শুক্রবার ● ২ ডিসেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » চরফ্যাশন » অতিথি পাখিদের কলতানে মুখরিত ভোলার চরাঞ্চল
অতিথি পাখিদের কলতানে মুখরিত ভোলার চরাঞ্চল
এস ইউ সোহেব: প্রতিটি বছরের মত এবারো শীতের আগমনে ভোলার উপকূলীয় চরাঞ্চলে আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখিরা। পাখিদের উড় উড়ি আর কিচির মিচির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে দ্বীপ জেলার চরাঞ্চল। ইতোমধ্যে হাজারও প্রকৃতি প্রেমীকে আকৃষ্ট করেছে বিচিত্র বর্ণিল অতিথি পাখিরা। চরফ্যাশন উপজেলার চর কুকরি-মুকরি ও পর্যটন কেন্দ্র, ঢালচর, তারুয়া বিচ সহ মনপুরা উপজেলার ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে এবারো পাখিদের হাট বসেছে। প্রতিদিন বিচিত্র পাখ-পাখালির মধুময় কলতানে মুখরিত হয়ে উঠেছে এখানকার জনপদ। আবার এ সুযোগটি কাজে লাগাছে অসাধু শিকারিরা।
দেশের পাখি সমৃদ্ধ এলাকার মধ্যে দ্বীপ জেলা ভোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভোলার বিভিন্ন কাঁদা মাটির চর ও জলাভূমি পরিযায়ী পাখিদেও আবাসভূমি, স্টপওভার ও ট্রানজিট হিসেবে আন্তর্জাতিক ভাবে দৃষ্টি স্বীকৃতি পেয়েছে। পৃথিবীর দুটি বিরল প্রজাতির পাখি শীত মৌসুমে এই অঞ্চলে পরিযায়ী হয়ে আসে। এরা হলো স্পুিনবিল স্যান্ডপাইপার ও আরেকটি এশিয়াটিক উইচার। এছাড়া উপকূীয় চরাঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের বক, কাস্তেচরা, গাংচিল, পানকৌড়ি, মেটে রাজহাঁস, শরালী, চকাচকি, বালিহাঁসসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।
জেলা সদর থেকে প্রায় ১১০ কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে অবস্থিত ঢালচর ইউনিয়ন। ঢালচর থেকে পূর্ব দিকে চর শাহজালাল ও চর আশরাফের তারুয়া বিচ। তারুয়া বালুর বিচ প্রকৃতির এক অপূর্ব নিদর্শন। জন-মানবহীন গহীন অরণ্যাবৃত তারুয়ার বিচ যেন পাখিদের এক সবুজ অভয়ারণ্য। বছর জুড়ে তারুয়ার প্রায় ৭ কিলোমিটার বিচ জুড়ে হরেক রকম পাখির কল কাকলীতে সরব থাকলেও, শীতে যেন নতুন প্রাণ পায় দেশী ও বিদেশী হাজার হাজার অতিথি পাখিরা। আবার এদের সঙ্গে যোগ হয় সাইব্রেরিয়াসহ পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চল থেকে আগত পাখির দল। শীতের মৌসুমে প্রতিদিনই চর তারুয়া, চর কুকরী মুকরী দ্বীপে পর্যটন পিপাসুরা অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে আসতে শুরু করে।
এছাড়া অতিথি পাখি দেখতে আসা পর্যটকরা জানান, দেশী পাখির বিচরণ ক্ষেত্র আমামেদর এই চরাঞ্চলে শীতে বাড়তি আমেজ আনে দূর দুরান্ত থেকে আসা অতিথি পাখি।
কুকরী ও তারুয়াতে অতি সম্প্রতি ভ্রমনে আসা প্রকৃতিপ্রেমী বন সংরক্ষক সুনিল কুমার কুন্ড জানান, ভোলার চরফ্যাসনে তারুয়া দ্বীপে হাজার হাজার পাখির বিচরণক্ষেত্র। দেশে এমন দৃশ্য বিরল।
ভোলা সদর উপজেলা থেকে এ চরে ঘুড়তে আসা কলেজ ছাত্র ইমরান জানান, অতিথি পাখি সম্পর্কে পড়েছি ছবি দেখেছি কিন্তু আজ বাস্তবে দেখে খুবই ভালো লাগছে।
অন্য এক পর্যটক মো.হেলাল জানান, পাখিগুলো আমাদের চরাঞ্চলে আসে নিরাপদে থাকার জন্য। আবার এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে অসাধু শিকারিরা ফাঁদ পেতে পাখি শিকার কওে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সকলের উচিত এদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
অতিথি পাখি নিয়ে কাজ করা গবেষক সামিউল ভোলার সংবাদ ডট কমকে বলেন, শীতকালে অতিথি পাখির কথা আমরা সবাই কম বেশি জানি। প্রতি বছর শীতকাল এলেই নানা রঙ বেরঙের নাম না জানা অতিথি পাখি আসে। শীতকাল পাখিদের জন্য অনেক আরামদায়ক। এবারের শীতে বিভিন্ন চরাঞ্চলগুলোতে অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠছে। জানুয়ারী মাসে বিদেশী পর্যটক ও গবেষকসহ তারা বিভিন্ন চরাঞ্চলে অতিথি পাখি গণনার কাজ শুরু করবেন বলে ও জানান।
পর্যটন দ্বীপ কুকরী মুকরি ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন ভোলার সংবাদ ডট কমকে বলেন, কুকরীতে পূর্নাঙ্গ পর্যটনের ঘোষণা আগামী জানুয়ারীতেই আসতে পারে। ইতিমধ্যে পর্যটনদের থাকার জন্যে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি আধুনিক মোটেল জানুয়ারীর ২য় সপ্তাহে বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব উদ্বোধন করবেন।
এছাড়া পাখির বিচরণ কেন্দ্র জনমানবহীন তারুয়া পর্যটন এলাকায় সরকারিভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হলে পর্যটকদের আরো সমাগম হবে। শীতের এ মৌসুমে পর্যটন পিপাসুরা ইতোমধ্যে তারুয়া সহ ঢালচর ও কুকরি মুকরি পর্যটন এলাকায় আসতে শুরু করেছে।
ভোলার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, ভোলার বনাঞ্চল পাখির জন্য উন্মুক্ত। এবস বনাঞ্চল পাখির অভয়আশ্রম। কোন অসাধু লোক যাতে পাখি শিকার করতে না পারে আমরা সে ব্যপারে সচেষ্ট।
এসইএস/এফএইচ