শিরোনাম:
●   উদ্ভাস-উন্মেষ-উত্তরণ এখন দ্বীপ জেলা ভোলায় ●   ভোলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আ’লীগের সমর্থিত প্রার্থী বশীর উল্লাহ সভাপতি, সম্পাদক মাহাবুবুল হক লিটু নির্বাচিত ●   ভোলা জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময় ●   চরফ্যাশনে দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়লো চট্টগ্রামগামী বাস ●   ডয়েসে ভ্যালী ও জাতীয় গণমাধ্যম ইনিস্টিটিউটের যৌথ আয়োজনে প্রিন্ট পত্রিকার সম্পাদকদের কর্মশালা সম্পন্ন ●   ভোলায় চারটি সহ সারাদেশে ১৫০ সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ●   ভোলায় ৩৩৫ কোটি টাকার শহর রক্ষা বাঁধ এখন মরণ ফাঁদ! ●   ভোলায় জমি দখলের খবর পেয়ে স্ট্রোক করে মারা গেলেন প্রবাসী ●   ভোলার নবাগত জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত ●   আজ ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা মোঃ হাবিবউল্লাহ’র ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী
ভোলা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভোলার সংবাদ
শুক্রবার ● ১৫ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » শিল্প-সাহিত্য » সব সিনেমাই ছোট ছোট গল্পের একেকটা সংগ্রহ
প্রথম পাতা » শিল্প-সাহিত্য » সব সিনেমাই ছোট ছোট গল্পের একেকটা সংগ্রহ
৫৫৪ বার পঠিত
শুক্রবার ● ১৫ জুলাই ২০১৬
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

সব সিনেমাই ছোট ছোট গল্পের একেকটা সংগ্রহ

আব্বাস কিয়ারোস্তামি

ডেস্ক : সম্প্রতি ইরানের কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার আব্বাস কিয়ারোস্তামি চলে গেলেন।ভোলার সংবাদের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো তাঁর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সাক্ষাৎকারের নির্বাচিত অংশ।

* স্টোরিটেলিংয়ের সঙ্গে আপনার সম্পর্কটা কেমন? আপনার সিনেমায় গল্প বলার ভঙ্গিকে অখণ্ড মনে হয়।

আব্বাস কিয়ারোস্তামি: সত্য হলো, এটি আমার জীবনের ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমি যতটা না গল্পকথক, সম্ভবত তার চেয়েও বেশি একজন গল্প-শ্রোতা। গল্প শুনতে সত্যিকার অর্থেই ভালো লাগে আমার। সেগুলো আমি বারবার স্মরণ করি, আর নিজের মগজে রেখে দিই। আমার সব সিনেমাই, নিজের কানে শোনা ছোট ছোট গল্পের একেকটা সংগ্রহ। ইরানে যখন ফিল্মমেকিংয়ের ক্লাস নিতাম, তখন স্কুলটিতে কীভাবে ছাত্র বাছাই করতাম, শুনতে চান? সিনেমা কিংবা এক কথায় যেকোনো ধরনের পড়াশোনার ব্যাপারে তাদের কাছে জানতে চাইতাম না আমি; বরং বলতাম, তারা যেন কাছে বসে আমাকে একটা গল্প শোনায়। যারা এ কথায় সাড়া দিয়ে গল্প শোনাত, সেই প্রক্রিয়াটিই আমার কাছে তারা আদৌ ফিল্মমেকিংয়ের জন্য উপযুক্ত কি না, সেটি বুঝে নেওয়ার সেরা মানদণ্ড হয়ে উঠত। মুখে গল্প শোনানোর সক্ষমতার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই আসলে।

* সিনেমা ও মিথ্যাচার—এই আইডিয়াটি নিয়ে কথা বলা যাক। ক্লোজ-আপ-এর কথাই ধরুন। এখানে সিনেমার প্রতি নিজের প্যাশনের জায়গা থেকে একজন লোক একটি মিথ্যে গল্প ফাঁদে—সে নিজেই নাকি সিনেমা বানায়। ক্লোজ-আপ-এর একটা ক্ষমতাধর দিক হলো, এখানে সিনেমা ও জীবন পরস্পরের মধ্যে একাকার হয়ে গেছে। অন্যদিকে, থ্রু দ্য অলিভ ট্রিজ-এ একটি সিনেমা বানিয়ে তোলার প্রক্রিয়া স্পষ্ট হয়ে আছে। এই দ্বিতীয় ভঙ্গিমাটির মধ্যে পার্থক্য কোথায়?

