শুক্রবার ● ১০ মার্চ ২০১৭
প্রথম পাতা » চরফ্যাশন » চরফ্যাশনে স্কুলগুলোতে জমজমাট কোচিং বাণিজ্যের প্রতিযোগিতা চলছে
চরফ্যাশনে স্কুলগুলোতে জমজমাট কোচিং বাণিজ্যের প্রতিযোগিতা চলছে
কামরুজ্জামান শাহীন, চরফ্যাশন : চরফ্যাশনে স্কুলগুলোতে জমজমাট কোচিং বাণিজ্যের প্রতিযোগীতা চলছে। শিক্ষামন্ত্রীর হুশিয়ারি ও মন্ত্রণালয়ের জারি করা নীতিমালা উপেক্ষা করে জমজমাট এ বাণিজ্য চলছে। নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই কোচিংবাজ এক শ্রেণীর অসাধু শিক্ষকরা এ ব্যবসা খুলে বসেছেন।
উপজেলার প্রায় স্কুলেই প্রথম থেকে পঞ্চম ও ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর কোচিং বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আগে বিভিন্ন নামি-দামি স্কুলের শিক্ষকরা কোচিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও এখন প্রাথমিক থেকে কলেজসহ সব স্কুল, কলেজ শিক্ষকরাই এ ব্যবসা শুরু করেছেন। স্কুল থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লায় তারা সেন্টার করে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। কোনো কোনো শিক্ষক নিজের বাড়িতে কোচিং ব্যবসা খুলে বসেছেন।
এ বছর কোচিং ফি’ও দ্বিগুণহারে বেড়ে গেছে। প্রথম থেকে পঞ্চম ৮শ’ থেকে ১ হাজার, ষষ্ঠ থেকে অস্টম ১২শ’ থেকে ১৫শ’ অষ্টম থেকে দশম শ্রেণিতে ১৮শ’ থেকে হাজার থেকে ২ হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে।
শিক্ষার্থী ও অভিাবকরা জানান, স্কুলের শিক্ষকরা শুধু বইয়ের অধ্যায় ধরে পড়ান। ক্লাসে কোনো পড়া বুঝিয়ে দেন না। ফলে পঞ্চম ও অষ্টম এবং নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা স্কুলের কোচিং শেষ করে অন্য স্কুলের শিক্ষকের কাছে বা তাদের কোচিং সেন্টারে গিয়ে পড়ছে। সেখানে বাংলাসহ সব বিষয়ে কোচিং করানো হয়।
অভিভাবকরা সন্তানের ভালো ফলের আশায় এক কোচিং থেকে অন্য কোচিংয়ে ছুটে চলছেন। বিশেষ করে এবার প্রাথমিক সমাপনী ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় যেসব স্কুল ভালো রেজাল্ট করেছে, সে সব স্কুলের শিক্ষকরাই কোচিংয়ের তালিকায় শীর্ষস্থানে রয়েছেন।
চরফ্যাসন উপজেলায় প্রায় কয়েক শতাধিক কোচিং সেন্টার রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বন্ধ নীতিমালা অনুযায়ী কোনো শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কোচিং করাতে পারেন না। নীতিমালা অনুযায়ী অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে নিজ বাসায় পড়ানোর জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি প্রয়োজন হয়।
এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের শ্রেণী রোল এবং তালিকাসহ উল্লেখ্য করে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে লিখিতভাবে জানানোর কথা। কিন্তু কোচিংবাজ কিছু শিক্ষকরা এসব নিয়ম নীতির তোয়াক্কাই করেছেন না।
সচেতন অভিভাবকরা বলেছেন, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা কোচিং বাণিজ্যকে আরো উৎসাহিত করেছে। অভিভাবকরা ছেলে-মেয়েদের ভালো ফলের আশায় নামি-দামি কোচিং সেন্টারগুলোর পেছনে ছুটে চলছেন।
এসুযোগে শিক্ষার্থী ওঅভিভাবকরা কোচিংবাজ কিছু অসাধু শিক্ষকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন।
অভিভাকরা আরো জানান, চরফ্যাশনের স্কুলগুলোতে লেখাপড়া নেই বললেই চলে। পাশাপাশি প্রতিটি স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষকদের সহযোগিতায় ব্যাঙের ছাতার মতো কোচিং সেন্টার গড়ে উঠেছে। শুধু এসব কোচিং সেন্টারে সন্তানদের ভর্তি করিয়ে লাভ হচ্ছে না।
বাড়িতেও প্রতিটি বিষয়ে টিউটর শিক্ষক রাখতে হচ্ছে। সামর্থ্যবানরা সন্তানদের সুবিধা দিতে পারলেও স্বল্প আয়ের অভিভাবকদের খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেকে প্রাইভেট বা কোচিং কোনোটিই দিতে পারছেন না। ফলে বিত্তবানদের সন্তানরা ভালো ফল করছে। এর কৃতিত্ব স্কুল কর্তৃপক্ষ নিচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান ভালো না থাকায় সন্তানরা দিন দিন কোচিংয়ের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।কোচিংগুলো বন্ধ করার ব্যবস্থা করা হলে স্কুলগুলোতে লেখাপড়ার গুণগত মান ভালো হতো। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য বাড়তি খরচ জোগাতে হতো না।
চরফ্যাসন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আঃ সালাম বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা কোচিং করানোর কোন সুযোগ নেই, কেউ করলে তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চরফ্যাসন মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জিয়াউল হক মিলন জানান, নীতিমালা অনুযায়ী কোনো শিক্ষক যদি কোচিংয়ে পড়ান তাহলে ম্যানেজিং কমিটি এবং স্কুল প্রধানের অনুমতি লাগবে। তাও কোচিং ফি’ ৩শ’ থেকে ৪শ’ হতে হবে ও একজন শিক্ষক ১০জনের বেশী কোচিং পড়াতে পারবেন না। এবং কোচিংয়ের আয়ের অংশ স্বস্কুলের ফান্ডে জমা দিতে হবে। কোনো শিক্ষক যদি অনুমতি ছাড়া কোচিং করান, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
-এফএইচ