শিরোনাম:
●   ভোলার কর্ণফুলী-৩ লঞ্চে চাঁদপুরের মোহনায় অগ্নিকাণ্ড ●   উদ্ভাস-উন্মেষ-উত্তরণ এখন দ্বীপ জেলা ভোলায় ●   ভোলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আ’লীগের সমর্থিত প্রার্থী বশীর উল্লাহ সভাপতি, সম্পাদক মাহাবুবুল হক লিটু নির্বাচিত ●   ভোলা জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময় ●   চরফ্যাশনে দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়লো চট্টগ্রামগামী বাস ●   ডয়েসে ভ্যালী ও জাতীয় গণমাধ্যম ইনিস্টিটিউটের যৌথ আয়োজনে প্রিন্ট পত্রিকার সম্পাদকদের কর্মশালা সম্পন্ন ●   ভোলায় চারটি সহ সারাদেশে ১৫০ সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ●   ভোলায় ৩৩৫ কোটি টাকার শহর রক্ষা বাঁধ এখন মরণ ফাঁদ! ●   ভোলায় জমি দখলের খবর পেয়ে স্ট্রোক করে মারা গেলেন প্রবাসী ●   ভোলার নবাগত জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
ভোলা, শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

ভোলার সংবাদ
শুক্রবার ● ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » অর্থনীতি » তেলের দাম কমছে,বাড়ছে গ্যাসের: হাজার কোটি টাকা যাবে ধনীদের পকেটে
প্রথম পাতা » অর্থনীতি » তেলের দাম কমছে,বাড়ছে গ্যাসের: হাজার কোটি টাকা যাবে ধনীদের পকেটে
৫২৯ বার পঠিত
শুক্রবার ● ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

তেলের দাম কমছে,বাড়ছে গ্যাসের: হাজার কোটি টাকা যাবে ধনীদের পকেটে

 ---

ঢাকা : ছয় মাসের মাথায় দ্বিতীয় দফায় জ্বালানি তেলের দাম কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তবে সংশ্লিষ্ট পরিবহন ব্যবসায়ীরা যদি বাস, ট্রাক ও লঞ্চের ভাড়া না কমান তবে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হবে না। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এ তথ্য জানিয়েছেন। এ ছাড়া আগামী মাসেই গ্যাসের দাম বাড়ানো হতে পারে বলেও জানান তিনি।এ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে গ্যাসের মূল্য সমন্বয়ের বিষয়ে তাঁকে অবহিত করা হবে। এর পরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।এর আগে ২৪ এপ্রিল কোরোসিন ও ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি তিন টাকা এবং অকটেন ও পেট্রলের দাম লিটারপ্রতি ১০ টাকা কমানো হয়। এদিকে, গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়ে হিসাবনিকাশ চূড়ান্ত করেছে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। পেট্রোবাংলা ও এর অধীন সংস্থাগুলোর প্রস্তাব এবং তার ওপর অনুষ্ঠিত গণশুনানির আলোকে বিইআরসি বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে। এতে পেট্রোবাংলা ও এর অধীন সংস্থাগুলো যতটা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল, তার চেয়ে অনেক কম বাড়বে বলে জানা গেছে। বিইআরসির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, পেট্রোবাংলা প্রথমে প্রস্তাব দিয়েছিল গড়ে ৯০ শতাংশের বেশি দাম বাড়ানোর। কিন্তু শুনানির সময় তা কমিয়ে ৬৫ শতাংশ বাড়ানোর সংশোধিত প্রস্তাব দেয়। সেই প্রস্তাবের ওপর শুনানিতে অনেক বিষয় উঠে আসে, যাতে ৬৫ শতাংশ দাম বাড়ানোরও যৌক্তিকতা প্রমাণিত হয়নি। কাজেই ওই প্রস্তাব অনুযায়ী দাম বাড়ছে না।