সোমবার ● ১৩ মে ২০১৯
প্রথম পাতা » আইন ও অপরাধ » ভোলায় ডাবল মার্ডারের ১ বছরেও আসামীরা অধরা, শঙ্কিত পরবিার
ভোলায় ডাবল মার্ডারের ১ বছরেও আসামীরা অধরা, শঙ্কিত পরবিার
আদিল হোসেন তপু: ১ বছর পেরিয়ে গেলেও ভোলার বাপ্তা গ্রামে চাঞ্চল্যকর আলোচিত ডাবল মার্ডার খুনের ঘটনার মূল আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। এই মামলায় ৫ জনকে আসামী করা হলেও মামলার মূল ২ আসামী মামুন ও ফিরোজেকে এখন ধরতে পারেনি পুলিশ। ফলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন নিহতদের পরিবার। পরিবারের পক্ষ থেকে একটাই দাবী মূল আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় অনার দাবী জানিয়েছেন। এদিকে ভোলা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলছেন, এই ঘটনায় ভোলা থানায় ৫ জনকে আসামী করে একটি মামলাটি হয়েছে। বর্তমানে মামলাটি পিবিআইতে তদন্তাদিন রয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ভোলা সদর উপজেলার মধ্য বাপ্তা গ্রাম। ২০১৮ সালের ১৩ ই মে রাত ১১ টার দিকে বাপ্তা ইউনিয়ন পরিষদ এর সামনের একটি ব্রীজ এর উপর পারিবারিক জমি-জমার বিরোধের জের ধরে আপন দুই ভাই মাসুম আর মামুন এর মধ্যে কথাকাটা কাটি হয়। এসময় মামুন তার ছোট ভাই মাসুমকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতা করার চেষ্টা করলে তার ভগ্নিপতি জাহিদ এগিয়ে আসলে দুজনকেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে মামুন। এসময় তার সাথে তার বন্ধু ফিরোজ ও মামুনের ছেলে শরীফ ও অরিফও ঐ সময় তাদের উপর চওরা হয়ে আঘাত করে। পরে তাদের দুই জনকে এলকাবাসী রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে ভোলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার দুই জনকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতরা হলেন মাসুম ও জাহিদ। এই ঘটনায় জাহিদের বাবা মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে ভোলা থানায় একটি হত্যা মামলা ধায়ের করেন।
নিহত জাহিদ এর বড় ভাই জাকির হোসেন বলেন, প্রকাশ্যে দিবালোকে আমার ছোট ভাইকে ও ভগ্নিপতি মাসুম ও মামুনকে ও তার বন্ধু ফিরোজ হত্যা করেছে। অথচ এক বছরেও কোন হত্যার বিচার পাইনি। পুলিশ মামলা নিলেও কোন অগ্রগতি নেই এই মামলার। ফলে নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে পরিবার এর লোকজন। তাই প্রশাসন, স্থানীয় সংসদ সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও স্বারাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অকুল আবেদন করছি। যাতে সুষ্ঠ তদন্ত করে আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচার করার দাবী জানাচ্ছি। অন্যায় কারীরা যদি এভাবে পার পেয়ে যায় তাহলে সমাজ থেকে সামাজিক ভারসম্য নষ্ট হয়ে যাবে। তাহলে আমি আজ ভাই হারিয়েছি হয়তো কত মা তার সন্তান হারাবে।
নিহত জাহিদ এর ছোট ভাই এর অভিযোগ মামলাটি করা থেকে শুর করে তদন্ত সবক্ষেত্রেই পুলিশ অসহযোগীতা ও পক্ষপাত মূলক আচরণ করেছে। ফলে মূল আসামীদের এখনও ধরা সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ করেছে। যেখানে পুলিশ যে কোন আসামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে ধরে ফেলার ক্ষমতা রাখে সেখানে কি করে এই মামলার আসামীরা এখনও ধরতে পারছে না।
মাসুম এর স্ত্রী সাজেদা বেগম বলেন, আমি অসুস্থ থাকায় আমার স্বামী মাসুম বাজার থেকে ঔষুধ কিনতে যায় আমার জন্য। তারপরে ঔষুধ নিয়ে আর ফেরা হয়নি। ফিরতে হলো লাশ হয়ে। এখন আমার ৩ টি সন্তান এতিম হলো। আমি হলাম বিধবা। এখন এই সন্তানদের দের নিয়ে কোথায় যাবো। আমি আমার স্বামী ও ভাই হত্যার বিচার চাই।
স্থানীয়রা জানান, ১ বছর পার হয়ে গেলেও এখন ডাবল মার্ডার হত্যার বিচার এর দাবীতে আমরা অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। অথচ প্রশাসন এই মামলার কোন আসামীদের এখনও ধরেতে পারেনি। এলাকাবাসী হিসাবে আমরাও এখন অতঙ্কের মধ্যে আছি। আমরা চাই প্রশাসন দ্রুত এই হত্যা মামলার বিচার করে আইনীর শাসন প্রতিষ্ঠা করবে।
ভোলা বারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো: মনিরুল ইসলাম বলেন, ভোলার বাপ্তা ইউনিয়নে প্রাণ কেন্দ্রে এই ধরনের ডাবল মার্ডার এর মতো হত্যা কান্ড ঘটনা অত্যান্ত ন্যাকারজনক ও মর্মান্তিক। এই ঘটনার মূল আসামীরা এক বছর হয়ে গেলেও এখন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এই মামলার চার্চশিট পর্যন্ত এখনও হয়নি। অর্থাৎ এই ধরনের ঘটনায় যদি বিচার এর দীর্ঘ সূত্রতা তৈরি হয় তাহলে সমাজে অপরাধের প্রবনাত না কমে বরং বারবে। আমরা আশাকরি এই হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচার করে দৃষ্টান্ত করতে হবে। এদিকে পরিবারের একমাত্র উপার্জন ক্ষম ব্যাক্তি মাসুম ও জাহিদকে হারিয়ে ভেঙ্গে পরিছে তাদের পরিবার। বর্তমানে অনেক কষ্টের মধ্যে জীবন যাপন করছে দুটি পরিবার। আর সন্তানরা বঞ্চিত বাবার ¯েœহ ভালোবাসা থেকে। তাই সরকারের কাছে পরিবারের একটাই দাবী খুনীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানান।
এদিকে ভোলা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলছেন,এই ঘটনায় ভোলা থানায় ৫ জনকে আসামী করে একটি মামলাটি হয়েছে। মামলাটি কিছুদিন পুলিশ তদন্ত করার পরে মামলাটি বর্তমানে পিবিআইতে তদন্ত করছে।
এই মামলায় ৫ জনকে আসামী করা হলেও হত্যা সাথে সরাসরি জড়িত মামুন ও ফিরোজ পালাতাক রয়েছে। মামলার অন্য আসামী মামুন এর স্ত্রী ও ২ সন্তান হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
-এফএইচ