শনিবার ● ৪ জুন ২০১৬
প্রথম পাতা » জাতীয় » ভোলায় দু’ই সপ্তাহে মেঘনার ভাঙ্গনে ৫ শতাধিক ঘর-বাড়ি বিলীন, হুমকির মুখে জংশন বাজার
ভোলায় দু’ই সপ্তাহে মেঘনার ভাঙ্গনে ৫ শতাধিক ঘর-বাড়ি বিলীন, হুমকির মুখে জংশন বাজার
এইচ এম নাহিদ: রোয়ানুর প্রভাবে ভোলার নদ-নদী গুলো এখনো ফুঁেস আছে। বেড়ে গেছে নদী ভাঙ্গনের তীব্রতা। জেলার ৭ টি উপজেলার অন্তত ৪০ টি পয়েন্টে নদী ভাঙ্গন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সবচেয়ে বেশি ভাঙ্গছে ইলিশার জংশন বাজার এলাকায়। ইতোমধ্যেই ভোলা-লক্ষীপুর রুটের ফেরীঘাট ভেঙ্গে গেছে। গত ২ সপ্তাহে ওই এলাকার ৫ শত ঘর-বাড়িসহ রাস্তা-ঘাট এবং সহস্্রাধিক একর ফসলি জমি মেঘনা গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। রাজাপুর-ইলিশা রক্ষায় ২শত ৮০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও বর্ষা মৌসুম চলে আসায় নদী-তীর সংরক্ষণের কাজ শুরু করতে পারছেনা পানি উন্নয়ন বোর্ড।
নদী ভাঙ্গনের কড়াল গ্রাসে ভোলা ক্রমশঃ ছোট হয়ে আসছে। একাধিক হাট-বাজার ঘর-বাড়ী আর ফসলি জমি ভাঙ্গার পর এবার রাক্ষুসী মেঘনা ভোলার শত বছরের পুরোনো ইলিশা জংশন বাজার গ্রাস করতে যাচ্ছে। জংশন বাজার থেকে শীত মৌসূমেও মেঘনা ২ কিলোমিটার দুরে ছিল। এ বর্ষায় জংশন বাজার থাকবে কিনা তা নিয়ে চরম সংশয়ে রয়েছেন এলাকাবাসী। বাজারটিতে সরকারী ব্যাংক বীমা স্কুল কলেজ মাদ্রাসাসহ সহ¯্রাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাজারটি ভেঙ্গে গেলে শুধু ইলিশাবাসীই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না চরম ঝুঁকিতে পরবে জেলা শহর ভোলা।
শনিবার মেঘনার ভাঙ্গন দেখার জন্য জংশন বাজারে গিয়ে স্থানিয় লোকজন থেকে শুরু করে শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যবসায়িদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে , প্রত্যেকেই চরম আতংকের মধ্যে রয়েছেন। তাদের মতে জংশন বাজারকে রক্ষায় এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে ঈদের আগেই জংশন বাজার নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
জংশন এলাকায় গত কয়েক দিনে ভাঙ্গনের তীব্রতা এত বেশি যে, লোকজন তাদের বসতঘর ও আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার সময়ও পাচ্ছেনা। প্রতিদিনই রাক্ষুসী মেঘনা গিলে খাচ্ছে কোন না কোন বসতবাড়ী, ফসলি ক্ষেত, বাগান, কিংবা কোন প্রতিষ্ঠান। ভাঙ্গনের শিকার হওয়া মানুষগুলো ভিটে-মাটি হারিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। অনেকে আবার নিরুপায় হয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে। ভাঙ্গনের ভয়াবহতায় স্থানিয় লোকজন একদিকে যেমন দিশেহারা অন্যদিকে ২শ’ ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও এ বর্ষায় কাজ শুরু না হওয়ায় চরম হতাশ।
জংশন বাজারের লোকজন একাধিকবার ভাঙ্গনের শিকার হয়ে এখন পরের জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। তারা সরকারী ভাবে কোন প্রকার সাহায্য সহযোগিতা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন।
ভোলা পানি উন্নয়ন বিভাগ-১ এর উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. ইউনুস বলেন, ইলিশা রাজাপুর এলাকার নদী তীর সংরক্ষণে ২শ’ ৮০ কোটি টাকার নদী তীর সংরক্ষণ কাজের টেন্ডার হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে কাজ শুরু করা না হলেও জরুরী ভিত্তিতে রাজাপুর স্কুল থেকে পূর্ব ইলিশা তে-মাথা পর্যন্ত ২ কিলোমিটার এলাকায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে জিও ব্যাগ ভর্তি বালির বস্তা ডাম্পিংয়ের কাজ শুরু করা হয়েছে।
তবে ভাঙ্গন রোধে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করে ইলিশা জংশন বাজারসহ জেলা শহর ভোলাকে রক্ষা করবে সরকার- এমনটাই দাবী এখানকার সর্বস্তরের মানুষের।
জেলা নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ কমিটির সদস্য এ্যাডভোকেট নজরুল হক অনু বলেন, ভাঙ্গন রোধে ভোলায় বর্তমানে ১ হাজার ৭শ’ কোটি টাকার চলছে। অথচ সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে ভাঙ্গন ঠেকানো যাচ্ছেনা। বর্ষায় প্রকল্প গ্রহণ না করে শীত মৌসুমে গ্রহণ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। তাই তিনি অতিতের ভুলভ্রান্তি থেকে সরে এসে ভোলা রক্ষায় সরকার সহ ভোলার নেতৃবৃন্দকে সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে পদক্ষেপ নেয়ার দাবী জানান।