমনিভাবে রমযানের শেষ দশকে দশদিনের কম এ‘তেকাফ করলে সেটাও নফল এ‘তেকাফরূপে গণ্য হবে।





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

© 2024 দ্বীপের সাথে ২৪ ঘণ্টা Bholar Sangbad, সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত।