

বৃহস্পতিবার ● ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
প্রথম পাতা » চরফ্যাশন » চরফ্যাশনের চরকুকরীতে আট হাজার ভূমিহীনদের মানবেতর জীবন-যাপন
চরফ্যাশনের চরকুকরীতে আট হাজার ভূমিহীনদের মানবেতর জীবন-যাপন
এম আমির হোসনে, চরফ্যাশন : সীমানা বিরোধকে কেন্দ্র করে খামখেয়ালিপনায় ভোলার বিছিন্ন দ্বীপ চরকুকরী-মুকরীর ২ হাজার ১ শত ৩৫ একর ভূমিহীনদের জমি ফেরত দিচ্ছেনা বন বিভাগ। জমি ফিরত না দেয়ায় এ দ্বীপের প্রায় ৮হাজার পরিবার মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
জানা যায়, প্রায় ৬ শত বছর আগে পূর্তগীজরা যখন জাহাজে বেড়াতে আসেন তখন কুকুর এবং মোরগী নিয়ে খেলা করে আনন্দ স্ফূর্তি করতেন। কুকুরী-মুরগী খেলাকে কেন্দ্র করে এর চরের নাম করণ করা হয় চরকুকরী-মুকরী। স্থানীয় ভাবে ওই সময় বয়াতী বাড়ি, মজুমদার বাড়ি, মোল্লা বাড়ির ছিল উল্লেখযোগ্য। বয়াতী বাড়ির বাসিন্দা শত বছরের বৃদ্ধা নুরুজ্জামান জানান, এখনে আমরা জম্ম সূত্রে বসবাস করে আসছি। অনেক বন্যা, সিডর, আইলাসহ বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবেলা করছি। এক মাত্র ৭০‘র বণ্যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান কয়েটি ঘুর্ণিঝড় আশ্রয়ন কেন্দ্র স্থাপন করেছেন। সে সময় এখানে ১৯৬৭-৬৮ সনের বন্দোবস্তের প্রায় ৭শ ১২ পরিবার ছিল। তা বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৮ হাজার পরিবারের রূপান্তরিত হয়েছে।
১৯৬৭-৬৮ সনের বন্দোবস্তের ম্যাপে সীট নম্বার ১০-১৪ পর্যন্ত ২১শ ৩৫ একর ভূমি সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বন বিভাগের খাম খেয়ালিপনার জন্যে এ বিছিন্ন চরে প্রায় ৮ হাজার পরিবার মানবেতর জীবন-যাপন করেছেন বলে ভূমিহীন কয়েকটি পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
ভূমি উন্নয়ন সময়বায় সমিতির সভাপতি মাওঃ আবু তাহের জানান, এ সকল জমি গুলো বন বিভাগ ও ভূমিহীনদের সীমানা নির্ধারণ না থাকায় বন বিভাগ কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে মামলা হামলা করে হয়রানী করে আসছে। ভূমিহীন মোবারক আলী হাওলাদার জানান, বন্দোবস্ত গ্রহীতাগণ ১০ থেকে ১৪ নং সীটের মধ্যে বন বিভাগের লীজভূক্ত জমি নেই। তাদেরকে ৭২-৭৩ সালে যে লীজ দিয়েছে তা ছিল বলকসীট লোদা মাটি। ১৯৬৭-৬৮ সনের ফলট কাটা ম্যাপে ভূমি জমি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চরকুকরী-মুকরী মৌজার ১২২ জেল নং এর ২১৩৫ একর জমি সরকার ভূমিহীনদেরকে ১৯৬৮ সালে বুঝিয়ে দেন। সরকারি সেলামি গ্রহণ করে ভূমীহনরা দখল প্রজিসন পায়। ১৯৭০ সালের জলোচ্ছ্বাসের পর বনায়নের জন্যে সরকার ওই জমি ১০ বছরের জন্য বন বিভাগকে বরাদ্দ প্রদান করেন। বন বিভাগ ওই