বৃহস্পতিবার ● ৪ জুলাই ২০১৯
প্রথম পাতা » আইন ও অপরাধ » লালমোহনে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে সুদি কারবারিরা
লালমোহনে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে সুদি কারবারিরা
লালমোহন প্রতিনিধি: ভোলার লালমোহন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে (রমরমা) চালিয়ে যাচ্ছে সুদের ব্যবসা। মানুষকে নিঃস্ব করে পথে বসানোর অন্যতম উপায় হচ্ছে এই সুদের ব্যাবসা। আর এখন সুদ মানুষকে নিঃস্ব করার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে উপজেলার প্রত্যান্ত অঞ্চলে। বর্তমানে এ ব্যবসা জমজমাট ভাবে চলছে উপজেলার শহর থেকে গ্রাম-গ্রামাঞ্চলে। ফলে সুদ ব্যবসায়ীদের রোসানলে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে সমাজের নিন্ম ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। অথচ এসব দেখার যেন কেউ নেই । এতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আর কিছু অসাধু ব্যাক্তি রাতারাতি ধনী বণে গেছেন খুব সহজেই।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার পৌর শহর ও রমাগঞ্জের রায়ঁচাদ বাজারে ব্যাঙ্গের ছাতার মত গড়ে উঠেছে বিভিন্ন এনজিও, সমিতি যা গ্রামের সহজ সরল খেটে খাওয়া মানুষকে লোভে ফেলে লোনের বেড়া জালে আটকিয়ে নিঃস্ব করে তোলেন। শুধু রায়ঁচাদ নয় ধলীগৌরনগরের চতলা বাজার এলাকার প্রায় প্রতি ঘরে সুদি কারবারি (মহাজন) জমজমাট ভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন সুদের ব্যাবসা, এমন বাড়ী আছে যেখানে বাবা ছেলে দু‘ জনই সুদের ব্যাবসার সাথে জরিত, চতলার সুদী কারবারিরা স্থানীয় এলাকা ছাড়াও পাস্ববর্তী আজাহার রোড, চরমোল্লাজী এলাকায় এসে মাসিক,সাপ্তাহিক ও দৈনিক কিস্তিতে এমনকি জমিন বন্ধকের নামেও সুদের ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছে অহরহ। চরভূতার মুগুরিয়া বাজার এলাকায় ও পিছিয়ে নেয় সুদী কারবারিরা। সুদি কারবারিদের বাহির থেকে যতই সুন্দর দেখা যাক না কেন, ভেতরটা এতটাই কুৎসিত যা বলে শেষ করা যাবে না।
এই সুদের ব্যবসা পবিত্র ইসলাম ধর্মে কঠিন ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হলেও কেউ মানছেন না ধর্মকে। তবে ইসলাম ধর্মে ঘোর বিরোধীতা করা হয়েছে অবৈধ সুদখোরদের বিরুদ্ধে।মহান আল্লা সুদকে হারাম এবং ব্যাবসাকে হালাল ঘোষনা দিয়েছেন বা বৈধতা দিয়েছেন। এই সুদের ব্যবসা এমন এক পর্যায়ে গিয়েছে যে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েও সুদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সবার আড়ালে এমনকি মসজিদে নামাজ পড়তে গেলেও এই সুদখোর লোকজনকে নামাজের প্রথম কাতারে বসে নামাজ পড়তে দেখা যায়। আর এই সুদ শুধু ব্যক্তিগত ভাবে নয়, উপজেলার শহর থেকে বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ছোট-বড় অবৈধ সঞ্চয় সমিতির নামে চলছে একচেটিয়া সুদের ব্যবসা। এখানে লাভবান হচ্ছে কিছু অসাধু লোকজন, যারা এই সঞ্চয় সমিতিগুলো নিয়ন্ত্রণ করছেন।
আর্থিক প্রয়োজনের বেকায়দায় পড়ে ওইসব সুদ ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ছে মধ্যবিত্ত পরিবার, কৃষক, বর্গা চাষী, স্বল্প আয়ের লোকজন সহ স্কুল, মাদ্রাসা, বেসরকারি, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ। তারা এই কষ্টকর জীবন অতিবাহিত করতে গিয়ে বিপদে পড়ে বাধ্য হয়ে ঐ সব সুদ ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে ১৫০-৩০০ টাকা ননজুডিশিয়াল সাদা ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর বা টিপ দিয়ে এমনকি ব্যাংকের ব্ল্যাঙ্ক চেক দিয়ে টাকা নিতে হয়। আর এই সাদা ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষী নেওয়া হয় সুদ ব্যবসায়ীদের পছন্দমতো ব্যক্তিদের এবং ইচ্ছে মতো সাদা ষ্ট্যাম্প পূরণ করে রাখেন কিংবা প্রয়োজন মতো লেখার জন্য ষ্ট্যাম্প ফাঁকা রাখেন। আর বেকায়দায় পড়া ব্যক্তিদের সুদ ব্যবসায়ীদের চাপে জমির দলিল পত্রাদি, স্বর্ণালংকার, চাকরিজীবিদের মাসিক বেতনের চেকও বন্ধক রাখতে বাধ্য হচ্ছে সুদ ব্যবসায়ীদের কাছে। দৈনিক, সাপ্তাহিক এমনকি মাসিক ভিত্তিতে নগদ ঋণ দিয়ে দেড় থেকে দুই গুণ মুনাফা আদায় করে সুদ ব্যবসায়ীরা। সুদ ব্যবসায়ীদের অত্যাচার ও লাঞ্চনার নজিরও রয়েছে অনেক।
একদিকে যেমন সুদ ব্যবসায়ীরা সম্পদের পাহাড় গড়ছে, অন্যদিকে সাধারণ ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ দিনদিন গরীব ও ভূমিহীনে পরিণত হচ্ছে। অথচ সুদ ব্যবসায়ীরা কর্তৃপক্ষের চোখে বৃদ্ধাঙ্গুলী দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে এ ব্যাবসা। স্থানীয় সচেতন মহলের দাবী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন অবৈধ সুদি মহাজন বা কারবারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করেন। এবং সুদ ব্যবসায়ীদের সার্বিক এ পরিস্থিতিতে এলাকাবাসীর প্রত্যাশা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন তদন্তপূর্বক এ ব্যাপারে জরুরী হস্তক্ষেপ করেন।-এমআরপি/এফএইচ