শনিবার ● ১০ ডিসেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » চরফ্যাশন » চরফ্যাশনে অবৈধ ইটভাটায় পুড়ছে ম্যানগ্রোভ বেষ্টনী, হুমকীতে পরিবেশ
চরফ্যাশনে অবৈধ ইটভাটায় পুড়ছে ম্যানগ্রোভ বেষ্টনী, হুমকীতে পরিবেশ
চরফ্যাশন প্রতিনিধি: ভোলার চরফ্যাশনে অনুমোদন বিহীন ২৮ টি ইটভাটায় নির্বিচারে কাঠ পোড়ানো শুরু হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই বিশেষ মহলকে ‘ম্যানেজ’ করে ভাটাগুলো বহাল তবিয়তে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এবং উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী খ্যাত ম্যানগ্রোভ বাগান উজার করে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া ইট পোড়ানো এবং জ্বালানী হিসেবে কাঠ ব্যবহারের দায়ে প্রথম মৌমুমে ৪টি ইটভাটার জরিমানা নামমাত্র করা হলেও অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ রাখতে এই জরিমানার কোন প্রভাব পরবে বলে মনে করছেন না সচেতন মহল।
জানা গেছে, উপজেলা, জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করেই অবৈধ ইট ভাটাগুলো বছরের পর বছর ধরে বীরদর্পে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন আইন মানছে না। প্রত্যেক মৌসুমের শুরুতে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযানের নামে নূন্যতম জরিমানা আর মুচলেকা আদায়ের মাধ্যমে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা নিজেদের দায় এবং আখের গুছালেও অবৈধ ইটভাটাগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করা যায়নি কিংবা বন্ধ থাকেনি। এবছরও এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চরফ্যাশনে ২৮টি ইটভাটার মধ্যে ২৫টি ইটভাটা পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কোন ছাড়পত্র পায়নি। অনুমোদন বিহীন ইটভাটার মালিকরা কয়েক দফা আবেদন করলেও পরিবেশ আইন বহির্ভূত বিধায় অনুমোদন মেলেনি। জনবসতিপূর্ণ কৃষি জমি, ম্যানগ্রোভ বাগানের নিকটবর্তী অবস্থান টিন, ব্যারেল, ইট, বালি ও সিমেন্ট দিয়ে তৈরি নিষিদ্ধ চুল্লি ব্যবহার করা সহ নানান অনিয়ম বিদ্যমান থাকায় ২৮টি ইটভাটাকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সীমিত সংখ্যক ইট পোড়ানোর অনুমতি দেয়া হয়েছিল। তারপরও অনুমোদন বিহীন এসব ইটভাটার উৎপাদন কখনো বন্ধ থাকেনি, এবছরও শুরু করেছে অবৈধভাবে ইট উৎপাদন। প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই অবৈধ ভাটাগুলো টিকে আছে বছরের পর বছর। যদিও চরফ্যাশন বা ভোলা জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে চরফ্যাশনে বৈধ বা অবৈধ ইটভাটার সঠিক সংখ্যা জানাতে পারেনি।
উপজেলার কয়েকটি ইটভাটা ঘুরে দেখা গেছে, কয়লা ব্যবহারকারী অনুমোদিত ৩টি ইটভাটা ছাড়া বাকী ২৫টি ইটভাটায় ১২০ ফুট উচ্চতার স্থায়ী চিমনি নেই। ব্যবহার করা হচ্ছে টিন, ইট, সিমেন্ট আর ব্যারেল তৈরী ৩০/৪০ ফুট উচ্চতার চিমনী। জ্বালানী হিসেবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ভাটাগুলোর সবই স্থাপিত হয়েছে ঘণবসতিপূর্ণ এলাকা, কৃষি জমি এবং ম্যানগ্রোভ বাগানের নিকটবর্তী স্থানে।
বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয় গাছ ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ম্যানগ্রোভ বাগানে সক্রিয় কাঠ চোরা কারাবারি চক্রের মাধ্যমে ইটভাটা মালিকরা বিশাল পরিমান এসব কাঠের যোগান নিশ্চিত করছে বলে জানাগেছে।
চরফ্যাশন উপজেলায় দেশের মধ্যে উপজেলা লেভেলে সবচেয়ে বেশী অবৈধ ইটভাটা রয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। যে সকল এলাকায় ইটভাটা প্রতিষ্ঠান নির্মাণের কথা ওই সকল এলাকায় ইটভাটা প্রতিষ্ঠা না করে গণবসতি এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ায় কালো ধোয়ায় শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী নারী পুরুষের রোগ বিমারীর আশংখা করা হচ্ছে বলেও স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের জণৈক মেডিকেল অফিসার সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে চলতি মৌসুমের শুরুতে দুই দফায় অভিযান চালিয়ে ৪টি অবৈধ ইটভাটার বিভিন্ন অংকে জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার সর্বোচ্চ পরিমান ৫০ হাজার টাকার মধ্যে বলে জানা গেছে।
-এমএএইচ/এফএইচ