শনিবার ● ৪ জুন ২০১৬
প্রথম পাতা » চরফ্যাশন » চরফ্যাশন সদর হাসপাতালটি এখন নিজেই রোগী, সেবা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন সাধারণ রোগীরা
চরফ্যাশন সদর হাসপাতালটি এখন নিজেই রোগী, সেবা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন সাধারণ রোগীরা
এসইউ. সোহেব: ভোলার চরফ্যাশন সদর হাসপাতালটি এখন নিজেই রোগী হয়ে পড়েছে। তাই সাধারণ রোগীরা দিন দিন এই হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা সেবা নেওয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। হাসপাতালে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, কর্মকর্তা কর্মচারীদের দায়িত্বে অবহেলা ও চিকিৎসা নিম্নমানের হওয়ায় সেবা নিতে আসা রোগীদের ক্ষোভের শেষ নেই। অন্যদিকে রোগীদের ভবনের ছাদের প্লাস্টার খসে গায়ে পড়ার আতঙ্কেও থাকতে হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্যকপ্লেক্সটির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দায়িত্বহীনতার কারণে হাসপাতালে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডের ভিতরে বেচিং এর উপর ভাত থেকে শুরু করে রোগীদের প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য স্তুপ করে রাখায় তা পঁচা দুর্গন্ধ বের হচ্ছে।
এদিকে হাসপাতালে রোগীর তুলনায় বেডের সংখ্যা একেবাড়েই কম। আবার এর মধ্যে কিছু বেড ভাঙ্গা ও অকেজো হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ রোগীরা বেড না পেয়ে হাসপাতালের মেঝেতেই চিকিৎসা নিতে বাধ্য হয়। হাসপাতাল নির্মাণ ও সংস্কার কাজ নিম্নমানের হওয়ায় ছাদের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে।
এ সময় অনেক রোগী অভিযোগ করে বলেন, দুপুরের পর থেকে ডাক্তার হাসপাতালে থাকেন না। ওই সময় তারা নিজের বাসা ও ফার্মেসিতে রোগী দেখেন। তাই সন্ধ্যার পর কোন রোগী হাসপাতালে নিয়ে আসলে জরুরী বিভাগ থেকে ভোলা ও বরিশালে রেফার করা হয়। এছাড়া এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২টি এ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। এর মধ্যে ১টি এ্যাম্বুলেন্স দীর্ঘ চার বছর ধরে বিকল হয়ে হাসপতালের সামনে পড়ে আছে।
নুরাবাদ এলাকা থেকে আসা আব্দুল হালিম ভোলার সংবাদ ডটকমকে বলেন, হাসপাতালের ফ্লোর খুবই নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর ভাবে রাখা হয়েছে। বাথরুম ব্যবহার করার কোনো পরিবেশ নেই। বাথরুমের অবস্থা এরকম যে ভালো মানুষ তা ব্যবহার করলে যেন অসুস্থ্য হয়ে যাবে। রোগীদের ফেলা ময়লা আবর্জনার নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না।
জাহানপুর এলাকা থেকে থেকে চিকিৎসা নিতে আসা বিবি কুলসুম বেগম ভোলার সংবাদ ডটকমকে বলেন, হাসপাতালে ভর্তি থেকে শুরু করে বেডে উঠা পর্যন্ত কর্মচারীদের টাকা দিতে হয়। না হলে বেড ও ভালো সেবা পাওয়া যায় না। এখানে দুই তিন পদের নরমাল ঔষুধ ছাড়া বাকি সব ঔষুধ বাহির থেকে ক্রয় করে আনতে হয়। তাছাড়া প্রতিদিন শুধু সকালে ডাক্তার আসেন। তার পরে সারাদিন রোগীদের খবর নেওয়ার কেউ থাকে না।
রোগী দেখতে আসা শাহে আলম ভোলার সংবাদ ডটকমকে বলেন, কিছু দিন আগে রাতে আমার এক আত্মীয়র পেটে সমস্যা হলে তাকে এই হাসপাতালে নিয়ে আসি। তখন হাসপাতালের কোনো ডাক্তার ছিল না। এরপর জরুরী বিভাগ থেকে আমাদেরকে রাতে ভোলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়। রাতের বেলা এ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে চড়াদামে মাইক্রোবাস ভাড়া করে ভোলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই। ডাক্তাররা বলেন এই রোগীর চিকিৎসাতো ওখানেই দেওয়া যেত। কেনো এখানে পাঠিয়েছে।
রোগীদের এসব অভিযোগ ও অনিয়মের ব্যাপারে চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্যকর্মকর্তা ডা. সিরাজুল ইসলাম ভোলার সংবাদ ডটকমকে বলেন, পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে আমরা অনেক দুর্বল। হাসপাতালে ১০ জন সুইপার থাকার কথা থাকলেও সেখানে রয়েছে মাত্র তিন জন।
তিনি আরও বলেন, ৫০ শয্যা হাসপাতালে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ জনের বেশী রোগী ভর্তি হয়। তাই জনবল সংঙ্কটের কারণে রোগীরে চিকিৎসা দেওয়া আমাদের সাধ্যের বাহিরে চলে গেলে তাদের ভোলা সদরে প্রেরণ করি।
এ্যাম্বুলেন্সের বিষয়ে তিনি বলেন, এ্যাম্বুলেন্সটি বিআরটি থেকে চলাচলের জন্য অকেজো ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী রোগীদের সেবা প্রদানের চেষ্টা করে যাচ্ছি।