বুধবার ● ৬ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » বিশ্ব » আইএস-এর প্রধান মুসলিম নয়, সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা মোসাদ
আইএস-এর প্রধান মুসলিম নয়, সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা মোসাদ
ডেস্ক: বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক ছড়ানো সন্ত্রাসী সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সৃষ্টি। বিস্ময়কর তথ্য হলো আইএস নেতা খলিফা আবুবকর আল বাগদাদি মুসলমান নন। তিনি একজন ইহুদি। তার আসল নাম আকা ইলিয়ট শিমন। বিশ্বে ইসলামী শাসনব্যবস্থা কায়েমের আদর্শে মত্ত আইএস-এর শীর্ষস্থানীয় নেতাদের প্রত্যেকেই মোসাদের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। মোসাদের প্রশিক্ষণ পদ্ধতিতেই আইএস জঙ্গিদের যুদ্ধকৌশল শেখানো হয়।
বিশ্বব্যাপী ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার যুদ্ধের স্বঘোষিত খলিফা ও সন্ত্রাসী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) নেতা খলিফা আবুবকর আল বাগদাদি মুসলমান নন। তিনি একজন ইহুদি। তার আসল নাম আকা ইলিয়ট শিমন।
সুসংগঠিত এ জঙ্গিগোষ্ঠীটি ইসলামিক স্টেট নামে আত্মপ্রকাশের আগে যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান দলের সিনিয়র সিনেটর ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী জন ম্যাককেইনের সঙ্গে বেশ কয়েকবার বৈঠক করেছে। গোড়ার দিকের ওই গোপন বৈঠকগুলোতে মোসাদের বেশ কয়েকজন সদস্য ও আইএস প্রধান বাগদাদি উপস্থিত ছিলেন। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম ও গবেষণা প্রতিবেদন ঘেঁটে বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক সৃষ্টি করা ইসলামিক স্টেট ও এর প্রধান খলিফা আবুবকর আল বাগদাদির পরিচয় নিয়ে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এর সাবেক কর্মকর্তা এডওয়ার্ড স্নোডেনের ফাঁস করা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসএ) গোপন নথিতেও এ ব্যাপারে উল্লেখ আছে বলে জানিয়েছে আমেরিকান ফ্রি প্রেস নামের ওয়েবসাইট। সন্ত্রাসবাদের ইতিহাসে সবচেয়ে ধনী সংগঠন বলে পরিচিত আইএসের উত্থান হয় গত বছরের জুনে। ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ দখলে নিয়ে ইসলামিক স্টেট নাম দিয়ে খেলাফত ঘোষণা করেন বাগদাদি।
প্যারিসে ভয়াবহ হামলার পর একই কথা বলেছেন কিউবার সাবেক নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রো ও মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। সংবাদ সম্মেলন করে দুজনই বলেছেন, আইএস ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী অস্ত্র। বিশ্বব্যাপী নিজেদের আধিপত্য বিস্তার ও স্বার্থসিদ্ধির জন্য আইএস নামের এ ভয়ানক কালসাপ মাঠে নামিয়েছে তারা।
ইসলামিক স্টেট সৃষ্টির এক বছর আগে ২০১৩ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান সিনেটর জন ম্যাককেইন সিরিয়ায় আবুবকর আল বাগদাদিসহ অর্ধডজন শীর্ষ জঙ্গি নেতার সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন। সম্প্রতি সেই বৈঠকের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে ইউটিউবে। মার্কিন প্রচারমাধ্যম এবিসি নিউজ ও সিএনএনের একটি ভিডিও স্নাপশটে এ ছবির ব্যাপারে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
আমেরিকান ফ্রি প্রেসের প্রতিবেদন জানায়, ইহুদি বাবা-মা-এর কোলে জন্ম নেন বাগদাদি। এডওয়ার্ড স্নোডেনের ফাঁস করা তথ্যানুযায়ী, বাগদাদিকে টানা এক বছর সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়েছে মোসাদ। একই সময়ে আরবি ভাষা ও ইসলামী শরিয়ার ওপর কোর্স করেছেন বাগদাদি। এ সময় তিনি ইব্রাহিম ইবনে আওয়াদ ইবনে ইব্রাহিম আল বদরি নাম ধারণ করেন। তবে বাগদাদির পরিচয় সম্পর্কে ছড়ানো হয়েছে- তিনি ১৯৭১ সালের ২৮ জুলাই ইরাকের সামারায় জন্মগ্রহণ করেন। বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক স্টাডিজে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক আক্রমণের সময় সামারায় একটি মসজিদে খতিবের দায়িত্ব পালন করেন বাগদাদি। পরে তিনি আমিরে দায়েশ উপাধি গ্রহণ করেন।
