শনিবার ● ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » বিশেষ প্রতিবেদন » বিমানে অতিরিক্ত মাল বহন : রাজস্ব ক্ষতি ৭৩০ কোটি টাকা
বিমানে অতিরিক্ত মাল বহন : রাজস্ব ক্ষতি ৭৩০ কোটি টাকা
ঢাকা • হিসাবের বাইরে অতিরিক্ত মালামাল বহন করে প্রতিদিন দুই কোটি টাকার রাজস্ব জালিয়াতির মাধ্যমে বিমানের কার্গো শাখা আত্মসাৎ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিমানের ওই শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ অর্থ আত্মসাৎ করছেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
হিসাবের বাইরে অতিরিক্ত মালামাল বহনের মাধ্যমে প্রতিদিন দুই কোটি টাকা হিসাবে বছরে প্রায় ৭৩০ কোটি টাকার রাজস্ব আত্মসাৎ করা হচ্ছে। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ সব অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে।
অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের উপ-পরিচালক মির্জা জাহিদুল আলম অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা ও পরিচালক মো. নূর আহাম্মদ তদারককারী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন। অনুসন্ধানের শুরুতে সংশ্লিষ্ট কিছু নথিপত্র তলব করা হয়েছে। দুদক সূত্র এ সব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
অভিযোগে বলা হয়, হিসাবের বাইরে এই অতিরিক্ত মাল পাঠানো হয়ে আসছে বিমানের কার্গো শাখা থেকে। অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনের ভাড়া বাবদ প্রতিদিন প্রায় দুই কোটি টাকা খোয়া যাচ্ছে। যা কার্গো শাখার জিএম থেকে পিয়ন পর্যন্ত সবাই ভাগবাটোয়ারা করে নেন।
চলতি বছরের ৩ জুলাই লন্ডনে ফাঁস হয় ভয়াবহ জালিয়াতির এই ঘটনা। বিমানের লন্ডন ফ্লাইটে সাড়ে তিন হাজার কিলোগ্রাম অতিরিক্ত কার্গো মাল ধরা পড়েছে। পাইলটের দুরদর্শিতায়। ওই দিন (৩ জুলাই) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সকাল ১০টায় ‘বিজি ০০১’ ফ্লাইটটি ঢাকা ছেড়ে যায়। এতে ছিলেন ক্যাপ্টেন ইশতিয়াক ও ক্যাপ্টেন নাদিম। যাত্রী ছিলেন ৪৯ জন। ফ্লাইট টেক অফ করার আগে ক্যাপ্টেন ইশতিয়াক লোড শিটে দেখতে পান, যে সংখ্যক যাত্রী ও কার্গো আছে তা খুবই স্বাভাবিক। তাতে জ্বালানী তেলও খুব বেশি পোড়ার মতো নয়। কিন্তু আকাশে ওঠার পর তিনি দেখতে পান এ পরিমাণ ওজনের বিপরীতে জাহাজের যে পরিমাণ জ্বালানী তেল পোড়ার কথা, তার চেয়েও বেশি তেল পুড়ছে। ঢাকা থেকে লন্ডনে দশ ঘণ্টা উড্ডয়নের পর হিথ্রো বিমানবন্দরে যাত্রীরা নেমে গেলে ক্যাপ্টেন ইশতিয়াক ওই ফ্লাইটের কার্গো মাল ওজন করান। তখন দেখতে পান ঢাকা থেকে দেওয়া হিসাবের চেয়েও তিন হাজার ৩৪৪ কেজি বেশি ওজনের কার্গো মাল। যে কারণে অতিরিক্ত জ্বালানী তেল পুড়েছে। অভিযোগে আরও বলা হয়, লোডশিটের বাইরে জালিয়াতির মাধ্যমে এ পরিমাণ কার্গো বহন করাটা শুধু বাণিজ্যিকভাবে বিমানকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, এতে ওই ফ্লাইটের নিরাপত্তাও হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। হিসাবের বাইরে এ পরিমাণ কার্গোর জন্য যে পরিমাণ জ্বালানী তেল দরকার, সেটা তো তেলের প্রয়োজনীয় বরাদ্দ থেকে পুড়েছে। যদি এ ধরনের ফ্লাইটকে কোথাও কোনো খারাপ আবহাওয়া বা অন্যকোনো কারণে আকাশে অপেক্ষা করতে হয়— তবে সেক্ষেত্রে ভয়াবহ বিপর্যয় ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর থাকবে না। এমনই নিরাপত্তা হুমকির মুখেই কার্গো বহন করা হচ্ছে! শুধু লন্ডন নয়, প্রতিদিনই প্রতিটি আন্তর্জাতিক রুটে এভাবে অতিরিক্তি কার্গো মাল বহন করে বিমানের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে অভিযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ক্ষমতার অপব্যবহার করে শুধু বিমানের বাণিজ্যিক ক্ষতিই নয় একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের জীবনও হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। কমিশন এ অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। শিগগিরই সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হবে।’ এ বিষয়ে জানতে জাইলে বিমানের জিএম (পিআর) খান মোশাররফ হোসেন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি এতটুকু বলেন, ‘বিষয়টি আমার আরও ভালভাবে জানতে হবে। এরপর এ বিষয়ে কথা বলা যাবে।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিমানকে রক্ষার স্বার্থে এ জালিয়াতি চক্রের সুষ্ঠু বিচার হওয়া উচিত।’