বৃহস্পতিবার ● ৬ এপ্রিল ২০১৭
প্রথম পাতা » আইন ও অপরাধ » চরফ্যাশনে বাল্য বিবাহ বেড়েই চলেছে…?
চরফ্যাশনে বাল্য বিবাহ বেড়েই চলেছে…?
এম আমির হোসেন, চরফ্যাশন প্রতিনিধি: চরফ্যাশন উপজেলায় বাল্য বিবাহের সয়লাব দেখা দিয়েছে। ৮ম থেকে ১০ শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীর অহরহ বিবাহ দেওয়া যাচ্ছে। সরকারি স্কুল শিক্ষক, মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ ও প্রভাষকরাও বাল্য বিবাহের সাথ সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। মূল কাজী সাথে সাথে সহকারী কাজী দিয়েও বাল্য বিবাহের মজলিসে হাজির হয়ে নিকাহ রেজিস্টার করার অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, চরফ্যাশন উপজেলার বিছিন্ন দ্বীপসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ইউপি’র চেয়ারম্যানের ভূয়া জম্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে নিকাহ রেজিস্টাররা মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময় বাল্য বিবাহের সহযোগীতা করেছে। সরকারি নিয়মে জম্ম নিবন্ধন কার্ডের কম্পিউটার কপি দিয়ে নিকাহ রেজিস্টার করার নির্দেশনা থাকলেও ইউপি’র চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত হাতের লেখা কপি দিয়ে বিবাহের কাজ সম্পন্ন করেছে। অনেক সময় ইউপি’র চেয়ারম্যানগন জম্ম নিবন্ধন কার্ড তার পরিষদের নয় বলে অস্বীকার করেন।
শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় আসলামপুর আবুগঞ্জ এলাকার ৪নং ওয়ার্ডের আলাউদ্দিন সাথে হারুনের ১৫ বছরের কিশোরীর ৮০ হাজার টাকায় দেন মহরে বিবাহ সম্পন্ন হয়। ওই জম্ম নিবন্ধন কার্ড ভূয়া বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। চেয়ারম্যান একে এম সিরাজুল ইসলাম তার স্ত্রী অসুস্থ তার চিকিৎসার জন্যে ঢাকায় অবস্থান করছেন তারা জম্ম নিবন্ধন কার্ড কিভাবে পেল ? এমন প্রশ্ন নিয়ে সকলে ঘুরফাক খাচ্ছে। আর ওই বাল্য নিকাহ রেজিস্ট্রারী করার জন্যে উপস্থিত হয়েছেন উত্তর আসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইউসুফ কাজী। তিনি হলেন, মূল কাজী কুচিয়ামোরা ফাজিল মাদ্রাসার প্রভাষক মাওঃ রফিকুল ইসলামের দ্বিতীয় নম্বার (অঘুষিত) নিকাহ রেজিস্টার। সরকারি বিধিমালাকে লঙ্গন করে একই নিকাহ রেজিস্টার ২/৩ টি বই রেখে সাইট নিকাহ রেজিস্টারদেরকে দিয়ে অর্থ কামানোর ধান্দা থাকে। বিবাহ নিয়ে আসলামপুর আবুগঞ্জ এলাকায় বেশ তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। কোন নিকাহ রেজিষ্টারের হবে এমন কথা শুনলেই বই নিয়ে হাজির হন সরকারি সহকারী শিক্ষক ইউসুফ কাজী। সে অধিকাংশই বাল্য বিবাহের সাথে সম্পৃক্ত বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
আসলামপুরের ওমরপুর গাফুরিয়া ফাজিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওঃ আবদুন নুর ওরফে আবু কাজীও নীতি বর্হিভুত ভাবে বাল্য বিবাহের নিকাহ রেজিস্টারের সাথে জড়িত বলে স্থানীয় একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তার চরিত্রের বিষয় নিয়েও এলাকায় বেশ চাউর রয়েছে।
বিছিন্ন দ্বীপ চরমোতাহার দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওঃ ফখরুল ইসলাম ও বাংলাবাজার নিম্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন জানান, আমাদের ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে শুরু করে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিয়ে হয় যায়। ফলে আমরা শেষ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী খুঁজে পায়না। বাল্য বিবাহ বন্ধ না করা হলে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম দেখা দিবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, অফিসার ইনচার্জ সহ বিভিন্ন সরকারি বে-সরকারি সংস্থার উদ্যোগে বাল্য বিবাহ, ইভটিজিং বিয়য়ে সভা- সেমিনার হলেও প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকার অভাবে এই সকল অপরাধ মূলক কর্মকান্ড সমাজ থেকে বিতারিত করা সম্ভাব হয়ে উঠেনা।
কাজী মাওঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা ইউনিয়ন পরিষদের জম্ম নিবন্ধন কার্ডের মাধ্যমে নিকাহ রেজিস্ট্রারা সম্পন্ন করি।
নিকাহ রেজিস্টার মাওঃ রফিকুল ইসলামের দ্বিতীয় নম্বার কাজী আসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইউসুফের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি নিকাহ রেজিস্টারের কাজ দেড় বছর আগে ছেড়ে দিয়েছি। ওই বাড়ীতে বই নিয়ে কেন গেলেন প্রশ্ন করলে তা এড়িয়ে গিয়ে মোবালফোনটি বন্ধ করে দেন।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন বলেন, বাল্য বিবাহ ও ইভটিজিংয়ের ব্যাপারে আমরা খুবই কঠোর। কোন অভিযোগ পেলে আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করি।
-এফএইচ