এডওয়ার্ড স্নোডেন প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের গোপন দলিলের বাগদাদির তথ্য প্রথম প্রকাশ করে মধ্যপ্রাচ্যের জনপ্রিয় ইন্টারনেট রেডিও আজিয়াল ডটকম। পরবর্তী সময়ে ইরানের গোয়েন্দা সংস্থা এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করে। ইরানি গোয়েন্দা সংস্থার পর্যালোচনা নিয়ে এ সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় আরবি পত্রিকা ইজিপ্রেসে। যুক্তরাষ্ট্রের এবিসি নিউজ প্রচারিত একটি ভিডিওর বরাত দিয়ে সোশিও-ইকোনমিক হিস্ট্রি নামের একটি ওয়েবসাইট দাবি করেছে, মার্কিন প্রভাবশালী সিনেটর জন ম্যাককেইন আবুবকর আল বাগদাদিসহ কয়েকজন আইএস কর্মকর্তা ও সিরিয়ার বিদ্রোহী কয়েকজন নেতার সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন।
২০১৩ সালের জুনে যখন এ বৈঠকটি হয়, তখন বাগদাদির মুখে লম্বা দাড়ি ছিল না। ওই বৈঠকে বাগদাদির সহযোগী আইএসের শীর্ষ সন্ত্রাসী মোহাম্মদ নূরও উপস্থিত ছিলেন। উইকিপিডিয়ায় প্রদর্শিত আবুবকর বাগদাদির ছবির সঙ্গে ওই ছবির মিল পাওয়া গেছে। মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী গণমাধ্যম আল আরাবিয়াও ওই ছবিটি প্রকাশ করেছে। সিএনএনের একটি ভিডিওতেও বাগদাদির সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলতে দেখা যায় জন ম্যাককেইনকে। গ্লোবাল রিসার্চ নামের একটি গবেষণা ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়েছে, ২০০৪ সাল থেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এর ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে আবুবকর আল বাগদাদি। ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বুস্কা কারাগারে ছিলেন তিনি। পলিটিসাইট ডটকমের তথ্যানুযায়ী, সিআইএ-এর তত্ত্বাবধানেও বাগদাদি সামরিক প্রশিক্ষণ লাভ করেন। ইরাকের উম কাসর এলাকায় মার্কিন কারাগারে সিআইএ তাকে নিয়ে আসে। সেখান থেকে ২০১২ সালে জর্ডানের একটি গোপন ক্যাম্পে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশাল ফোর্স কমান্ড বাগদাদিসহ তার সহযোগী অনেককে প্রশিক্ষণ দেয়। আইএসের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক সহিংসতার মাধ্যমে ইসরাইলের ভূখণ্ড বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে মোসাদের। আল কায়দার সাবেক শীর্ষ কমান্ডার ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক জিহাদ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা নাবিল নাইম বৈরুতের টিভি চ্যানেল আল মাইদিনকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আল কায়দার বর্তমান নেতারা ও আইএস সিআইএ’র হয়ে কাজ করছে। এ উদ্দেশ্যে শিয়া-সুন্নি বিরোধ তারাই উসকে দিচ্ছে বলেও জানান তিনি।
দেশবাসীকে পবিত্র ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ভোলার সংবাদের সম্পাদক ফরহাদ হোসাইন
স্টাফ রিপোর্টার: পবিত্র ফিতর উপলক্ষে এক বিবৃতিতে দেশ-বিদেশে অবস্থানরত সকল বাংলাদেশী, সাংবাদিক সমাজ ও জনতার সময় পরিবারের সকল সদস্য, শুভানুধ্যায়ী, বিজ্ঞাপন দাতাদেরকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
একই সাথে তিনি সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদের কল্যাণ কামনা করে বলেন, দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর মুসলিম জাহানে ফিরে এসেছে খুশির ঈদ। রমজান আমাদের ত্যাগ, সংযমের শিক্ষা দিয়েছে। ঈদের খুশির সঙ্গে নিয়ে এসেছে ঐক্য, সংহতি ও সমঝোতার স্মারক।
তিরিশ দিন সিয়াম সাধনা শেষে পবিত্র ঈদ-উল ফিতর মুসলমানদের বিশেষ ধর্মীয় উৎসবের দিন। এ দিনের আনন্দ খুশীকে আমরা সকলের মাঝে ভাগাভাগি করে নেব। আগামী দিনগুলোতে সকলের জীবন ঈদের খুশিতে ভরে উঠুক এ প্রত্যাশা করছি। শাওয়ালের চাঁদ ঈদের খুশির সঙ্গে নিয়ে এসেছে ঐক্য, সংহতি ও সমঝোতার স্মারক। তিনি আল্লাহর কাছে দেশবাসীর সুখ-শান্তি, সমৃদ্ধি, কামনা করেন
নারীদের যত ভুল
শেখ ফয়সাল মারুফ :
চলার পথে দোষ-ত্রুটি থাকবেই। কিছু ভুল মানবীয়।
কিছু ভুল মার্জনীয়। এ জাতীয় ভুলগুলো মানবিক ও আচরণগত। কিন্তু কিছু ভুল আছে ধর্মীয় বিশ্বাসগত।
যার স্থান ধর্মে নেই তাকে ধর্মের আসনে বসিয়ে দেওয়া।
যে কাজের অনুমোদন নেই তা ধর্মবিশ্বাসে পালন করা।
এ জাতীয় ভুলেঘেরা বিশ্বাসকে বলে কুসংস্কার বা ধর্ম অসমর্থিত সামাজিক রেওয়াজ । এমন কিছু সামাজিক রেওয়াজ সম্পর্কে জেনে নিই । যা নারীদের ঘিরেই সমাজে প্রচলিত।
পায়ে মেহেদি ব্যবহার কি জায়েজ?
