শিরোনাম:
●   ভোলার কর্ণফুলী-৩ লঞ্চে চাঁদপুরের মোহনায় অগ্নিকাণ্ড ●   উদ্ভাস-উন্মেষ-উত্তরণ এখন দ্বীপ জেলা ভোলায় ●   ভোলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আ’লীগের সমর্থিত প্রার্থী বশীর উল্লাহ সভাপতি, সম্পাদক মাহাবুবুল হক লিটু নির্বাচিত ●   ভোলা জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময় ●   চরফ্যাশনে দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়লো চট্টগ্রামগামী বাস ●   ডয়েসে ভ্যালী ও জাতীয় গণমাধ্যম ইনিস্টিটিউটের যৌথ আয়োজনে প্রিন্ট পত্রিকার সম্পাদকদের কর্মশালা সম্পন্ন ●   ভোলায় চারটি সহ সারাদেশে ১৫০ সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ●   ভোলায় ৩৩৫ কোটি টাকার শহর রক্ষা বাঁধ এখন মরণ ফাঁদ! ●   ভোলায় জমি দখলের খবর পেয়ে স্ট্রোক করে মারা গেলেন প্রবাসী ●   ভোলার নবাগত জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
ভোলা, রবিবার, ৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

ভোলার সংবাদ
রবিবার ● ১৯ জুন ২০১৬
প্রথম পাতা » ধর্ম » পিতা-মাতার আদব, সম্মান ও আনুগত্যের গুরুত্ব
প্রথম পাতা » ধর্ম » পিতা-মাতার আদব, সম্মান ও আনুগত্যের গুরুত্ব
৬৬৪ বার পঠিত
রবিবার ● ১৯ জুন ২০১৬
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

পিতা-মাতার আদব, সম্মান ও আনুগত্যের গুরুত্ব

---

وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
অর্থ-তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলঃ হে পালনকর্তা, তাঁদের উভয়ের প্রথি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন। সূরা-বানী ইসরাঈল/ইসরা-আয়াত-২৪
পিতা-মাতার আদব, সম্মান আনুগত্যের গুরুত্বঃ
ইমাম কুরতুবী বলেনঃ আয়াতে আল্লাহ্ তাআলা পিতা-মাতার আদব, সম্মান এবং তাঁদের সাথে সদ্ব্যবহার করাকে নিজেরইবাদাতের সাথে একত্রিত করে ফরয করেছেন। যেমন, সূরতুল লুক্বমানে নিজের শোকরের সাথে পিতা-মাতার শোকরকে একত্রিত করে অপরিহার্য করেছেন। বলা হয়েছেঃ
أن اشكرلى ولوالديك* إلى المصير*-অর্থাৎ, আমার শোকর করা এবং পিতা-মাতারও। এতে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ্ তাআলার ইবাদাতের পর পিতা-মাতার আনুগত্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং আল্লাহ্ তাআলার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার ন্যায় পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়াও ওয়াজিব। হীহ্ বুখারীর একটিহাদসিও এর পক্ষে সাক্ষ্য দেয়।
হাদীাসে রয়েছে, কোন এক ব্যক্তি রসূলুল্ল-হ্ স্বঃ-কে প্রশ্ন করলঃ আল্লাহ্র কাছে সর্বাধিক প্রিয় কাজ কোনটি? তিনি বললেনঃ (মুস্তাহাব) সময় হলে নামায পড়া। সে আবার প্রশ্ন করলঃ এরপর কোন কাজটি সর্বাধিক প্রিয়? তিনি বললেনঃ পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার।–(কুরতুব)

