শুক্রবার ● ২০ মে ২০১৬
প্রথম পাতা » আইন ও অপরাধ » চরফ্যাশনে গাছে বেঁধে তরুণীকে নির্যাতন : ১৭ দিনেও গ্রেফতার হয়নি যুবলীগ নেতা কাজল (ভিডিও সহ)
চরফ্যাশনে গাছে বেঁধে তরুণীকে নির্যাতন : ১৭ দিনেও গ্রেফতার হয়নি যুবলীগ নেতা কাজল (ভিডিও সহ)
এস,ইউ সোহেব: ভোলার চরফ্যাশনে তরুণীকে সুপারী গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের ১৭ দিন পরেও আসামি যুবলীগ নেতা কামরুল ইসলাম কাজলকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসী মনে করছে প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় থাকার কারণে পুলিশ কাজলকে গ্রেফতার করতে গড়িমসি করছে। তবে এ অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি পুলিশের ।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, চরফ্যাশন উপজেলার নুরাবাদ ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের নজির মাঝির হাট এলাকার নজির মাঝির ছেলে উপজেলা যুবলীগের সদস্য মো. কামরুল ইসলাম কাজলের (৩০) সঙ্গে প্রায় এক বছর ধরে পাশের এলাকার মো. মনিরের স্ত্রী নুর নাহারের (২৬) পরকীয়া সম্পর্ক চলে আসছিল। বিষয়টি স্বামী মনির টের পেলে নাহারকে তার বাবার বাড়িতে রেখে যান। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কাজল নুর নাহারকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে বিভিন্ন জাগায় নিয়ে স্ত্রী হিসেবে বাসবাস করতেন। যুবলীগ নেতার পরকীয়ার ঘটনা এলাকায় জানাজানি হলে কৌশলে ওই তরুণীকে বিয়ে করতে অস্বীকার করেন কাজল। নূর নাহার কাজলকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে কাজল ও তার পরিবারের লোকজন তাকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে গাছে বেঁধে নির্যাতন করে।
নির্যাতিতার মা তহুরা বেগম বলেন, ‘কাজুইল্লা ও তার বাড়ির লোকজন আমার মাইয়্যার মাজাই বানচে, হাত বানচে,পা বানচে, অই আমার মাইয়্যারে বাইন্না চোখে মুখে মরিচ দিয়া, গাছের লগে দান্তা দিয়া পিচমোড়া বাইন্না থুইচে। মনারে মারতে মারতে মুখ দিয়া লেউড্ডা উটছে। পরে এক বুইড়া বেডা কয়, হায় হায় মইরা যাইবো বান চাইরা দে, পরে এক মহিলা বান চাইরা দিচে।’ এমন বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন নুর নাহারের মা তহুরা বেগম।
নির্যাতিত নুর নাহার অভিযোগ করে বলেন, ‘গত ৪ মে সকালে কাজল আমাকে মোবাইলে কল দিয়ে তাদের বাড়িতে যেতে বলে। আমি তাদের বাড়িতে যাওয়ার পর কিছু বোঝার আগেই কাজল, তার ভাই জামাল, হেলাল, বোন সুরমাসহ কয়েকজন মিলে রশি দিয়ে আমাকে সুপারি গাছের সাথে পিচমোড়া বেঁধে এলোপাতাড়িভাবে কয়েক দফা মারধর করে এবং চোখে মুখে মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে দিলে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরে স্থানীয় লোকজন আমাকে উদ্ধার করে চরফ্যাশন সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। নুর নাহার আরও বলেন, ঘটনার দিন রাতে আমি বাদী হয়ে চরফ্যাশন থানায় ৭ জনকে আসামি করে মামলা করলে ২ আসামিকে গ্রেফতার করলেও প্রধান আসামি কাজলকে এখনো গ্রেফতার করছে না পুলিশ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক এলাকাবাসী জানান, যুবলীগ নেতা কাজল একই এলাকার তেতুঁলিয়া নদীর বউ বাজার নামক মাছ ঘাট ও গাছির খাল নামক ঘাটে জেলের কাছ থেকে চাঁদাবাজি, জমি দখল করে নিজের নামে বাজার নির্মাণ করে, ভেজাল পেট্রোল বিক্রি, চোরাই মোটসাইকেল কেনা-বেচা ও প্রতারণাসহ নানান অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তাকে বিভিন্নভাবে হেনস্থা, লাঞ্ছিত ও হয়রানি করা হচ্ছে। এই ভয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় থাকার কারণে ও পুলিশের সঙ্গে কাজলের ভালো সখ্যতা থাকায় পুলিশ কাজলকে গ্রেফতার করতে গড়িমসি করছেন বলেও জানান তারা।
এদিকে অভিযুক্ত যুবলীগ সদস্য কামরুল ইসলাম কাজল গ্রেফতার আতঙ্কে গা ঢাকা দেওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
নিলকমল ইউপি চেয়ারম্যান লিখন বলেন, খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে চৌকিদার পাঠিয়েছিলাম।পরে এটা পুলিশে হস্তান্তর করা হয়েছে। কাজল ও তার পরিবার যে কাজটি করেছে তা আসলে নিন্দনীয়। এ জন্য তাদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি হওয়া উচিত। যাতে এ রকম অপরাধ সমাজে আর না ঘটতে পারে।
এদিকে চরফ্যাশন থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. মহাসিন পুলিশের সাথে কাজলের সখ্যতার বিষয়টি সত্য নয় দাবি করে বলেন, বাদীর মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে মেডিকেল টেস্ট করানো হয়েছে। পুলিশ কাজলের ভাই জামাল, বোন সুরমাকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। প্রধান আসামি কাজলকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশের অভিযানসহ সকল প্রকার চেষ্টা চলছে।
এছাড়া তরুণীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের প্রতিবাদে যুবলীগ নেতা কামরুল ইসলাম কাজলকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে সুশীল সমাজের উদ্যোগে ভোলায় মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজনও করা হয়।