মেয়েদের জন্য পায়ে মেহেদি ব্যবহার করার অনুমোদন আছে। এটা তাদের জন্য জায়েয। যারা মনে করেন মেয়েরা পায়ে মেহেদি ব্যবহার করতে পারবে না। এটা ভুল ধারণা।
নবজাতকের কানে না ঘরের বাইরে আজান
নবজাতক ছেলে হোক বা মেয়ে হোক ডান কানে আজান ও বাম কানে ইকামত দেওয়া নিয়ম। অনেকে মনে করে, মেয়ে সন্তান হলে আজান-ইকামত দিতে হয় না। আবার কেউ মনে করে, ঘরের বাইরে আজান দিতে হয়। এগুলো ভুল ধারণা। সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে আজান-ইকামতের মাধ্যমে তার কানে এ আওয়াজ পৌঁছে দেওয়া হয়, আল্লাহ এক। মুহাম্মদ সা. আল্লাহর রাসুল। নামাজ ও কল্যাণের পথে এসো। আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই। তাওহিদ ও রেসালাতের দাওয়াত পেয়ে যায় শিশু দুনিয়ায় এসেই। এ সুন্নাত আমলে হেলা করা উচিত নয়।
আঁতুড়ঘর কি চল্লিশ দিন নাপাক থাকে?
প্রসূতি মায়ের কি চল্লিশ দিন নামাজ ইবাদত মাফ? অনেকে মনে করে সন্তানপ্রসব পরবর্তী ৪০ দিন প্রসবগৃহ নাপাক থাকে। আবার অনেকের ধারণা , সন্তানপ্রসব পরবর্তী ৪০ দিন প্রসূতি মায়ের ইবাদত মাফ। নামাজ-রোজা করতে হয় না। উভয় ধারণাই ভুল। সন্তান প্রসব পরবর্তী মহিলাদের রক্তক্ষরণকে নিফাস বলে। এ নিফাস বা রক্তক্ষরণের সর্বোচ্চ সীমা ৪০ দিন। সর্বনিম্নের কোন সীমা নেই। এক মুহূর্ত বা এক ঘণ্টাও হতে পারে। যাদের রক্তক্ষরণ ৪০ দিনের কম হবে তারা চল্লিশ দিনের আগে যে দিন রক্তক্ষরণ বন্ধ হবে সেদিন থেকেই নামাজ-রোজা শুরু করবে। রক্ত নাপাক। ঘরে রক্ত পড়লে মুছে বা ধুয়ে ফেললে ঘর পবিত্র হয়ে যায়। ৪০ দিন ঘর নাপাক থাকার কোন কারণ নেই।
গর্ভবতী নারী চন্দ্র বা সূর্য গ্রহণের সময় কিছু কাটলে সন্তান কি কানকাটা, ঠোটকাটা হয়?
গর্ভবতী নারী চন্দ্র বা সূর্য গ্রহণের সময় কিছু কাটলে সন্তান কানকাটা , ঠোটকাটা হওয়া একেবারেই ভুল কথা। এটা সমাজের ভুল ধারণা। সন্তান ঠোটকাটা বা কানকাটা হওয়ার সাথে চন্দ্র বা সূর্য গ্রহণে কিছু কাটাকাটির সাথে কোন সম্পর্ক নেই।
মহিলাদের জবাইকৃত পশু হালাল নয় কি?
