বুধবার ● ২৫ অক্টোবর ২০১৭
প্রথম পাতা » অর্থনীতি » ২৭ বছর ধরে ক্রয় না করে ও জ্বালানী হিসেবে গ্যাস ব্যবহার করছে ভোলার মানুষ
২৭ বছর ধরে ক্রয় না করে ও জ্বালানী হিসেবে গ্যাস ব্যবহার করছে ভোলার মানুষ
এইচ এম নাহিদ : জেলা সৃষ্টির পূর্বে ভোলার আদি নাম ছিলো দক্ষিণ শাহাবাজপুর। সেই নামেই ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদ শাহাবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্র নাম দেয়া হয়েছে। ৮০’র দশকে গ্যাস কূপের সন্ধান পাওয়া গেলেও তা উত্তোলনের কাজ শুরু হয় ১৯৯৫ সনে। কিন্তু গ্যাস উত্তোলনের এতো বছর পরও সরকারিভাবে গ্যাস সংযোগ পায়নি গ্যাস কূপের আশে পাশের এলাকার কয়েক হাজার পরিবার। সরকারিভাবে গ্যাস না পেলেও ৩টি ইউনিয়নের মানুষ খুশি। কারন আল্লাহর দান এই প্রাকৃতিক গ্যাস ওই এলাকার মানুষ প্রায় ২৭ বছর ধরে বিনা পয়সায় জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করছে। এতে মাসে মাসে কোন টাকা গুণতে হয় না তাদেরকে। উল্টো অনেকেই সংসারের বাড়তি আয়ও করছে এই গ্যাস ব্যবহার করে।
ভোলা শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের প্রবেশ পথে গাছে গাছে ঘরের টিনের চালে এমনকি বিদ্যুতে তারের সাথে জড়িয়ে বহু বাড়ি-ঘরে প্রথমে মোটা তারের সংযোগ মনে হবে। একটু ভাল করে তাকালেই দেখা যাবে এটি কোন বিদ্যুতের তার নয়। মোটা পাইপ। আর ওই পাইপ দিয়েই বিভিন্ন বাসা বাড়িতে গ্যাস নেয়া হয়েছে। কিন্তু এভাবে কি গ্যাস সংযোগ দেওয়া যায় ? তার উত্তর পাওয়া যায় একটি বাড়িতে প্রবেশ করলেই। কাচিয়া ইউনিয়নের হাসান সিকদারের বাড়িতে গেলেই দেখা যায় প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনের পর স্থানীয় পদ্বতির ব্যবহার। হাসান সিকদার জানান,প্রায় ২২ বছর আগে তিনি ২২ হাজার টাকা ব্যয় করে একটি টিউব ওয়েল বসান। তার পর দেখেন ওই কল চেপে পানি উঠাতে হচ্ছে না। নিজে নিজেই ২৪ ঘন্টা পানি পড়ছে। শুধু পানিই নয়। পানির সাথে গ্যাসও উঠছে। তাই এক দিকে তার পানি ব্যবহার করছে যেমন তেমনি টিউবয়েলের পাইপের মাথায় সিলিন্ডার লাগিয়ে ওই সিলিন্ডার থেকে পাইপ লাইনের সাহয্যে বাড়িতে নিয়ে গ্যাসের চুলার সাথে সংযোগ দিয়ে জ্বালানী হিসেবে এ গ্যাস ব্যবহার করছে। ওই এলাকার গৃহবধু মোবাশ্বেরা বেগম জানান, ২৫ বছর ধরে তারা টিউবওয়লে থেকে গ্যাস উঠিয়ে বাসায় জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করছে। এতে তাদের আর কোন জ্বালানি খরচ নেই। শুধু মোবাশ্বেরা বেগমই নয়, বোরহানউদ্দিনের কাচিয়া,টবগী,পক্ষীয়া ইউনিয়নের কয়েক শত পরিবার এ ভাবেই স্থানীয় পদ্বতিতে গ্যাস ব্যবহার করছে। আবার অনেকে টিউবওয়েল থেকে গ্যাস উত্তোলন করে বিভিন্ন ছোট ছোট দোকান হোটেলে পাইপ লাইনের মাধ্যমে ভাড়া দিয়ে সংসারের খরচের জন্য বাড়তি টাকাও আয় করছে।
এদিকে গত প্রায় ৬ বছর আগে শাবাজপুর গ্যাস ফিল্ডের কূপ খননের পর উত্তোলিত গ্যাস সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানীর মাধ্যমে ভোলার পৌরসভার মাত্র ২০ কিলোমিটার এলাকায় আবাসিক সংযোগ দেওয়া হয়। ব্যাপক চাহিদা থাকায় ভোলার মানুষের দাবীর প্রেক্ষিতে নতুন করে ভোলা পৌর এলাকায় আরো ২০ কিলোমিটার গ্যাস লাইন টানা হয় ও বোরহানউদ্দিন পৌর এলাকায় আবাসিক সংযোগের জন্য পাইপ লাইন টানা হচ্ছে। কিন্তুু নতুন কোন সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না গ্রহকদের। অন্যদিকে ভোলায় বিপুল পরিমান গ্যাস মজুদের খবরে ইতোমধ্যে গ্যাস ভিত্তিক ২টি বিদ্যুৎ প্লান্ট গড়ে উঠেছে। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানী গ্যাস ভিত্তিক শিল্প কারখানা স্থাপনের জন্য জমি ক্রয় করছে। ভোলা শাহাবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্রের ম্যানেজার সাংবাদিকদের বলেন,এ প্লান্টে বর্তমানে ৪টি কূপ রয়েছে। ৩টি কূপ থেকে গ্যাস প্রডাকশন করা হলে সাময়িক ত্রুটির জন্য বর্তমানে ২টি কূপ থেকে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। খুব শিগ্রহী এ সমস্যা সমাধান হবে। বর্তমানে ৪৪ এমএমসিএফটি গ্যাস পাওয়ার প্লান্ট ও রেন্টাল প্লান্টে সরবরাহ করা হয়। এছাড়া আবাসিক গ্যাস সরবরাহের পরিমান ১ এমএমসিএফটির নিচে। ৪টি কূপ থেকে আগামীতে ৫৮ এমএমসিএফটি গ্যাস সরবরাহ করা যাবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্রে ৩৮২ বিসিএফ (বিলিয়ন কিউবিক ফিট) গ্যাস মজুদ আছে। অন্যদিকে ২০১৪ সনে শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেতের ত্রিমাত্রিক সাইসমিক সার্ভে করা হয় তাতে বলা হয়, ভোলায় বিপুল পরিমান গ্যাস রয়েছে বলে সন্ধান পাওয়া যায়। কিন্তু এর পরিমান এখনও ঘোষনা করা হয়নি। তারই ফলশ্রুতিতে গত ২৩ অক্টোবর সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোঃ শফিউল আলম জানান ভোলার শাহাবাজপুরে নতন করে আরো একটি গ্যাস ক্ষেত্রের সন্ধান পেয়েছে বাপেক্স। ধারনা করা হচ্ছে নতুন এই গ্যাস ক্ষেত্রে প্রায় ৭’শত বিলিয়ন গ্যাস মজুদ আছে। শাহাবাজপুরের পুরনো গ্যাস ক্ষেত্রের চেয়ে আয়তনের দিক থেকে এই নতুন গ্যাস ক্ষেত্রটি প্রায় দ্বিগুন বড় হবে। আগের ও নতুনটি মিলিয়ে এক ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সংস্থান আছে বলে তিনি জানান।