জমিতে কখনও বনায়ন করেননি। ফলে বন্দোবস্ত গ্রহীতারা তৎকালিন অতিভূক্ত বরিশাল জেলা প্রশাসক বরাবর তাদের নামে বরাদ্দকৃত ও সেলামি পরিশোধিত জমি বন বিভাগের নিকট হস্তান্তরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করলে ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ভূমি বিভাগ ও বন বিভাগের যৌথ জরিপ তলবের মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চরকুকরী-মুকরীর মৌজার ২১৩৫ একর জমি খাস হিসাবে ১৯৯৬ সালের ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশ গ্রেজেট প্রকাশের মাধ্যমে রিজিউম করা হয় এবং জেলা প্রশাসক বরাবরে দখল গ্রহণের আদেশ জারি হয়।
তারপেক্ষিতে উপকূল বন উৎপাদন বিভাগ বরিশালের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ১৯৯৮ সালে এক পত্রের মাধ্যমে চরকুকরী-মুকরী মৌজার চাষযোগ্য বনোৎপাদন উপযোগী জমি ভূমি বিভাগের নিকট হস্তান্তরের আদেশ প্রদান করলে জেলা প্রশাসক ভোলা ২০০২ সালের এক পত্রের মাধ্যমে উক্ত রিজিউমকৃত ২১৩৫ একর জমি সহকারী কমিশনার (ভূমি) চরফ্যাশনের নিকট হস্তান্তরের জন্যে বন বিভাগকে আদেশ প্রদান করা হয়। বন বিভাগ ওই আদেশ বাস্তবায়ন না করে একটি কুচক্রী মহলের যোগসাজশে ওই খানে চিংড়ি চাষের ভূয়া প্রকল্প সৃজনের আবেদন সৃষ্টি করে দিকনিদের্শনা চেয়ে সচিব ভূমি মন্ত্রণালয়ে ২০০৩ সালে এক পত্র প্রেরণ করেন।
এদিকে ১৯৭৪ সালের নেয়া ১০ বছর মেয়াদী লীজের মেয়াদ ১৯৮৪ সালে শেষ হওয়া সত্বেও বিভিন্ন তাল বাহানার মাধ্যমে এ জমি অন্যাভাবে জোর-জবর দখল রেখে অর্থের বিনিময়ে গো-মহিষ চারণের মাধ্যমে লিজ দিয়ে এলাকার খাল গুলো, চাষ যোগ্য জমির চাষাদের কাছ থেকে একর প্রতি ১০০০-১৫০০ টাকা লগ্নির নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। এছাড়াও এই সকল লীজের জমিও সীটগুলোর আওতাধীন নয়। তার পরেও বন বিভাগ এ সকল ভূমিহীনদেরকে হয়রানী করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় ভূমিহীন পরিবার গুলো বন্দোবস্ত গ্রহীতারা নীতিমালা মোতাবেক প্রকৃতিকভাবে সৃজিত বনের নীতিমালা অনুযায়ী ন্যায্য হির্সা পেতে প্রশাসনের নিটক দাবী জানান।
ওমরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী সার্জন জাফর উল্ল্যাহ খাঁন জানান, এ সকল জমি পলটকাটা ও ১০-১৪ নং সীট গুলো বন বিভাগ কর্র্তৃক আদৌ লিজের আওতায় আসেনি।
উপজেলা বন কর্মকর্তা (রেঞ্জার) জানান, আমরা ওই জমি সরকারের কাছ থেকে লীজ নিয়ে বন বিভাগের বনায়নের জন্যে রাখা হয়েছে।
এ ব্যপারে উপজেলা সহকারী (ভূমি) কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, বিষয়টি ভূমিহীন ও বন বিভাগ নিয়ে আইনী জটিলতা রয়েছে সার্ভেয়ারকে পাঠিয়েছি। রিপোর্ট প্রদানের পর ব্যবস্থা নেয়া হবে।