সোমবার ● ১৮ মে ২০১৫
প্রথম পাতা » আইন ও অপরাধ » চরফ্যাশনে নামের মিল থাকায় ষোল বছর ধরে অবৈধভাবে বেতন উত্তোলন!
চরফ্যাশনে নামের মিল থাকায় ষোল বছর ধরে অবৈধভাবে বেতন উত্তোলন!
ডেস্ক রিপোর্ট:: ঠিক যেন সিনেমার কাহিনী। নামের মিল থাকায় অন্যের ইনডেক্স ব্যবহার করে দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর যাবত বেতনভাতা উত্তোলন করে আত্মসাত করছেন ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ মোহাম্মদপুর দাখিল মাদরাসার কথিত সুপার মোঃ ইউনুছ ও সহকারি শিক্ষক মোঃ হাবিবুল্লাহ। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে তাদের এই ভয়াবহ দুর্নীতির প্রমানসহ আবেদনের পর বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। এই দুর্নীতির তদন্তের জন্য পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন হলেও তদন্ত কর্মকর্তারা ম্যানেজ হয়ে যাওয়ায় দুর্নীতির আসল চিত্র এখনো প্রকাশিত হয়নি।
প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে জানা যায়, ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ মোহাম্মদপুর দাখিল মাদরাসাটি এমপিও ভুক্ত হয় ১৯৯৪ সালে। তখন এই মাদরাসার দাখিল শাখায় মোঃ ইউনুছ নামে একজন সহকারি শিক্ষক ছিলেন যার ইনডেস্ক নম্বর ৩৬৪৯৭২ আর ইবতেদায়ী শাখায় ছিলেন মোঃ হাবিবুল্লাহ নামে অপর এক জুনিয়র শিক্ষক। যার ইনডেস্ক নম্বরইবি ৩৬৪৯৭৪। এই দুজন শিক্ষক ১৯৯৫ সালের জুলাই মাসে এই মাদরাসা থেকে চাকুরি ছেড়ে চলে যান। এর কিছুদিন পর মারা যান শিক্ষক মোঃ ইউনুছ। এরপরই শুরু হয় নাটকীয়তা। একই উপজেলার মিয়াজানপুর রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মোঃ ইউনুছ নামের মিল থাকার সুযোগ নিয়ে ম্যানেজিং কমিটির সহায়তায় এই মাদরাসায় এসে চলে যাওয়া সাবেক শিক্ষক মোঃ ইউনুছের ইনডেস্কটি নিজের বলে দাবী করে ১৯৯৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর একই পদে যোগদান করেন। একইভাবে নামের মিল রেখে ইউনুছের শ্যালক হাবিবুল্লাহ ও মাদরাসা থেকে চলে যাওয়া জুনিয়র শিক্ষক হাবিবুল্লাহর ইনডেস্কটি নিজের দাবী করে ১৯৯৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সহকারি মৌলভী পদে যোগ দেন। তিনি ইবতেদায়ীর ইনডেস্ক ব্যবহার করলেও এখন চাকুরি করছেন দাখিল কোঠায়।
অভিযুক্ত দুজন শিক্ষকই ১৯৯৯ সালে এই মাদরাসায় যোগ দিলেও তাদের ইনডেস্ক ১৯৯৪ সালের। বিষয়টি ভয়াবহ রকমের দুর্নীতি হলেও ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে কিভাবে তারা এখনো বহাল থেকে সরকারের বেতন ভাতা আত্মসাত করছেন তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, সহকারি মৌলভী হাবিবুল্লাহর ইনডেস্ক (ইবি ৩৬৪৯৭৪) ১৯৯৪ সালের হলেও তিনি আলিম পাশ করেছেন ১৯৯৫ সালে। যার প্রমান এই প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
এসব বিষয়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করা হয়। বরিশাল শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অভিযোগ পেয়ে ভোলাজিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষককে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেন। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা ভোলাজিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক জাকিরুল হক ঘটনাস্থলে গিয়ে দুর্নীতিবাজ এই ২ শিক্ষকের নানা কূটকৌশলে ম্যানেজ হয়ে প্রকৃত চিত্র আড়াল করে সাদামাটা ও দায়সারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন বলে জানা গেছে। এবিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা জাকিরুল হক জানান, তদন্ত প্রতিবেদন আমি কয়েক মাস আগেই ডিডি স্যারের কাছে জমা দিয়েছি। আপনি সেখান থেকে তথ্য জেনে নিন।
অপরদিকে ভোলা জেলা শিক্ষা অফিসের পক্ষ থেকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় চরফ্যাশন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সামালগীর হোসেনকে। তিনিও ঘুষ খেয়ে দুর্নীতির প্রকৃত চিত্র আড়াল করে অভিযুক্ত ২ শিক্ষককে বাচিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন বলে অভিযোগ করেছেন ওই মাদরাসায় কর্মরত একাধিক শিক্ষক। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা সামালগীর হোসেন বলেন, মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটিকে ম্যানেজ করে তারা এ ধরনের কাজ করেছে। তবে তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে তিনি বলেন, ফাইল না দেখে এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। অভিযুক্ত শিক্ষক মোঃ ইউনুস জানান, তিনি ১৯৯৬ সালে ওই মাদরাসায় যোগ দিয়েছেন, তবে ১৯৯৪ সালের ইনডেস্ক ব্যবহার করছেন কিভাবে? সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারেননি তিনি। একইভাবে অপর অভিযুক্ত শিক্ষক মোঃ হাবিবুল্লাহর কাছে জানতে চাওয়া হয় আপনি ১৯৯৫ সালে আলিম পাশকরে ১৯৯৪ সালের ইনডেস্ক ব্যবহার করছেন কিভাবে? এমন প্রশ্নেরও কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। হাবিবুল্লাহ বলেন, ম্যানেজিং কমিটি আমাদেরকে কিভাবে নিয়োগ দিয়েছে বিষয়টি তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন।
দক্ষিণ মোহাম্মদপুর দাখিল মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ আবদুল খালেক জানান, আমি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হয়েছি মাত্র এক বছর। এর আগে কারা কিভাবে এই মাদরাসায় যোগ দিয়েছে কিংবা কে কার ইনডেস্ক ব্যবহার করছে এ বিষয়ে আমার তেমন কিছু জানা নেই। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসব বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (মাদরাসা) মোঃ আবুল হোসেনের বক্তব্য জানার জন্য তার মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।