সোমবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » কৃষি » ভোলার চরাঞ্চলের আমনের বাম্পারে ভূমিদস্যুদের কু-দৃষ্টি : লাঠিয়ালদের মহরা : আতঙ্কে কৃষকরা
ভোলার চরাঞ্চলের আমনের বাম্পারে ভূমিদস্যুদের কু-দৃষ্টি : লাঠিয়ালদের মহরা : আতঙ্কে কৃষকরা
বিশেষ প্রতিনিধি: ভোলার চরাঞ্চলের আমনের ফলন নিয়ে ভূমিদস্যু ও লাঠিয়াল বাহিনীদের ভয় নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। অনেক কৃষকরা এখন রাত জেগে ধান পাহারাও দিচ্ছেন। জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে নামকরা লাঠিয়াল বাহিনী ভাড়ায় এনে ভূমিদস্যুরা চুক্তির মাধ্যমে সাধারণ কৃষকদের জমি দখল করার জন্য ফাঁতারা করছেন। বিশেষ করে আমনের এই মৌসমে ভূমিদস্যুরা চরাঞ্চলের সাধারণ কৃষকের আমনের ফসল জোর করে কেটে নিজেদের ঘরে তোলে জমি নিজের দখলে নিয়ে আসেন।
অনুসন্ধ্যানে জানা যায়, জেলায় ৩০ টির বেশি ছোট বড় চর রয়েছে। এর মধ্যে চর মানিক, চর জব্বার, চর নিউটন, চর নিজাম, চর জংলী, চর মনপুরা, চর ফয়েজ উদ্দিন, চর জহিরউদ্দিন, চর কচুয়া, ভাসান চর, চর পাতিলা, চর কুকড়ি মুকড়ি ও ঢাল চর, চরকলমী সহ অসংখ্য চর রয়েছে। এর মধ্যে লালমোহনের চর কচুয়া ও চরফ্যাশন উপজেলার অধিকাংশ চরের জমি দখল করতে ভূমিমদস্যুরা ব্যাপরোয়া হয়ে উঠেছে। জমি দখল করতে গিয়ে লাঠিয়াল বাহিনী ইতিপূর্বে চরফ্যাসন উপজেলার কলমীর বিছিন্ন চরে হত্যা, ধর্ষণ, গুম, এ্যাসিড নিক্ষেপ করে কৃষক পরিবারদের সর্বশান্ত করার অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে কৃষক, কৃষাণী তাদের ফসলি জমির ধান রক্ষা করার দাবিতে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের কাছে স্বারক লিপি প্রদান সহ মানববন্ধন করেছে। দক্ষিণ আইচা থানার ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩টিই ভূমিদস্যুদের দখলে রয়েছে।
অপরদিকে শশীভূষণ থানার চরমায়ায় প্রায় তিন শতাধিক একর জমির ধান কেটে নিতে লাঠিয়াল বাহিনীরা সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছেন। এতে করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ওই চরের জমির মালিক ও সাধারণ কৃষকরা।
এলাকা সূত্রে জানা গেছে, চরমায়া গ্রামের নিরিহ ভূমি মালিকদের পাকা ধান কেটে নিয়ে যাওয়ার জন্য এলাকার কিছু লাঠিয়াল সর্দাররা বগী দা, লাঠি সোটা নিয়ে সশস্ত্র মহরা শুরু করায় ওই এলাকায় চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসিকে আতঙ্কিত করার জন্য একই এলাকার লাঠিয়াল মজিবল, শফিউল¬াহ বাঘা, ফারুক মাতাব্বর, ইয়াছিন মাতাব্বর, জাকির মাতাব্বর, আলমগীর মাতাব্বর, মো.জামাল,মহিউদ্দিন, আলাউদ্দিন, সালাউদ্দিন, গিয়াসউদ্দিন, তছলিম, মফিজ, ফিরোজ, দুলাল, নাগর ও জাহাঙ্গীরসহ একটি সশস্ত্র লাঠিয়াল বাহিনী অভিরত মহরা দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এঘটনায় ওই চরের নিরাপত্তার জন্য গত সপ্তাহে বিগত বছরগুলোর মত এবারও একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন মালিক ও কৃষকরা। সেই দাবির প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাাসক ও পুলিশ সুপার সেখানে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু শশীভূষণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অদ্যাবধি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন না করে পুলিশ ওই চরের ধান না কাটার জন্য (ওয়ার্নিং নোটিশ) নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। এব্যাপারে শশীভূষণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সামছুল আরেফিন বলেন, শশীভূষণ থানা থেকে ওই বিরোধীয় চরের দূরত্ব মাত্র ১০ মিনিটের পথ। তাই যেকোন মূহূর্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব। এ জন্য পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের বিশেষ প্রয়োজন নেই। তারপরও প্রয়োজনে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা যাবে।
এব্যাপারে ভোলা জেলা পুলিশ সুপার মনিরুজ্জমান বলেন, চরফ্যাশন, শশীভূষণ ও আইচা থানার ধান পাকার মৌসুমে কিছু লাঠিয়াল সর্দাররা সমস্যা করে। এ জন্য চর মায়াসহ চরাঞ্চল এলাকায় কোন প্রকার অপ্রিতিকর ঘটনা ছাড়াই কৃষকরা তাদের ফলনকৃত জমির ধান ঘরে তুলতে পারে তার জন্য একাধিক পুলিশ ক্যাম্পের ব্যাপারে লিখিত নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
এ চরে ১৯৮০ সালে ধান কাটা ও জমি দখল নিয়ে লাঠিয়াল সর্দারদের হাতে রহমআলী ডাক্তার, কালু মাঝি, লালু মাঝিসহ ৮ জন খুন হয়েছে বলেও জানিয়েছেন এলাকাবাসী। ফের এবছর লাঠিয়াল সর্দারদের উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় এলাকাবাসী ব্যাপক ভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
এবার জেলার চরাঞ্চলে আমনের বাম্পার ফলন ভালো হলেও কৃষকদের ঘরে ওই ফসল যাবে কিনা এই নিয়ে শঙ্কিত রয়েছেন একল চরের কৃষক কৃষাণীরা। কৃষক কৃষাণীদের একটাই দাবি তারা যেন কোন প্রকার অপ্রিতিকর ঘটনা ছাড়াই তারা তাদের ফলনকৃত জমির ধান ঘরে তুলতে পারে।