মহিলাদের জবাইকৃত পশু ভক্ষণ হালাল। অনেকে মনে করে, মহিলাদের জবাই করা পশু খাওয়া হারাম। এটা ভুল বিশ্বাস। পুরুষের জবাইকৃত পশু যেমন হালাল তেমনি মহিলার জবাইকৃত পশুও হালাল। প্রয়োজনবশত মহিলারাও জবাই করতে পারে।
মহিলাদের ইতিকাফ প্রসঙ্গেঃ
সকলে পড়ুণ অনেক ফায়দা হবেঃ
___শেখ ফয়সাল মারুফ
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ করার কথা বললে তিনি তাঁর কাছে (ইতিকাফ করার) অনুমতি চান। হুজুর অনুমতি প্রদান করেন। হাফসা রা. আয়েশার কাছে হুজুরের অনুমতি এনে দেয়ার অনুরোধ করলে তিনি তার জন্যও অনুমতি এনে দেন। এ দেখে যয়নব বিনতে জাহাশ রা. (পর্দা টানিয়ে) ঘর বানানোর নির্দেশ দিলেন। নির্দেশ পালন করে ঘর বানানো হয়।
আয়েশা রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাত সম্পন্ন করে নিজ ঘরে প্রবেশকালে এসব ঘর দেখতে পান। জিজ্ঞেস করেন, এগুলো কী? সাহাবিরা জানান, আয়েশা, হাফসা ও যয়নবের ঘর। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে উঠেন- ‘এর মধ্যেই কি তোমরা নেকি দেখলে? আমি ইতিকাফই করব না।’ একথা বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইতিকাফ ছেড়ে চলে গেলেন। অতপর রমজান বিদায় নিয়ে শাবান এলে তিনি দশ দিন ইতিকাফ করেন।
মুসলিমের এক রেওয়াতে আছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইতিকাফ করার ইচ্ছা করতেন। ফজর নামাজ পড়তেন তারপর ইতিকাফের স্থানে প্রবেশ করতেন। একদা তিনি মসজিদে পর্দা টানাতে আদেশ করলেন। তেমনি করা হলো। তিনি ইচ্ছে করলেন রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ করার। যয়নাব রা.-ও পর্দা টানিয়ে দিতে বললেন, পর্দা টানানো হলো।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অন্য বিবিগণও পর্দা টানানোর নির্দেশ দিলে তা পালন করা হলো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাজ সমাপান্তে যখন পেছন ফেরেন তো এসব পর্দা দেখতে পান। বলে উঠেন, এতেই কি তোমরা পুণ্য দেখলে? এ বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের পর্দা খুলে ফেলার নির্দেশ দেন এবং ইতিকাফ ছেড়ে দেন। তারপর শাওয়ালের প্রথম দশকে তা পূর্ণ করেন।
হাদিস থেকে যা শিখলাম :
১. মহিলাদের জন্য মসজিদে ইতিকাফ করার অনুমতি রয়েছে যদি ফিতনা থেকে নিরাপদ হয়।
২. মহিলাদের জন্য স্বামীর অনুমতি ছাড়া ইতিকাফ করা বৈধ নয়। এ ব্যাপারে সকল আলেম একমত। অনুমতি ছাড়া যদি ইতিকাফ করে তাহলে স্বামীর জন্য তাকে ইতিকাফ থেকে বের করে আনার অনুমতি রয়েছে। স্বামী ইতিকাফের অনুমতি দেয়ার পর যদি দেখে কোনো কারণে স্ত্রীকে বের করে আনা উচিৎ তাহলে সে তা করতে পারে।
৩. শুরু করার পর বিশেষ কোনো প্রয়োজন দেখা দিলে ইতিকাফ ছেড়ে দেয়া জায়িজ আছে।
৪. স্বামীর জন্য নিজ স্ত্রী ও পরিবারকে আদব শিক্ষা দেয়া, তাদের কিছু সংশোধনের প্রয়োজন হলে সংশোধন করে দেয়া জায়িজ আছে। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ত্রীদের ইতিকাফের অনুমতি দেয়ার পর পরস্পর অনভিপ্রেত প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়ার আশংকায় তা প্রত্যাহার করে নেন।
৫. নফল ইবাদত শুরু করার পর তা সম্পন্ন করতে না পারলে তার কাজা করার নিয়ম রয়েছে।
৬. অতিরিক্ত আভিজাত্য দেখানো কুপরিনতি বয়ে আনে কারণ তা হিংসা থেকে সৃষ্ট। আর হিংসা করা মহাপাপ।
৭. ভালো কাজও ছেড়ে দেয়া জায়িজ আছে যদি তাতে কোনো কল্যাণ নিহিত থাকে।
