বৃহস্পতিবার ● ১৯ জানুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » জেলার খবর » ভোলায় ডায়াগনস্টিক ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবার নামে প্রতারণা, আদায় করা হচ্ছে গলাকাটা ফি-পর্ব ৬
ভোলায় ডায়াগনস্টিক ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবার নামে প্রতারণা, আদায় করা হচ্ছে গলাকাটা ফি-পর্ব ৬
এইচ এম নাহিদ: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বেসরকারী হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক ক্লিনিকের অনুমোদন পেতে মোট একত্রিশটি শর্ত পূরণ করতে হয়। ভোলা জেলার ৫৯ টি ডায়াগনস্টিক ক্লিনিক প্রদত্ত আবেদনপত্রের ৩১টি তথ্য কাগজে-কলমে ঠিক থাকলেও অধিকাংশ ক্লিনিক শর্ত পূরণে জালিয়াতি করা হয়েছে। অনুসন্ধানে বিস্তারিত রিপোর্টে আরো অজানা তথ্য পেতে চোখ রাখুন ভোলার সংবাদ ডট কম এ।
৮২ সালের অধ্যাদেশ ৩-এর ধারায় উল্লেখিত ফি’র তুলনায় শতগুণ, এমনকি কয়েক হাজারগুণ বেশি নেয়া হচ্ছে। যেমন, টন্সেল অপারেশন খরচ ৩ হাজার ৫শ’ ও অ্যাপেনডিক্স অপারেশন খরচ ১ হাজার ৬শ’ টাকা। ভোলার যে কোনো ক্লিনিকে টন্সিল অপরেশন কমপক্ষে ১৫ হাজার ও অ্যাপেনডিক্স অপারেশনে ১৫/২০ হাজার টাকা লাগে। অধিকাংশ মালিকের অজুহাত, ’৮২ সালের অধ্যাদেশটি আজকের প্রেক্ষাপটে অবাস্তব ও অচল। সরকারপন্থী চিকিৎসক নেতাদের বিরোধিতা ও সরকারের সদিচ্ছার অভাবে যুগোপযোগী আইন হচ্ছে না- এমনই অভিযোগ করে থাকেন বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মালিকপক্ষ। কেউ কেউ আবার আরেক ধাপ এগিয়ে বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নৈরাজ্যের জন্য সরকারকে দায়ী করেন।
৮২ সালের অধ্যাদেশে ফি ২০ থেকে ৪০ টাকা। রোগীর বাড়িতে গেলে ফি হবে ৪০ থেকে ৮০ টাকা। পদবি অনুযায়ী এর মধ্যেই ফি’র পরিমাণ নির্ধারণ হবে। আইন অমান্য করলে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, ছয় মাসের জেল বা উভয় দ-ে দ-িত হতে হবে। অথচ ভোলার বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের যে কোনো পর্যায়ের চিকিৎসকের ফি কমপক্ষে ৩’শত থেকে ৭শ’ টাকা। আইন না মানলেও এজন্য কোনো চিকিৎসককে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএমডিসি’র শাস্তি পেতে হয়নি। তবে চিকিৎসকরা যুগোপযোগী আইন প্রণয়নের দাবি জানাচ্ছেন। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অভিমত হচ্ছে, ৮২ সালের অধ্যাদেশ আজকের প্রেক্ষাপটে মানা যায় না।
তাদের মতে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ২০০০ সালের আদেশ অনুযায়ী নির্ধারিত ফি যুগোপযোগী, এটাকে কার্যকর করতে হবে। নতুন আইনের মাধ্যমে চিকিৎসকদের ফি একটা কাঠামোর মধ্যে আনতে হবে। ফি নির্ধারণে স্পেশালিস্ট, নন স্পেশালিস্টদের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে হবে। ভোলার মেডিসিন রোগ বিশেষজ্ঞ জনৈক ডাক্তার বলেন, নতুন আইনে ফির পরিমাণ হতে হবে রোগীর জন্য সহনীয়, চিকিৎসকদের জন্য সম্মানজনক।