কিয়ারোস্তামি: আমাদের কাজের দৈনন্দিন কর্মসূচি শুরুই হয় মিথ্যের ওপর ভর দিয়ে। আপনি যখন একটা সিনেমা বানান, উপাদানগুলোকে আপনার নিয়ে আসতে হয় অন্যান্য স্থান, অন্যান্য পরিবেশ-প্রতিবেশ থেকে; আর আপনি সেগুলোকে এমন এক ঐক্যরূপে জড়ো করেন—বাস্তবে যেটির অস্তিত্ব নেই। সেই ঐক্য তা আপনার বানানো। আপনি কাউকে স্বামী ডাকছেন, কিংবা পুত্র। লাইফ গৌজ অন-এর [আরেক শিরোনাম, ‘লাইফ, অ্যান্ড নাথিং মোর…’] ব্যাপারে আমার ছেলে আমার ওপর রুষ্ট হয়েছিল। কেননা, আমি ইঙ্গিত দিয়েছিলাম, এই দুজন [তরুণ ও তরুণী চরিত্র] বিবাহিত এবং এ কথাই ফিল্মটির শেষ দৃশ্যে দর্শকদের বোঝাতে চেয়েছিলাম আমি। থ্রু দ্য অলিভ ট্রিজ-এর বেলায় আমার মাথায় আইডিয়া আসে—ওরা বিবাহিত নয়; এবং শুধু ছেলেটিই মেয়েটির প্রতি গভীরভাবে আচ্ছন্ন। নিজের পরবর্তী সিনেমায় আমি বাস্তবের আরেকটি স্তর দেখানোর ইচ্ছে রেখেছি—আসলে মেয়েটির প্রতি ছেলেটির তেমন কোনো টান নেই। তো, আমার ছেলে খেপে গেল। কেননা, লোকজনকে আমি মিথ্যে বলছি, বারবার গল্প বদলাচ্ছি। পরবর্তী সিনেমায় দেখানোর ইচ্ছে—মেয়েটি ছেলেটিকে আসলেই ভালোবাসে। আমার ছেলে হিসাব করে বুঝল, সম্ভবত মিথ্যের নানাবিধ দিক বিশ্লেষণের ভেতর দিয়েই সত্যের কাছে পৌঁছাতে পারব আমরা। সিনেমায় যেকোনো জিনিসই সত্য হতে পারে। এর বাস্তবের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই; বাস্তবে যা ঘটছে, ঠিক ‘তেমনটাই’ হয়ে ওঠার আবশ্যিকতা নেই এর। সিনেমায় মিথ্যের সুতো বুনে আমরা হয়তো কোনোদিনই আদি সত্যের কাছে পৌঁছাতে পারব না ঠিকই, তবে সে পথে আমাদের হেঁটে যাওয়া সব সময় চলবে। কেননা, মিথ্যের ভেতর দিয়ে না গেলে কখনোই সত্যের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারব না আমরা।

* ইরানে স্থানীয় সম্প্রদায়গুলো নিয়ে অনেক বেশি কাজ করেছেন আপনি। আপনার কি মনে হয়, যে সমাজে কখনোই বাস করেননি, সেখানেও প্লটের একই প্রতিপত্তি নিয়ে কাজ করতে পারবেন?

কিয়ারোস্তামি: থ্রু দ্য অলিভ ট্রিজ আর ক্লোজ-আপ-এ ইরানি কী দেখলেন? থ্রু দ্য অলিভ ট্রিজ-এ হোসেন [ছেলে চরিত্র] ও তাহেরির [মেয়ে চরিত্র] মধ্যে ইরানি কিচ্ছু নেই। [ক্লোজ-আপ-এ নিজেকে ফিল্মমেকার পরিচয় দিয়ে একটি পরিবারের সঙ্গে প্রতারণা করা কেন্দ্রীয় চরিত্র] সাবজিয়ান ও সেই পরিবারটির সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। এটি মোটেও ইরানি বিষয় নয়। আমি সিনেমা বানাই মানুষ ও তাদের বিশ্বজনীনতা নিয়ে। তার মানে, নিজেকে কোনো নির্দিষ্ট সীমান্তে আটকে রাখি না আমি। আপনি হয়তো আমাদের চামড়ার রঙের পার্থক্যকে সামনে আনতে পারবেন, তবে আমাদের [সব মানুষের] দাঁতব্যথা কিন্তু একই রকম।

* আরবি, জাপানিজ এবং শেষদিকের সিনেমা সার্টিফাইড কপিতে ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ ও ইতালিয়ান—যখন এতগুলো বিদেশি ভাষায় আপনি সিনেমা বানান, ভাবতে অবাক লাগে, এগুলোর নিজস্ব সংস্কৃতির সঙ্গে আপনার নিজ সংস্কৃতির অভিন্ন বৈশিষ্ট্যগুলো কীভাবে খুঁজে নেন আপনি?