৮. ইতিকাফকারীর জন্য মসজিদে নির্জনে ইবাদত-বন্দেগির সুবিধার্থে একটি জায়গা নিজের জন্য বরাদ্দ করে নেয়া জায়িজ আছে যদি এতে মুসল্লিদের সমস্যা না হয়। আর জায়গাটি নির্ধারণ করা চাই মসজিদের খালি অংশে বা শেষ প্রান্তে যাতে মুসল্লিরাও সমস্যা বোধ না করে আবার ইতিকাফকারীর নির্জনতাও পূর্ণতা পায়।
৯. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর সুন্দর আখলাক এবং স্ত্রীদের সঙ্গে তার চমৎকার হৃদ্যতা। কারণ তিনি যখন তাদেরকে ইতিকাফ করতে বারণ করেন শিক্ষা দেয়ার জন্য এবং তাদের ‘রিয়া’র আশংকায়, নিজেও তাদের সঙ্গে ইতিকাফ ছেড়ে দেন। অথচ তিনি তাদেরকে বারণ করে নিজে ইতিকাফ করতে পারতেন। কিন্তু তা করেন নি তাদের প্রতি আন্তরিকতা ও সহমর্মিতা দেখিয়ে এবং তাদের মন খুশি করার জন্য। এভাবেই প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য স্ত্রীকে শাসন করার সময় লক্ষ্য রাখা যে শাসন যেন প্রতিশোধের পর্যায়ে চলে না যায় এবং দাম্পত্য ভালোবাসায় ব্যাঘাত না ঘটায়।
১০. ইতিকাফরত মহিলার যদি মাসিক আরম্ভ হয় তাহলে তিনি ইতিফাক ছেড়ে চলে যাবেন এবং পবিত্র হওয়ার পর বাকিটুকু পুরো করবেন।
১১. যদি কোনো ব্যক্তি নফল ইবাদতের নিয়ত করে কিন্তু তা এখনো শুরু করেনি তাহলে তার জন্য সুযোগ আছে ইবাদতটি একেবারে ছেড়ে দেয়ার এবং ইচ্ছা করলে পরবর্তী করার।
১২. যে ব্যক্তি কোনো ইবাদতে রিয়ার উপস্থিতি টের পাবে তার জন্য সে ইবাদত পরিহার করা জায়িজ আছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর আমলই তার প্রমাণ। কেননা তিনি স্ত্রীদের মাঝে রাসূলের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের ধরন দেখে তাতে রিয়ার সম্ভাবনায় ইতিকাফ ভঙ্গ করান। আর নিজের ইতিকাফটিকেও পিছিয়ে দেন।
১৩. ইতিকাফকালে যথাসম্ভব স্ত্রী-পরিজন এবং মানব সঙ্গ থেকে দূরে থাকা মুস্তাহাব। তবে জামাতে সালাত আদায়, খাওয়া বা অন্য কোনো প্রয়োজনে এতে দোষ নেই।
১৪. ইতিফাক করা সুন্নত রমজান মাসে। তবে অন্য মাসেও ইতিকাফ করা যায়। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাওয়ালেও ইতিকাফ করেছেন। (রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়াহ আর অন্য মাসে নফল ও কাজা ইতিকাফ করা যায়।)
১৫. মসজিদের ঘরে যার গেট মসজিদের ভেতরে ইতিকাফ করা যাবে। গেট যদি মসজিদের বাইরে হয় তাহলে সে ঘরে ইতিকাফ করা যাবে না।
রেফারেন্সঃ…………….
. বুখারি : ১৯৪০
. মুসলিম : ১১৭২
. শরহুন নাবাবি : ৮/৭০, আল মুফহিম : ৩/২৪৮
. ইবনে মুলকিন র. এ ব্যাপারে সকলেন ইজমা নকল করেছেন তদীয় কিতাব ‘শরহুল উমদা’তে : ৫/৪২৯
. শরহুন নাবাবি : ৮/৭০, মুফহিম : ৩/২৫৪, ফতহুল বারি : ৪/২৭৭
. শরহুন নাবাবি : ৮/৬৯ মুফহিম : ৩/২৪৫
. প্রাগুক্ত
. শরহু ইবনে বাত্তাল : ৪/১২৮, ফতহুল বারি : ৪/২৭৭
. শরহুন নাবাবি : ৮/৬৯
. ইবনে বাত্তাল : ৪/১৭৪, মুগনি : ৪/৪৮৭
. শরহু ইবনে বাত্তাল : ৪/১৮৩
. প্রাগুক্ত
. শরহু ইবনে মুলকিন : ৫/৪৩৫
. ফাতাওয়ায়ে লাজনা : ৬৭১৮
তিনি আমাদের রাসূল (সঃ)
শেখ ফয়সাল মারফ: কেন আল্লাহ মুহাম্মাদ ﷺ কে রাসূল বানালেন? কেন উনাকেই আল্লাহ সিলেক্ট করলেন? তিনি আমাদের রাসূল ﷺ। যিনি আগে পরের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়ার পরও আল্লাহর কাছে দিনে শতবার তাওবা করতেন। যিনি মাঝরাতে তাহাজ্জুতের সালাতে দাঁড়াতেন, এই দাঁড়ানো এত দীর্ঘ হত যে পা ফুলে যেত, যখন উনার স্ত্রী প্রশ্ন করতো আপনার এত কষ্ট করার কি দরকার, আপনার তো আগে পরের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়েছে, তিনি বিনয়ের সাথে উত্তর দিতেন, আমি কি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ হবো না!!