দেশে চিকিৎসকদের ডিগ্রী নিয়ন্ত্রণকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান বিএমডিসি রয়েছে বেহাল অবস্থায়। অথচ এ প্রতিষ্ঠানের অনুমতি ব্যতীত কোন ডিগ্রী ডাক্তাররা ব্যবহার করতে পারে না। কিন্তু ভুয়া চিকিৎসকদের দৌরাত্ব নিয়ন্ত্রণে এ প্রতিষ্ঠানের একদিকে যেমন যথাযথ কোনো আইন নেই, অন্যদিকে নেই চিকিৎসকদের কার্যক্রম দেখার জন্য পর্যাপ্ত জনবলও। তবে কোন রোগী অভিযোগ করলেই শুধুমাত্র বিএমডিসি জুরি বোর্ড গঠন করে ওই ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখে। বিএমডিসির এ্যাক্ট অনুযায়ী তারা বাইরে গিয়ে তদারকি করতে পারেন না। ভুল চিকিৎসার জন্য রোগী অভিযোগের ভিত্তিতে বিএমডিসি স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত মাত্র ১৯৯৪ সালে একজন ডাক্তার ও একজন স্বাস্থ্য সহকারীর রেজিস্ট্রেশন বাতিল করেছে। এছাড়া বিএমডিসিতে আর কোন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার রেকর্ড নেই।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, ‘১৯৯৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সাত-সাত বার উদ্যোগ নেয়া হয়। নতুন আইন প্রণয়নের নামে সরকারি টাকার অপচয় হলেও কোনো খসড়া আলোর মুখ দেখেনি। মহাজোট সরকারও ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম বছরেই নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে তারা আজো পারেনি আইনটি প্রণয়ন করতে। যার ফলে ডাক্তার, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের ভূল রিপোর্টে প্রতিদিনই ঝরে যাচ্ছে হাজারও নিরাপরাধ মানুষের প্রাণ। ক্লিনিক মালিকদের ভাষ্য তারা ডাক্তাদের কাছে জিম্মি। ডাক্তাদের শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া ক্লিনিক ব্যবসা চালানো সম্ভব নয় বলে ডাক্তাদের অনেক কথাই ক্লিনিক মালিকদের শুনতে হয়। চিকিৎসা সেবার মতো মহৎ পেশাকে নিয়ে এ অবৈধ ব্যবসা অব্যাহত থাকায় রোগীরা প্রতিনিয়ত প্রতারিত ও দুর্ভোগের শিকার হলেও এক শ্রেণির ডাক্তার রাতারাতি গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়েছেন। এমন অবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় সাধারণ মানুষ সহজেই ডাক্তাদের কাছে যেতে চায় না।
কয়েকজন ডাক্তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, গুটিকয়েক চিকিৎসকের কারণে গোটা চিকিৎসক সমাজের ভাবমূর্তি আজ প্রশ্নবৃদ্ধ হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে দ্বীপজেলা ভোলার চিকিৎসা সেক্টরে পরিবর্তন আনবেন বলে আশাবাদী। এদিকে ভুক্তভোগীরা ভোলার আওয়ামীলীগ সরকারের স্থানীয় প্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের হস্তক্ষেপে স্বাস্থ্য সেবার নামে এই নৈরাজ্য থেকে মুক্তিচায়।
ভোলার সিভিল সার্জন রথীন্দ্রনাথ দত্ত বলেন, ভোলায় অবৈধ মাননিয়ন্ত্রিীত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোর বিরুদ্ধে যদি কোন অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে আমি ঐসকল প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরকারি বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেব। তাছাড়া সিভিল সার্জনের একটি টিম পরিদর্শন করে বৈধ/অবৈধ মাননিয়ন্ত্রনহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের তালিকা করেছে। এর ওপর ভিত্তি করে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। তিনি আশা করেন, খুব শিগ্রই ভোলার মানুষ এই অবস্থা থেকে মুক্তিলাভ করবে। চলবে………..
এফএইচ
ভোলায় স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ডাক্তাদের নৈরাজ্য, ডায়াগনিস্টিক ক্লিনিকে বাড়ছে ভেজাল ঔষধের ব্যবহার পর্ব ৫