কিয়ারোস্তামি: প্রশ্নটি ভালো। কেননা, এটিই আমার উদ্দেশ্য নয়, আমি কোনো অভিন্ন বৈশিষ্ট্য খুঁজিনি; বরং অন্যান্য সংস্কৃতির মধ্যে কাজ করার চ্যালেঞ্জ থেকেই শুরু করেছিলাম। আর এভাবেই ফিল্ম মেকিংয়ের সর্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে একটা আচমকা জ্ঞানলাভ করে ফেলি আমি। প্রত্যেক মানুষের ভোগান্তি একই রকম, আনন্দানুভূতিও একই—এমনটা প্রমাণ করার প্রয়োজন আমি কখনোই অনুভব করিনি; বরং কাজ করতে করতেই সেটা হয়ে গেছে: যখন এই মানুষগুলোর কাছাকাছি যাই স্রেফ অনুবাদের সাদামাটা মধ্যস্থতাকে সঙ্গী করে, তাদের ঠিকই বুঝতে পারি, তাদের কাছে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারি, আর তাদের কাছ থেকে পাই প্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া। এই সম্পর্কটিকে ভীষণ মসৃণভাবেই চলতে দেখি আমি; আর উপলব্ধি করি, সাংস্কৃতিক ভাষা ও নির্দিষ্টতাগুলো হলো সহজেই উতরে যাওয়ার মতো সাদামাটা বাধা ছাড়া বেশি কিছু নয়। কেননা, মানুষের অবস্থান যেখানেই হোক না কেন, সবাই নিশ্চিতভাবে একই রকম।

* যেমন আছি, তার বিপরীত হয়ে ওঠা—[আপনার সর্বশেষ সিনেমা লাইক সামওয়ান ইন লাভ-এর] এই আইডিয়াটিতে নজর দিলে দেখা যায়, আপনার অনুভূতিগুলো বৌদ্ধ কনসেপ্ট—বিচক্ষণতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। যে মুহূর্তটি কাটাচ্ছেন, সেটির বিদ্যমানতার একমাত্র বিশুদ্ধ রীতিকে গ্রাহ্য করা এবং প্রাসঙ্গিকবোধকে পাত্তা না দেওয়া—এই আইডিয়ার দেখা এই সিনেমায় এবং সার্টিফাইড কপিতেও পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে কোনো একটি জিনিস নকল নাকি আসল—তাতে কিছু যায়-আসে না; কোনো সম্পর্ক বাস্তব নাকি বানোয়াট—তাতেও যায়-আসে না; শুধু যায়-আসে—সেই মুহূর্তটিতে যা যা বিদ্যমান, তার সঙ্গে আমরা কতটা সম্পৃক্ত হতে পারলাম।

কিয়ারোস্তামি: আমার ধারণা, এর দেখা আপনি আমার সিনেমায় পেয়েছেন। কেননা, এটির আবির্ভাব ঘটেছে হয় আমার প্রত্যয় থেকে, নয়তো অন্তত আমার ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে। যে কনসেপ্টটিকে আপনি বৌদ্ধ কনসেপ্ট হিসেবে অভিহিত করলেন, সেটি আমার দেশে ইতিহাসের সঙ্গে লালিত হয়ে আসছে ৭০০-৮০০ বছর ধরে; স্থায়িত্বের বিশ্বাসের বিপরীত হিসেবে; বরং মুহূর্ত ধরে ধরে জীবনের অভিজ্ঞতাকে ধারণ করা সম্পর্কে পারস্য কবি ও দার্শনিকেরা যা যা বলে গেছেন, তা এর চেয়ে আলাদা নয়। আমাদের সংস্কৃতি এবং আমরা যা সত্যিকার অর্থে সৃষ্টি করতে পারি—এ দুটির মধ্যে আমরা তো স্রেফ একটি সংযোগবিন্দু ছাড়া বেশি কিছু নই; আপনি যেমন নিজের পঠন-পাঠন ও নিজের সংস্কৃতির উল্লেখ টানতে পারেন, আমিও তেমনি পারি স্রেফ নিজের প্রাপ্ত শিক্ষার একটা প্রদর্শনী ঘটাতে—যেখানে এই বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি হয়ে উঠেছে আমার দৃষ্টিভঙ্গিও। যদি নিজের কাজে আমি এর চেয়ে আলাদা কিছু দেখাতে যাই, তাহলে এই ঐতিহ্যের ওপর আমার কোনো অধিকার থাকবে না।

 

প্র,আ/জেট,আর

 





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

© 2024 দ্বীপের সাথে ২৪ ঘণ্টা Bholar Sangbad, সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত।