রবিবার ● ১৫ জানুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » জেলার খবর » ভোলায় স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ডাক্তাদের নৈরাজ্য, ডায়াগনিস্টিক ক্লিনিকে বাড়ছে ভেজাল ঔষধের ব্যবহার পর্ব ৫
ভোলায় স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ডাক্তাদের নৈরাজ্য, ডায়াগনিস্টিক ক্লিনিকে বাড়ছে ভেজাল ঔষধের ব্যবহার পর্ব ৫
এইচ এম নাহিদ : ভোলার ৫৯ ডায়াগনিস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের মধ্যে ৫৫টির নীতিমালা অনুযায়ী উপকরণ নেই। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অস্ত্রোপচার হলেও অপরারেশন থিয়েটার, দরকারি যন্ত্র ও লোকবল যে রকম থাকার কথা নেই। সার্বক্ষণিক চিকিৎসক রাখার নিয়ম থাকলেও ‘অনকলে’ এনে চিকিৎসা করানো হয়। অধিকাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মালিকানার সঙ্গে প্রভাবশালী, রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক নেতা জরিত। এসব হাসপাতাল-ক্লিনিকে নকল ভেজাল বা নিম্মমানের ঔষধ ব্যবহার করা হয়। অনুসন্ধানে বিস্তারিত ৬ পর্বের রিপোর্টে অজানা তথ্য পেতে চোখ রাখুন ভোলার সংবাদ ডট কম এ।
খাদ্যের বিকল্প হিসেবে ফুডসাপ্লিমেন্টারি নামে এক ধরনের ভেজাল ঔষধের মাধ্যমে মানুষকে প্রতারিত করছে বিভিন্ন অখ্যাত-কুখ্যাত ঔষধ কোম্পানী। কিছু অসাধু ক্লিনিক মালিক ও চিকিৎসক এসব ঔষধ বিপণনকারীদের প্রলোভনে পড়ে রোগীদের লিখে দিচ্ছে এবং রোগীরা উচ্চমূল্যের জঞ্জাল কিনে সর্বশান্ত হচ্ছে।
মেডিসিন জার্নালের খবরে প্রকাশিত চীন, তাইওয়ান, আমেরিকা, জার্মানি, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ফুডসাপ্লিমেন্টারি হিসেবে আমদানি হচ্ছে নকল, ভেজাল ও নিম্মমানের ঔষধ। আর এর কারণে বাড়ছে মানুষের ভোগান্তি। কারণ এসব নকল, ভেজাল ও নিষিদ্ধ ক্ষতিকর ঔষধ গ্রহণ করে মানুষ সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে আরো বেশি অসুস্থ হচ্ছে। সরকারি স্বাস্থ্য শাখার কর্তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকায় নীতিমালা না মেনেও সরকারের অনুমোদন পায় বলে জানা যায়। এই ক্ষেত্রে ডিগ্রিধারি ডাক্তাররা শুধু মাত্র টাকার জন্য ঔষধ কোম্পানীর কতিথ প্রতিনিধিদের সাথে মোটা অংকের চুক্তির মাধ্যমে ভেজাল ফুডসাপ্লিমেন্টারি প্রেসক্রিপশন কওে থাকেন। ডাক্তার নিজেও জানেন এই ধরনের ফুডসাপ্লিমেন্টারি ঔষধে রোগীর শরীরে কোন সুফল বয়ে আনবেনা। লাভের চেয়ে ক্ষতিটাই বেশি।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, একটি ফুডসাপ্লিমেন্টারি কৌটার বাজার মুল্য ৭০ থেকে ৮০ টাকায় কিনে বিদেশি হলোগ্রাম লাগিয়ে সেটাকে ৭’শত থেকে ৯’শত টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। বিক্রির সিংহভাগ অর্থই ডাক্তার সাহেবের পকেটে যায়। নকল ভেজাল বা নিম্নমানের ঔষধ গ্রহণের ফলে শরীরে সৃষ্ট প্রতিক্রিয়ার কারণে অনেক সময় শরীরে নানা ধরনের রোগের উপস্বর্গ দেখা দেয়। ঔষধ যখন সেবন করা হয় তখন বোঝার উপায় থাকে না ঔষধটি নকল বা আসল। ঔষধ সেবনের পর কাঙ্কিত ফলাফল পাওয়া না গেলে রোগী ভাবে তার রোগ নির্ণয় ঠিক হয়নি। তখন রোগী অন্য ডাক্তারের কাছে যায়, বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করতে গিয়ে আর্থিকভাবে সর্বশান্ত হয়। নকল ভেজাল ঔষধের কারণে শরীরে কোন বিষক্রিয়া বা ক্ষতিকর অবস্থার সৃষ্টি হলে তাকে ঔষধের পার্স্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে চিহ্নিত করে রোগীকে অন্য ঔষধ প্রদান করা হয়। মূল দোষী সেই সকল ভেজাল ঔষধগুলি বরাবরই দৃষ্টির বাহিরেই থেকে যায়।
অনেক ক্ষেত্রে নকল ভেজাল ক্ষতিকর ঔষধের কারণে কারো স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটলে বা মৃত্যু হলে দোষ হয় রোগের। আমরা খুব কমই ভাবি নকল ভেজাল ঔষধের কারনে রোগীটি মারা গেছে।
নিম্নমানের ঔষধের কারণে জেলায় অধিকাংশ রোগী মারা যায়। আমাদের ভোলায় প্রায় সব বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিজস্ব ঔষধের দোকান রয়েছে। এসব ঔষধের দোকানে অভিজ্ঞ ফার্মাসিস্ট বা চিকিৎসক নেই। অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঔষধ ব্যবহারের পর লেবেল, ওষুধের কৌটা বা শিশি, মোড়ক, ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ ব্যবহারের পর এগুলো রিপ্যাক করে আবার অন্য রোগীকে ধরিয়ে দেয়।
তবে এসব বিষয়কে অধিক গুরুত্ব দিয়ে কঠোর হস্তে দমন করা উচিৎ বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছেন। অপরাধের ধরণ অনুযায়ী অপরাধীকে তার প্রাপ্য শাস্তির আওতায় আনার দৃষ্টান্ত স্থাপন করা গেলে অন্যরা এক্ষেত্রে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটাতে সাহস পাবে না। এর ফলে সাধারণ মানুষের নিরবচ্ছিন্ন স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত হবে বলে আশা করা যায়।
-এফএইচ
ভোলায় ডায়াগনস্টিক ক্লিনিকে অপ্রয়োজনে টেস্ট ও পার্সেনটিজ বাণিজ্য পর্ব-৪