.
তিনিই আমাদের রাসূল ﷺ। যিনি সন্তানের মৃত্যুতে কেঁদেছেন, স্ত্রীদের সাথে অভিমান করে বাসা থেকে বের হয়ে গেছেন, যিনি নিজের ছেঁড়া জামা নিজের হাতে সেলাই করেছেন, যিনি যুদ্ধ করেছেন, যুদ্ধের ময়দানে আল্লাহর রাস্তায় নিহত হওয়া সঙ্গীদের মাথা কোলে নিয়ে অঝোরে কেঁদেছেন, নিজে কবরে নেমে তাদের কবরস্থ করেছেন, যিনি কিশোরী স্ত্রীর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করেছেন, প্রিয়তম স্ত্রী খাদিজার মৃত্যুতে ব্যথিত হয়েছেন, মাঝরাতে তার কবরের পাশে গিয়ে অঝোরে কেঁদেছেন। তিনি আমাদের মতই একজন মানুষ, তিনি আমাদের রাসূল ﷺ।
.
হ্যাঁ তিনিই আমাদের রাসূল ﷺ। দিনের পর দিন যার বাড়িতে চুলায় আগুন জ্বলতো না। পানি আর খেজুর খেয়ে মাসের পর মাস চলে যেত। তিনি বসে ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনে উমারের সাথে। তাদের সামনে পড়ে ছিল একটা খেজুর, পচা খেজুর। রাসুল ﷺ সেটা তুলে নিলেন, পচা অংশটা পরিষ্কার করলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে উমারকে জিজ্ঞেস করলেন তিনি খাবেন কিনা। আবুদল্লাহ ইবনে উমার নারাজি হলেন। রাসূল ﷺ বললেন, ইয়া আব্দুল্লাহ তোমার কাছে এটা খাওয়া না খাওয়ার অপশন, আর আজ চারদিন হল তোমার রাসূলের পেটে কিছু পড়েনি। তিনিই আমাদের রাসুল ﷺ। আবু আইয়ুব আল আনসারির বাড়ীরে দাওয়াত খেতে বসে একটা রুটির উপর এক টুকরো গোশত দিয়ে আবু আইয়্যুবকে বললেন, যাও এটা আমার কন্যা ফাতিমাকে একটু দিয়ে এসো, সে এমন খাবার অনেক দিন খায়নি। তিনিই আমাদের রাসূল ﷺ। ক্ষুধার্ত সাহাবী এসে ক্ষুধার জ্বালায় নিজের পেটে পাথর দেখালে তিনি নিজের জামা তুলে দেখালেন তার পেটে এর চেয়েও বেশী পাথর বাঁধা। তিনিই আমাদের রাসুল ﷺ। যিনি কোনদিন এক তরকারীর বেশী দিয়ে আহার করেননি। যার একটার বেশী জামা ছিল না, যার ঘর ছিল মাটির, বালিশ ছিল খেজুরের ছোবলা। আল্লাহর কসম! তিনিই আমাদের রাসুল ﷺ।
.
তিনিই আমাদের রাসূল ﷺ। যিনি বদরের প্রান্তরে অল্প কিছু আল্লাহর বান্দা নিয়ে বিশাল শত্রু বাহীনীর মোকাবেলা করতে গিয়েছেন, মুসলিমদের বিজয়ের জন্য আল্লাহর কাছে সেজদায় পড়ে কেঁদেছেন যতক্ষণ না আল্লাহ উনাকে সুসংবাদ না দেন, তিনিই আমাদের রাসূল ﷺ। যিনি তাইফের প্রান্তরে প্রস্তরাঘাতে ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত হয়েও আল্লাহর কাছে হাত উঠিয়ে বলেছেন, হে আল্লাহ তারা অবুঝ, তুমি তাদেরকে ক্ষমা করে দাও। তিনিই আমাদের রাসূল ﷺ যিনি নিজের পিতামাতার জন্য দোয়া করার অনুমতি পাননি। যিনি মৃত্যুর সময়ও চেতন অবচেতন অবস্থায় বারবার আওড়িয়ে যাচ্ছিলেন, উম্মাতি উম্মাতি উম্মাতি…। তিনিই আমাদের রাসুল ﷺ, সাহাবীদের সাথে চলতে গিয়ে তিনি কেঁদে উঠলেন, সাহাবীরা কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমি আমার ভাইদের জন্য কাঁদছি। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ, আমরা কি আপনার ভাই নই? তিনি জবাব দিলেন, তোমরা তো আমার সাথী, আমার ভাই হল তারা যারা আমার পরে আসবে আর আমাকে না দেখেই আমার উপর ঈমান আনবে। হ্যাঁ তিনিই আমাদের রাসূল ﷺ, যিনি আমার আপনার জন্মের আগেই আমাদের জন্য চোখের পানি ফেলেছেন।
.
