শনিবার ● ২৮ নভেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » অর্থনীতি » ভোলায় আমনের বাম্পার ফলন,দর নিয়ে শঙ্কায় কৃষকরা
ভোলায় আমনের বাম্পার ফলন,দর নিয়ে শঙ্কায় কৃষকরা
আদিত্য জাহিদ: ভোলায় আমন ধানের বাম্পার ফলন ভালো হলেও ন্যায্য মূল্য নিয়ে শঙ্কায় কৃষকরা। ধানের বাজার উৎপাদন খরচের চেয়ে কম হওয়ায় কৃষকদের মাথায় হাত পড়েছে। জেলার কৃষকদের ঘরে ঘরে নতুন ধান কাটার উৎসব আমেজের পরিবর্তে এখন হতাশা বিরাজ করছে। দেনার ভারে মাঠ থেকে ধান কেটে কম মূল্যে বিক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার প্রতিটি উপজেলায় আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এবছর জেলায় আমনের লক্ষ মাত্রা ছিল ১ লক্ষ ৭৪ হাজার ৩ শত ৮৯ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছে ১ লক্ষ ৮২ হাজার ৫শত ২৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ভোলা সদর উপজেলায় উৎপাদন হয়েছে ২৫ হাজার ৬ শত ৪৫ হেক্টর। দৌলুতখান উপজেলায় ১৪ হাজার ২ শত ৮০ হেক্টর। বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ২১ হাজার ৭ শত হেক্টর। তজুমদ্দিন উপজেলায় ১১ হাজার ১ শত ৫০ হেক্টর। লালমোহন উপজেলায় ২৫ হাজার ৬ শত ৯০ হেক্টর। চরফ্যাশন উপজেলায় ৭১ হাজার ৭ শত ৯০ হেক্টর ও মনপুরা উপজেলায় ১২ হাজার ৩ শত হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে।
সরজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুর দেখা গেছে, মাঠ জুড়ে সবুজ ধানের র্শীষ উকি দিচ্ছে সোনালী স্বপ্ন নিয়ে। ক্ষেতের আগাছা দমন, পোকা দমনসহ অন্যান্য পরিচর্যায় ও অনেক কৃষকেরা ধান কাটায় এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। এছাড়া অধিক ধান পাওয়ার আশায় নিজ নিজ জমিতে রাসায়নিক ও জৈব সার প্রয়োগ করছেন অনেক কৃষক।
স্থানীয় একাধিক কৃষকের সাথে আলাপ করে জানা যায়, গতবছরের তুলনায় এ বছর আমন চাষে কৃষকের উৎপাদন খরচ একটু বেশি পড়েছে। অতি বৃষ্টি বা অতিরিক্ত খরার কারনে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয়েছে অনেক এলাকার কৃষকদের। ইতোমধ্যে বেশী ভাগ কৃষক পরিবারে শুরু হয়েছে নতুন ধান কাটার প্রস্তুতি। আবার এখনো ক্ষেতের ধান কাটার অপেক্ষায় আছে অনেক কৃষকেরাই।
লালমোহনের রমাগঞ্জ এলাকার কৃষক আবুল হোসেন হাওলাদার বলেন, চলতি মৌসুমে তিনি ৫ একর জমিতে আমন ষাচ করেছেন। তার প্রতি একর জমিতে লগ্নি সহ ধান চাষ করতে খরচ হয়েছে ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা করে। তার পরিবর্তে ধান উঠছে ২২ খেকে ২৫ মণ করে। বর্তমান ধানের বাজারে একর প্রতি ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা করে চাষীদের লোকসানে সম্মূখীন হতে হচ্ছে।
চরফ্যাশনের কৃষক ছায়েদুর রহমান হাওলাদার বলেন, এবার আমন ধান ভাল হয়েছে, ধানের দাম বাজারে না থাকায় অনেক লোকসান গুণতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন ,জমি চাষাবাদ করতে গিয়ে আমাদেরকে সার ডিলারদের নিকট সার ও কীটনাশক ধার বাকিতে ক্রয় করতে হয়েছে। কিন্তু সেই টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে কমদামে ধান বিক্রয় করতে হচ্ছে। সবমিলে হিসাব করে দেখা যায়, এবার আমরা অনেক লোকসান এর সম্মূখীন হচ্ছি।
তজুমদ্দিনের কৃষক শাহে আলম বলেন, তিনি এবছর প্রায় ৩ একর জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। গত বছরের তুলনায় উৎপাদন ব্যয় একটু বেড়েছে। ধানের বাজার মূল্যে একটু কম থাকায় তিনি এখনো ধান কাটেননি। তবে ধানের বাজার মূল্যে একটু কম থাকায় তিনি হতাশায় ভূগছেন।
অধিকাংশ কৃষকরা বলেন, বর্তমানে ৩ শত ৭০ থেকে ৪ শত টাকা করে ধানের মন বিক্রয় হচ্ছে। যার ফলে উৎপাদন খরচের চেয়ে বিক্রয় মূল্য কম হওয়ার কারনে দালালের সহযোগিতায়ও ধান বিক্রয় করতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন তারা। অধিকাংশ এলাকায় ধান কাটলেও আড়ৎদার, ফরিয়া, সহ জেলার বাহিরের কোন মহাজন না আশায় কৃষকরা ন্যার্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
অপরদিকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা বর্তমান বাজার মূল্যে ধান বিক্রয় না করে মজুদ করার পরামর্শ দিয়েছেন বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। মাঠ থেকে ধান কাটার পর দেনার ভারে কৃষকরা কম মূল্যে বিক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছে। সমস্ত ধান ফরিয়াদের হাতে চলে যাওয়ার পর মূল্য বৃদ্ধি পায়। অর্থনৈতিক দেন্যদশার কারণে কৃষকরা আড়ৎদার, ফরিয়া ও দালালদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার বলেন, জেলায় এ বছর আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৮০ হাজার ৫২৫ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। এবছর জেলা থেকে ৯ হাজার ৬ শত মেঃ টন ধান সরকার ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নিলেও এখন পযর্ন্ত ধানের মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি। এছাড়া জেলায় পর্যাপ্ত পরিমান চালের মিল না থাকায় ধান কাটার পর কৃষকরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হতে হয়।