ওই সূত্র জানায়, গ্যাসের দাম যতটাই বাড়ানো হোক না কেন, এর প্রধান কারণ হবে গ্যাসের দামের ওপর থেকে সরকারের শুল্ক ও কর সংগ্রহের সিদ্ধান্ত এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি। সরকার যদি শুল্ক ও কর সংগ্রহের হার কিছুটা কমায়, তাহলে দাম অনেক কম বাড়বে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে বিইআরসির আরও কিছুদিন সময় লাগবে বলে উল্লেখ করে সূত্রটি জানায়, সংস্থার সর্বশেষ চেয়ারম্যান এ আর খান মেয়াদ শেষে অবসরে গেছেন। এখন কমিশনে কেবল দুজন রয়েছেন। কিন্তু বিইআরসি আইনে বলা আছে, কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কমিশনের সভার কোরাম পূর্ণ হতে অন্তত তিন সদস্যের উপস্থিতি অপরিহার্য। তাই কোরাম পূর্ণ করে কমিশনের সভা করা এখন সম্ভব হচ্ছে না। নতুন একজন সদস্য নিয়োগ করা হলেই এ সমস্যা কেটে যাবে।বিইআরসিতে চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিয়োগ দেয় সরকার, অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, একজন সদস্য নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সরকারি-বেসরকারি সূত্রগুলো জানায়, গ্যাস খাত থেকে বিভিন্ন নামে প্রায় ৮১ শতাংশ অর্থ শুল্ক ও কর হিসেবে সরকার নেয়। যদি এর অর্ধেক শুল্ক ও কর সরকার কম নেয়, তাহলেই এখন গ্যাসের দাম না বাড়ালেও চলে। গত ৭ থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত অনুষ্ঠিত গণশুনানির বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে গ্যাস কেনার জন্য পেট্রোবাংলার বছরে ৯০০ কোটি টাকা বাড়তি অর্থ দরকার। এতে গ্যাসের দাম সামান্য কিছু বাড়ালেই হয়। কিন্তু সরকারি কোষাগারে ৮১ শতাংশ অর্থ দিতে হলে গ্যাসের দাম অনেকটাই বাড়াতে হবে।বর্তমানে গ্রাহকের কাছ থেকে বছরে গ্যাস বিল আদায় হয় ১৬ হাজার কোটি টাকা। এর ওপর প্রায় ৬৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে পেট্রোবাংলা। তাতে বর্ধিত অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। তবে শুনানিতে পাওয়া তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে বিইআরসি দেখেছে যে প্রকৃতপক্ষে পেট্রোবাংলার যে পরিমাণ বাড়তি অর্থ দরকার, এর সংস্থানের জন্য গড়ে ৬৫ শতাংশ বাড়ানোর দরকার নেই। আরও অনেক কম বাড়ালেও চলে। গ্যাস বিক্রি থেকে সরকার যেসব নামে শুল্ক ও কর নিচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে সম্পূরক শুল্ক ৪০ শতাংশ। মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ১৫ শতাংশ। অগ্রিম আয়কর ৩ শতাংশ। গ্যাস বিক্রি থেকে কোম্পানিগুলোর মুনাফার ২০ শতাংশ ডিভিডেন্ট, যা মোট রাজস্বের ২ শতাংশ। গ্যাসের ওপর যে সম্পদমূল্য আরোপ করা হয়েছে, তা থেকে ১৬ শতাংশ এবং গ্যাস উন্নয়ন তহবিল (জিডিএফ) থেকে প্রায় ৫ শতাংশ। মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, সরকার সম্পূরক শুল্ক সাধারণত এমন খাতে ধার্য করে, যে বিষয়ে সরকার নিরুৎসাহ করতে চায়। আমদানি করা শৌখিন দ্রব্যাদিই সাধারণভাবে এই শুল্কের আওতায় ফেলা হয়। গ্রাহকদের কাছ থেকে পাওয়া গ্যাসের দাম থেকে কেন সম্পূরক শুল্ক নেওয়া হবে, তা