তিনিই আমাদের রাসূল ﷺ। যার আত্মীয় স্বজন গোত্রীয় লোকেরাই উনাকে হত্যার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। যিনি আল্লাহর দ্বীনের জন্য ঘর বাড়ী আত্মীয় স্বজন সবকিছু ছেড়ে গেছেন, যিনি স্বজাতির হাত থেকে বাঁচতে পাহাড়ে গুহায় ঘুরে বেড়িয়েছেন, মুশরিকরা যখন একের পর এক ক্ষমতা, সম্পদ, নারীর লোভ দেখাচ্ছিল তিনি তাদের বলেছিলেন, আমার এক হাতে চন্দ্র আর আরেক হাতে সূর্য এনে দিলেও আমি এই সত্য প্রচার থেকে বিরত হবো না। হয় এতে বিজয় লাভ করব নয়তো এই পথেই ধ্বংস হয়ে যাবো। তিনিই আমাদের রাসূল ﷺ।
.
তিনিই আমাদের রাসূল ﷺ। যার জন্য মানুষ প্রাণ দিয়েছে অকাতরে। যুদ্ধের আগে কিছুই দিতে না পেরে এক মা তার বাচ্চাকে রাসূলের সামনে তুলে দিয়ে বলছিলেন, যখন আপনাকে শত্রুরা আঘাত করবে আপনি আমার এই সন্তানকে ঢাল হিসেবে ধরবেন, আমার সন্তান ছিন্ন ভিন্ন হবে কিন্তু অন্তত আমার রাসূল শত্রুর আঘাত থেকে রক্ষা পাবে।
.
হ্যাঁ তিনিই আমাদের রাসূল ﷺ, আবু আইউব আল আনসারীর বাড়িতে যেদিন তিনি মেহমান হলেন, রাসূল ﷺ নিচ তলায় আর তারা স্বামী স্ত্রী উপর তলায়, এটা বেয়াদবি হয়ে গেল কিনা এই চিন্তায় সারারাত নির্ঘুম কাটিয়েছেন । তিনিই আমাদের রাসূল ﷺ, যার জন্য সাহাবীরা আপন পিতা ভাইয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধলব্ধ গনীমাহ না পেয়ে মন খারাপ করা আনসারদের যখন তিনি বললেন, এটাই কি তোমাদের জন্য উত্তম নয় যে তারা দুনিয়া পেল আর তোমরা তোমাদের রাসূলকে পেলে তখন চারিদিকে কান্নার রোল পড়ে গিয়েছিল। হ্যাঁ তিনিই আমাদের রাসূল ﷺ। যিনি খোদ অমুসলিমদের কাছেও আস্থার প্রতীক ছিলেন, অমুসলিমরা তার কাছে বিচার ফয়সালার জন্য আসতো। তারা জানতো মুহাম্মাদ আর যাই হোক অবিচার করবে না।
.
তিনিই আমাদের রাসূল ﷺ। যিনি আমাদের জন্য হাশরের মাঠে আল্লাহর কাছে শাফায়েত করবেন, আমাদেরকে হাউজে কাউসারের পানি পান করাবেন। হ্যাঁ তিনিই আমাদের রাসূল ﷺ।
.
আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন। আমরা এই রাসূলের প্রতি আমাদের হক্ব আদায় করতে পারিনি। তার ইজ্জতের যথাযোগ্য মর্যাদা দিতে পারিনি। আসসালামুয়ালাইকা ইয়া রাসূলুল্লাহ। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
আল্লাহুম্মা সল্লি ওয়া সাল্লিম ‘আলা নাবীয়্যিনা মুহাম্মাদ
শেখ ফয়সাল মারফ
রোযার পুরস্কার আল্লাহ স্বয়ং নিজে প্রদান করবেনঃ
একটি হাদীসে কুদসীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
«كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ لَهُ إِلَّا الصِّيَامَ فَإِنَّهُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ»
আল্লাহ বলেন, ‘‘বনী আদমের সকল আমল তার জন্য, অবশ্য রোযার কথা আলাদা, কেননা রোযা আমার জন্য এবং আমিই এর পুরস্কার দিব।’’ (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮০৫, ৫৫৮৩ ও সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৬০)
শেখ ফয়সাল মারুফ
গোরস্থান মাদ্রাসা- ভোলা।
হযরত কাব (রাঃ) বলেন, অামি রসূল (সাঃ) কে এরশাদ করিতে শুনিয়াছি যে, প্রত্যেক উম্মতের জন্য একটি ফেতনা থাকে ।( যাহাতে লিপ্ত হইয়া সেই উম্মত ফেতনায় পতিত হয়।) অামার উম্মতের ফেতনা হইল, মাল । (মিশকাতঃ তিরমিযী)
রসূল (সাঃ) এর পবিত্র বানী সম্পূর্ন সত্য ।
দৈনন্দিন জীবনে অামরা দেখিতেছি যে, সম্পদের প্রাচুর্যের কারনে যত বেহায়াপনা, বিলাসিতা, সুদ, যেনা~ব্যাভিচার, সিনেমা দেখা, জুয়া খেলা, জুলুম অত্যাচার, মানুষকে তুচ্ছ মনে করা , অাল্লাহর দ্বীন হইতে গাফেল হওয়া, এবাদত বন্দেগীতে অমনোযোগী হওয়া , দ্বীনের মেহনতের জন্য সময় না পাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি সংঘটিত হয়।
পক্ষান্তরে দরিদ্র অবস্থায় উহার এক তৃতীয়াংশ বা এক চতুর্থাংশ এমনকি দশভাগের একভাগও হয়না।
সম্পদের প্রাচুর্যের মধ্যে এই সব কিছু না হইলেও অন্ততঃ সর্বদা সম্পদ বৃদ্ধি করার ফিকির তো লাগিয়াই থাকে। মাত্র তিশ হাজার টাকা কাহাকেও দিয়া দিন, তারপর এই টাকা কোন কাজে লাগাইয়া বৃদ্ধি করিবার ফিকির তাহার সহিত প্রতি মুহুর্তে এমন ভাবে লাগিয়া যাইবে যে, কোথায় যাইবে ঘুম, কোথায় যাইবে বিশ্রাম, কোথায় নামায রোজা, কোথায় হজ্জ যাকাত, এখন রাত দিন শুধু দোকান বাড়াইবার ফিকিরে মত্ত থাকিবে। দোকানের ব্যাস্ততা, না কোন দ্বীনি কাজে শরীক হইতে দিবে, না দ্বীনের জন্য কোথাও বাহিরে যাওয়ার সময় হইবে।
কেননা , ইহাতে দোকানের ক্ষতি হইয়া যাইবে। সব সময় এই চিন্তায় চিন্তিত থাকে যে, কোন্ ব্যাবসা এমন, যাহাতে লাভ বেশী এবং উদ্দেশ্য সফল হয়।
এই জন্যই (সাঃ) এরশাদ করিয়াছেন, যাহা কয়েকটি হাদিসে বর্নিত হইয়াছে, যদি কোন মানুষ সম্পদের দুইটি ময়দান পাইয়া যায়, তবু তৃতীয়টির তালাশে লাগিয়া যায়। মানুষের পেট একমাত্র (কবরের ) মাটিই ভরিতে পারে । (মিশকাত)
এই জন্য রসূল (সাঃ) দোয়া করিয়াছেন, হে অাল্লাহ ! অামার সন্তান সন্ততিকে প্রয়োজন পরিমান রিজিক দান কর। অর্থাৎ , প্রয়োজন পরিমাণ হয়। অতিরিক্ত যেন একেবারেই না হয়। কেননা, ইহাতে অামার অাওলাদ সম্পদের চক্করে ফাসিয়া যাইবে।
রসূল (সাঃ) যেহেতু বারবার সম্পদের ফিতনা এবং উহার ক্ষতি হইতে সতর্ক করিতেছেন, কাজেই উহার ক্ষতি হইতে প্রত্যেক ব্যাক্তিকে অবশ্যই অনেক বেশী ভয় করা উচিৎ এবং শরীয়তের দেওয়া বিধি নিষেধ মানিয়া লওয়া জরুরী।
অতএব, এই সকল বিধি নিষেধের প্রতি অত্যান্ত গুরুত্ব প্রদান করিতে হইবে। সম্পদের মধ্যে অাল্লাহ তায়ালার হক সমূহ অাদায়ের ব্যাপারে অনেক বেশী ফিকির করিতে হইবে ।
স্বয়ং রসূল (সাঃ) এরশাদ করিয়াছেন, ধন~সম্পদ ঐ ব্যাক্তির জন্য ক্ষতিকর নয় , যে অাল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে। (মিশকাত)
( কারন সম্পদের মধ্যে দ্বীনি উপকারীতাও রয়েছে।যেমন সাপের মধ্যে বিষ রহিয়াছে এবং বিষ প্রতিষেধকও রহিয়াছে)
অাল্লাহ তায়ালা অামাদেরকে সম্পদের ক্ষতিকর দিক থেকে হেফাজত করুন এবং উহার হকসমূহ অাদায় করার তৌফিক দান করুন।