রবিবার ● ২৫ অক্টোবর ২০১৫
প্রথম পাতা » আইন ও অপরাধ » ভোলায় অটোরিক্সা আটকের নামে প্রসাশনের বাণিজ্য
ভোলায় অটোরিক্সা আটকের নামে প্রসাশনের বাণিজ্য
শিমুল চৌধুরী : ভোলায় ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পুলিশ। তাই ভোলার বিভিন্ন সড়কে চলাচলকারি অটোরিক্সা আটক কারা হচ্ছে। এদিকে চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে অটোরিক্সা আটক করার পর চালক ও মালিকের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে আবার ছেড়ে দিচ্ছে পুলিশ। অপরদিকে অটোরিক্সা মালিকরা অভিযোগ করছেন, শুধু অটোরিক্সা চালক কিংবা মালিক নয়, বাস মালিক সমিতির নেতাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে পুলিশ ভোলার রাস্তায় অটোরিক্সা চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এটা পুলিশের একটা নতুন বাণিজ্য বলেও মন্তব্য করেন অটোরিক্সা মালিক ও চালকরা। গত কয়েকদিন ধরে ভোলা-চরফ্যাশন আঞ্চলিক মহাসড়কের বিভিন্ন স্পটে দাড়িয়ে পুলিশ এ পর্যন্ত তিন শতাধিক অটোরিক্সা আটক করে লাখ টাকার বাণিজ্য করেছে বলেও অভিযোগ করেন মালিক ও চালকরা।
জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার পক্ষিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অটোরিক্সা চালক মাইনুদ্দিন (২৮) বলেন, গত কয়েক বছর ধরে তিনি বোরহানউদ্দিন উপজেলার বিভিন্ন সড়কে অটোরিক্সা চালাচ্ছেন। কিন্তু গত ১৯ অক্টোবর বিকেলে পুলিশ আকস্মিকভাবে তার অটোরিক্সা আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশ তাকে জানায়, অটোরিক্সা চলাচল অবৈধ। তাই আটক করা হয়েছে। কিন্তু আটকের চার দিন পর ২৩ অক্টোবর রাতে বোরহানউদ্দিন থানার সেকেন্ড অফিসার নিজাম সিকদার অটোরিক্সা চালক মাইনুদ্দিনের কাছ থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে অটোরিক্সা ছেড়ে দেন। ওই উপজেলার কুতুবা ইউনিয়নের ছাগলা গ্রামের বাসিন্দা অটোরিক্সা চালক মোঃ গিয়াসউদ্দিন (২৬) বলেন, তার অটোরিক্সাটিও গত পুলিশ ১৯ অক্টোবর আটক করার পর পরবর্তীতে ৫০০টাকা নিয়ে ছেড়ে দেন থানার সেকেন্ড অফিসার। কুতুবা ইউনিয়নের অটোরিক্সা চালক মিলন (৩৪) বলেন, পুলিশ তার অটোরিক্সাও আটক করার পর তার কাছ থেকেও ৫০০টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয় পুলিশ। তবে, টাকা নেওয়ার পর অটোরিক্সা চালককে কোন রশিদ দেয়নি পুলিশ। এভাবে ওই উপজেলার অন্তত ২৫টি অটোরিক্সা আটকের পর প্রত্যেক অটোরিক্সা চালকের কাছ থেকে ৫০০টাকা থেকে এক হাজার টাকা করে নিয়ে ছেড়ে দিয়ে রমরমা বাণিজ্য করেছে বোরহানউদ্দিন থানা পুলিশ। এ বিষয়ে বোরহানউদ্দিন থানার সেকেন্ড অফিসার নিজাম সিকদার কালের বলেন, সরকার ভোলায় অটোরিক্সা চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা করেছে তাই অটোরিক্সা আটক করা হচ্ছে। অটোরিক্সা চালকের কাছ থেকে ৫০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, রশিদের মাধ্যমে ওই টাকা সরকারের কোষাগারে জমা দেওয়া হবে। তবে, অটোরিক্সা চালককে কেন রশিদ দেওয়া হচ্ছেনা কিংবা ভোলায় অটোরিক্সা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলে টাকা নিয়ে কেনই বা আবার ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে সে বিষয়ে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
এ ব্যাপারে বোরহানউদ্দিন থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ হানিফের সঙ্গে রবিবার বিকেলে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এই মুহুর্তে ওসি স্যার ফোন দিয়েছেন। আমি দশ মিনিট পর কথা বলবো। কিন্তু দশ মিনিট পর আর তিনি কোন কথা বলেননি।
এদিকে ভোলা সদর উপজেলায়ও একইভাবে অটোরিক্সা আটক করে পুলিশ বাণিজ্য করছে বলে অভিযোগ করেন অটোরিক্সা চালক ও মালিকরা। অটোরিক্সা মালিক ইলিয়াছ চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, বাস মালিক সমিতির কাছ থেকে পুলিশ মোটা অংকের টাকা নিয়ে এ বাণিজ্য শুরু করেছে। তিনি বলেন, যোগাযোগ মন্ত্রণাালয় থেকে ১১টি মহাসড়কে তিন চাকার গাড়ি চলাচলের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভোলার সড়ক তার মধ্যে পড়েনি। অথচ পুলিশ এটা বাড়াবাড়ি করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। অটোরিক্সা মালিক ইলিয়াছ চৌধুরী আরো বলেন, পুলিশ অটোরিক্সা আটকের নামে বাণিজ্যের কারণে হাজার হাজার অটোরিক্সা মালিক ও শ্রমিক আজ বেকার হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে ভোলা জেলা টেম্পো ও অটোরিক্সা মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল ইসলাম শামিম বলেন, ১১টি মহাসড়কে তিন চাকার গাড়ি চলাচলের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তার মধ্যে ভোলার সড়ক না থাকলেও পুলিশ এখানে অটোরিক্সাগুলো কেন আটক করছে তা আমার বোধগোম্য নয়। ভোলায় এ পর্যন্ত তিন শতাধিক অটোরিক্সা আটক করেছে বলেও দাবি করেন তিনি। অটোরিক্সা আটকের ফলে হাজার হাজার শ্রমিক এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অবিলম্বে পুলিশের এ বিাণিজ্য বন্ধোরও দাবি জানান তিনি। এব্যাপারে জানতে ভোলার পুলিশ সুপার মোহাঃ মনিরুজ্জামানের কাছে রবিবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে ভোলায় অটোরিক্সা আটক করে পুলিশের বাণিজ্য করার প্রতিবাদে শনিবার বিকেলে শহরের নতুন বাজার চত্বরে এক প্রতিবাদ সভা করেছে অটোরিক্সা চালক ও মালিক। এতে হাজার হাজার শ্রমিক উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় পুলিশের আটক বাণিজ্য বন্ধেরও দাবি জানানো হয়।