বোধগম্য নয়। গণশুনানিতে অংশ নেওয়া ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞরাও বলেন, সরকার যদি ৪০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক না নেয়, তাহলেই গ্যাসের দাম বাড়ানোর দরকার হয় না। বিভিন্ন বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানির প্রস্তাবের ওপর অনুষ্ঠিত শুনানিতে দেখা গেছে, তাঁরা বর্তমানে যে হারে বিতরণ চার্জ পাচ্ছে এবং জমানো অর্থ থেকে সুদসহ অন্যান্য খাত থেকে তাঁদের যে আয় হচ্ছে, এতে বর্তমান পর্যায়ে কিছু সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া তাঁদেরও সার্ভিস চার্জ বাড়ানো অপরিহার্য নয়। পেট্রোবাংলার সূত্র বলেন, ১৯৯৮ সালের আগ পর্যন্ত গ্যাস বিক্রির অর্থ থেকে উপরিউক্ত সব ধরনের শুল্ক ও কর সরকারি কোষাগারে যেত। ১৯৯৮ সালে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তির (পিএসসি) অধীনে দেশের কয়েকটি গ্যাসক্ষেত্রে কর্মরত বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে অপেক্ষাকৃত বেশি দামে গ্যাস কেনা শুরু হয়। ফলে সরকারকে ওই সব শুল্ক ও কর দিয়ে অবশিষ্ট অর্থ দিয়ে গ্যাস কেনা এবং ক্রয়মূল্য থেকে কম দামে বিক্রি করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তখন পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে বিষয়টি সরকারি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে উপস্থাপন করে বলা হয়, সরকার যদি গ্যাস বিক্রির অর্থ থেকে সম্পূরক শুল্ক ও মূসক বাবদ ৫৫ শতাংশ রাজস্ব না নেয়, তাহলে অপেক্ষাকৃত বেশি দামে গ্যাস কিনে কম দামে বিক্রির চলমান প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা সম্ভব। সরকার তখন ওই ৫৫ শতাংশ রাজস্ব না নিয়ে গ্যাস খাত পরিচালনায়, তা ব্যয় করার সিদ্ধান্ত দেয়। সে অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ২২৭ নম্বর এসআরও জারি করে। কিন্তু গত বছরের শুরুতে এনবিআর ওই এসআরও স্পষ্টীকরণ করে পেট্রোবাংলাকে জানায়, যেহেতু গ্রাহকের কাছ থেকে সরকারি রাজস্ব হিসেবেই ওই ৫৫ শতাংশ অর্থ নেওয়া হচ্ছে, সেহেতু তা সরকারি কোষাগারে দিতে হবে। শুধু তা-ই নয়, ১৯৯৮ সাল থেকে যে পরিমাণ রাজস্ব দেওয়া হয়নি, তা-ও সুদসহ পরিশোধ করতে হবে। সে অনুযায়ী পেট্রোবাংলা গত এপ্রিল থেকে ওই রাজস্ব এনবিআরকে দিতে শুরু করে এবং গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। সেই প্রস্তাবে আবাসিকে দুই চুলার জন্য মাসিক বিল ১ হাজার ২০০ টাকা, এক চুলার জন্য ১ হাজার ১০০ টাকা, আবাসিকে মিটারযুক্ত গ্রাহকের ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটারের বর্তমান দাম ৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা ৫৩ পয়সা, বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রায় ৩২ শতাংশ, সারে প্রায় ৩৬ শতাংশ, ক্যাপটিভ বিদ্যুতে ১২৭ দশমিক ২৭ শতাংশ, শিল্পে প্রায় ৫৬ শতাংশ, বাণিজ্যে ৬৭ শতাংশ চা-বাগানে ৬৮ শতাংশ এবং সিএনজিতে ৪৮ দশমিক ১৫ শতাংশ বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছিল। এর আগে, গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে আবাসিকসহ কয়েকটি শ্রেণির গ্রাহকের গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। তখন দুই চুলার বিল ৪৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫০ এবং এক চুলার বিল ৪০০ থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করা হয়েছিল। আর সব গ্রাহকশ্রেণির গ্যাসের দাম সর্বশেষ বাড়ানো হয় ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত এপ্রিলে জ্বালানি তেলের দাম কমায় এর সুফল পায়নি দেশের সাধারণ মানুষ। কারণ জ্বালানি তেলের দাম কমলেও পরিবহন ভাড়া ও সেচ পাম্পের ভাড়া কমানো হয়নি। ফলে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর সুফল পুরোটাই গেছে পরিবহন ও সেচ পাম্পের মালিক তথা বিত্তবানদের পকেটে। আবারও জ্বালানি তেলের দাম কমানো হলেও তেমনটিই ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। আন্তর্জাতিক বাজারে তিন বছর ধরেই জ্বালানি তেলের দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও একাধিকবার জ্বালানি তেলের দাম কমিয়েছে সরকার। ফলে দেশেও দাবি ওঠে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর।এ অবস্থায় জ্বালানি তেলের দাম কমানোর জন্য সরকার দুই দফা প্রস্তাব দেয়। গত এপ্রিলে প্রথম দফায় জ্বালানি তেলের দাম কমানোর সময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, যদি পরিবহন খাতে ভাড়া কমে তাহলে দ্বিতীয় দফায় জ্বালানি তেলের দাম কমানো হবে। কিন্তু গত এপ্রিলে কোরোসিন, ডিজেল, অকটেন ও পেট্রলের দাম কমানো হলেও পরিবহন মালিকরা ভাড়া কমাননি এক পয়সাও।এ ক্ষেত্রে পরিবহন মালিকদের যুক্তি, বেশির ভাগ গণপরিবহন চলে ডিজেল দিয়ে। ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি মাত্র তিন টাকা কমায় ভাড়া কমানোর তেমন সুযোগ নেই। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের দাবি, ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি তিন টাকা না কমিয়ে যদি বাড়ানো হতো তাহলে ঠিকই পরিবহন মালিকরা ভাড়া বাড়িয়ে দিতেন। সে ক্ষেত্রে তাঁরা এত কম টাকা বাড়ানোর কারণে ভাড়া বাড়ানো যাবে না, এমন যুক্তি দিতেন না। কেউ এমন যুক্তি দিলে সেটিও মানতেন না তাঁরা। ৪১০০ কোটা টাকা গেছে বিত্তবানদের পকেটে : গত এপ্রিলে জ্বালানি তেলের দাম কমায় এর সুফল পায়নি দেশের সাধারণ মানুষ। উল্টো জ্বালানি তেলের দাম কমায় সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) বছরে মুনাফা কম হবে চার হাজার ১০০ কোটি টাকা। আর এ পুরো টাকাটাই যাচ্ছে বিত্তবানদের পকেটে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের কোনো নীতিমালা নেই। ফলে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও গণপরিবহন, পণ্য পরিবহন, সেচ পাম্পসহ সংশ্লিষ্ট খাতগুলোর ভাড়া কমানোর ক্ষেত্রে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা হওয়া মাত্রই পরিবহন মালিকরা ভাড়া বাড়িয়ে দিলেও এক পয়সাও ভাড়া কমাননি তাঁরা। দ্বিতীয় দফায় জ্বালানি তেলের দাম কমানোর পুরো অর্থও বিত্তবানদের পকেটে চলে যেতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রাইভেট কার বা ব্যক্তিগত গাড়ি আছে ১ শতাংশেরও কম মানুষের। বেশির ভাগ ব্যক্তিগত গাড়িরই মালিক উচ্চবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকেরা। এই উচ্চবিত্তের জ্বালানি হিসেবে পরিচিত পেট্রল ও অকটেনের দাম প্রথম কমেছে গড়ে ১০ শতাংশের বেশি। অন্যদিকে মধ্যবিত্ত ও গরিবের জ্বালানি হিসেবে পরিচিত ডিজেল ও কেরোসিনের দাম কমানো হয়েছিল ৪ শতাংশের কিছু বেশি। সেচকাজে এবং পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে ব্যবহৃত হয় ডিজেল।