বৃহস্পতিবার ● ২ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » আইন ও অপরাধ » চরফ্যাশনে ৮ বছরের শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে মামলা নেয়নি পুলিশ
চরফ্যাশনে ৮ বছরের শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে মামলা নেয়নি পুলিশ
বিশেষ প্রতিনিধি: চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার চর আর কলমী গ্রামে ২য় শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আরবেশ আলী মোল্লা বাড়ির জামে মসজিদের ইমাম মাওঃ ইউনুস (৫০)’র বিরুদ্ধে। বুধবার সকাল ৯টায় মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে মুড়ি খাওয়ানোর লোভে ফেলে মসজিদ সংলগ্ন কক্ষে ডেকে নিয়ে শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করে ওই ইমাম। মসজিদ এলাকায় ইমামের এমন কাণ্ডে গ্রামবাসী বিব্রত ও ক্ষুদ্ধ হয়ে পড়েছে।
ক্ষুদ্ধ গ্রামবাসী ইমামকে আটক করার পর স্থানীয় সাবেক মেম্বার জাহাঙ্গীর আলম কৌশলে ইমামকে গ্রামবাসীর অবরুদ্ধ দশা থেকে উদ্ধার নিয়ে যায়। ঘটনার পর বুধবার বিকেলে ভিক্টিম পরিবার দক্ষিণ আইচা থানায় অভিযোগ দাখিল করলেও পুলিশ মামলা নেয়নি।
জেলা পুলিশ সুপারের অনুমাতি না থাকায় মামলা নেয়া হবে না বলে বুধবার রাত ১২টায় ভিক্টিম পরিবারকে থানা থেকে ফেরৎ পাঠানো হয়েছে বলে ভিক্টিমের বাবা অভিযোগ করেছেন। তবে বৃহষ্পতিবার দুপুরে ভিক্টিম পরিবারের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দক্ষিণ আইচা থানার অফিসার ইন চার্জ মো. হানিফ সিকদার জানান, অভিযোগটি যাচাই-বাছাই করে দেখার জন্য সময় নেয়া হয়েছে। মামলার প্রস্ততি চলছে।
বৃহষ্পতিবার সকাল ১১টায় চর আর কলমী গ্রামের ঘটনাস্থল পরিদর্শন কালে মসজিদকে ঘিরে শতাধিক বিক্ষুদ্ধ নারী-পুরুষের উপস্থিতি দেখা গেছে। মসজিদের কাছেই ভিক্টিমের বাড়ি। বাড়ির আঙ্গীনায় দাড়িয়ে ভিক্টিম শিশু ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জানায়- সে স্থানীয় দক্ষিণ মঙ্গল দারুল উলুম হাফিজি মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। বুধবার সকালে মসজিদের পাশদিয়ে মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে ইমাম হুজুর মুড়ি খাওয়ার জন্য তাকে ডেকে মসজিদ সংলগ্ন ইমামের থাকার কক্ষে ডেকে নেয়। মুড়ি খেতে দেয়। মুড়ি খাওয়ার মধ্যেই ইমাম হুজুর তাকে তুলে কোলের মধ্যে বসায়। তারপর তার জামা পোষাক খুলে বিছানার উপর শুয়ে ঝাপটে ধরে। ভয়ে সে চিৎকার দিয়ে উঠলে হুজুর তাকে ছেড়ে দেয় এবং সে বাড়িতে এসে মা-বাবাকে জানায়।
ভিক্টিমের বাবা জানান, ঘটনার পর লোকজন নিয়ে মসজিদে গিয়ে ইমামকে আটক করা হয়। খবর পেয়ে সাবেক মেম্বার জাহাঙ্গীর আটক ইমামকে নিয়ে যায়। তারপর থেকে ইমাম পালিয়ে যায়। ভিক্টিমের বাবা আরো জানান, বিকেলে তারা মামলা করার জন্য দক্ষিণ আইচা থানায় যান। পুলিশ লিখিত অভিযোগ নিয়ে বিকেল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ভিক্টিমসহ তাদের থানায় বসিয়ে রাখেন। রাত ১২টার সময় ওসি সাহেব তাদের জানান-‘মামলা করার জন্য এসপি সাহেবের অনুমতি লাগে। আপনাদের এই মামলার জন্য এসপি সাহেব অনুমতি দেন নাই। তাই মামলা হবে না। আপনারা বাড়ি চলে যান।’ ওসির মুখে এমন কথায় হতাশ হয়ে ভিক্টিম পরিবার মামলার আশা ছেড়ে বুধবার মধ্যরাতে বাড়ি ফিরে আসেন। লম্পট ইমামকে আটক করেও রাখা যায়নি। এসপির অনুমতি না থাকায় পুলিশ মামলা নেয়নি। পরপর এমন বিপত্তিকে হতাশ ও ক্ষুদ্ধ গ্রামবাসী বৃহষ্পতিবার সকাল থেকেই মসজিদ এলাকায় সমবেত হয়ে নানান ভাবে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকে।
এসময় কয়েকজন অভিভাবক এবং তরুণী জানান, ইমাম সাহেব মক্তবে আরবী পড়াতেন। মাঝে মধ্যে মক্তব্য ঝাড়– নেয়ার অজুহাতে টার্গেট করা মেয়েকে রেখে দিতেন। সব শিশুরা চলে গেলে একা পেয়ে ওই মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা করতেন। এমন একাধিক ঘটনা আগে ঘটলেও সামাজিক অবস্থান,মান-সম্মানের ভয়ে আগে কেউ মুখ খুলেননি।
এদিকে ভিক্টিম পরিবার এবং গ্রামবাসীর ক্ষোভ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দক্ষিণ আইচা থানার অফিসার ইন চার্জ মো. হানিফ সিকদার জানান, মামলা নেয়া হবে এবং মামলা দায়েরের প্রস্ততি চলছে।
-এসপি/এফএইচ