সোমবার ● ২১ নভেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » চরফ্যাশন » ভোলার উপকূলীয় শিশুদের ভবিষ্যৎ নৌকার বইঠায়
ভোলার উপকূলীয় শিশুদের ভবিষ্যৎ নৌকার বইঠায়
বিশেষ প্রতিনিধি: পশ্চিমে তেঁতুলিয়া,পূর্বে মেঘনা, উত্তরে উলিশা নদী আর দক্ষিণে বঙ্গোপ সাগর। এর এ মাঝে দ্বীপ জেলা ভোলা। আর এ জেলাটি শিক্ষা, সাংস্কৃতি, উন্নয়ন সহ দেশের সর্ব ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছেন। জেলার উপকূলীয় এলাকার অধিকাংশ শিশু এখনো শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবাসহ পুষ্টিকর খাবার থেকে অনেকটা বঞ্চিত। এমনকি তিনবেলা খাবারও তারা অনেক সময় পায় না। দারিদ্র্যের কারণে এ শিশুরা নিয়োজিত হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমে। বিশ্বজুড়ে শিশু অধিকার সুরক্ষায় শিশু আইন ২০১৩, জাতীয় শিক্ষা নীতিমালা ২০১০ এবং জাতীয় শিশুশ্রম-নিরোধ নীতিমালা ২০১০ প্রণয়নসহ বাংলাদেশ বিভিন্ন প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিলেও ভোলার চরফ্যাশন উপকূলীয় এলাকার চিত্র একবারেই ভিন্ন।
মেঘনা ও তেতঁলিয়া নদীর উপকূলে গিয়ে দেখা গেছে, যে বয়সে খেলাধুলা আর বই খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা ঠিক সে বয়সেই জেলে পল্ল¬ীর শিশুদেও কোমল হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে নৌকার বৈঠা। স্কুল বন্ধ দিয়ে সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনি খাটতে হচ্ছে মেঘনা- তেঁতুলিয়া নদী মাছ ধরে। মাছ ধরার এই ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন জেলার ৬০ হাজার শিশু। পেটের তাগিদে উত্তাল সাগরেও মাছ শিকারে নামছে এখানকার শিশুরা। এছাড়া শিশুদের স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি অবহেলার মধ্যেই থেকে যাচ্ছে। সরকার শিশু শিক্ষায় নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও তার ছোয়া লাগেনি জেলে পল্ল¬ীতে। ফলে দিন দিন বাড়ছে জেলে শিশুর সংখ্যা। নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত হয়ে ইচ্ছে থাকা স্বত্ত্বেও এসব শিশু প্রাথমিক শিক্ষা ও গ্রহণ করতে পারছেনা। শিশু বয়স থেকেই এদের অভিবাবকরা শিশুদের নদীতে মাছ শিকার করতে নিয়ে যাচ্ছেন। নদীতেই হারিয়ে যাচ্ছে এদের উজ্বল ভবিষ্যৎ।
এদের মধ্যে চর কুকরী মুকরী ইউনিয়নের জেলে শিশু আরিফ (১৪) জানায়, ক্লাস থ্রি পর্যন্ত পড়েছি, ফোরে উঠবো এমন সময় বাপের সঙ্গে নৌকায় মাছ ধরতে হয়েছে। এখন অন্যেও নৌকায় কাজ করি। যা পাই তা দিয়ে সংসার চলে।
অধিকাংশ মানুষই দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন। মাছ ধরা ও কৃষিকাজ তাদের প্রধান পেশা। বিকল্প আয়ের কোনো উৎস না থাকায় শিশুদের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। অশিক্ষিত অভিভাবক, শিক্ষা সম্পর্কে অজ্ঞতা, দারিদ্রতা, বাবার পেশায় ঝুঁকে পড়ার টান ও মুনাফালোভী অভিভাবকের কারণে জেলে পল্ল¬ীর শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছেনা বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
এব্যাপারে কিছু কিছু শিশুর অভিভাবকদের সাথে আলাপ করলে তারা জানায় আমরা কোন রকমে দাদনে আবদ্ধ হয়ে একটি নৌকা জাল করলেও মাছ শিকারের পরে দাদনের টাকা দিতে হিমশিম খাই। ফলে আমরা আমাদের শিশুদেরকে সঙ্গে নিয়ে নদীতে মাছ শিকারে যেতে বাধ্য হই। আমাদের এ অঞ্চলে নেই কোন ঋণের ব্যবস্থা বিধায় মহাজনী প্রথায় আমরা আবদ্ধ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনোয়ার হোসেন বলেন, উপকূলীয় শিশুদের পিতা মাতা অসচেতন হওয়ায় বেশি লাভের আশায় সন্তানদের বিদ্যালয়ে না পাঠিয়ে মাছ ধরার জন্য নদীতে নিয়ে যাচ্ছেন। এসকল শিশুদের স্কুল গামী করতে সরকার উপবৃত্তি দিচ্ছে। এছাড়া মুসলিম এইচড সহ বেশ কিছু এনজিও কাজ করছে।
এসইএস/এফএইচ