সোমবার ● ১৩ আগস্ট ২০১৮
প্রথম পাতা » চরফ্যাশন » চরফ্যাশন শিক্ষা অফিসে ওপেন ঘুষ বাণিজ্য
চরফ্যাশন শিক্ষা অফিসে ওপেন ঘুষ বাণিজ্য
চরফ্যাশন প্রতিনিধি: চরফ্যাশন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের ঘুষ বাণিজ্য এখন ওপেন সিক্রেট বলে অভিযোগ উঠেছে। ৮শিক্ষক নেতা (অষ্টধাতু) নামক পরিচিতদেকে শিক্ষা অফিসার হাতে নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বরাদ্দের থেকে অফিস প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকার উৎকোচ গ্রহণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় একাধিক প্রধানের অভিযোগে জানা যায়, চরফ্যাশন উপজেলায় মোট ২১২ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বিদ্যালয়ে শেখ হাসিনার নাম সম্ভলিত (গল্পের) বই বিক্রি, সরকারি ভাবে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে প্রাক প্রাথমিকের ক্লাসের সৌন্দর্য বর্ধন, রুটিন মেন্টেনেজ, ক্ষুদ্র মেরামত ও স্লিপের জন্যে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। শিক্ষা অফিসারের নির্দেশে দু’টি বই বিক্রিতে ৫’শ, প্রাক প্রাথমিকে ৫ হাজার থেকে ৩‘শ, রুটিন মেন্টেনিজ ১০হাজার থেকে ১হাজার, ক্ষুদ্র মেরামতের ১লাখ টাকা থেকে ১২ হাজার ও স্লিপের ৪০হাজারের থেকে ১ হাজার টাকাসহ মোট ১৪হাজার ৮’শ টাকা স্কুল প্রতি উত্তোলন করা হচ্ছে। যে সকল প্রতিষ্ঠানে ক্ষুদ্র মেরামতের বরাদ্দ নেই সেখান থেকে নেয়া হচ্ছে ২৮’শ টাকা।
তথ্য সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মোট ২১২ টি প্রতিষ্ঠানে বই বিক্রি থেকে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৫’শ টাকা, প্রাক প্রাথমিক ২১২টি প্রতিষ্ঠানের ৫হাজার টাকার বরাদ্দ থেকে ৬৩ হাজার ৫’শ, রুটিন মেন্টেনেজ ৭০ প্রতিষ্ঠান থেকে ৭০ হাজার টাকা, স্লিপের বরাদ্দের ১৯২ প্রতিষ্ঠান থেকে ১লাখ ৯২ হাজার টাকা ও ক্ষুদ্র মেরামতের ১৭ প্রতিষ্ঠান থেকে ১২ হাজার করে ২ লাখ ৪ হাজার টাকাসহ মোট ৬ লাখ ৩৫ হাজার ৬০০ শত টাকা ঘুষ-বাণিজ্য করার অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী আঃ ছাত্তার ক্ষুদ্র মেরামত ছাড়া বাকী টাকা গুলো গ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে। অফিস সহকারী ছিদ্দিক উত্তোলন করেছেন ক্ষুদ্র মেরামতের ২ লাখ ৪ হাজার টাকা।
সরেজমিন কলেজ পাড়া আনছারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে গেলে প্রধান শিক্ষক এ.কে এম মজির উদ্দিন বলেন, ছাঁদে পানি পড়ে তার কাজ করা হয়েছে। ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা বরাদ্দের বিষয় জানতে চাইলে তেমন উল্লেখযোগ কাজ দেখাতে পারেনি। মধ্য আবুব্বরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাজ মুটামুটি হয়েছে। তিনি জানান, আমার কাছ থেকে ক্ষুদ্র মেরামতের বাবদ ১২ হাজার টাকা অফিস নিয়েছে। স্লীপ ও প্রাক প্রাথমিকের বরাদ্দ থেকে টাকা নেয়নি। মধ্য উত্তর মাদ্রাজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও ক্ষুদ্র মেরামতসহ কাজে ঘাপলা আছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনৈক প্রধান শিক্ষক এই বলেন, আমি ৪ টি বিষয়ের বরাদ্দ থেকে ২৮’শ টাকা অফিস সহকারী আঃ ছাত্তারকে দিয়েছি। ইতিপূর্বে কোন শিক্ষা অফিসার আমার বিদ্যালয় উপজেলার মধ্যে সচ্ছ ভাবে চলে এবং শতভাগ কাজ হয় বিধায় আমার কাছ থেকে বরাদ্দ থেকে কোন টাকা-পয়সা গ্রহণ করেনি। অফিসের টাকা দেয়ার ফলে বিদ্যালয়ের কাজের ব্যপারে অনিহা প্রকাশ পায়। প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ অনিয়ম ও দূর্নীতি করতে উৎসাহিত হয়। শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আমাদের এই বিষয় গুলো থেকে পরিত্রাণ প্রয়োজন ।
এই বিষয়ে পূর্ব উত্তর আসলামপুর খাস পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোদাচ্ছের হোসেন বিদ্যালয়ের নামে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে স্লিপের ৪০ হাজার টাকার, প্রাক প্রাথমিকের জন্যে ৫ হাজার টাকা, রুটিন মেন্টিনেজের জন্যে ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে। বিদ্যালয়ে কোন কাজ না করে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি (এস.এমসি) এর যোগাযোগ ছাড়াই টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে স্থানীয় জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ওই বিদ্যালয়ে স্লিপের ৪০ হাজার টাকা কোন কাজ হয়নি অভিযোগ তোলা হলে সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের দায়িত্বে সহকারী শিক্ষা অফিসার খালিদ আহম্মেদ নামে মাত্র তদন্ত করে গোজামিল দিয়ে রাখা হয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। ক্ষুদ্র মেরামতের টাকার মধ্যে সবচেয়ে ঘাপলা রয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগিদের।
উপজেলায় সরকারি, সদ্য জাতীয়করণকৃত ও গ্রাজুয়েট শিক্ষক সমিতি নামক ৩টি শিক্ষক সংগঠন রয়েছে। বদলী হয়ে যাওয়া শিক্ষা অফিসার আঃ ছালাম সংগঠন গুলোকে সমন্বয় করে ৮জন শিক্ষক নেতাকে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হয়। শিক্ষা অফিসের সকল বিষয় অন্য কাউকে গুরুত্ব না দিয়ে ৮জন শিক্ষক নেতার উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠে শিক্ষা অফিস। ওই সকল শিক্ষক নেতাদেরকে সহকারী শিক্ষকগন অষ্টদাতু হিসাবে অবহিত করা হচ্ছে বলে এলাকায় চাউর রয়েছে। শিক্ষা অফিসার তৃষিত কুমার চৌধুরী, অফিসের ষ্টাফ ও ৮ শিক্ষক নেতার যোগ সাজশে এই সকল ঘুষ বানিজ্য হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিদ্যালয় সংক্রান্ত বদলী বাণিজ্য, সরকারী বে-সরকারি বরাদ্দ সকল বিষয় শিক্ষা অফিস সমন্বয় করে ৮শিক্ষকের সাথে। চলতি বছরের শুরুতে বিদ্যালয় বদলী বাণিজ্য ও সরকারি নতুন ১১ টি প্রতিষ্ঠান শিক্ষকদের বেতন-ভাতা হয়েছে। ওই সকল প্রতিষ্ঠানের ৪শিক্ষকের কাছ থেকে ২৫হাজার টাকা করে স্কুল প্রতি ১ লাখ টাকাসহ মোট ১১ লাখ টাকা বাণিজ্য করেছেন। এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হলেও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন আখনের টেবিল পর্যন্ত বিষয়টি গড়িয়েছে।
এব্যপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তৃষিত কুমার চৌধুরী সাথে আলাপ কালে বলেন, আমি বাসে বরিশাল যাচ্ছি প্রতিষ্ঠান থেকে কোন টাকা উত্তোলন করা হয়না। বরিশাল থেকে এসে বিষয়টি দেখব।
উপজেলা বিল প্রদানকারী কর্মকর্তা ও নির্বাহী কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন বলেন, আমি তদারকী করতে পারিনাই উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার কাজের তদারকী করেন।
উপজেলা প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, এই সকল বরাদ্দের টাকা প্রধান শিক্ষকের হিসাব নং ছাড় করা হয়। তারা স্বাধীনমত খরচ করতে পারে। সব প্রতিষ্ঠান দেখা সম্ভাব হয়না। কিছু প্রতিষ্ঠান দেখেছি কাজ মুটামুটি হয়েছে।
-এমএএইচ/এফএইচ