মঙ্গলবার ● ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » চরফ্যাশন » আমার দেখা মিয়া মো. নজরুল ইসলাম
আমার দেখা মিয়া মো. নজরুল ইসলাম
আদিত্য জাহিদ • তখন আমি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ট্যাফনাল ব্যারেট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের বিদায়ী ছাত্র। জীবনে অনেক ইচ্ছা ছিল এমন একজন মাটির মানুষের হাতে তৈরি মহা বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করব। কিন্তু তার আগেই তিনি ঢাকা মিরপুরের সাড়ে ১১ নং রোডের বাসায় আকস্মিক অসুস্থ্য হয়ে পড়লে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোলা-৪ ও জাতীয় সংসদের তৎকালীন ১২০ আসনের সকলকে কাদিয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৯২ সালে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। তার অকাল মৃত্যুতে চরফ্যাশন মনপুরার জনগন সহ জাতীয় সংসদে শোক প্রস্তাবে তৎকালীন প্রধান মন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া একজন যোগ্য সাংসদকে অকালে হারিয়েছে বলে শোক প্রকাশ করেছিলেন। মৃত্যুর আগে বিরোধীদলীয় এমপি হয়েও তিনি সহ পাচঁ সাংসদ জাপান, কানাডা, সফর করে সেই দেশীয় সরকারের কাছে বাংলাদেশের চিত্র তুলে ধরেছিলেন। মিয়া মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের চরফ্যাশনের বাড়িতে রাজনৈতিক হামলা চালিয়ে ভাংচুর করলেও তিনি থানায় মামলা দায়ের না করে বলেছিলেন, হামলাকারীরা আমার সন্তান। এরা ভুল করেছে এটা বুঝার মত বয়স তাদের হয়নি। তিনি নিজের সন্তান আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব কে আদালতে নিরাপত্তা হেফাজতে রেখে ৯০ সনের গণ অভ্যূত্থানের পর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। সেদিনের চঞ্চল জ্যাকব আজ জাতীয় সংসদের ১১৮ আসনের গর্ব। স্বাধীন বাংলার ১২০ বা ১১৮ আসনে মিয়া মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের সেই ছেলেটি প্রথম মন্ত্রী সভার সদস্যদের নামের তালিকায় উপমন্ত্রী হিসেবে নাম লেখাতে সমর্থ হয়ে তার পিতার স্বপ্নের চরফ্যাশন-মনপুরাকে ডিজিটাল চরফ্যাশনে পরিণত করেছে। মিয়া মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম সর্বদা ছিলেন সদালাপী, মিতব্যায়ী, হাস্যোজ্জল স্বভাবের একজন মানুষ। তার প্রতিষ্ঠিত মহাবিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে অনেকে উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় শহর সচিবালয় সহ নীতি নির্ধারকের আসন পর্যন্ত দখল করার যোগ্যতা অর্জন করতে সামর্থবান হয়েছেন। চরফ্যাশন-মনপুরার গোলাপফুল নজরূল ইসলাম মিয়া নিজের কথা চিন্তা না করে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর চাকরিতে যোগদান না করে তিনি চরফ্যাশন ও মনপুরার কথা চিন্তা করে মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে প্রিন্সিপাল (অধ্যক্ষ) হিসেবে যোগদান করে কর্ম জীবনে প্রবেশ করেন। লালমোহনের রাজনীতিবিদ মোতাহার হোসেন মাষ্টার আততায়ীর হাতে নিহত হওয়ার পর জিয়াউর রহমানের আমলে তিনি আওয়ামীলীগের মনোনয়ন নিয়ে রাজনৈতিক জীবনে পা রেখে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদ ভবনে বিরোধীয় এমপি হিসেবে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। তুলে ধরেছিলেন চরফ্যাশন-মনপুরার মাটি ও মানুষের কথা। তৎকালে বিএনপির প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তার প্রতি সন্তুষ্ঠি প্রকাশ করে মিরপুরে বাড়ি করার জন্য জমি বরাদ্ধ দেন এবং বর্তমান সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আ্ল ইসলাম জ্যাকবকে টিভি উপহার দেন। সাপ্তাহিক উপকূল নামের চরফ্যাশনের একমাত্র মুখপাত্র প্রকাশ করেন। যার সম্পাদকের দায়িত্বপালন করতেন চরফ্যাশন মহাবিদ্যালয়ের বর্তমান প্রিন্সিপাল (অধ্যক্ষ) ও তৎকালীন বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কায়সার আহম্মেদ দুলাল (কাদু ভাই) ছদ্ম নাম। বার্তা বিভাগের প্রধান ছিলেন বর্তমান চরফ্যাশন মহিলা কলেজের দর্শন বিভাগের প্রভাষক মনির উদ্দিন চাষী, বর্তমান চর কুকরী মুকরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হাশেম মহাজন, শিপু ফরাজী, রাজবাড়ি থানার বর্তমান অফিসার ইনচার্জ আওলাদ হোসেন মামুন, বঙ্গবন্ধু শিশুকিশোর মেলার কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মোহাম্মদ, চরকলমী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হারুন বেপারী, বন্ধুবর প্রয়াত শফিকুল ইসলাম রাব্বানী স্টাফ রিপোর্টারের দায়িত্ব পালন করতেন। ১৯৯৩ সনে মনির উদ্দিন চাষীর হাত ধরে তাদের জুনিয়র হিসেবে আমার লেখালেখি জীবনের সুচনা হয়। সাপ্তাহিক উপকূলের নিজস্ব সংবাদদাতা হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে সাংবাদিক বনে গেছি।