শুক্রবার ● ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » অর্থনীতি » দাম দাম নির্ধারণ: প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৫০, খাসির ২০ টাকা
দাম দাম নির্ধারণ: প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৫০, খাসির ২০ টাকা
ঢাকা : বাংলাদেশ ট্যানার্সঅ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) কোরবানি ঈদ উপলক্ষে চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে। ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৫০ আর ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৪০ টাকা। খাসির লবণযুক্ত চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ২০ ও বকরির ক্ষেত্রে ১৫ টাকা।শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করে মূল্য তালিকা জানিয়েছে বিটিএ। বাংলাদেশ ফিনিশড্ লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়ার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিনস মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।ঈদ সামনে রেখে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের দাম নির্ধারণ করেছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা; পশু ও আকারভেদে এবার দাম ঠিক করা হয়েছে গতবারের চেয়ে কম। ট্যানারি ব্যবসায়ীরা এবার ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া কিনবেন ৫০ টাকায়; ঢাকার বাইরে এর দাম হবে ৪০ টাকা।এছাড়া সারা দেশে খাসির লবণযুক্ত চামড়া ২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৫ টাকায় সংগ্রহ করা হবে।বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন এই দাম ঘোষণা করে বলেন, এবার মহিষের চামড়ার দাম কেন নির্ধারণ করা হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশে মহিষ খুব একটা জবাই হয় না। তারপরও যা আসে আমরা প্রতি বর্গফুট ২৫ টাকা দরে কিনব।গত বছর ট্যানারি ব্যবসায়ীরা ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় কিনেছেন।এছাড়া প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত মহিষের চামড়ার দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা; আর সারা দেশে খাসির লবণযুক্ত চামড়া ২০ থেকে ২২ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকায় সংগ্রহ করা হয়েছিল।বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দরপতন হয়েছে। এছাড়া গতবারের কেনা চামড়ার ৩০ শতাংশ এখনও মজুদ রয়ে গেছে। সব কিছু মিলিয়ে এবারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি যুক্তি দেন, আন্তর্জাতিক বাজারে গত এক বছরে দামড়ার দাম ৩৫ শতাংশ কমে গেলেও এবার কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের জন্য যে দাম তারা ঠিক করেছেন, তা গত বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ কম।শাহীন বলেন, আমরা আশা করছি, চামড়া কেনার সময় ট্যানারি মালিকরা আনহেলদি কোনো প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবেন না। এতে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়বে।ঈদের এক সপ্তাহ আগে গত সোমবার বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ কাঁচা চামড়ার মূল্য নির্ধারণের জন্য ব্যবসায়ীদের ৪৮ ঘণ্টা সময় দেন। তারও দুই দিন পর ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে দাম ঘোষণা করা হল। বাণিজ্যমন্ত্রী সেদিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, একটা বাস্তবসম্মত মূল্য তো নির্ধারণ করতে হবে।ৃ জনগণ যাতে চামড়ার ন্যায্য মূল্য পায়, আবার চামড়া শিল্পের ব্যবসায়ীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।প্রতিবছরই চামড়া নিয়ে খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ ওঠায় সরকার এবার কাউকে সিন্ডিকেট করতে দেবে না বলেও সতর্ক করে দেন মন্ত্রী। সরকারের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর দেশে কোরবানির উপযোগী প্রায় ৩৩ লাখ গরু ও মহিষ মজুদ আছে, যা চাহিদার সমান। ফলে এ বছর অন্য দেশ থেকে গরু না আনলেও চলবে।বাংলাদেশ হাইডস অ্যান্ড স্কিনস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত বছর গরম ও সঠিক সময় সঠিক পরিমাণ লবণ না দেওয়ায় কারণে প্রায় ২০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়ে যায়।এবার পশু জবাই হওয়ার ৫/৬ ঘণ্টার মধ্যে চামড়ায় লবণ দিতে অনুরোধ করেন তিনি।বিভিন্ন মাদ্রাসার সংগ্রহ করা চামড়া বেশি নষ্ট হয় জানিয়ে দেলোয়ার বলেন, আশা করছি, মাদ্রাসার জন্য চামড়া সংগ্রহ করার সঙ্গে সঙ্গে লবণ দেবেন অথবা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে ব্যবস্থা নেবেন।ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বছরে বাংলাদেশ থেকে ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া। এর অর্ধেকের বেশি আসে কোরবানির ঈদের সময়। এক প্রশ্নের জবাবে ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন বলেন, হাজারীবাগে কাঁচা চামড়া প্রবেশের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ঈদের মৌসুমে সেখানে চামড়া নিতেই হবে। পাশাপাশি সাভারের নতুন চামড়া শিল্প নগরীতেও চামড়া যাবে।এরই মধ্যে ৩০টির মতো কারখানা হাজারীবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তর করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আরও কয়েকটি ট্যানারি আগামী এক মাসের মধ্যে সাভারে চলে যাবে।সাভারে চামড়া শিল্প নগরীতে শক্ত ও তরল বর্জ্য দ্রুত অপসারণের ব্যবস্থা না করলে সেখানেও মানুষদের সমস্যা হবে বলে সতর্ক করেন তিনি।