দ্বিতীয় দফায়ও পেট্রল ও অকটেনের দাম বেশি কমানোর ইঙ্গিত দিলেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এ বিষয়ে তিনি বলেন, দেশের কনডেনসেট থেকে পেট্রল ও অকেটন উৎপাদিত হয়। এটি আমরা বিদেশ থেকে আমদানি করি না। দেশে এত বেশি পেট্রল ও অকটেন উৎপাদিত হচ্ছে, তা ব্যবহারের জায়গা নেই। যদি পেট্রল ও অকটেনের দাম কমানো যায় তাহলে মানুষ গাড়িতে গ্যাস ব্যবহার না করে অকটেন ব্যবহার করবে। এতে মূল্যবান গ্যাস সঞ্চয় হবে। তবে পেট্রল ও অকটেনের দাম লিটারপ্রতি কত কমানো হবে, এ বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।এ বিষয়ে সম্প্রতি জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল আলম বলেন, জ্বালানির দাম কমানো হলেও তাতে কৃষক, যাত্রী, পণ্যের ভোক্তারা কিভাবে এর সুফল ভোগ করবে, তা নিশ্চিত করা হচ্ছে না। জ্বালানি তেলের দাম কমালে তার সুফল সাধারণ মানুষকে পেতে হবে। তিনি আরো বলেন, দেশের বেশির ভাগ মানুষ দরিদ্র। ফলে সরকারের নীতি হওয়া উচিত দরিদ্রবান্ধব। কিন্তু আমাদের দেশের সরকারগুলো ধনীবান্ধব। প্রথম দফায় জ্বালানির দাম বেশি কমেছে বড়লোকের গাড়ির জন্য। সাধারণ মানুষের গাড়ির জ্বালানি ডিজেলের দাম কম কমানো হয়েছে। তবে যতটুকু দাম কমেছে গণপরিবহনে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। কোথাও ভাড়া কমেনি।ড. শামসুল আলম জ্বালানি তেলের দাম কমানোর ক্ষেত্রে নীতিমালা করার আহ্বান জানিয়েছেন সরকারের প্রতি।জানা গেছে, দেশে গণপরিবহন ও সেচের জন্য বছরে ডিজেল দরকার হয় ৩৩ লাখ টন। প্রথম দফায় ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি তিন টাকা কমায় বছরে ৯৯০ কোটি টাকা যাচ্ছে পরিবহন মালিক ও সেচ পাম্প মালিকদের পকেটে। কারণ পরিবহনে ভাড়া কমেনি, সেচ পাম্প মালিকরা সেচ পাম্পের ভাড়া কমাননি। অন্যদিকে বছরে পেট্রলের চাহিদা রয়েছে এক লাখ ৮০ হাজার টন আর অকটেনের চাহিদা এক লাখ ৩৫ হাজার টন। প্রথম দফায় এ দুই ধরনের জ্বালানি তেলের দাম লিটারপ্রতি ১০ টাকা কমায় বিত্তবানদের পকেটে যাচ্ছে বছরে তিন হাজার ১৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে উচ্চবিত্তরা অকটেন বাবদ ফায়দা নেবে বছরে এক হাজার ৩৫০ কোটি টাকা আর পেট্রল থেকে নেবে এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা।অন্যদিকে গরিব মানুষের জ্বালানি হিসেবে পরিচিত কোরোসেনির দাম লিটারপ্রতি তিন টাকা কমায় বিপিসির এ খাত থেকে আয় কমবে ৮২৫ কোটি টাকা। এই একটিমাত্র জ্বালানি, যার দাম কমায় পরিমাণে কম হলেও দরিদ্র মানুষ সুফল পাচ্ছে।কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক হিসাব মতে, দেশে ডিজেলচালিত সেচ পাম্প রয়েছে ১৪ লাখ। এসব পাম্প মালিকদের কাছ থেকে ৭০ লাখ কৃষক মাস চুক্তিতে ভাড়া নিয়ে জমিতে সেচ দিয়ে থাকে। বছরে ১৪ লাখ সেচ পাম্পে ৯ লাখ টন ডিজেল প্রয়োজন হয়। ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি তিন টাকা কমায় সেচ পাম্প মালিকরা দুই হাজার ৭০০ কোটি টাকা বেশি মুনাফা করবে। কারণ ডিজেলের দাম কমানোর পর এখন পর্যন্ত সেচ পাম্প মালিকরা কোথাও সেচের ভাড়া কমায়নি। এসব কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম যদি দ্বিতীয় দফায় সরকার কমাতে চায় তাহলে তার সুবিধা যেন সাধারণ মানুষ পায়। যদি পরিবহন মালিকরা ভাড়া না কমান, সেপ পাম্পের মালিকরা সেচের ভাড়া না কমায় তাহলে জ্বালানি তেলের দাম কমলে দেশের বিত্তবানরাই দাম কমানোর পুরো টাকা লুটে নেবে। গ্যাসের দাম বাড়বে : শিগগিরই বাড়বে গ্যাসের দাম। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ওপর গণশুনানি শেষ হয়েছে গত ১৮ আগস্ট। গ্যাসের মূল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) শুনানিতে ছয়টি গ্যাস বিতরণ কম্পানি ৬৫ শতাংশ গ্যাসের মূলবৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে।এতে আবাসিকে এক চুলার জন্য বর্তমান ৬০০ টাকার পরিবর্তে এক হাজার ১০০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৬৫০ টাকার পরিবর্তে এক হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। বিইআরসির কাছে গ্যাসের দাম ৬২ থেকে ১৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় ছয়টি বিতরণকারী কম্পানি, সঞ্চালন কম্পানি জিটিসিএল এবং উৎপাদনকারী সংস্থা পেট্রোবাংলা, বাপেক্স ও বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কম্পানি লিমিটেড। প্রস্তাবে বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ২ টাকা ৮২ পয়সার পরিবর্তে ৬৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৪ টাকা ৬০ পয়সা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। বিইআরসি সূত্রে জানা গেছে, বিইআরসির সাত সদস্য থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে দুজন সদস্য রয়েছেন। সম্প্রতি বিইআরসির চেয়ারম্যান এ আর খান অবসরে গেছেন। নিয়ম অনুযায়ী, সাত সদস্যের কমিশনের মধ্যে অন্তত তিনজন না থাকলে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। এ কারণে সরকার শিগগিরই বিইআরসির চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশ থেকে ফিরলেই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। গত ৭ আগস্ট শুরু হয়ে মূল্যবৃদ্ধির শুনানি শেষ হয়েছে গত ১৮ আগস্ট। ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে শুনানির ফল দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।জানা গেছে, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করতে চায় সরকার দুই কারণে। প্রথমত, বাসাবাড়িতে এলপিজি ব্যবহার বাড়ানো আর দ্বিতীয়ত, ব্যক্তিগত গাড়িতে সিএনজি ব্যবহার কমানো। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্প-কারখানার জন্য প্রাকৃতিক গ্যাস রাখতে চায় সরকার। এ কারণে অকটেন ও পেট্রলের দাম কমিয়ে ব্যক্তিগত গাড়িতে সিএনজির পরিবর্তে পেট্রল ও অকটেনের ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

© 2024 দ্বীপের সাথে ২৪ ঘণ্টা Bholar Sangbad, সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত।