

সোমবার ● ২৯ জুলাই ২০১৯
প্রথম পাতা » কৃষি » লালমোহনে ধান কিনছে না খাদ্য গুদাম, বিপাকে কৃষক
লালমোহনে ধান কিনছে না খাদ্য গুদাম, বিপাকে কৃষক
মো. সালাম সেন্টু, লালমোহন: ভোলার লালমোহনে সরকারি খাদ্য গুদামে ধান ক্রয় না করায় বিপাকে পড়েছেন উপজেলার কৃষকরা। তাদের অভিযোগ খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার নির্দেশ অনুযায়ী ধান শুকিয়ে ও পরিস্কার করার পর হঠাৎই ধান কিনবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মো. জলিল শিকদার। ফলে ধার দেনার চিন্তা আর হতাশার কালো মেঘ নেমে এসেছে তাদের পরিবারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে লালমোহন উপজেলায় ১০৪০ টাকা মণ দরে ৯৪৯ টন ধান কেনার বরাদ্দ দেয় সরকার। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ার আগে হঠাৎতই ধান সংগ্রহ কার্যক্রম বন্ধ রাখায় বিপাকে পড়েছেন এ অঞ্চলের কার্ডধারী কৃষকরা।
কৃষকদের অভিযোগ, খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা কৃষকদের ধান ক্রয় না করায় তাদের অসহায়ত্বদের সুযোগ নিয়ে স্থানীয় বেপারীরা অল্প দামে ধান ক্রয় করছে। আবার তারাই খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে কৃষক সেজে ধান বিক্রি করছে। বাজার দরে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায় ধান কিনে গুদামে এক হাজার ৪০ টাকা দরে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন বেপারীরা।
উপজেলার কালমা এলাকার শেখ ফরিদ, কুদ্দুস, আবদুল্লাহ, কবির, রহিমসহ একাধিক কৃষক জানান, কৃষকদের লোকসানের হাত থেকে বাঁচাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সরকারি খাদ্য গুদামগুলোকে কৃষকের ধান কেনার কথা বললেও লালমোহন খাদ্য গুদামে ধান না কেনায় আমরা বিপাকে পড়েছি।
জানা যায়, ওই এলাকার প্রায় ২০ জন কৃষককে ধান শুকিয়ে প্রস্তুত করা কথা বলেন লালমোহন খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা। সেমতে ধানগুলো শুকিয়ে গুদামজাত যোগ্য করে প্রস্তুত করে রাখেন কৃষকরা। খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা হঠাৎই কোন কারণ ছাড়া ধান ক্রয় করবেন না বলে জানিয়ে দেয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
তারা বলেন, “ধান চাষ করেও দ-, শুকিয়েও দ-”। বাজারে মোটামুটি শুকনো ধানের দর মন প্রতি ৫০০ থেকে ৬৫০ টাকা। খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার আশ^াস পেয়ে ধানগুলো কামলা দিয়ে ভাল করে শুকাতে গিয়ে ৩ টন ধান পরিণত হয়েছে ২টনে। এখন ৫০০ টাকায় বাজারে বিক্রি করলে মূলধন থাক দুরের কথা কামলার টাকাও পরিশোধ করতে পারবোনা। আমরা কৃষকরা ধান চাষ করে যেন মহাপাপ করে ফেলেছি। সামনে একটা ঈদ আসছে । ঈদের আনন্দ থাক দুরের কথা, তিনবেলা খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকাটাই এখন দায়।
লালমোহন খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার আশ^াসে ধান শুকানো উপজেলার চরভূতা ইউনিয়নের কৃষক সিরাজসহ একাধিক কৃষক জানান, খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করাটা আমাদের জন্য স্বপ্ন দেখা ছাড়া অন্য কিছুই নয়। দুই মাস যাবৎ গুদামে আসা যাওয়া করতে করতে এখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। আমাদের চোখের সামনে অন্য লোকের ধান ক্রয় করছেন। আমাদের কে তিনি বেপারীদের সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়েছেন খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে লালমোহন খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মো. জলিল শিকদার বলেন, কৃষক ছাড়া অন্য কারো কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হচ্ছেনা। আমাদের কাছে বস্তা ছিলনা। গত ২৬ জুলাই বস্তা পেয়েছি। এছাড়াও গুদামে জায়গা স্বল্পতা ও ঈদুল আযহা উপলক্ষে বিশেষ বরাদ্দের চাল গুদামজাতে ব্যস্ত থাকায় ধান ক্রয় আপাতত বন্ধ রয়েছে। ঈদের পর থেকে আবার ধান ক্রয় করা হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ গিয়োসউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত আছি। খাদ্য গুদামে বস্তা সংকটের কারণে ধান ক্রয় বন্ধ রয়েছে। মাননীয় সংসদ সদস্যের নির্দেশ মোতাবেক কোন সিন্ডিকেটের ধান ক্রয় না করে যাতে কৃষকদের ধান ক্রয় করা হয় সে ব্যাপারে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাকে নির্দেশ করা হয়েছে।
-এফএইচ