হাদীসের আলোকে পিতা-মাতার আনগত্য সেবাযত্বেনর ফযীলতঃ
মুসনাদে হমাদ,তিরমিযী, ইবনে মা-জাহ, মুস্তাদ্রকহাকেমে বিশুদ্ধ সনদসহ আবুদ্দার্দা- রদ্বিঃ থেকে বর্ণিত রয়েছে যে, রসূলুল্ল-হ্ স্বঃ বলেনঃ পিতা জান্নাতের মধ্যবর্তী দরজা। এখন তোমাদের ইচ্ছা, এর হেফাযত কর অথবা একে নিষ্ট করে দাও। (মাযহারী) () তিরমিযী মুস্তাদ্রকহাকেমেআব্দুল্ল-হ্ ইব্নেউমারের রেওয়ায়েতে বর্ণিত রয়েছে যে, রসূলুল্ল-হ্ স্বঃ বলেনঃ পিতা জান্নাতের মধ্যবর্তী দরজা। এখন তোমাদের ইচ্ছা, এর হেফাযত কর অথবা একে বিনষ্ট করে দাও (মাযহারী) () তিরমিযী মুস্তাদ্রকহাকেমেআব্দুল্ল-হ্ ইব্নেউমারের রেওয়ায়েতে বর্ণিত রয়েছে যে, রসূলুল্ল-হ্ স্বঃ বলেনঃ আল্লাহ্র সন্তুষ্টি পিতার সন্তুষ্টির মধ্যে এবং আল্লাহ্র অসন্তুষ্টি পিতার অসন্তুষ্টির মধ্যে নিহিত।
() আবূ উমামার বাচনিক ইব্নে মা-জাহ্ বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি রসূলুল্ল-হ্ স্বঃ-কে জিজ্ঞেস করলঃ সন্তানের উপর পিতা-মাতার হক কি? তিনি বললেনঃ তাঁরা উভয়েই তোমরা জান্নাত অথবা জাহান্নাম। উদ্দেশ্য এই যে, তাঁদের আনগত্য সেবাযত্ন জান্নাতে নিয়ে যায় এবং তাঁদের সাথে বে-আদবী তাঁদের অসন্তুষ্টি জাহান্নামে পৌঁছে দেয়।
() বায়হাক্বী শুআবুল্-ঈমা- গ্রন্থে এবং ইব্নেআসা-কির ইব্নেআব্বাসের বাচনিক উদ্ধৃত করেছেন যে, রসূলুল্ল-হ্ স্বঃ বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্র ওয়াস্তে পিতা-মাতার আনুগত্য করে, তার জন্যে জান্নাতের দুটি দরজা খোলা থাকবে এবং যে ব্যক্তি তাদের অবাধ্য হবে, তার জন্যে জাহান্নামের দুটি দরজা খোলা থাকবে। যদি পিতা-মাতার মধ্য থেকে একজনই ছিল, তবে জান্নাত অথবা জাহান্নামের এক দরজা খোলা থাকবে। একথা তখনও প্রযোজ্য যখন পিতা-মাতা এই ব্যক্তির প্রতি জুলুম করে? তিনি তিন বার বলেনঃ যদি পিতা-মাতা সন্তানের প্রতি জুলুমও করে তবু পিতা-মাতার অবাধ্যতার কারণে সন্তান জাহান্নামে যাবে। এর সারমর্ম এই যে, পিতা-মাতার কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণের অধিকার সন্তানের নেই। তাঁরা জুলুম করলে সন্তান সেবাযত্ন আনুগত্যের হাত গুটিয়ে নিতে পারে না।
() বায়হাক্বী ইব্নেআব্বাসের বাচনিক উদ্ধৃত করেছেন যে, রসূলুল্ল-হ্ স্বঃ বলেনঃ যে সেবা-যত্নকারী পুত্র পিতা-মাতার দিকে দয়া ভালবাসা সহকারে দৃষ্টিপাত করে, তার প্রত্যেক দৃষ্টির বিনিময়ে সে একটি মকবূল হজ্জের ছাওয়াব পায়। লোকেরা আরয করলঃ সে যদি দিনে একশবার এভাবে দৃষ্টিপাত করে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, একশবার দৃষ্টিপাত করলেও প্রত্যেক দৃষ্টির বিনিময়ে এই ছাওয়াব পেতে থাকবে। সুব্হা-নাল্ল-হ্। তাঁর ভান্ডারে কোন অভাব নেই

