শুক্রবার ● ২২ মে ২০১৫
প্রথম পাতা » কৃষি » ধান আছে, হাসি নেই কৃষকের মুখে
ধান আছে, হাসি নেই কৃষকের মুখে
ঢাকা :: জ্যৈষ্ঠ মাসে মেঘনার ঢেউ আরও বেশি থাকে। ঢেউয়ে ভেসে ভেসে বিশাল বজরা নৌকায় ধান আসে। এ বছর ঢেউও নেই, ধানও কম। ইগল পাখির ঠোঁটের মতো বাঁকানো নৌকায় বসে ধান মাপা দেখতে দেখতে এ কথা বলছিলেন কিশোরগঞ্জের নিকলী থেকে আসা কৃষক শহিদ। হতাশ আর বিষণ্ন মুখে বললেন, ‘এক মণ ধান বেইচা আধা কেজি ওজনের একটা ইলিশও কিনতে পারতেছি না।’আশুগঞ্জের ধান বেচাকেনার জন্য খ্যাত মেঘনাঘাটে দাঁড়ানো কৃষক শহিদের পরনে রংচটা লুঙ্গি, গায়ের শার্টের রংও ফ্যাকাশে। তার চেয়েও ফ্যাকাশে তাঁর মুখ। ধান নিয়ে কথা বলতে গেলে বলে উঠলেন, ‘তিন বছর ধইরা দাম পাই না। এখন বুঝতাছেন কেন মানুষ সাগর পাড়ি দিয়া থাইল্যান্ডের জঙ্গলে যায়।’
বুধবার আশুগঞ্জ চালের মোকামে গিয়ে দেখা গেল, দেশের ধানের সবচেয়ে এই বাজারের কৃষক ও ধান ব্যবসায়ীদের এমন মলিন মুখ যেন পুরো এলাকাতেই ভর করেছে। এ যেন সারা দেশের কৃষকেরই প্রতিচ্ছবি। বোরোর ভরা মৌসুমে বাজারজুড়ে হট্টগোলের বদলে বিরাজ করছে একধরনের নিস্তব্ধতা। হাতে গোনা কয়েকটা ধানের নৌকা আসছে। তারও আবার ক্রেতা নেই। দাম সরকারের সংগ্রহ মূল্যের প্রায় অর্ধেক।
হাতে ক্যামেরা আর কাগজ-কলম দেখে একজন ধানশ্রমিক মন্তব্য করলেন, ‘ভাই লিইক্কা দেন, আশুগঞ্জ অচল হইয়া গেছে। ধান দিয়া এই এলাকা উঠছিল। এখন সেই ধানই নাই, যা আছে তারও দাম নাই। ধানের দামের মতো এলাকার মাইনষের জীবনও পইড়া গেছে।’
ধানচাষিদের এই ‘পড়ে যাওয়া’ জীবনের চিত্র অবশ্য অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দামের মধ্যেই মেলে। আশুগঞ্জ বাজারে গিয়ে দেখা গেল, প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা আর খাসির মাংস ৫৫০ টাকা। এক কেজি ইলিশ এক হাজার টাকা। আর এক মণ ধানের দর ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। অর্থাৎ এক মণ ধান বিক্রি করে কৃষক এক কেজি খাসির মাংসও কিনতে পারছেন না। আর এক কেজির একটি ইলিশ কিনতে গেলে তাঁকে দুই মণ ধান বিক্রি করতে হচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ধান-চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জিয়াউল করিম খান জানালেন, আশুগঞ্জ মোকামে নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, সুনামগঞ্জ, সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বেশির ভাগ ধান আসে। আগে এই মৌসুমে দিনে ৫০-৬০ হাজার মণ ধান আসত। এবার ২০-২৫ হাজার মণের বেশি আসেনি। গত তিন বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে কম দামে ধান বিক্রি হচ্ছে। সরকার প্রতি মণ ধান ৮৮০ টাকায় কেনার ঘোষণা দিলেও আশুগঞ্জ বাজারে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৫২০ থেকে ৫৫০ টাকায়। আর সরকারি হিসেবেই প্রতি মণ ধানের উৎপাদন খরচ ৭০০ টাকা।
শুধু আশুগঞ্জের চাতাল নয়, দেশের ১৮ হাজার চালকলের ৭০ শতাংশই বন্ধ রয়েছে। কারণ, বাজারে ধানের দাম কম, ফলে সরবরাহও কমে গেছে। দেশের উত্তরাঞ্চলের বড় ধান-চালের বাজার নওগাঁ, বগুড়া, দিনাজপুর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গায় ধান-চালের বাজারে একই চিত্র দেখা গেছে।