মঙ্গলবার ● ৭ জুন ২০১৬
প্রথম পাতা » চরফ্যাশন » চরফ্যাশন সদর হাসপাতালটি এভাবে চলবে ?
চরফ্যাশন সদর হাসপাতালটি এভাবে চলবে ?
এ আর এম মামুন: ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার নীল কমল গ্রামের তাসলিমা বেগম (৩৫)। সে অন্তঃসত্তা। চিকিৎসা নিতে মঙ্গলবার সাড়ে ৯ টায় চরফ্যাশন হাসপাতালে আসেন। বহিঃ বিভাগের টিকেট নিয়ে হাসপাতালের ৪ নং কক্ষে ডাক্তারের অপেক্ষার পর বেলা ১১ টায় হাসপাতালের আর এম ও ডা. শোভন কুমার বসাকের সাক্ষাৎ পান। ডাক্তার তাকে চিকিৎসা নিতে দুপুর ২ টার পর চেম্বারে যেতে বলেন।
উপজেলার নুরাবাদ গ্রামের রহিমা বেগম। সে জ্বর ও মাথা ব্যাথায় আক্রান্ত হয়ে ওই ডা. কাছে এলে ডাক্তার তাকে রক্ত ও প্রসাবের তিনটি পরীক্ষা দেন। মেঘনা ডায়গনেস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা শেষে রিপোর্ট নিয়ে হাসপাতালে ডা. কক্ষে দুপুর ১২ টা থেকে ২ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও ডাক্তারে দেখা পাননি।
চর আইচা গ্রামের মারজিয়া বেগম, নরাবাদ গ্রামের বিল্লাল, ফরিদ, এলজিইডির একাউন্টেন গোলাম ফারুকসহ অসংখ্য রোগী হাসপাতালে ডা. শোভনের কক্ষে বেলা সাড়ে ১১ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে বিনা চিকিৎসায় বাড়ি ফিরে যান। হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার এ চিত্র শুধু মঙ্গবারেরই না এ চিত্র এখন প্রতিদিনের।
মঙ্গলবার চরফ্যাশন হাসপাতালে গিয়ে হাসপাতালের আর এম ও ডা. শোভন কুমার বসাকের কক্ষে অপেক্ষা মান কয়েকজন রোগীর সাথে আলাপকালে তারা এ তথ্য জানান। সাড়ে ১১টায় হাসপাতালে গিয়ে ডা. শোভন বসাককে তার কক্ষ ছেড়ে ২নং কক্ষে বসে থাকতে দেখা যায়। অন্য ৬ জন ডাক্তারকে তাদের কক্ষে বসে নাম মাত্র চিকিৎসা সেবা দিতে দেখা যায়। অপর ডাক্তারে হাসপাতালে দেখা যায়নি।
ডাক্তার শোভন বসাককে অপেক্ষামান রোগিদের কথা জানালে তিনি রোগীদের কক্ষে অপেক্ষা করতে বলেন। এরপর তিনি ওই কক্ষ থেকে বের হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তার কক্ষে যান। এসময় অপর ৬ ডাক্তারগণও ওই কক্ষে প্রবেশ করে খোশ গল্প করে দুপুর ১ টার সময় চলে যান। এরপর ডা. শোভনকে আর হাসপাতালে পাওয়া যায়নি। রোগিদের চিকিৎসা না দিয়ে হাসপাতাল ত্যাগের কারণ জানতে তাকে একাধিকবার ফোন করেও তার ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য জানাযায়নি। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা ডা. সিরাজ উদ্দিন বলেন, রোগী নিয়ে দুপর ২ টার পর তার বাসায় গিয়ে আামাকে ফোনে ধরিয়ে দিয়েন। আমি বলে দিব চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য।
জানা যায়, চরফ্যাশন হাসপাতালে ১৯ জন ডাক্তার কর্মরত রয়েছেন। তাদের মধ্যে ২ জন টেনিং এ আছেন। ১ জন যোগদানের পর থেকে অনপস্থিত। ১ জন সপ্তাহে ১ দিন হাসপাতালে আসেন। অন্য ডাক্তাররা তাদের ইচ্ছানুযায়ী হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিয়ে বেশিরভাগ প্রাইভেট চিকিৎসা ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। ডায়গনেস্টিক সেন্টার থেকে মোটা অংশের কমিশন নিয়ে রোগীদের প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে একাধিক পরীক্ষা দিয়ে থাকেন।
খোজ নিয়ে জানা যায, ডাক্তাররা হাসপাতালে সাড়ে ১০ টায় উপস্থিত হয়ে তার একত্রিত হয়ে খোশ গল্প করেন। এরপর ১১ টার দিকে অন্ত.বিভাগের গিয়ে রোগী দেখে যার যার চেম্বারে বসে নাম মাত্র চিকিৎসা সেবা দিয়ে সাড়ে ১১ টা/ ১২ টার দিকে ২ নং কক্ষে চা খাওয়ার নামে আড্ডা দিয়ে ১ টায় উপজেলা স্বাস্থ প.প. কর্মকর্তার রুমে ডুকে আলাপ চারিতা করে হাসপাতালে ত্যাগ করেন। ফলে দুর দুরান্ত থেকে রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে চিকিৎসা না নিয়ে বাড়ি ফিরে যান।
এ ছাড়া হাসপাতালেটিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, কর্মকর্তা কর্মচারীদের দায়িত্বে অবহেলা ও নিম্নমানের চিকিৎসা সেবা হওয়ায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ক্ষোভের শেষ নেই। অন্যদিকে ভবনের ছাদের প্লাস্টার খসে গায়ে পড়ায় অন্ত. বিভাগের রোগীদের আতঙ্কেও থাকতে হয়।
এব্যাপারে সিভিল সার্জন ড. ফরিদ উদ্দিন বলেন, চিকিৎসা বঞ্চিত রোগিদের লিখিত অভিযোগ পেলে অভিযুক্ত ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।