শুক্রবার ● ১ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » চরফ্যাশন » চরফ্যাশন হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসা চলছে বারান্দার ফ্লরে
চরফ্যাশন হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসা চলছে বারান্দার ফ্লরে
আদিত্য জাহিদ: ভোলার চরফ্যাশন স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণায় করায় সাধারণ রোগীদের সিকিৎসা চলছে বারান্দার ফ্লরে। এতে করে আবাসিক সঙ্কট চরম আকার ধারণ করায় চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। মেজোতে এভাবে কতদিন আর চিকিৎসা নিতে হবে তার সঠিক উত্তোর জানেনা কেউ।
জানা গেছে, গত বছর আগস্ট মাসে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করার পর থেকে ইনডোরে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছে। এ সমস্যা বিগত ১ বছর যাবৎ হওয়ার কারণে উপজেলার ৭ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবা বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১৯৬২ সালে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করা হয়। ২০০৩ সালে স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সেটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয় হলেও মেরামত ব্যাতীত ভবনের পরিবর্তন ঘটেনি। পুরাতন ভবনে শিশু কর্নার এবং নারী ওয়ার্ডের ২৭ টি শয্যার পাশাপাশি বর্ধিত ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ২টি শয্যা ছিল। এছাড়া পরিত্যক্ত এই ভবনের নিচেই প্রশাসনিক সব কর্মকান্ড চলে আসছে। পুরাতন ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণার ফলে শিশু কর্নার, নারী ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডের রোগীদের জায়গা হয়েছে বারান্দা আর সিড়ির নিচে। পলেস্টার খসে একের পর এক দূর্ঘটনার পর গত বছর আগস্ট মাসে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর পুরাতন ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেন। তখন থেকে রোগীদের আশ্রয় হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বারান্দা আর সিঁড়ির নিচে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় বারান্দা আর সিঁড়ির নিচে নবজাতক, শিশু, নারী আর পুরুষ রোগী এবং স্বজনদের ভীরে গিজগিজ করছে হাসপাতাল করিডোর। পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের অভাব আর দর্শনার্থীদের পদচারণায় অস্বস্তিকর অবস্থা বিরাজ করছে। পাশাপাশি যে কোন সময় মাথার উপর ছাদ ধ্বসে পড়ার আশংকা নিয়েই চরফ্যাশন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবস্থান করছে রোগী,স্বজন আর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সরজেমিনে দেখা গেছে, বারান্দা আর সিঁড়ির নিচে এখানে সেখানে বিভিন্ন বসয়ী রোগীরা সারিসারি বিছানা পেতে শুয়ে-বসে আছে। নারী-পুরুষ ছাড়াও শিশু ও নবজাতকরাও আছেন যত্রতত্র শয্যা পেতে থাকা রোগীদের কাতারে। নেই পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস। বৃষ্টির পানি যেমন রোগীদের বিছানাপত্র ভিজিয়ে দিচ্ছে, রোদের উত্তাপও বাড়তি কষ্টের উদ্রেগ করছে। সিঁড়ি আর বারান্দা ধরে চলাচলকারী দর্শনার্থী আর স্বজনদের আসা যাওয়ায় রোগীর শয্যা আর দর্শনার্থীদের ভীর একাকার হয়ে আছে। ছাদ আর ভীমের ফাটল দিনে দিনে বেড়েছে। সিলিংয়ের ছাদ ভেঙ্গে রড বেড়িয়ে আসছে। পলেস্তারের বড় বড় টুকরো খসে পড়ে আহত হয়েছে রোগী, দর্শনার্থী আর কর্মরত কর্মচারীরা ।
চর মানিকা থেকে আসা ইনডোর রোগী গর্ভবতী স্বর্প্না বেগম বলেন, মহিলা ওয়ার্ডের ছাদের পলেস্টার খসে পড়ে বড় ধরণের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে এবং বেড সংখ্যাও কম হওয়ার কারনে বাধ্য হয়ে বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছি। মাহিনুর বেগম নামের আরেক রোগী বলেন, আমরা বেড ও পাইনি তাই বাধ্য হয়ে বারান্দায় বিছানা পেতে নিয়েছি। তার পরেও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি।
চরফ্যাশন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন ডা.মাহাবুব কবির বলেন, উপজেলার ২১টি ইউনিয়ন ও পৌর সভার ৭ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত এই প্রতিষ্ঠানে জনবল সঙ্কট প্রকট। নার্স, ওয়ার্ড বয়, আয়া এবং সুইপার সঙ্কট সীমাহীন। চিকিৎসক শূন্যতা সহনীয় পর্যায় থাকলেও একজন চিকিৎসকের অভাবে এক বছরের বেশী সময় ধরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গর্ভবতী মায়েদের সিজার অপারেশন বন্ধ রয়েছে। সরকারি ঔষুধ সরবরাহও জনসংখ্যা অনুপাতে একেবারেই নগণ্য। চলমান এসব সমস্যা এখন গণ্য হলেও মুখ্য বিষয় হচ্ছে পরিত্যক্ত ভবন।
সহকারী সার্জন ডা. সামসুল আরেফীন রানা বলেন, ৫০ শয্যার এই হাসপাতালের বর্হিবিভাগে প্রতিদিন ৫শ’-৬শ’ রোগী সেবা নিচ্ছেন এবং দৈনিক গড়ে নূন্যতম ৮০ জন রোগী ভর্তি অবস্থায় হাসপাতালে অবস্থান করছেন। কখনো কখনো ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১শ’ সীমা অতিক্রম করে। বিশাল সংখ্যক রোগী, দর্শনার্থী আর কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রতিটি মুহূর্ত মৃত্যুর হুমকি মাথার উপর রেখেই ঝুঁকিপূর্ণ ছাদের নিচে অবস্থান করতে হচ্ছে। মাথায় আছড়ে পড়ছে ছাদ-এমন আশংকা মাথায় রেখেই কাজ করতে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, চরফ্যাশন উপজেলার ৭ লাখ মানুষের পাশাপাশি নিকটতম দূরত্বের কারণে প্রতিবেশী উপজেলা লালমোহন, মনপুরা এবং পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার সীমান্ত গ্রামের রোগীরাও এখানে ভীর করছে। ফলে বর্ধিত রোগী সামাল দিতে নির্ধারিত ৫০ শয্যার চেয়ে অতিরিক্ত শয্যার ব্যবস্থা আছে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে । ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণার ফলে রোগীদের সীমাহীন দূর্ভোগে হাসপাতাল জুড়ে বিপর্যস্থ অবস্থা বিরাজ করছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. সিরাজ উদ্দিন বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ঝুঁকিপূর্ণ পুরাতন ভবন ভেঙ্গে নতুন ভবন নির্মাণ করার জন্য ১১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরী করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। দ্রুত ভবনটি নির্মাণ করা না হলে উপজেলার ৭ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় চরম সঙ্কট দেখাদিতে পারে।
কবে নাগাদ এ সঙ্কট দূর হবে এর সঠিক উত্তর নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যাক্তিরা ।
এফএইচ