পিতা-মাতারহক্ব নষ্ট করার শাস্তি দুনিয়াতেও পাওয়া যায়ঃ
() বায়হাক্বী শুআবুল্-ঈমা-নে আবূ বাকার রদ্বিঃ-এর বাচনিক বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্ল-হ্ স্বঃ বলেনঃ সমস্ত গোনাহের শাস্তির ব্যাপারে আল্লাহ্ তাআলা যেগুলো ইচ্ছা করেন কিয়ামত পর্যন্ত পিছিয়ে নিয়ে যান। কিন্তু পিতা-মাতারহক্ব নষ্ট করা এবং তাঁদের প্রতি অবাধ্য আচরণ করা এর ব্যতিক্রম। এর শাস্তি পরকালের পূর্বে ইহকালেও দেয়া হয়। (এর সবগুলো রেওয়ায়েতে তাফসীরে-মাযহারী থেকে উদ্ধৃত হয়েছে।)
কোন কোন বিষয়ে পিতা-মাতার আনুগত্য ওয়াজিব এবং কোন কোন বিষয়ে বিরুদ্ধাচরণের অবকাশ আছেঃ ব্যাপারেআলেম ফেকাহ্বিদগণ একমত যে, পিতা-মাতার আনুগত্য শুধু বৈধ কাজে ওয়াজিব। অবৈধ গোনাহ্র কাজে আনুগত্য ওয়াজিব তো নয়ই; বরং জায়েযও নয়।হাদীসে বলা হয়েছেঃ-لاطاعة لمخلوق فى معصية الخالق- অর্থাৎ, সৃষ্টিকর্তার নাফরমানীর কাজে কোন সৃষ্ট-জীবের আনুগত্য জায়েয নয়।
পিতা-মাতার সেবাযত্ন সদ্ব্যবহারের জন্য তাঁদের মুসলমান হওয়া জরুরী নয়ঃ
ইমাম কুরতুবী বিষয়টির সমর্থনে বুখারী থেকে আসমা রদ্বিঃ-এর একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন।
আসমা রদ্বিঃ রসূল স্বঃ-কে জিজ্ঞেস করেনঃ আমার জননী মুশ্রিকাহ্। তিনি আমার সাথে দেখা করতে আসেন। তাঁকে আদর-আপ্যায়ন করা জায়েয হবে কি? তিনি বললেনঃ-صلى أمك-অর্থাৎ, “তোমার জননীকে আদর-আপ্যায়ন করা।কাফের পিতা-মাতা সম্পর্কে স্বয়ং কুরআন পাক বলেঃ –وصاحبهما فى الدنيا معروفا- অর্থাৎ, যার পিতা-মাতা কাফের এবং তাকেও কাফের হওয়ার আদেশ করে ব্যাপারে তাদের আদেশ পালন করা জায়েয নয়, কিন্তু দুনিয়াতে তাঁদের সাথে সদ্ভাব বজায় রেখে চলতে হবে। বলাবাহুল্য, আয়াতে মারূফবলে তাঁদের সাথে আদর-আপ্যায়নমূলক ব্যবহার বোঝানো হয়েছে।
মাসআলাহ্ঃ যে পর্যন্ত জিহাদ ফরযেআইন হয়ে যায়, ফরযে কিফায়াহ্র স্তরে থাকে, সে পর্যন্ত পিতা-মাতার অনুমিত ছাড়া সন্তানের জন্যে জিহাদে যোগদান করা জায়েয নয়।
হীহ্ বুখারীতেআব্দুল্লাহ্ ইব্নেউমারের রদ্বিঃ বাচনিক বর্ণিত রয়েছে, জনৈক ব্যাক্তি রসূলুল্ল-হ্ স্বঃএর কাছে জিহাদের অনুমতি নেয়ার জন্যে উপস্থিত হয়। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার পিতা-মাতা জীবিত আছেন কি? সে বললঃ জ্বী হাঁ, জীবিত আছেন। রসূলুল্ল-হ্ স্বঃ বললেনঃ তাহলে তুমি পিতা-মাতার সেবাযত্নে আত্ননিয়োগ করেই জিহাদ কর। অর্থাৎ, তাঁদের সেবা-যত্নের মাধ্যমেই তুমি জিহাদের ছাওয়াব পেয়ে যাবে। অন্য রেওয়ায়েতে এর সাথে একথাও উল্লেখিত রয়েছে যে, লোকটি বললঃ আমি পিতা-মাতাকে ক্রন্দনরত অবস্থায় ছেড়ে এসেছি। একথা শুনে রসূলুল্ল-হ্ স্বঃ বলেনঃ যাও, তাঁদের হাসাও; যেমন কাঁদিয়েছ। অর্থাৎ, তাঁদেরকে গিয়ে বলঃ এখন আমি আপনাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জিহাদে যাব না। (কুরতুবী)
মাস্আলাহ্ঃ রেওয়ায়েত থেকে জানা গেল যে, কোন কাজ ফর্যে-’আইন না হলে এবং ফর্যে কিফায়াহ্র স্তরে থাকলে সন্তানের জন্যে পিতা-মাতার অনুমিত ছাড়া সে কাজ করা জায়েয নয়। দ্বীনী শিক্ষা অর্জন করা এবং তাবলীগের কাজে সফর করাও এর অন্তর্ভুক্ত। ফর্য্ পরিমাণ দ্বীনী জ্ঞান যার অর্জিত আছে, সে যদি বড়আলেম হওয়ার জন্যে সফর করে কিংবা তাবলীগ দাওয়াতের কাজে সফর করে, তবে পিতা-মাতার অনুমিত ব্যতীত তা জায়েয নয়।
মাস্আলাহ্ঃ পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার  নির্দেশ কুরআন হাদীসে উক্ত হয়েছে, পিতা-মাতার আত্নীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবের সাথে সদ্ব্যবহার করাও এর অন্তর্ভুক্ত। বিশেষ করে পিতা-মাতার মৃত্যুর পর।
হীহ্ বুখারীতেআব্দুল্লাহ্ ইবনেউমারের রদ্বিঃ বাচনিক বর্ণিত রয়েছে, রসূলুল্ল-হ্ স্বঃ বলেনঃ পিতার সাথে সদ্ব্যবহার এই যে, তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর বন্ধুদের সাথেও সদ্ব্যবহার করতে হবে। আবূ উসাইদ বদরী (রদ্বিঃ বর্ণনা করেনঃ আমি রসূলুল্ল-হ্ স্বঃ-এর সাথে বসেছিলাম, ইতিমধ্যে এক আনসার এসে প্রশ্ন করলঃ ইয়া রসূলাল্ল-হ্! পিতা-মাতার ইন্তেকালের পরও তাদের কোনহক্ব আমার যিম্মায় আছে কি? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ তাদের জন্যে দু ইস্তেগ্বফার করা, তাঁরা কারো সাথে কোন অঙ্গীকার করে থাকলে তা পুরণ করা, তাঁদের বন্ধুবর্গের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা এবং তাঁদের এমন আত্মীয়দের সাথে আত্মীয়তা বাজায় রাখা, যাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক শুধু তাঁদেরই মাধ্যমে। পিতা-মাতার এসবহক্ব তাঁদের পরও তোমার যিম্মায় অবশিষ্ট রয়েছে।
আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে নিজ পিতা-মাতার সাথে স্বদাচারণ,সেবা-যত্ন তাঁদেরকে হাসি-খুশিতে রাখার তাউফীক্ব দান করুণ।
আমীন ছুম্মা আমিন………

শেখ ফয়সাল মারুফ
ওস্তাতঃ- গোরস্থান মাদ্রাসা- ভোলা

 





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

© 2024 দ্বীপের সাথে ২৪ ঘণ্টা Bholar Sangbad, সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত।