রবিবার ● ২৫ অক্টোবর ২০১৫
প্রথম পাতা » আইন ও অপরাধ » মেঘনা ও তেতুঁলিয়া নদীতে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে জাটকা নিধন
মেঘনা ও তেতুঁলিয়া নদীতে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে জাটকা নিধন
বিশেষ প্রতিবেদন• ভোলার মেঘনা ও তেতুঁলিয়ায় নদীতে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল দিয়ে প্রতিনিয়ত জাটকা ইলিশ নিধন করা হচ্ছে। জাটকা ইলিশ ধরা আর কারেন্ট জাল ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও এর কিছুই মানছে না এখানকার জেলেরা। প্রতিদিন প্রশাসনের নাকের ডগায় জাটকা মাছ নিয়ে জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভোলার মেঘনা ও তেতুঁলিয়ায় নদীতে এখন জেলেদের ছোট বড় নৌকা আর নৌকা। মাছ ধরায় ভীষণ ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কথা বলারও ফুরসত নেই তাদের। জাল ফেলা আর টেনে মাছ তুলে আনা নিয়েই এখন সবাই ব্যস্ততা জেলে পরিবারের। প্রতিবার যখন জাল তুলছে জেলেরা তখনই জালজুড়ে উঠে আসছে একের পর এক ইলিশ। তবে সেগুলো বড় নয়, সবই জাটকা। জেলেরা ও জানেন জাটকা ধরা আর কারেন্ট জাল নিষিদ্ধের কথা। তবে কিছুই মানছে না তারা।
মেঘনা পাড়েরর জেলে মো. নাছির মাঝি বলেন, এখন জাল বিচাইলে সব গুঁড়া (জাটকা) উডে। বেচতো গেলে তেমন পয়ঁসাও পাওয়া যায় না। আর বড় ইলিশও জালে উডেনা।
আরেক জেলে মো. আব্বাস মাঝি বলেন, সব পাইকাররা মিলে জোটকরে ইলিশ কিনছে। তাই ভালা দাম দেয় না। এতে আমাগো কিছু করণের নাই। তাগরে ইলিশ না দিলে গাঙ্গে মাছ ধরতে দেবো না। দাদনের টিয়ার লাইগা আটকাইয়া রাখবো আমাগো জাল ও নাউ।
তেতঁলিয়া পাড়ের জেলে, হামিদ মাঝি বলেন, ইনজিওর কিস্তি আর দাদনের টিয়ার জন্য বাড়ি ছাড়লেও ঘর চারে না। আর এক দিন গাঙ্গে না গেলে আমাগো সংসার চলেইনা। তার জন্য প্রত্যেকদিন গাঙ্গে যাওন লাগে।
জেলেদের অভিযোগ, এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজসে এই জাটকা ধরতে তাঁদের বাধ্য করাণ। বাস্তবতা হচ্ছে, আইন অমান্যকারী ও আইন প্রয়োগকারীদের মধ্যে এক রকম কানামাছি খেলা চলছে। আর জেলেরাও অনেকটা খোলা মেলা ভাবেই মাছ ধরছে। প্রতিদিন ভোলা সদর,দৌলুতখান, বোরহানউদ্দিন,তজুমদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন সহ ৭ উপজেলা গ্রামে গঞ্জে ফেরি করে এখন বিক্রি হচ্ছে জাটকা ইলিশ । এতে মাছের বংশ বৃদ্বি নিয়ে আশংঙ্কা প্রকাশ করছে সচেতন মহল।
দাম না পাওয়া সম্পর্কে জেলেদের অভিযোগ বিষয়ে আড়তদার আঃ আজিজ ও হেলাল হাওলাদার বলেন, এখন জাটকার মৌসুম। প্রচুর জাটকা ধরা পড়ছে নদীতে। তবে জেলেরা সঠিক দাম পাচ্ছে। আর তারা ঢাকার মোকামে নিয়ে দাম পাচ্ছে না। লোকসান হচ্ছে। এখানে দাম বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে আর ঢাকায় কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। জাটকা নিষিদ্ধ হওয়ার পরও কেন কেনা হচ্ছে, জানতে চাইলে পুরো বিষয়টি এড়িয়ে যান ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, জেলেরা ধরে আর আমরা ক্রয় করি।
নিষিদ্ধ জাটকা ধরা ও কারেন্ট জাল ব্যবহার সম্পর্কে ভোলা সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পলাশ হালদার বলেন, ইলিশ মাছ সারা বছর ডিম দিয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে সারা বছরই জাটকা পাওয়া যাবে। তবে এই সময়টায় বেশি পাওয়া যাচ্ছে। কারেন্ট জাল বিষয়ে অভিযান চালানো হবে বলেও জানান তিনি।
এবিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. সেলিম রেজা বলেন, মা ইলিশ নিধন অভিযান সফল বলেই প্রতি বছর ইলিশ মাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে জাটকা পাওয়ার কথা স্বীকার করে জেলা প্রশাসক বলেন, কারেন্ট জাল ব্যবহার ও জাটকা ধরা নিষেধ। তাই কারেন্ট জাল ব্যবহার ও জাটকা ধরা নির্মূল করার চেষ্টা করছি। একই সঙ্গে মহামান্য হাইকোর্টে যেহেতু আর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, সে ক্ষেত্রে কারেন্ট জাল উৎপাদনের স্থানে অভিযান চালিয়ে তা বন্ধ করে দেওয়া উচিত। সে লক্ষে কাজ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।