রবিবার ● ২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
প্রথম পাতা » জাতীয় » জাতীয় পরিচয়পত্রে আঙুলের ছাপ না থাকলে করণীয়
জাতীয় পরিচয়পত্রে আঙুলের ছাপ না থাকলে করণীয়
ঢাকা: দেশে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা প্রায় দশ কোটি। এদের মধ্যে এখনো জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) হাতে পায়নি প্রায় এক কোটি নাগরিক। আবার যারা পেয়েছে তাদের অনেকের এনআইডিতেই রয়েছে নিজের নাম, বাবা বা মায়ের নাম অথবা জন্মতারিখে ভুল। এ ভুলগুলো সংশোধন করতে দেশের এই বিপুল সংখ্যক নাগরিককে পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। এসবের মধ্যেই মোবাইল সিম নিবন্ধন করতে নাগরিকদের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে আঙুলের ছাপ নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আর এ কাজ করতে গিয়ে নতুন করে বিড়ম্বনায় পড়েছেন নাগরিকরা।
বায়োমেট্র্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে অনেক এনআইডি কার্ডধারী নাগরিকেরই কার্ডের জন্য সংরক্ষিত তথ্যের মধ্যে আঙুলের ছাপ নেই। অথচ এনআইডির জন্য দেওয়া তথ্যের মধ্যে আঙুলের ছাপও ছিল। নতুন করে এ ভোগান্তিতে পড়া নাগরিকরা প্রশ্ন তুলেছেন- তবে কি তাদের এনআইডি কার্ড বাতিল?
বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিমকার্ড রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে এ রকম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন সীমা (ছদ্মনাম)। তিনি পরিবর্তন ডটকমকে জানান, আমি আমার মোবাইল সিম নিবন্ধন করতে গেলে সেখানে দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা আমার আইডি কার্ড (এনআইডি) নিয়ে পরীক্ষা করে বললেন, আমার কার্ডে আঙ্গুলের ছাপ নেই, তাই এটা চলবে না। আমার আঙুলের ছাপ দেওয়ার জায়গায় আইডি কার্ডে লাল কালি দিয়ে লেখা-‘আঙুলের ছাপ নাই’। তিনি আমাকে আরো বললেন, নির্বাচন কমিশনে গিয়ে ছাপ দিয়ে আসতে হবে। অথবা অন্য কারো আইডি কার্ড দিয়ে ওই ব্যক্তির নামেই সিমটি নিবন্ধন করানো যাবে। এই বলে তিনি আমাকে ফরম দিলেন।
সীমা প্রশ্ন রাখেন, আমি আঙুলের ছাপ দিয়েইতো তখন নিবন্ধন করেছিলাম। কিন্তু এখন সেখানে আমার আঙুলের ছাপ নেই। তাহলে আমার আইডি কার্ড কি বাতিল? এতোদিন যে বহন করলাম?
শুধু সীমার একার নয়, ভোগান্তিতে পড়া দেশের লাখো নাগিরেকের মনে এখন এই প্রশ্ন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দিন জানান, মোবাইল কোম্পানি ও বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনকে (বিটিআরসি) এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া আছে। যদি কোনো নাগরিকের আঙুলের ছাপ নিয়ে কোনো সমস্যা দেখা দেয় তাহলে তাকে নিজের উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করার জন্য বলতে বলা হয়েছে এ নির্দেশনায়। নাগরিকের এনআইডিতে আঙুলের ছাপ আছে কি না, সেটি মোবাইল কোম্পানিগুলো পরীক্ষা করছে। কিন্তু অনেক সময় তাদের ডিভাইস হয়তো কাজ করে না, বা অনেকের আঙুলের ছাপ অস্পষ্ট থাকে অথবা একেবারেই থাকে না। এমন সমস্যাতেও নাগরিকরা যেন তাদের নিজ নিজ উপজেলায়/থানা অফিসে যোগাযোগ করেন।
তিনি বলেন, এ নিয়ে নাগরিকদের দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কোনো এনআইডি কার্ডধারী নাগরিকের আঙুলের ছাপ দেওয়া আছে কি না, সেটি তিনি নিজ উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিসে গেলেই জানতে পারবেন। আমাদের প্রত্যেক উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে এ রকম নির্দেশনা দেওয়া আছে। সেখানে পরীক্ষা করে যদি দেখা যায় যে তার আঙুলের ছাপে সমস্যা রয়েছে বা ছাপ নেই, তাহলে সেখানেই তিনি আঙুলের ছাপ দিতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে জানা যায়, আঙুলের ছাপে সমস্যা রয়েছে এমন কার্ডধারী নাগিকের সংখ্যা প্রায় এক কোটির মতো। এ সমস্যার সমাধান নাগরিকরা করতে পারছেন না, কারণ তারা জানেনই না যে তাদের আঙুলের ছাপ নেই। এদিকে ইসি কিছুদিনের মধ্যে নাগরিকের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দিতে যাচ্ছে। এই স্মার্টকার্ড তুলে দেওয়ার আগে এনআইডির তথ্য যাচাইয়ের বিষয়ে ইসির ব্যাপক প্রচারণা উচিত ছিল, যাতে প্রত্যেক নাগরিক তার দেওয়া তথ্য ঠিক আছে কি না তা যাচাই করে দেখতে পারেন। কিন্তু ইসি এ ব্যাপারে তেমন কোনো কাজই করছে না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো ভোটারদের হাতে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তুলে দেওয়া হয়।